শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬:৩৯ পূর্বাহ্ন
মুহাম্মদ জিয়াউল হক:
একসময় শিক্ষার্থীদের জন্য আরবি ও মৌলিক ইসলাম শিক্ষার মসজিদভিত্তিক মক্তব ব্যবস্থা খুবই জনপ্রিয় ছিল। কিন্তু কালপরিক্রমায় শহর-গ্রাম সব জায়গায় এখন আগের মতো এর গুরুত্ব নেই। তবে সচেতন মা-বাবা সন্তানের প্রাথমিক বা মৌলিক ইসলামি শিক্ষাটুকু দিতে আগ্রহী। মৌলিক শিক্ষা বলতে, কোরআন মাজিদ শুদ্ধভাবে পড়তে পারা। নামাজের দোয়াগুলো মুখস্থ করা এবং দৈনন্দিন জীবনে ইসলামের অতি প্রয়োজনীয় বিধানগুলো জেনে নেওয়া।
স্কুলশিক্ষার্থীদের কোরআনসহ ইসলামের মৌলিক বিষয়াদী শিক্ষাদানের উদ্দেশ্যে মাওলানা মুহাম্মদ আবদুল কাইয়ুম প্রতিষ্ঠা করেন ‘আফটার স্কুল মাকতাব’। শুরুটা কিশোরগঞ্জ শহরে হলেও বর্তমানে ঢাকাসহ বেশ কয়েকটি জেলায় এর কার্যক্রম অত্যন্ত সুচারুরূপে পরিচালিত হচ্ছে। এখানে দীর্ঘমেয়াদি সিলেবাসভিত্তিক অ্যাকাডেমিক প্রক্রিয়ায় পাঠদান করা হয়। বাচ্চারা স্কুল ও কোচিং টাইমের আগে-পরে ব্যাচভিত্তিক প্রতিদিন এক ঘণ্টার জন্য পড়তে আসে। স্কুলটাইম যাদের সকালে তারা দুপরে, যাদের দুপুরে তারা সকালে বা রাতের শিফটে আসে।
কিশোরগঞ্জ সদরে রয়েছে ১০টি শাখা। উকিলপাড়ায় অবস্থিত একটি শাখায় গিয়ে দেখা যায়, সকাল ৯টা থেকে ১০টার ব্যাচ চলছে। ভিন্ন ভিন্ন কক্ষে শিক্ষার্থীরা পড়ছে। বর্তমানে ২২তম ব্যাচ চলমান। এসএসসি পরীক্ষা শেষ হলে আরও একটি ব্যাচ বাড়বে বলে দায়িত্বরত শিক্ষকরা জানিয়েছেন। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত পাঁচজন শিক্ষক সার্বক্ষণিক ছাত্রদের পাঠদান কাজে নিয়োজিত। ছোট বাচ্চাদের অভিভাবকরা নির্ধারিত সময়ে নিজ দায়িত্বে সন্তানদের এখানে নিয়ে আসেন। মেয়েদের মধ্যে যাদের বয়স সাতের ঊর্ধ্বে, তাদের জন্য আলাদা শাখা রয়েছে।
এখানকার শিক্ষার্থীদের বয়স উপযোগী বইপাঠের মাধ্যমে আদব-কায়দা, সুন্দর ব্যবহার ও নৈতিক আদর্শ শিক্ষা দেওয়া হয়। আজান হলে বাচ্চারা বাসায় নামাজ পড়ার জন্য আম্মুকে ডাকতে শুরু করে। জুতা পরার সময় প্রথমে ডান পায়ে পরে। বিসমিল্লাহ বলে খাবার শুরু করে। ঘুমের আগে দোয়া পড়ে। মা-বাবাসহ ঘরের সবাইকে সালাম দেয়। এ আখলাকি দৃশ্যগুলো অভিভাবকদের খুবই প্রভাবিত করে, যা দেখে অন্যান্য অভিভাবক উদ্বুদ্ধ হন।
বাচ্চারা কায়দা শেষ করে কোরআন মাজিদ শুদ্ধভাবে পড়তে শেখে এবং নামাজ শিক্ষাসহ ইসলামের মৌলিক বিষয়গুলো সম্পর্ক বেসিক ধারণা নিতে পারে। নির্দিষ্ট কিছু ফজিলতের সুরা মুখস্থ করানো হয়। আগ্রহীদের জন্য কোরআন মাজিদ হেফজ করার ব্যবস্থা রয়েছে।
আলোকিত প্রজন্ম গঠনের স্বপ্নদ্রষ্টা মাওলানা মুহাম্মদ আবদুল কাইয়ুম বলেন, সাধারণ শিক্ষা আর্জনকারী ছাত্ররা যেন দ্বীনি শিক্ষা থেকে বঞ্চিত না হয়, সেই লক্ষ্যে সিলেবাসভিত্তিক কোরআন শিক্ষা জোরদার করা জরুরি। আমাদের এই এলাকার প্রায় ৯০ ভাগ বাচ্চা আমাদের এখানে কোরআন শিখতে আসে।
দারুল আরকাম ইনস্টিটিউটের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হচ্ছে ‘আফটার স্কুল মাকতাব’। রয়েছে শিক্ষক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা। বছরের বিভিন্ন সময়ে এ প্রশিক্ষণ হয়। আমাদের বিশ্বাস, নবীন আলেমরা এগিয়ে এলে কর্মক্ষেত্রের বিশাল এ অঙ্গন আরও সমৃদ্ধ হবে।
ভয়েস/আআ