শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:৩২ অপরাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

আত্মিক ও মানবিক উন্নতি সাধনের মাস

আবদুল আউওয়াল:
ভোর রাত থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সকল প্রকার পানাহার ও স্ত্রী সম্ভোগ থেকে বিরত থাকার নামই রোজা। এটি ইসলামের পঞ্চ ভিত্তির একটি। প্রাপ্তবয়স্ক প্রতিটি মুমিনের ওপর তা ফরজ। কোনো ওজর ছাড়া পরিত্যাগ করা বড় গোনাহের কাজ। প্রশ্ন জাগে, রোজায় এমন কী আছে, যার জন্য সারা দিন ক্ষুৎপিপাসায় ভুগতে হবে? আসলে ইসলামের সৌন্দর্য এখানেই। এটি কেবল আত্মোপকারী ও আত্মকেন্দ্রিক ধর্ম নয়, বরং সর্বজনীন ও সামাজিক ধর্ম। সমাজের সব স্তরের মানুষের সুখ-দুঃখের অনুভূতিগুলো সমভাবে পরস্পরে বোঝার যত পদ্ধতি আছে রোজা এর মধ্যে শ্রেষ্ঠ পদ্ধতি। এ পদ্ধতি চালু না থাকলে অভুক্তের বেদনা বোঝা যেত না। তৃষ্ণাতুরের কষ্ট অনুভূত হতো না। সর্বোপরি আল্লাহর দুটি মহা নেয়ামত আহার-পানীয়ের গুরুত্ব ও যথার্থতা সবাই বাস্তবতার নিরিখে উপলব্ধি করতে পারে রোজার মাধ্যমে। এ ছাড়াও ব্যক্তিমনন ও সমাজসৌন্দর্যের নানা গুণ অর্জিত হয় এর দ্বারা।

তাকওয়া : তাকওয়া মানে আল্লাহর ভয়। যে ভয় অন্তরে বদ্ধমূল হলে একজন মানুষের পক্ষে মন্দকর্ম করা প্রায় অসম্ভবপর হয়ে ওঠে। লোকালয়ে আর গহিন অরণ্যে তার মনের অবস্থা থাকে প্রায় একই রকম। আঁধারে কিংবা আলোতে পাপের অনুভূতি থাকে প্রায় সমানে সমান। সর্বত্র সে মনে করে, আল্লাহ আমাকে দেখছেন। রোজার মাধ্যমে সেই গুণটির চর্চা ৩০ দিন ধরে চলতে থাকে। ইচ্ছা করলেই লোকচক্ষুর আড়ালে পানাহার করা যায়। কিন্তু তা বান্দা করে না। কারণ তার হৃদয়ে জুড়ে আল্লাহর ভয়ের অবস্থান। কেউ না দেখলেও আল্লাহ দেখছেন। সেই অনুভূতি তাকে কাজটি করতে বাধা দেয়। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে মুমিনরা, তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর; যেন তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো।’ সুরা বাকারা : ১৮৩

এখলাস: নিয়তের বিশুদ্ধতার নামই এখলাস। যেকোনো আমল ভালো হওয়া ও আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হওয়ার অন্যতম শর্ত এটি। রোজা ছাড়া ইসলামের অপরাপর আমলের মধ্যে সেটি কতটুকু আছে বা নেই তা অনুমান করা কঠিন। নামাজ দেখানোর জন্য হতে পারে। জাকাত, হজ সুনাম অর্জনের জন্য হতে পারে। কিন্তু মানুষ দেখানোর জন্য রোজা রাখে না। আড়ালে পানাহার করে মানুষের সামনে এসে রোজাদার দাবি করা গেলেও সেটি যে প্রকৃত রোজা নয় তা ব্যক্তি ভালো করেই জানে। তাই যে ব্যক্তি রোজা রাখে প্রকৃতপক্ষে সে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই রাখে। বলা যায়, রোজা একটি লