মঙ্গলবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৩:৩১ পূর্বাহ্ন
আবদুল আজিজ:
মিয়ানমারের রাখাইনে সেনাবাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহী গ্রুপ আরকান আর্মির চলমান সহিংস ঘটনায় বাংলাদেশের এপারের সাধারণ মানুষ চরম আতংকে রয়েছে। সীমান্তে বসবাসরত বেশির ভাগ মানুষ তাদের বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে গেছে। নিরাপদ আশ্রয় নিয়েছে স্বজন ও আশপাশের গ্রামগুলোতে। তিন ধরে আরকান আর্মির সাথে গৃহযুদ্ধে লিপ্তে থাকা মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর ছোঁড়া গুলি ও মর্টারসেল পড়ছে বাংলাদেশের ভিতরে। একারণে চরম নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে সীমান্তের মানুষ। অবশ্য, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সীমান্তে সতর্কবস্থায় রয়েছে বলে জানা গেছে।
সীমান্তের একাধিক সূত্র বলছে, রাখাইনের তুমব্রু, ঘুমধুম সীমান্তে মিয়ানমার বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) তিনটি ক্যাম্প দখলে নিয়েছে বিদ্রোহী গ্রুপ আরকান আর্মি। আজ সকাল থেকে রাখাইনের ঢেকিবুনিয়া ক্যাম্পে অভিযান জোরদার করেছে আরকান আর্মি। বর্তমানে কক্সবাজারের উখিয়ার রহমতেরবিল, আন্জুমানপাড়া সীমান্তের ওপারে বিকট শব্দে গোলাগুলি চলছে। এ অবস্থায় সীমান্তের বিদ্রোহী গ্রুপ আরকান আর্মির সঙ্গে গৃহযুদ্ধে ঠিকতে না পেরে বাংলাদেশে পালিয়ে আশ্রয় নিয়েছে এ পর্যন্ত ২২৯ জন বিজিপির সদস্য। এদের অনেকে আহতবস্থায় রয়েছে।
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদর দপ্তরের গণসংযোগ কর্মকর্তা শরীফুল ইসলামের দেয়া তথ্যমতে, মিয়ানমারের রাখাইনে চলমান সহিংস ঘটনায় সীমান্ত পার হয়ে সশস্ত্রবস্থায় ২৬৪জন বর্ডার গার্ড পুলিশের সদস্য বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। তাদের নিরস্ত্র করে বিজিবির হেফাজতে নেয়া হয়েছে।
আজ সকাল সাড়ে ৯টার দিকে সীমান্তের ওপারে যুদ্ধের স্থান পরিবর্তন করে ঢেকিবুনিয়া এলাকার বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি) ২নং ব্যাটালিয়ন ক্যাম্পে এলাকা থেকে মর্টারশেল এসে সীমান্তের এপারে দক্ষিণ ঘুমধুম উচ্চ বিদ্যালয়ের পিছনে বেতবুনিয়া এলাকার ছৈয়দ নুর শিকদারের বাড়ীর জানালায় আঘাত এনেছে। এতে কেউ হতাহত হয়নি।
নাইক্ষ্যংছড়ি ঘুমধুম ইউপি চেয়ারম্যান এমকেএম জাহাঙ্গীর আজিজ জানিয়েছেন, আজ ভোর সকাল থেকে ঘুমধুম সীমান্তের ওপারে ঢেকিবুনিয়া এলাকার মিয়ানমার সীমান্তের ওপারে বিজিপির ২নং ব্যাটালিয়ন ক্যাম্প এলাকায় তুমুলযুদ্ধে গোলাগুলির শব্দ শোনা যাচ্ছিলো। আনুমানিক সকাল ৯টার দিকে হঠাৎ একটি মটরশেল এসে ঘুমধুম উচ্চ বিদ্যালয়ের পিছনে ছৈয়দ নুর সিকদার ও সাবেক লে:নায়েক ডা: নুরুল ইসলামের সীমানার গাছে ছিটকে গিয়ে ছৈয়দ নুর শিকদারের বসত ঘরের এক পাশে আঘাত করে। তবে মানুষের কোন হতাহত হয়নি।
উখিয়ার পালংখালী ইউপি চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী জানিয়েছেন, আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে সীমান্তের ওপারে ব্যাপক গোলাগুলির শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। হঠাৎ মিয়ানমার থেকে ছোড়া একটি মর্টারশেল উখিয়ার থাইংখালী রহমতের বিল সীমান্তের এক কিলোমিটার ভিতরে এসে পড়ে। এতে করে সাধারণ মানুষের মধ্যে আতংক বিরাজ করছে। সকালে ওপার থেকে কিছু অস্ত্রধারী লোক এপারে আশ্রয়ের জন্য প্রবেশ করছে। তাদের বিজিবির হেফাজতে নেয়া হয়েছে।
লম্বাবিল সীমান্তে বসবাসরত শফিউল আলম জানান, সীমান্তের তুমব্রু এলাকায় সপ্তাহজুড়ে যুদ্ধের গোলাগুলি, মর্টারশেল,গ্রেনেটের আওয়াজ শুনে আসছিলাম। এখন হয়তো সেদেশের সরকার আর বিদ্রোহী গোষ্ঠী মধ্যকার যুদ্ধে স্থান (যুদ্ধক্ষেত্র) পরির্বতন করেছে বলে ধারনা করা হচ্ছে।
উখিয়ার ধামনখালী সীমান্তে বসবাসরত মোহাম্মদ আতিক জানান, সকাল থেকে তুমুল যুদ্ধ চলছে সীমান্তের ওপারে। সকাল ৯টার পরপর সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশ বেশকিছু লোক অনুপ্রবেশ করেছে। এসব লোকদের বিজিবি আটক করছে বলে শুনছি।
গত সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারি) মিয়ানমার থেকে ছোড়া একটি মর্টারশেল সীমান্তের ঘুমধুমে একটি বসববাড়িতে এসে পড়ে। এতে ওই এলাকার জলপাইতলীতে বাংলাদেশি এক নারীসহ দুইজন নিহত হয়েছেন।
গত এক বছর ধরে বাংলাদেশের কক্সবাজার ও বান্দরবানের মিয়ানমার সীমান্তের ওপারে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরকান আর্মি (এএ) সঙ্গে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও দেশটির সীমান্তরক্ষী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) লড়াই চলছে। মাঝে কিছুদিন উত্তেজনা কমে আসলেও গত তিনদিন তুমুল লড়াই হচ্ছে।
সীমান্তের নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছেন, আজ মঙ্গলবার (৬ ফেব্রুয়ারি) সকালে থাইংখালী রহমতেরবিল সীমান্ত দিয়ে সে দেশের সীমান্তরক্ষী বিজিপি ছাড়াও অর্ধশতাধিক মিয়ানমারের নাগরিক বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। তাদের বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্যরা হেফাজতে নিয়েছে।
ভয়েস/জেইউ।