মঙ্গলবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৩:৩২ পূর্বাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

কক্সবাজারে অবাধে বিক্রি হচ্ছে নিষিদ্ধ নোট ও গাইড বই

এম এ সাত্তার

কক্সবাজারে নিষিদ্ধ নোট ও গাইড বই বাজারে বিক্রি হলেও কর্তৃপক্ষ নিরব রয়েছে। অথচ সহায়ক বই’ নামে গাইডে বাজার সয়লাব। বছরের শুরুতে এসব বই কিনতে লাইব্রেরী গুলোতে ভিড় জমাচ্ছেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। স্থানীয় প্রশাসনের তদারকি না থাকায় অবাধে বিক্রি হচ্ছে সরকার নিষিদ্ধ নোট ও গাইড বই।সৃজনশীল মেধাবিকাশ নিশ্চিত করতে ১৯৮০ সালের নোট বই (নিষিদ্ধকরণ) আইনে এই বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। এই আইন লঙ্ঘনের দায়ে সর্বোচ্চ সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ড অথবা ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান রয়েছে প্রশাসনের।

এ ব্যাপারে অভিভাবকরা বলেন, সরকার বিনামূল্যে বই দিলেও চড়া মূল্যে আমাদের নোট বইগুলো কিনতে হচ্ছে। এক প্রশ্নের উত্তরে তারা বলেন, প্রাইভেট কোচিং ছাড়া সন্তানেরা পড়ালেখা করতে চান না। টাকার অভাবে প্রাইভেট /কোচিং এ পাড়াতে না পারলেও বাধ্য হয়ে ছেলেমেয়েদের কিনে দিতে হয় নোট ও গাইড বই।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মোহাম্মদী লাইব্রেরীর সামনে রাস্তার উপর এক ঠেলা গাড়ি বই। এই বইগুলো কার জিজ্ঞাসা করলে ঠেলাগাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে থাকা এক লেবার জানান ওই দোকানের। অর্থাৎ মোহাম্মদী লাইব্রেরীর। এরপর বুকভিলা লাইব্রেরী, স্টুডেন্ট লাইব্রেরী , বিদ্যাসাগর লাইব্রেরী, রহমানিয়া লাইব্রেরী, মক্কা লাইব্রেরীতে গিয়ে দেখা গেছে, দোকানের সামনে রাস্তার উপর, দোকানের ভিতর ও প্রত্যেক লাইব্রেরির গুদামজাত করে রেখেছেন লাখ লাখ পিস নোট ও গাইড বই।

অভিভাবকের অভিযোগ, শিক্ষার্থীদের জন্য আশীর্বাদ নয় অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে গাইড বই। পাঠ্যপুস্তকের নোট বা গাইড বই বাজারজাত নিষিদ্ধ থাকলেও কক্সবাজার জেলায় অবৈধ নোট-গাইড বই বিক্রির ধুম পড়েছে। জেলা ও উপজেলা শহরের বইয়ের দোকানে প্রকাশ্যে বেচাকেনা চলছে এসব নোট বই। নিষিদ্ধ গাইড বইয়ের জাঁতাকলে ঝরে যাচ্ছে মেধাবী শিক্ষার্থী। শিক্ষক ও প্রকাশনীর প্রতিনিধিদের প্ররোচনায় সহায়ক নামে নোট-গাইড কিনতে বাধ্য হয় শিক্ষার্থীরা। এতে লাভবান হচ্ছে অসাধু ব্যবসায়ী।

জেলার বিভিন্ন লাইব্রেরি ঘুরে দেখা যায়, বছরের শুরু থেকে বিভিন্ন পাবলিকেশন্সের নোট ও গাইড বইয়ে ঠাসা লাইব্রেরী।

কক্সবাজারে সবচেয়ে বড় লাইব্রেরী লালদীঘির পশ্চিম পাড়ে বুকভিলা লাইব্রেরী, ফজল মার্কেট এর বিপরীতে মোহাম্মদী লাইব্রেরী, রক্ষিত মার্কেট এ রহমানিয়া লাইব্রেরী, বিদ্যাসাগর লাইব্রেরী, স্টুডেন্ট লাইব্রেরী। বিশেষ করে মোহাম্মদী লাইব্রেরী ,বুক ভিলা লাইব্রেরী, স্টুডেন্ট লাইব্রেরী, রহমানিয়া লাইব্রেরীর তত্ত্বাবধায়নে জেলা জুড়ে নোট ও গাইড বই বিক্রি হয়ে আসছে বলে দাবি শিক্ষক-শিক্ষার্থী অন্যান্য লাইব্রেরীর মালিকরা।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কক্সবাজার জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের এক পদস্থ কর্মকর্তা বলেন, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নোটগাইড বই না কিনতে নিরুৎসাহিত করা হয়। কোন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা নোট-গাইড কিনতে বাধ্য করলে অভিযোগ পাওয়া মাত্রই ব্যবস্থা নিবেন।

