শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:২৭ অপরাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

যে নামাজ মানুষকে নিষ্পাপ করে

মাওলানা রফিকুল ইসলাম:
নামাজ আল্লাহর সঙ্গে মানুষের কথোপকথনের মাধ্যম। নামাজ আল্লাহর সঙ্গে মানুষের সম্পর্ককে গভীর করে। মানুষকে আল্লাহর নিকটবর্তী করে। রমজান মাসে নামাজসহ সব ইবাদতের রয়েছে বিশেষ ফজিলত ও মর্যাদা। তেমনি রমজান মাসের অন্যতম ফজিলত ও মর্যাদাসম্পন্ন একটি ইবাদত হলো তারাবির নামাজ। তারাবির নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর সঙ্গে বান্দার কথোপকথনের ব্যাপ্তি দীর্ঘ হয়। আল্লাহর সঙ্গে বান্দার সম্পর্ক হয় আরও গভীর। এতে বান্দা পায় প্রশান্তির ছোঁয়া।

তারাবি শব্দের অর্থ প্রশান্তি লাভ করা, বিশ্রাম নেওয়া। তারাবির নামাজের প্রতি চার রাকাত পরপর একটু বিশ্রাম নিয়ে তাসবিহ ও দোয়া পাঠ করা হয়। তাই এ নামাজকে তারাবির নামাজ বলে।

ইবাদত হিসেবে তারাবির নামাজের গুরুত্ব অনেক। কেননা রাসুল (সা.) তারাবির নামাজ আদায়ে গুরুত্ব দিয়েছেন। আবার এই ইবাদত নিয়মিতভাবে আদায় করলে উম্মতের ওপর তা ফরজ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কাও করেছেন। তাই তারাবির নামাজ সুন্নতে মুয়াক্কাদা, যা ওয়াজিবের পর্যায়ভুক্ত। নারী-পুরুষ সবার জন্যই এ হুকুম প্রযোজ্য। তারাবির নামাজ দশ সালামে বিশ রাকাত। এটা খোলাফায়ে রাশিদিন এবং অধিকাংশ সাহাবায়ে কেরামের আমল থেকে প্রমাণিত। কোনো কঠিন প্রয়োজন ছাড়া তা আদায় না করলে গুনাহ হবে।

হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘রাসুল (সা.) একদিন গভীর রাতে বের হয়ে মসজিদে গেলেন এবং নামাজ পড়লেন। কিছু লোকও তার পেছনে নামাজ পড়লেন। ভোর হওয়ার পর লোকজন পরস্পরের সঙ্গে এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করলে দ্বিতীয় রাতে লোকসংখ্যা আরও বেড়ে গেল এবং তারা রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে নামাজ পড়লেন। এদিন ভোর হওয়ার পর লোকদের মধ্যে আরও বেশি আলোচনা হলো এবং তৃতীয় রাতে মসজিদের লোক সমাগম আরও বেশি হলো। রাসুল (সা.) বের হয়ে নামাজ পড়লেন আর তারাও তার সঙ্গে নামাজ পড়লেন। যখন চতুর্থ রাত এলো তখন এত লোক সমাগম হলো যে, মসজিদে স্থান সংকুলান হলো না। কিন্তু রাসুল (সা.) এ রাতে তারাবির নামাজের জন্য বের হলেন না। ভোর হয়ে গেলে ফজরের নামাজের জন্য বের হলেন এবং ফজরের নামাজ শেষে লোকদের দিকে মুখ ফিরিয়ে তাশাহুদ পাঠের পর বললেন, তোমাদের বিষয়টি আমার কাছে অজানা ছিল না। কিন্তু আমি আশঙ্কা করছিলাম যে, এ নামাজ না আবার তোমাদের ওপর ফরজ করে দেওয়া হয়। আর তোমরা তা পালনে ব্যর্থ হয়ে যাও। অতঃপর রাসুল (সা.) ইন্তেকাল করলেন এবং এ নামাজের বিষয়টি তেমনই রইল।’ (সহিহ বোখারি ২০১২)

ফরজ নামাজ ছাড়া অন্যান্য নামাজ একাকী আদায় করা উত্তম। কিন্তু তারাবির নামাজ এর ব্যতিক্রম। কেননা রাসুল (সা.) তারাবির নামাজ জামাতে পড়েছেন। তাই তা জামাতবদ্ধ হয়ে পড়াই উত্তম।

রমজানের অন্যতম বৈশিষ্ট্য ও ফজিলত হলো, এ মাসে প্রত্যেক নফল ইবাদতের সওয়াব ফরজের সমান দেওয়া হয়। সে হিসেবে রমজানে তারাবির নামাজের ক্ষেত্রেও ফরজ ইবাদতের সমান সওয়াব দেওয়া হবে।

হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, ‘রমজান মাসে যে ব্যক্তি একটি নফল আদায় করল সে যেন অন্য মাসে একটি ফরজ আদায় করল। আর যে ব্যক্তি এ মাসে একটি ফরজ আদায় করল সে যেন অন্য মাসে সত্তরটি ফরজ আদায় করল।’ (শোয়াবুল ইমান ৩/৩০৫)

তারাবির নামাজ পাপমোচনের অন্যতম মাধ্যম। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসুল (সা.) রমজান মাসে তারাবির নামাজ পড়তে উৎসাহিত করে বলতেন, ‘যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে আল্লাহর একান্ত সন্তুষ্টির জন্য রমজান মাসে তারাবির নামাজ আদায় করবে, তার পূর্ববর্তী গোনাহগুলো ক্ষমা করে দেওয়া হবে।’ (সহিহ মুসলিম ১৬৬৫)

হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসুল (স.) বলেন, ‘রমজান এমন একটি মাস, যে মাসে আল্লাহতায়ালা তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করেছেন এবং আমি তোমাদের ওপর এ মাসে রাতে দণ্ডায়মান হওয়া অর্থাৎ তারাবির নামাজ সুন্নত করেছি। সুতরাং যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে সওয়াবের আশায় এ মাসে রোজা রাখে এবং রাতের নামাজে দণ্ডায়মান হয় অর্থাৎ তারাবির নামাজ পড়ে সে ব্যক্তি ওইদিনের মতো নিষ্পাপ হয়ে যায় যেদিন সে তার মায়ের পেট থেকে প্রসব হয়েছিল।’ (ইবনে মাজাহ ১৩২৮)

রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের বিভিন্ন আমলে অলংকৃত হয়েছে পুরো রমজান মাস। আর রমজানের রাতকে বিশেষভাবে অলংকৃত করেছে তারাবির নামাজ। পাপ মার্জনায় তারাবির নামাজের যে গুরুত্বপূর্ণ ফজিলত রয়েছে, তা থেকে সবাইকে ব্যাপকভাবে উপকৃত হওয়া চাই।

ভয়েস/আআ

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION