সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:০৫ অপরাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

লামায় এক ইউনিয়নে ৩০টি ইটভাটা, পাহাড় কেটে সাবাড়

ভয়েস নিউজ ডেস্ক:

বান্দরবানের লামা উপজেলার ফাইতং ইউনিয়নের ফাইতং এলাকায় একটি পাহাড়ের ৫০ একর কেটে সাবাড় করে ফেলা হয়েছে। সুউচ্চ পাহাড়‌টি এখন সমতল ভূ‌মি‌তে পরিণত হ‌য়ে‌ছে। এতে হুমকির মুখে পড়েছে জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশ। এই পাহাড়ের মাটি নেওয়া ওই ইউনিয়নের অন্তত ৩০টি ইটভাটায়। এখন আশপাশের পাহাড়গুলো কাটা হচ্ছে। এ নিয়ে পদক্ষেপের বিষয়ে জানতে চাইলে পরিবেশ অধিদফতরের কর্মকর্তারা বললেন, ‘পাহাড় কাটায় জড়িতরা অনেক প্রভাবশালী। তাদের কাছে আমরা অসহায়।’

সরেজমিনে দেখা গেছে, ফাইতং ইউনিয়নে ছোটবড় মিলিয়ে ১০টি পাহাড় রয়েছে। এই ইউনিয়নের ৩০টি স্থানে ৩২টির মতো ইটভাটা আছে। কোথাও পাহাড়ের কোলে, কোথাও কৃষিজমিতে, আবার কোথাও জনবসতি, প্রাকৃতিক ও সামাজিক বনঘেঁষে গড়ে উঠেছে এসব ইটভাটা। মাটির জন্য ভাটার মালিকরা ১০-১৫টি ভেকু মেশিন (খননযন্ত্র) দিয়ে দিনে-রা‌তে কাটছেন পাহাড়। মা‌টি স্তূপ করে রাখার পর ট্রাক দি‌য়ে নি‌য়ে যাওয়া হচ্ছে ইটভাটায়। শুধু পাহাড়ের মা‌টি নয়, ইটভাটায় পোড়া‌নোর জন্য সাবাড় করা হচ্ছে প্রাকৃতিক বনাঞ্চলের গাছপালা।

ফাইতং ইউনিয়নের বাসিন্দা ও জনপ্রতিনিধির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ফাইতং এলাকার মানিকপুর অংশে ফোরবিএম, এনআর‌বি, ইউবিএম, ওয়াইএস‌বি ও থ্রিবিএম, ফাইভ‌বিএম, এবি‌সি, এনআর‌বি ও বি‌বিএমসহ অন্তত ২০টি ইটভাটা রয়েছে। ফাইতংয়ের পাহাড়ি এলাকায় আরও ১২টির মতো ভাটা আছে। একপ্রকার প্রতি‌যো‌গিতা করে এসব এলাকার পাহাড়গুলো কাটছেন ভাটার মালিকরা। এতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন ফাইতং ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি এবং ওই ইউনিয়নের সাবেক সদস্য (মেম্বার) মোক্তার হোসেন। তিনি ওয়াইএস‌বি ইটভাটার মালিক।

স্থানীয় বাসিন্দা মাহবুব আলম ও আনোয়ার হোসেন জানিয়েছেন, গত এক বছর ধরে এখানে পাহাড় কাটা অব্যাহত আছে। আশপাশের কয়েকটি পাহাড়ের মাটি কেটে সমতল করে ফেলা হয়েছে। এর মধ্যে একটি পাহাড়ের ৫০ একরের বেশি সমতল ভূ‌মি‌তে পরিণত হয়েছে। বিষয়টি পরিবেশ অধিদফতর ও জেলা প্রশাসনকে একাধিকার জানালেও কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। এর মাঝে একদিন এসে জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা দুই-একটি ইটভাটাকে জরিমানা করে চলে যান। চলে যাওয়ার পরদিন থেকে শুরু হয় আবার পাহাড় কাটা। যা এখনও অব্যাহত আছে। তবে কোনও কোনও ভাটা মালিক পরিবেশ অধিদফতর ও জেলা প্রশাসনের চোখে ফাঁকি দিতে দিনে না কেটে রাতে পাহাড় কাটছে।

ফাইতং এলাকার বাসিন্দা আবদুর রহিম বলেন, ‘দিনে-রা‌তে সমানে তালে চলছে পাহাড় কাটা। স্থানীয়রা প্রতিবাদ করতে গেলে হুমকি দেওয়া হয়। দায়িত্বশীল কর্মকর্তারাও ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। এজন্য পাহাড় কাটা বন্ধ হচ্ছে না।’