একাধিক অভিভাবক বলেন, শিক্ষকরাই বিভিন্ন কোম্পানির নোট-গাইডের সহায়তা নেওয়ার কথা বলেন। শিক্ষকের কথা শুনে শিক্ষার্থীরা বাড়িতে এসে বায়না করে গাইড কিনতে হবে। এসব গাইড-নোটের দাম আকাশছোঁয়া। দরিদ্র পরিবারের সন্তানেরা সবচেয়ে বিপাকে পড়েন। কর্তৃপক্ষের অবহেলায় নিষিদ্ধ নোট-গাইডের প্রচলনে সরকারের ভালো উদ্যোগ সফল হচ্ছে না।

লিংক রোড এলাকার এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক জানান, বাধ্য হয়ে মোহাম্মদী লাইব্রেরী থেকে চতুর্থ শ্রেণীর গাইড অতিরিক্ত মূল্যে কিনতে হয়েছে। এইসব গাইড বই ব্যবহারের ফলে শিক্ষার্থীরা মূল বই থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে।

অটো চালক আবদুল কাদের বলেন, সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন। এরমধ্যে সন্তানদের শিক্ষিত করার উদ্দেশ্যে লেখাপড়ার খরচের টাকা জোগাড় করতে রাতদিন পরিশ্রম করতে হয় তাকে। ছেলে মেয়ে দুইজনকে চড়া দামে কিনে দিয়েছেন গাইড বই।

এ ব্যাপারে বক্তব্য জানতে চাইলে মোহাম্মদী লাইব্রেরীর মালিক ওমর ফারুক বলেন সরকারি নিষিদ্ধ কোন বই বিক্রি করছেন না। নোট, গাইড বইয়ের আদলে সহায়ক বই বিক্রি করেন মাত্র। স্টুডেন্ট লাইব্রেরীর মালিক রুহুল আমিন,ও বলেন একই কথা। জেলা পাঠ্যপুস্তক সমিতির সভাপতি, চকরিয়া বইঘরের মালিক এহেছান ও রহমানিয়া লাইব্রেরীর ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। তবে সাধারণ সম্পাদক নুরুল আমিন নোট ও গাইড বই বিক্রির কথা স্বীকার করে বলেন, পাঠ্যপুস্তক প্রকাশনা কোম্পানীর প্রতিনিধিরা আমাদেরকে বই সেল করেন। স্কুল-কলেজের শিক্ষকেরা বিভিন্ন শ্রেণীর ছাত্রছাত্রীদের এইসব বই কিনতে বাধ্য করেন। এই নিষিদ্ধ বইয়ের চাহিদা আছে বিধেয় আমরা এসব নিষিদ্ধ বই বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছি।

উল্লেখ্য, ২০০৮ সালে হাইকোর্ট বিভাগের এক আদেশে নোট বইয়ের পাশাপাশি গাইড বইও নিষিদ্ধ করা হয়। ২০০৯ সালের নভেম্বরে নোট-গাইড বই নিষিদ্ধ করে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন তৎকালীন পুস্তক সমিতির সভাপতি। আপিল বিভাগে বিষয়টির উপর শুনানি শেষে ওই বছরের নভেম্বরেই আপিল খারিজ করে দেন হাইকোর্ট। ফলে নোট-গাইড মুদ্রণ, প্রকাশনা, বিক্রি ও বিতরণ করা পুরোপুরি অবৈধ হয়ে যায়।

এত কিছুর পরও এক শ্রেণীর ব্যবসায়ীরা আদালতের রায়কে উপেক্ষা করে পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি অনুশীলনী মূলক বই নাম দিয়ে নোট ও গাইড বই অবাধে বিক্রি করে আসছে। কিন্তু ২০০৯ সালের রায়ে উল্লেখ করা হয়, যে কোন বোর্ড বইয়ের রেফারেন্স কোন বই বের করলেই তা নোট ও গাইড বই বলে বিবেচিত হবে।

ভয়েস/জেইউ।

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION