শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:৪০ পূর্বাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

ব্যক্তিগত তথ্য প্রকাশ ও ইসলামের সীমারেখা

এইচ এম মনিরুজ্জামান:
মানবতার ধর্ম ইসলামে ব্যক্তির মান-মর্যাদা সুরক্ষার বিষয়ে জোর তাগিদ দেওয়া হয়েছে। ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষাকে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির আমানত রক্ষা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কোনো মুসলমান ভাইয়ের দৃষ্টিতে অপর মুসলমান ভাইয়ের দোষত্রুটি পরিলক্ষিত হলে, সে ক্ষেত্রে কতর্ব্য হলো- ওই দোষত্রুটি গোপন করা, জনসম্মুখে প্রকাশ করে তাকে হেয় না করা। এ বিষয়ে ইসলামের সুস্পষ্ট দৃষ্টিভঙ্গি বর্ণিত হয়েছে এক হাদিসে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী কারিম (সা.) বলেছেন, ‘এক মুমিন আরেক মুমিনের আয়না ও ভাই।’ -সুনানে আবু দাউদ : ৪৯১৮

ইসলাম ব্যক্তির গোপনীয়তা সুরক্ষার ব্যাপারে জোর তাগিদ দিয়েছে। ব্যক্তিগত গোপনীয়তা সুরক্ষায় ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও বাস্তবসম্মত। কোরআন মাজিদে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনরা, তোমরা অনেক ধারণা থেকে বেঁচে থাকো। নিশ্চয়ই কতক ধারণা গোনাহ এবং গোপনীয় বিষয় সন্ধান করো না। তোমাদের কেউ যেন কারও পশ্চাতে নিন্দা না করে। তোমাদের কেউ কি তারা মৃত ভাইয়ের মাংস ভক্ষণ করা পছন্দ করবে? বস্তুত তোমরা তো একে ঘৃণাই করো। আল্লাহকে ভয় করো। নিশ্চয় আল্লাহ তওবা কবুলকারী, পরম দয়ালু।’ -সুরা হুজরাত : ১২

বর্ণিত আয়াতে গুরুত্বপূর্ণ তিনটি বিষয় সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। ১. প্রবল ধারণা (অসৎ উদ্দেশ্যে, মন্দ ভাবনায়); ২. কারও কোনো গোপন দোষ সন্ধান করা এবং ৩, গিবত করা। ইসলামে এ তিনটি বিষয় স্পষ্টত হারাম।

আয়াতের প্রথম অংশ প্রবল ধারণা প্রসঙ্গে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমাদের কারও আল্লাহর প্রতি সু-ধারণা পোষণ ছাড়া মৃত্যুবরণ করা উচিত নয়।’ -সহিহ মুসলিম : ৫১২৫

অন্য হাদিসে আছে ‘আমি আমার বান্দার সঙ্গে তেমনি ব্যবহার করি, যেমন সে আমার সম্বন্ধে ধারণা রাখে। এখন সে আমার প্রতি যা ইচ্ছা ধারণা রাখুক।’ -মুসনাদে আহমাদ : ১৫৪৪২

এ থেকে জানা যায়, আল্লাহর প্রতি ভালো ধারণা পোষণ করা ফরজ এবং কু-ধারণা পোষণ করা হারাম। এমনিভাবে যেসব মুসলিম বাহ্যিক অবস্থার দিক দিয়ে সৎকর্মপরায়ণ দৃষ্টিগোচর হয়, তাদের সম্পর্কে প্রমাণ ছাড়া কু-ধারণা পোষণ করা হারাম। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমরা ধারণা থেকে বেঁচে থাকো। কেননা, ধারণা মিথ্যা কথার নামান্তর।’ -সহিহ বোখারি : ৪০৬৬

