সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:৪৭ অপরাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

মহাকাশ থেকে খসে পড়েছিলেন যিনি

মুজাহিদ বিল্লাহ:
জীবন সহজ করতে বিজ্ঞানের জুড়ি মেলা ভার। বিজ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে মানুষ ছুটে যাচ্ছে সাগরের অতলে, মহাকাশে। কত চমকপ্রদ এসব আবিষ্কার! নানা সময়ে মানুষের মহাকাশ ভ্রমণের কথা শুনেছেন। কখনো শুনেছেন কি- মহাকাশ থেকে খসে পড়া কোনো বিজ্ঞানীর কথা?

এই ব্যক্তি হলেন ভ্লাদিমির কোমারভ। মহাকাশ থেকে প্রথম এবং শেষ খসে পড়া ব্যক্তি তিনি। কোমারভ ছিলেন ব্যতিক্রমী সোভিয়েত মহাকাশচারী।

১৯৬৭ সালের কথা। ৫০ বছরে পদার্পণ করেছে সোভিয়েত ইউনিয়নের স্পেস প্রোগ্রাম। এই বিশেষ দিনটিকে স্মরণ করে রাখতেই মহাকাশে বিশেষ কিছু করতে চায় সোভিয়েত ইউনিয়নের স্পেস প্রোগ্রাম। পরিকল্পনা করা হয় রাশিয়া থেকে মহাকাশযান সোয়াজ-১ এবং সোয়াজ-২ যাবে মহাকাশে। আগে যাবে সোয়াজ-১। মহাশূন্যে গিয়ে দুই মহাকাশচারী এক স্পেসশিপ থেকে বেরিয়ে স্পেস ওয়াক করে প্রবেশ করবেন অন্যটিতে।

সে সময় পর্যন্ত সেরকম কৃতিত্ব দেখাতে পারেনি যুক্তরাজ্য বা অন্য কোনো দেশ। কাজেই এই অভিযান বিশ্বের বুকে চির স্মরণীয় করে রাখবে সোভিয়েত ইউনিয়নের স্পেস প্রোগ্রামকে- এমনই ছিল ভাবনা। এ জন্য প্রাথমিকভাবে ১২ জনের নাম বাছাই করা হয় এবং তাদের দেওয়া হয় প্রশিক্ষণ। সেই তালিকায় কিন্তু ইউরি গ্যাগারিনের নামও ছিল। তিনি সর্বপ্রথম মানুষ হিসেবে মহাশূন্যে গিয়েছিলেন।

১৯৬৭ সালের ২৩ এপ্রিল মহাকাশে যাওয়ার কথা ছিলো সোয়াজ-১ মহাকাশযানটির। কিন্তু এর আগেই বাধে বিপত্তি। মাসখানেক আগে ধরা পড়ে এই মহাকাশযানটিতে রয়েছে ২০০টিরও অধিক প্রযুক্তিগত সমস্যা। যার পরিনাম নিশ্চিতভাবেই মৃত্যু। সবগুলো ত্রুটির কথা জানিয়ে রিপোর্ট করেন বিজ্ঞানীরা। কিন্তু কমিউনিস্ট পার্টির জেনারেল সেক্রেটারি লিওনিড ব্রেজনেভকে এই রিপোর্ট দেখানোর সাহস ছিল না কারোরই। এমন ভুল রিপোর্ট পেশ করলে আজীবন প্রশাসনের চোখে অপরাধী হয়ে থাকতে হবে যে কাউকে।

এই ত্রুটির কথা জানতে পেরেছিলেন ইউরি গ্যাগারিনও। এসব নিয়ে কথা বলায় তাকে নিষিদ্ধ করে সোভিয়েত স্পেস প্রোগ্রামের কর্তারা। গ্যাগারিন আচ করতে পেরেছিলেন এই অভিযানে পাইলট কোমারভের মৃত্যুর আশঙ্কার কথা। তিনি তখন নিষেধ করেন কোমারভকে। তবে তোয়াক্কা করেননি কোমারভ। কারণ সে না গেলে অন্য আরেকজন যাবেই। তখন সে ইতিহাসের অংশ হয়ে যাবে। কথাগুলো ইউরি গ্যাগারিনের আত্মকথা থেকে জানা যায়। এমনকি অভিযানের আগে কোমারভকে বিদায় জানাতে গিয়েছিলেন গ্যাগারিন নিজেই।

পরদিন আকাশে উড়াল দেয় সোয়াজ-১। মহাকাশে যাওয়ার পরই বাধে বিপত্তি। আকাশে ওড়ার পর কন্ট্রোল ইউনিট, ম্যানুভার ইউনিট, কমিউনিকেশন এবং সোলার পাওয়ারসহ নানান যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয়। বায়ুমণ্ডলে প্রবেশের পরও খোলা সম্ভব হয়নি মডিউলের প্যারাসুট। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবে ক্রমবর্ধমান বেগে পৃথিবীতে খসে পড়ে সোয়াজ-১। কোমারভের এমন মর্মান্তিক মৃত্যুর পর বন্ধ করে দেয়া হয় সোয়াজ-২ এর মহাকাশ অভিযান।

মৃত্যুর আগে কোমরভের শেষ চাওয়া মতো তাকে দেওয়া হয় বিশেষ সম্মাননা। মস্কোতে আয়োজন করা হয় বিশেষ শোকসভা। এরপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নভোচারীরা চাঁদে নেমেও তাকে বিশেষ শ্রদ্ধা জানিয়েছিলেন।

উল্লেখ্য, ১৯২৭ সালের ১৬ মার্চ মস্কোতে জন্মগ্রহণ করেন কোমারভ। ছোট থেকেই বিমান নিয়ে খেলতে ভালোবাসতেন। কিন্তু যুদ্ধ চলায় সে সময় যোগ দেন সৈনিক হিসেবে। এরপর ১৫ বছর বয়সে স্পেশাল এয়ারফোর্স স্কুলে ভর্তি হন। ৩ বছর প্রশিক্ষণ নিয়ে লেফটেন্যান্ট পদে যোগ দেন। কাজ করতে শুরু করেন মহাকাশ গবেষণা নিয়ে।

ভয়েস/আআ

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION