সোমবার, ০১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০২:২৪ অপরাহ্ন
আবদুল আজিজ:
নীল জলরাশি আর প্রবালের মায়াজালে মোড়া বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন। দীর্ঘ ৯মাস প্রতীক্ষার পর আবারও পর্যটকদের পদচারণায় মুখর হয়েছে দ্বীপটি। আজ সোমবার সকাল ৭টা থেকে কক্সবাজার-সেন্টমার্টিন রুটে শুরু হয়েছে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল। সেন্টমার্টিন যেতে ভোর ৫টা থেকে কক্সবাজারের নুনিয়াছড়া বিআইটিডাব্লিউ ঘাটে লাইন ধরছেন পর্যটকরা। দুই লাইনে সাড়ি সাড়ি একেকজন করে ট্রাভেল পাশ চেক করছেন প্রশাসনের বিভিন্ন সংস্থা।
শীত উপক্ষো করে পর্যটকরা সকাল ৭টায় কক্সবাজারের নুনিয়ারছড়া জেটি থেকে ছেড়ে যাওয়া জাহাজ দুপুরের আগেই পৌঁছে যাবে প্রবালখচিত স্বপ্নের দ্বীপ সেন্টমার্টিনে। আগামীকাল বেলা ৩টায় সেই জাহাজ আবার ফিরবে কক্সবাজারে। আজ তিনটি জাহাজ যথাক্রমে এমভি বার আউলিয়া, এমভি কর্ণফুলী ও কেয়ারি সিন্দাবাদ কক্সবাজার থেকে সেন্টমার্টিন গেছে ১১০০ পর্যটক। এভাবে প্রতিদিন সর্বোচ্চ দুই হাজার পর্যটক- দ্বীপের পরিবেশের জন্য সহনীয় এই সীমা ঠিক করে দিয়েছে প্রশাসন।
‘সি ক্রুজ অপারেটর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ’ (স্কোয়াব)-এর সাধারণ সম্পাদক হোসাইন ইসলাম বাহাদুর বলেন, মৌসুমের প্রথম যাত্রার সব প্রস্তুতি আগে থেকেই সম্পন্ন ছিল। প্রশাসনের সহযোগিতায় পরিচ্ছন্ন ও নিরাপদ পরিবেশে যাত্রা শুরু করা গেছে। আগামী মৌসুমে কমপক্ষে চার মাস রাত্রিযাপনের সুযোগ মিললে জাহাজ মালিকরা ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারবেন বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
সেন্টমার্টিনে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল শুরু করতে সকালে ঘাটে এসে পর্যটকদের স্বাগত জানান কক্সবাজার জেলা প্রশাসকসহ অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. শাহিদুল আলম, কক্সবাজার সদরের ইউএনও নীলুফা ইয়াসমিন চৌধুরী এবং ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ। তারা সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়ন তদারকি করেন।
এসময় কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো: এম এ মান্নান বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তর ও ট্যুরিস্ট পুলিশের কঠোর তদারকিতে অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ন্ত্রণ ও প্লাস্টিক ব্যবহারে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়। সচেতনতার অংশ হিসেবে প্রথম দিন যাত্রীদের হাতে অ্যালুমিনিয়ামের পানির বোতল তুলে দেওয়া হয়েছে।
ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার জোনের অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ বলেন, ‘আজকে প্রথম দিন থেকে প্রতিটি টিকেট চেক করা হচ্ছে। বিশেষ করে কোন পর্যটকের হাতে যাতে প্লাষ্টিক বোতল না থাকে সে ব্যবস্থা আমরা করছি। মানে একটা শৃংখলায় পর্যটকরা যাতে সেন্টমার্টিন যেতে পারছি সেটা নিশ্চিত করবে ট্যুরিস্ট পুলিশ।
পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের উপপরিচালক খন্দকার মাহমুদ পাশা বলেন, প্লাস্টিক দূষণ কমাতে অ্যালুমিনিয়াম বোতল ব্যবহারে কঠোরতা আনা হয়েছে। এটি সফলভাবে কার্যকর হলে ভালো ফল পাওয়া যাবে।
দীর্ঘদিন পর পর্যটকরা প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিন যেতে পেরে খুশি অনেকে। তারা বলছেন এবছর সেন্টমার্টিন ভ্রমনে এসেছে ব্যতিক্রম।
রাজশাহী থেকে আসা পর্যটক দম্পতি সোমা আক্তার ও সাইদুল মনে করেন সেন্টমার্টিনের পরিবেশ ও প্রতিবেশ রক্ষা করতে হবে। এজন্য যারা সেন্টমার্টিন ভ্রমন করবেন তাদের অবশ্য সচেতন হতে হবে। কারণ, সেন্টমার্টিন আমাদের সম্পদ।
আরেক পর্যটক মসিউর রহমান বলেন, সেন্টমার্টিন দ্বীপে কয়েকবার যাওয়া হয়েছে। এবারে সেন্টমার্টিন ভ্রমন একটু ব্যতিক্রম লাগছে। কারণ, বিভিন্ন বিধি-নিষেধ থাকায় খুব শৃংখলা এসেছে এবারের যাত্রায়।
গত ১ নভেম্বর থেকে সেন্টমার্টিনে পর্যটক প্রবেশ উন্মুক্ত হলেও রাত্রিযাপন নিষেধাজ্ঞা থাকার কারণে এতদিন কোনো জাহাজ চলাচল করেনি। এবারও নুনিয়ারছড়া জেটি থেকে চারটি জাহাজ চলাচলের অনুমতি পেয়েছে। প্রতিদিন সর্বোচ্চ দুই হাজার পর্যটক বঙ্গোপসাগর পাড়ি দিয়ে সেন্টমার্টিন যেতে পারবেন।
সেন্টমার্টিনের নাজুক প্রতিবেশ ব্যবস্থা রক্ষায় ঘোষিত ১২ দফা নির্দেশনা এবার কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করা হবে। এর মধ্যে রয়েছে—রাতে সৈকতে আলো জ্বালানো নিষেধ, উচ্চ শব্দে অনুষ্ঠান-বারবিকিউ নিষিদ্ধ, কেয়াবনে প্রবেশ বা কেয়াফল সংগ্রহ নিষিদ্ধ, কাছিম– পাখি– রাজকাঁকড়া প্রবালসহ যেকোনো জীববৈচিত্র্য ক্ষতিগ্রস্ত করে এমন সকল কার্যক্রম বন্ধ, মোটরচালিত যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ এবং প্লাস্টিকমুক্ত দ্বীপ উদ্যোগের অংশ হিসেবে একবার ব্যবহার্য প্লাস্টিক কঠোরভাবে নিরুৎসাহিত। পরিবেশ অধিদপ্তর পর্যটকদের বিনামূল্যে অ্যালুমিনিয়াম বোতল সরবরাহ করছে।
ভয়েস/আআ