মো. ইব্রাহিম হাওলাদার বলেন, ‘সারা বছরই পাহাড় কেটে ইটভাটায় মাটি নিচ্ছেন ভাটার মালিকরা। স্থানীয় কেউ প্রতিবাদ করলে তা‌দের হাত-পা বেঁধে মারধর করা হয়। ফলে আমরা দেখেও কিছু বলতে পারছি না। তাদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা না নেওয়ায় পাহাড় কাটা বন্ধ হচ্ছে না।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ইটভাটা মালিক বলেন, ‘পাঁচ লাখ ক‌রে এখানের ৩০‌টি ভাটার মালিকের কাছ থেকে দেড় কোটি তুলেছেন ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি মোক্তার মেম্বার। ওই টাকা দিয়ে জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদফতরের কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করেছেন। ফলে অভিযান চালানো হয় না।’

এ বিষ‌য়ে ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি মোক্তার হোসেন বলেন, ‘আমরা এ বছর ইটভাটার অনু‌মোদন নি‌তে পারিনি। তাই ইটভাটার কার্যক্রম চালাতে পার‌বো কিনা জানি না। তবে ইটভাটা প্রস্তুত ক‌রে রাখ‌তে হচ্ছে। এজন্য মা‌টির জোগান দি‌তে পাহাড়ের কিছু অংশ কাটা হ‌য়েছে। সবাই কাটছে, তাই আমি কাটছি। কাউকে বাধা দেওয়া যাচ্ছে না। বিষয়টি পরিবেশ অধিদফতর ও জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারাও জানেন।’

৩০টি ইটভাটা মালিকের কাছ থেকে টাকা তুলে পরিবেশ অধিদফতর ও জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আসলে এটা ঠিক নয়। আমি আপনার সঙ্গে দেখা করে এ নিয়ে কথা বলবো।’

পাহাড় কেটে বন উজাড়ের ব্যাপারে জানতে চাইলে ফাইতং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক বলেন, ‘উন্নয়নের জন্য ইটভাটার প্রয়োজন আছে। তাই বলে এক ইউনিয়নে এতগু‌লো ইটভাটার প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না। তারা আমার এলাকার সবগুলো বড় বড় সব পাহাড় সাবাড় ক‌রে ফেলছে। এদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। পরিবেশ অধিদফতর ও জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা যদি ব্যবস্থা না নেন, তাহলে এখানে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে কোনও পাহাড় থাকবে না। সবগুলো সমতলে পরিণত হবে।’

পাহাড় কিংবা বনাঞ্চল ধ্বংসকারীদের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসন কেন ব্যবস্থা নিচ্ছে না জানতে চাইলে লামা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মোস্তফা জাবেদ কায়সার বলেন, ‘ফাইতং ইউনিয়নে ইটভাটা‌র মালিকরা পাহাড় কাটছে বলে জেনেছি। ইতোম‌ধ্যে আমরা ক‌য়েক‌টি ভাটায় অভিযান চালিয়েছি। অভিযানের সময় পাহাড় কাটার প্রমাণ পেলে জরিমানা করা হয়। তবে ওই এলাকা উপজেলা সদর থেকে দূরে হওয়ায় আমরা যখন-তখন চাইলেও যে‌তে পারি না। তবে অবশ্যই আবারও অভিযান চালাবো আমরা।’

পরিবেশ অধিদফতরের কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে পাহাড় কাটা হচ্ছে ইটভাটা মালিকদের এমন দাবির বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা পরিবেশ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক ফখর উদ্দিন আহমেদ, ‘তাদের এমন দাবি মিথ্যা। আমরা আগেও তা‌দের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছি, জরিমানা করেছি। তবে তা‌দের সিন্ডিকেট অনেক শক্তিশালী। আমরা তা‌দের কাছে অসহায় হ‌য়ে পড়েছি। কোনোভা‌বেই থামা‌তে পারছি না। বারবার মামলাও দি‌তে পারছি না। তারপরও যতটুকু পারছি, ব্যবস্থা নিচ্ছি।’

এ ব্যাপারে পরিবেশ অধিদফতরের চট্টগ্রাম মহানগর কার্যালয়ের পরিচালক হিল্লোল বিশ্বাস বলেন, ‘ফাইতং ইউনিয়নে পাহাড় কেটে বন উজাড়ের খবর পেয়েছি। দ্রুত সময়ের মধ্যে সেখানে অভিযান চালাবো আমরা।’

ভয়েস/আআ/সুত্র: বাংলা ট্রিবিউন

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION