শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:৪১ পূর্বাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

প্রকাশ্য পাপ থেকে দূরে থাকা

এইচ এম মনিরুজ্জামান:
কোনো মুসলিমই চায় না খোলামেলা পাপকাজে জড়াতে; সম্পূর্ণরূপে পাপাচারে ডুবে থাকতে। এমনকি মানুষ এটাও প্রত্যাশা করে না, অন্য কেউ তার পাপ সম্পর্কে জানুক। তার পরও মানুষ নানাভাবে পাপের কাজে জড়িয়ে যায়। এমতাবস্থায় ইসলামি স্কলারদের পরামর্শ হলো, কখনো যদি পাপ হয়ে যায়, তখন করণীয় হচ্ছে আল্লাহর কাছে দোয়া করা। হে আল্লাহ! তুমি আমাকে ইহকাল-পরকালের অপমান-অপদস্থতা থেকে নিরাপদে রাখো।

মনে রাখতে হবে, পাপ করার কারণে যদিও দুনিয়াতে কোনো শাস্তি দেওয়া না হয়, কিন্তু সে আল্লাহর বিশেষ ইবাদত-বন্দেগি থেকে বঞ্চিত হবে। গোনাহকে ঘৃণা ও খারাপ জানার অনুভূতি হারিয়ে যাবে। ফলে গোনাহের কাজে সে অভ্যস্ত হয়ে যায় এবং গোনাহ করতে কোনো প্রকার কুণ্ঠাবোধ করে না। এমনকি সমস্ত মানুষও যদি তাকে দেখে ফেলে বা তার সমালোচনা করে, তারপরও সে কোনো অপরাধ বা অন্যায় করতে লজ্জাবোধ বা খারাপ মনে করে না। এ ধরনের মানুষকে আল্লাহ ক্ষমা করেন না এবং তাদের তওবার দরজা বন্ধ হয়ে যায়। ফলে তারা বেঈমান হয়ে দুনিয়া থেকে চির বিদায় নেয়।

হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আমার সব উম্মতকে ক্ষমা করা হবে একমাত্র প্রকাশ্য পাপী ছাড়া।’ প্রকাশ্যে পাপ করার অর্থ হলো, আল্লাহ কোনো বান্দার অপকর্মকে গোপন রাখল কিন্তু লোকটি তার নিজের অপকর্ম প্রকাশ করে নিজেকে অপমান করে এবং বলে থাকে, হে ভাই! আমি আজ অমুক অমুক কাজ করেছি ইত্যাদি। এভাবে সে তার নিজের গোপনীয়তা প্রকাশ করে অথচ আল্লাহ তার গোনাহকে গোপন রাখে।

সুতরাং বোঝা গেল, আল্লাহর কাছে প্রকাশ্য পাপ ক্ষমার যোগ্য নয়। প্রকাশ্য পাপ কী? উদাহরণস্বরূপ হিসেবে বলা যায়, ধরুন গাড়িতে আপনি এত উচ্চ স্বরে গান শুনছেন যে, আশপাশের লোকজনও তা শুনছে। এতে করে আপনি মানুষের সামনে আপনার এই পাপের ঘোষণা দিয়ে দিলেন যে, আমি এই গান শুনব, যদিও আল্লাহ এটাকে হারাম করেছেন।

এটাই হচ্ছে প্রকাশ্য পাপ। বন্ধু-বান্ধবদের আড্ডায় বসে নিজের অসৎকর্ম, অন্যায় ও পাপাচার নিয়ে মজা করা প্রকাশ্য পাপেরই অন্তর্ভুক্ত। যেমন একটি মেয়েকে কীভাবে আপনি উত্ত্যক্ত করলেন, কীভাবে মদের নেশায় আসক্ত হলেন, কীভাবে ব্যভিচারে জড়িয়ে পড়লেন, কেমন করে চুরি করলেন ইত্যাদি। এমতাবস্থায় বান্দা যদি তার পাপ কাজ থেকে ফিরে এসে তওবা না করে, তাহলে আশঙ্কা আছে যে, আল্লাহ তাকে ক্ষমা করবেন না!

এর চেয়ে আরও মারাত্মক ও জঘন্য ব্যাপার হচ্ছে কোনো তরুণ তার সঙ্গীর পাপাচার ও অন্যায় আচরণের কথা বিস্তারিতভাবে শোনা। এমতাবস্থায় সঙ্গী তরুণটি ঘটনাটিকে একটি বানোয়াট গল্পে রূপান্তর করে। অথচ সে এমনটি আদৌ করেনি। অহেতুক সে আপত্তিকর ভ্রমণ, অবৈধ সম্পর্ক ও নানাবিদ মন্দ কাজের কথা তার বন্ধুদের সঙ্গে গল্পের ঢংয়ে বলতে আরম্ভ করে। মনে রাখবেন, যা কিছু আপনি বলছেন, সবকিছুই ফেরেশতারা নোট করে নিচ্ছে। কাল কিয়ামতের দিন আপনাকে এসব গল্পগুজবের হিসেব দিতে হবে। যদিও এটা ছিল মিথ্যা। জাহান্নাম ছাড়া তখন আর কোনো গন্তব্যর থাকবে না।

বান্দা গোনাহ করতে করতে গোনাহ করা তার জন্য সহজ হয়ে যায়, অন্তরে সে গোনাহকে ছোট মনে করতে থাকে। এটা হলো ধ্বংসের নিদর্শন। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসঊদ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘একজন মুমিন সে গোনাহকে এমনভাবে ভয় করে যে, সে যেন একটি পাহাড়ের নিচে আছে, আর আশঙ্কা করছে; পাহাড়টি তার ওপর ভেঙে পড়বে। পক্ষান্তরে একজন বদকার ব্যক্তি সে তার গোনাহকে মনে করে তার নাকের ওপর একটি মাছি বসে আছে, হাত নাড়া দিল আর সে চলে গেল।’

অনেকেই আগ্রহভরে হারাম জিনিস যেমন পত্র-পত্রিকার খারাপ দৃশ্য বা টিভি সিরিয়াল বা সিনেমার দিকে নজর দেয়, এমনকি এদের কেউ কেউ যখন জানতে পারে যে, এটি হারাম; তখন খুবই রসিকতা করে প্রশ্ন করে এতে কতটুকু গোনাহ রয়েছে? এটি কি কবিরা গোনাহ না সগিরা গোনাহ? আপনি যখন এটির বাস্তব অবস্থা জানবেন তখন তুলনা করে দেখুন হাদিসটির সঙ্গে। হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘তোমরা এমন সব কাজ করো, যা তোমাদের দৃষ্টিতে চুলের চেয়েও সূক্ষ্ম। কিন্তু আমরা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর যুগে এগুলোকে মনে করতাম ধ্বংসকারী। আমরা পাপের কাজকে ছোট মনে করি। অথচ আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা ব্যভিচারের নিকটবর্তী হয়ো না, কেননা তা অত্যন্ত নির্লজ্জ কাজ এবং খুবই খারাপ পথ।’

প্রশ্ন হলো, ব্যভিচার হারাম এবং আল্লাহর অসন্তুষ্টির কারণ। এ কথা জানা সত্ত্বেও এতে কেউ লিপ্ত হতে পারে? এটাও কি সম্ভব যে, কোনো মুমিন ব্যক্তি হাজার হাজার মানুষের সামনে এই মন্দ কাজের কথা গান-বাদ্যের মাধ্যমে ছড়াতে পারে?

একজন মুমিন যদি কখনো এমন পাপ কাজে জড়িয়ে পড়ে, অথবা কখনো সেদিকে তার পা চলে যায়, তাহলে তো আফসোস ও লজ্জায় তার অবস্থা হওয়া দরকার রাসুলের সাহাবি হজরত মায়িয বিন মালিক আসলামি (রা.)-এর মতো। ঘটনাটি হলো, হজরত মায়িয বিন মালিক (রা.) যখন হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে বার বার ব্যভিচারের স্বীকারোক্তি করছিলেন তখন রাসুল (সা.) তার প্রতি এতটুকুও ভ্রুক্ষেপ করেননি। চার বারের পর তিনি তাকে এটা বলেন, হয়তো বা তুমি তাকে চুমু দিয়েছ, ধরেছ কিংবা তার প্রতি দৃষ্টিপাত করেছ। কারণ এতে করে তিনি তাকে ব্যক্তিগতভাবে আল্লাহর কাছে খাঁটি তওবা করার সুযোগ করে দিতে চেয়েছিলেন।

গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, ব্যভিচারের জন্য তওবা করাই যথেষ্ট। তবে যদি ব্যভিচার করার কথা প্রকাশ পায়, তাহলে অবশ্যই শাস্তি পেতে হবে। এর অনেকগুলো কারণ রয়েছে। ব্যভিচার এমন একটি পাপ, যা একা হয় না। অন্য আরেকজন পুরুষ কিংবা নারীর প্রয়োজন হয়। সামাজিক সম্পর্ক নষ্ট হয়। ডিভোর্স বৃদ্ধি পায়, বিভিন্ন রোগ সৃষ্টি হয়। তাই ব্যভিচার বন্ধের জন্য দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রয়োজন। কারণ যদি কোনো শাস্তির ব্যবস্থা না করা হয় তাহলে এটা ব্যাপকভাবে প্রসার পেত। তাই ব্যভিচারীর শাস্তি প্রয়োজন।

মুমিনের অন্তর গোনাহের কারণে জ¦লে ওঠে। মুমিন গোনাহ করলে তৎক্ষণাত তওবা করে নেয়। নিজের কৃত পাপের জন্য অনুশোচনায় দগ্ধ হয়। ভবিষ্যতে না করার দৃঢ় সংকল্প করে। এরপর সে আল্লাহর নৈকট্য সৃষ্টিকারী কাজ অধিকহারে করে। ইরশাদ হয়েছে, ‘আর যারা কোনো অশ্লীল কাজ করলে অথবা নিজদের প্রতি জুলুম করলে আল্লাহকে স্মরণ করে, অতঃপর তাদের গোনাহের জন্য ক্ষমা চায়। আর আল্লাহ ছাড়া কে গোনাহ ক্ষমা করবে? আর তারা যা করেছে, জেনে শুনে তা তারা বার বার করে না।’

ভয়েস/আআ

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION