শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১:১৫ পূর্বাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

মহান আল্লাহর সান্নিধ্য অর্জনে করণীয়

শরিফ আহমাদ:
রমজান শ্রেষ্ঠ একটি মাস। কোরআন ও হাদিসে এ মাসের কথা গুরুত্বের সঙ্গে বর্ণিত হয়েছে। উসমান (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘শাবান আমার মাস আর রমজান আল্লাহর মাস।’ (শুআবুল ইমান, হাদিস ৩৮১৩) এ মাসে বিভিন্ন ইবাদতের মাধ্যমে মহান আল্লাহর সান্নিধ্য অর্জন করতে হয়। তাই আগে আগে রমজানের প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে হয়। ইবাদতের রুটিন তৈরি করে নিতে হয়। রমজানে আল্লাহর সান্নিধ্য অর্জনে মুমিনের করণীয় সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হলো।

সিয়াম সাধনা করা : রমজানে মুমিনের প্রথম দায়িত্ব ও কর্তব্য হলো রোজা রাখা। রোজা ইসলামের পঞ্চ স্তম্ভের মধ্যে একটি। হিজরতের আঠারো মাস পর রমজানের রোজা ফরজ করা হয়। প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থ মুসলিম নর-নারীর ওপর রমজানের রোজা ফরজ। বর্ণিত হয়েছে, ‘হে ইমানদারগণ! তোমাদের ওপর রমজানের রোজা ফরজ করা হয়েছে। যেভাবে ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর, যাতে করে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো।’ সুরা বাকারা, আয়াত ১৮৩

রোজার ফজিলত সম্পর্কে আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, যে লোক রমজান মাসের রোজা রাখবে ইমান ও চেতনা সহকারে, তার পূর্ববর্তী সব গুনাহ মাফ হয়ে যাবে। সহিহ বুখারি, হাদিস ৩৭

তারাবির নামাজ আদায় করা : একজন মুমিনকে দিনের বেলা রোজা আর রাতের বেলা তারাবির নামাজ আদায় করতে হয়। প্রতিটি জ্ঞানবান ও প্রাপ্তবয়স্ক নর-নারীর ওপর এই নামাজ সুন্নতে মুয়াক্কাদা। তারাবির নামাজ ২০ রাকাত। আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসুল (সা.) রমজান মাসে ২০ রাকাত ও বিতিরের নামাজ পড়তেন। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদিস ৭৬৯২) নিয়মিত এই নামাজ আদায়কারীর জন্য রয়েছে আলাদা পুরস্কার। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে সওয়াবের আশায় রমজান মাসে তারাবির নামাজ পড়বে তার অতীতের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। সহিহ বুখারি, হাদিস ৩৭

কোরআন তেলাওয়াত করা : রমজান মাসে মুমিন নারী-পুরুষকে অধিক পরিমাণে কোরআন তেলাওয়াত করতে হয়। একাধিকবার খতম করতে হয়। কাজের ফাঁকে সময় বের করে কোরআনের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করতে হয়। কেননা এ মাসে কোরআন নাজিল করা হয়েছে। বর্ণিত হয়েছে, ‘রমজান মাস এতে কোরআন নাজিল করা হয়েছে মানুষের হেদায়েতের জন্য এবং হেদায়েতের এমন স্পষ্ট নিদর্শন সংবলিত, যা সঠিক পথ দেখায় এবং (সত্য-মিথ্যার মধ্যে) চূড়ান্ত ফায়সালা করে দেয়।’ (সুরা বাকারা, আয়াত ১৮৫) কোরআন তেলাওয়াত করা ও শোনা উভয়টা গুরুত্বপূর্ণ আমল। জিব্রাইল (আ.) রমজানের শেষ পর্যন্ত প্রত্যেক রাতে রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন এবং তারা পরস্পর কোরআন শোনাতেন। সহিহ বুখারি

নফল ইবাদত করা : রমজানে প্রত্যেকটি মুমিন নারী-পুরুষকে নফল ইবাদতের প্রতি আলাদা গুরুত্ব রাখতে হয়। বিশেষ করে রমজানে তাহাজ্জুদ আদায়ের প্রতি যত্নবান হতে হয়। রমজানে প্রত্যেক নেক আমলের প্রতিদান বাড়িয়ে দেওয়া হয়। একটি হাদিসে এসেছে রমজান মাসের একটি নফল ইবাদতের সওয়াব অন্য মাসের একটি ফরজ ইবাদতের সমতুল্য। মাদান ইবনে আবু তালহা (রহ.) থেকে বর্ণিত। রাসুলের আজাদকৃত গোলাম সাওবান (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, আল্লাহর উদ্দেশ্যে অধিক সিজদা করো (নফল নামাজ পড়ো), কেননা তুমি যখনই আল্লাহর উদ্দেশে একটি সিজদা করবে তখন এ দিয়ে আল্লাহতায়ালা তোমার মর্যাদা এক ধাপ বাড়িয়ে দেবেন এবং তোমার একটি পাপ মোচন করে দেবেন। সহিহ মুসলিম

দান-সদকা করা : রোজার মাসে নারী পুরুষকে দানের হাত প্রসারিত করতে হয়। রমজান দান-সদকা করার শ্রেষ্ঠ মাস। মানুষকে ইফতার করানো বা টাকা দিয়ে সাহায্য করা প্রশংসনীয় কাজ। এটা দ্বিগুণ প্রতিদান পাওয়ার উপায়। ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত। ‘রাসুল (সা.) দানশীলতায় সবচেয়ে অগ্রগামী ছিলেন। আর অন্য সময়ের চেয়ে রমজান মাসে তার দানশীলতা অত্যধিক হতো। কেননা জিবরাঈল (আ.) প্রতি বছর রমজান মাসে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন। রমজান শেষ হওয়া পর্যন্ত রাসুল (সা.) তার সামনে কোরআন পাঠ করে শোনাতেন। যখন জিবরাইল (আ.) তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন তখন তিনি কল্যাণ প্রবাহের (বসন্তের) বাতাসের চেয়েও অধিক দানশীল হতেন।’ সহিহ বুখারি, হাদিস ০৬

কদর ও ইতেকাফ : রমজানের শেষ দশকে একজন মুমিনকে ইবাদাতের পরিধি বৃদ্ধি করতে হয়। কোমর বেঁধে আমল করতে হয়। বিশেষ করে লাইলাতুল কদরে জাগ্রত থেকে নেকি অর্জন করতে হয়। এই এক রাতের ইবাদত হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস এবং সওয়াব প্রাপ্তির প্রত্যাশায় লাইলাতুল কদরে কিয়াম (ইবাদত-বন্দেগী) করবে, তার পূর্বের গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে। (সহিহ বুখারি, হাদিস ২০১৪) রমজানের শেষ দশ দিন ইতিকাফ করাও গুরুত্বপূর্ণ আমল। রাসুল (সা.) ইতিকাফ করেছেন। ইতিকাফকারীর ভাগ্যে সহজে লাইলাতুল কদর নসিব হয়।

মাগফিরাত কামনা করা : রহমত, বরকত ও মাগফিরাত নিয়ে রমজান। এ মাসে কোরআন তেলাওয়াত, জিকির আজকার ও দোয়া-দুরুদের পাশাপাশি প্রচুর পরিমাণে মাগফিরাত কামনা করতে হয়। তওবার অশ্রু জলে অতীতের পাপরাশি ধুয়ে মুছে নব উদ্যমে জীবন সাজাতে হয়। রমজান পাওয়া সত্ত্বেও মাগফিরাত না পেলে ধ্বংস অনিবার্য। জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, দুর্ভাগ্য হোক সেই ব্যক্তির, যে রমজান পেল এবং তা অতিক্রান্ত হওয়া সত্ত্বেও তার মাগফেরাত হলো না। (আল আদাবুল মুফরাদ, হাদিস ৬৪৬)

তাই প্রত্যেকটি মুমিনের করণীয় হলো রমজানে ইবাদত বন্দেগির মাধ্যমে আল্লাহর সান্নিধ্য অর্জন করা। আল্লাহতায়ালা সবাইকে তাওফিক দান করুন। আমিন।

ভয়েস/আআ

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION