ভয়েস নিউজ ডেস্ক:

দেশের মৎস্য উৎপাদনের প্রায় ১২ শতাংশ আসে ইলিশ থেকে। জিডিপিতে এর অবদান এক শতাংশের মতো

মঙ্গলবার দিবাগত মধ্যরাত থেকে দেশে ২২ দিনের জন্য ইলিশ মাছ ধরা নিষিদ্ধ। এর আওতায় ৪ নভেম্বর পর্যন্ত মাছ ধরা, বিক্রি, বিপণন, মজুত ও পরিবহন নিষিদ্ধ থাকবে। নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করা হলে জরিমানা ও কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে।

প্রশ্ন হলো, নিষেধাজ্ঞা ইলিশের প্রজননে কেমন ভূমিকা রাখে? গবেষকদের বরাত দিয়ে বিবিসি বাংলা জানায়, এই সময়ে ইলিশ ধরা থেকে বিরত থাকার প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে মা ইলিশ রক্ষা করা, যাতে তারা নিরাপদে নদীতে ডিম ছাড়তে পারে।

এই ডিম রক্ষা করতে পারলে তা নিষিক্ত হয়ে জাটকার জন্ম হবে। সেই জাটকা রক্ষা করা গেলে দেশে বড় আকারের ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে।

মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের ইলিশ বিষয়ক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও ইলিশ গবেষক ড. আনিসুর রহমান বলেন, “ঠিক এই সময়ে মা ইলিশ নদীতে ডিম ছাড়তে শুরু করে। একটা মা ইলিশ চার থেকে পাঁচ লাখ ডিম ছাড়ে। আমাদের পরীক্ষা নিরীক্ষা বলছে, শুধুমাত্র গত বছরে অন্তত ৭ লাখ ৪০ হাজার কেজি ডিম ছাড়া হয়েছে। সেগুলো বড় হওয়ার সুফল এই বছর আপনারা দেখতে পেয়েছেন।”

বিজ্ঞানীরা ধরে নেন, এর অর্ধেক যদি নিষিক্ত হয়, তার মধ্যেও ১০ শতাংশ যদি বাঁচে, তাহলে ৩৭ হাজার কোটি ইলিশ পোনা বা জাটকা পাওয়া যায়। “সেটা যে হয়েছে, তার প্রমাণ আমরা পাচ্ছি। সেটা না হলে দিনের পর দিন এ রকম বড় বড় ইলিশ, এতো ইলিশ ধরা পড়তো না,” বলেন ড. আনিসুর।

চলতি বছর দেশের বাজারে অনেক কম দামে বড় আকারের ইলিশ মাছ বিক্রি হয়েছে। নদী ও সাগরে তুলনামূলকভাবে বেশি বড় ইলিশও ধরা পড়েছে। আগে যেখানে এক কেজির ওপরের ইলিশের কেজি কয়েক হাজার টাকায় বিক্রি হতো, এই বছর হাজার টাকার নিচে বিক্রি হয়েছে।

ইলিশ মাছ আকারে যত বড় হবে, তত তার স্বাদ বেশি হবে। আকারে বড় ইলিশকে অনেকে পাকা ইলিশ বলে অভিহিত করে থাকেন।

গবেষক ড. আনিসুর রহমান, “ইলিশের উৎপাদন যে বেড়েছে, সেটা তো এখন সবাই বুঝতে পারছে। সেই উৎপাদন বাড়ার পেছনে যেসব কারণ আমরা দেখতে পেয়েছি, তার মধ্যে এই ২২ দিনের ইলিশ ধরার নিষেধাজ্ঞাটি সবচেয়ে বেশি কার্যকরী।”

বাংলাদেশে ২০০৩-২০০৪ সাল থেকেই জাটকা রক্ষার কর্মসূচি শুরু করা হয়। তখন থেকেই আস্তে আস্তে ইলিশের উৎপাদন বাড়ছিল।

২০০৮ সাল থেকে প্রথম আশ্বিন মাসে পূর্ণিমার আগে পরে মিলিয়ে ১১দিনের ইলিশ ধরায় নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। তখন থেকেই এর সুফল দেখতে শুরু করেন বিজ্ঞানীরা। তখন তারা গবেষণায় দেখতে পান যে, শুধু পূর্ণিমায় নয়, এই সময়ের অমাবস্যাতেও ইলিশ ডিম ছাড়ে।

পরবর্তীতে পূর্ণিমার সঙ্গে অমাবস্যা মিলিয়ে টানা ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা দেওয়া শুরু হয়।

ড. আনিসুর বলেন, “২০১৪-২০১৫ সালের পর থেকে কিন্তু ইলিশের উৎপাদন ক্রমান্বয়ে বেড়ে আসছে। রাতারাতি উৎপাদন অনেক বেড়ে গেছে। কারণ আইনটা আগে থাকলেও ওই সময় থেকে কড়াকড়িভাবে তা পালন করা শুরু হয়।”

চট্টগ্রামের মিরসরাই থেকে শুরু করে ভোলার লালমোহন উপজেলা পর্যন্ত ইলিশের সবচেয়ে বড় প্রজনন ক্ষেত্র। বিশেষ করে মনপুরা, ঢালচর, বালিরচর, মৌলভীরচর হচ্ছে ইলিশের ডিম ছাড়ার সবচেয়ে বড় পয়েন্ট। চট্টগ্রাম, ভোলা, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী, চাঁদপুর, পটুয়াখালী, বরগুনা মিলিয়ে প্রায় ৭ হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকায় ইলিশ মাছ সবচেয়ে বেশি ডিম ছাড়ে। এর বাইরের উপকূলের অন্যান্য নদীগুলোতেও ইলিশ ডিম ছাড়ে।

মৎস্য অধিদপ্তরের ইলিশ পর্যবেক্ষণ সেলের হিসেবে ১৫ বছর আগে দেশের ২৪টি উপজেলার নদীতে ইলিশের বিচরণ ছিল। এখন দেশের অন্তত ১২৫ টি উপজেলার নদীতে ইলিশের বিচরণের প্রমাণ পাওয়া গেছে।

বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের তথ্যানুযায়ী এই মুহূর্তে দেশের মোট মৎস্য উৎপাদনের প্রায় ১২ শতাংশ আসে ইলিশ থেকে। জিডিপিতে এর অবদান এক শতাংশের মতো। সূত্র:দেশরূপান্তর।

ভয়েস/জেইউ।