আয়াতে আলোচিত দ্বিতীয় নিষিদ্ধ বিষয় হচ্ছে, কারও দোষ সন্ধান করা, যাকে আমরা ‘ব্যক্তিগত গোপনীয়তা’ বুঝি। ব্যক্তিগত গোপনীয়তাকে প্রকাশ করার দ্বারা নানা রকম ফিতনা-ফ্যাসাদ সৃষ্টি হয়। এ কারণে একবার নবী কারিম (সা.) তার খুতবার দোষ অন্বেষণকারীদের সম্পর্কে বলেছেন, ‘হে সে সব লোকজন, যারা মুখে ইমান এনেছ কিন্তু এখনো ইমান তোমাদের অন্তরে প্রবেশ করেনি, তোমরা মুসলিমদের ‘গোপনীয়’ বিষয় খুঁজে বেড়িয়ো না। যে ব্যক্তি মুসলিমদের দোষ-ত্রুটি তালাশ করে বেড়াবে আল্লাহ তার দোষ-ত্রুটির অন্বেষণে লেগে যাবেন। আর আল্লাহ যার ত্রুটি তালাশ করেন তাকে তার ঘরের মধ্যে লাঞ্ছিত করে ছাড়েন।’ -সুনানে আবু দাউদ : ৪৮৮০

হজরত মুয়াবিয়া (রা.) বলেন, আমি নিজে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, ‘তুমি যদি মানুষের গোপনীয় বিষয় জানার জন্য পেছনে লাগো। তাদের জন্য বিপর্যয় সৃষ্টি করবে কিংবা অন্তত বিপর্যয়ের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দেবে।’ -সুনানে আবু দাউদ : ৪৮৮৮

অন্য হাদিসে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘মুসলিমদের গিবত করো না এবং তাদের দোষ অনুসন্ধান করো না। কেননা, যে ব্যক্তি মুসলিমদের দোষ অনুসন্ধান করে, আল্লাহ তার দোষ অনুসন্ধান করেন। আল্লাহ যার দোষ অনুসন্ধান করেন, তাকে স্বগৃহেও লাঞ্ছিত করে দেন।’ -সুনানে আবু

দাউদ : ৪৮৮০

ব্যক্তির ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘন করে দোষ-ত্রুটি অনুসন্ধান না করার এ নির্দেশ শুধু ব্যক্তির জন্যই নয়, বরং ইসলামি সরকারের জন্যও। এ ক্ষেত্রে হজরত উমর (রা.)-এর এ ঘটনা অতীব শিক্ষাপ্রদ। একবার রাতের বেলায় তিনি এক ব্যক্তির কণ্ঠ শুনতে পেলেন। সে গান গাইছিল। তার সন্দেহ হলো। তিনি তার সাথী আবদুর রহমান ইবনে আওফ (রা.)-কে বললেন, ‘এ ঘরটি কার?’ বলা হলো, এটি রবিআ ইবনে উমাইয়া ইবনে খালফের ঘর। তারা এখন শরাব খাচ্ছে। আপনার কী অভিমত? অতঃপর আবদুর রহমান ইবনে আওফ বললেন, আমার অভিমত হচ্ছে যে, আমরা আল্লাহ যা নিষেধ করেছেন তা-ই করে ফেলছি। আল্লাহ আমাদের তা করতে নিষেধ করে বলেছেন, ‘তোমরা গোপন বিষয়ে অন্বেষণ করো না।’ -সুরা হুজুরাত : ১২

তখন উমর ফিরে এলেন এবং তাকে ছেড়ে গেলেন। -মুস্তাদরাকে হাকিম : ৮২৪৯

এ থেকে প্রমাণিত হয় যে, খুঁজে খুঁজে মানুষের গোপন দোষ-ত্রুটি বের করা এবং তারপর তাদের পাকড়াও করা শুধু ব্যক্তির জন্যই নয়, ইসলামি সরকারের জন্যও জায়েজ নয়। হাদিসেও এ কথা উল্লিখিত হয়েছে। ওই হাদিসে নবী কারিম (সা.) বলেছেন, ‘শাসকরা যখন সন্দেহের বশে মানুষের দোষ অনুসন্ধান করতে শুরু করে তখন তা তাদের চরিত্র নষ্ট করে দেয়।’ -সুনানে আবু দাউদ : ৪৮৮৯

ইসলামের শিক্ষা হলো- কোনো তথ্য সমাজে প্রচার পেয়ে গেলেই তা প্রচার করা উচিত নয়। কেননা সমাজে প্রচারিত বহু তথ্যই ভিত্তিহীন হয়ে থাকে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যখন তারা এটা শুনল, তখন মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীরা আপন লোকদের সম্পর্কে কেন ভালো ধারণা করল না এবং বলল না, এটা তো সুস্পষ্ট অপবাদ।’ -সুরা নুর : ১২

ভয়েস/আআ

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION