শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৩:৪৮ পূর্বাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

কোরআন ও হাদিসে রোজার ইতিহাস

মাওলানা রফিকুল ইসলাম:
দ্বিতীয় হিজরির শাবান মাসে রমজানের রোজা ফরজ হয়। এর আগেও হজরত রাসুল (সা.) ও সাহাবায়ে কেরাম আশুরা ও আইয়ামে বিজের রোজা রাখতেন। রমজানের রোজা প্রথম ফরজ হলে তা রাখা ও না রাখার ব্যাপারে বান্দার ইচ্ছাধিকার ছিল। কেউ স্বেচ্ছায় রোজা না রেখেও ফিদিয়া দিতে পারত। অতঃপর ধীরে ধীরে রোজায় অভ্যস্থ হয়ে গেলে সে শিথিলতা তুলে নেওয়া হয়।

পৃথিবীর শুরুর যুগ থেকেই রোজার বিধান ছিল। প্রত্যেক যুগে ছিল আলাদা নিয়মের আলাদা ধরনের রোজা। তবে সব যুগে রোজার উদ্দেশ্য ছিল একটাই। তা হলো বান্দাকে আল্লাহর নিকটবর্তী করা। আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে বলেন, ‘হে ইমানদারগণ! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্বের লোকদের ওপর। যাতে তোমরা মুত্তাকি হতে পারো।’ -সুরা বাকারা ১৮৩

এই আয়াত দ্বারা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় যে, পূর্ববর্তী উম্মতগণের ওপরও রোজা ফরজ ছিল। তবে রোজার ধরণ, শর্ত ও নিয়মে ছিল ভিন্নতা। যা পবিত্র কোরআনের অন্যান্য আয়াত, হাদিস ও এতদসংশ্লিষ্ট আলোচনা থেকে জানা যায়।

হজরত ঈসা (আ.)-এর যুগের রোজা সম্পর্কে পবিত্র কোরআনের অন্যত্র বর্ণিত হয়েছে, আল্লাহতায়ালা হজরত মারইয়াম (আ.)কে বলেন, ‘যদি মানুষের মধ্যে কাউকে তুমি দেখো তাহলে বলো, আমি দয়াময় আল্লাহর উদ্দেশ্যে মৌনতা অবলম্বনের মান্নত করেছি। কাজেই আজ আমি কিছুতেই কোনো মানুষের সঙ্গ কথা বলব না।’ -সুরা মারইয়াম ২৬

এখানে বলার অর্থ হলো ইশারা ইঙ্গিতে বলা। মুখের দ্বারা বলা নয়। কেননা তাদের শরিয়তে রোজার অর্থই ছিল খাওয়া ও কথা বলা থেকে বিরত থাকা। তাফসিরে আহসানুল বায়ান

কাতাদা (রহ.) বলেন, মারইয়াম (আ.) খাবার, পানীয় ও কথাবার্তা থেকে বিরত থাকার মাধ্যমে রোজা পালন করেছিলেন।

আততাফসিরুস সহিহ

কোনো কোনো মুফাসসির বলেন, ইসলাম পূর্বকালে সকাল থেকে রাত্রি পর্যন্ত মৌনতা অবলম্বন করা এবং কারও সঙ্গে কথা বলা থেকে বিরত থাকা রোজা ও ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত ছিল।

ইবনে কাসির

হজরত মুসা (আ.)-এর যুগে রোজা ছিল। তাওরাত নাজিলের আগে হজরত মুসা (আ.)-কে চল্লিশ দিন রোজা রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। এ ছাড়াও হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, ‘হজরত রাসুল (সা.) মদিনায় আগমন করে দেখতে পেলেন, ইহুদিরা আশুরার দিন রোজা রাখে। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা এ দিনে রোজা রাখো কেন? তারা বলল, এ অতি উত্তম দিন, এই দিনে আল্লাহতায়ালা বনি ইসরাইলকে শত্রুর কবল থেকে মুক্তি দিয়েছিলেন। ফলে এই দিনে মুসা (আ.) রোজা রাখতেন। হজরত রাসুল (সা.) বলেন, আমি তোমাদের অপেক্ষা মুসা (আ.)-এর অধিক নিকটবর্তী। এরপর তিনি এই দিনে রোজা রাখেন এবং সাহাবায়ে কেরামকে রোজা রাখার নির্দেশ দেন।’ সহিহ বুখারি ২০০৪

রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার আগে ইসলামের শুরু যুগে আশুরার রোজা ওয়াজিব ছিল। অতঃপর রমজানের রোজা ফরজ হলে আশুরার রোজার ওয়াজিব বাতিল হয়ে তা মুস্তাহাব হয়ে যায়। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, ‘রমাজানের রোজা ফরজ করা হলে আশুরার রোজা ছেড়ে দেওয়া হয়। যার ইচ্ছা সে পালন করবে আর যার ইচ্ছা পালন করবে না।’ সহিহ বুখারি ২০০২

আল্লাহতায়ালার কাছে সবচেয়ে পছন্দনীয় ছিল হজরত দাউদ (আ.)-এর রোজা। হজরত রাসুল (সা.) বলেন, ‘রোজাসমূহের মধ্যে দাউদ (আ.) এর রোজা আল্লাহর নিকট অধিক প্রিয়। তিনি একদিন রোজা রাখতেন এবং পরবর্তী দিন রোজা রাখতেন না।’ ইবনে মাজাহ ১৭১২

হজরত নুহ (আ.) বছরে দুদিন ছাড়া সারা বছর রোজা রাখতেন। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, ‘হজরত নুহ (আ.) ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার দিন ছাড়া সারা বছর রোজা রাখতেন।’

ইবনে মাজাহ ১৭১৪

প্রথম নবী হজরত আদম (আ.)-এর যুগেও রোজা ছিল। আল্লাহতায়ালা হজরত আদম (আ.)-কে একটি বৃক্ষের ফল খেতে নিষেধ করেছিলেন। সেই বৃক্ষের ফল খাওয়া থেকে বিরত থাকাও ছিল এক ধরনের রোজা। তিনি তা থেকে বিরত থাকতে পারেননি। এই জন্য হজরত আদম ও হাওয়া (আ.)-এর শরীর থেকে জান্নাতের পোশাক খুলে যায়। শরীরের রঙ হয়ে যায় কুৎসিত। অতঃপর আল্লাহতায়ালা তাদের আইয়ামে বিজের রোজা অর্থাৎ প্রতি চন্দ্র মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে রোজা রাখতে নির্দেশ দেন।

ভয়েস/আআ

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION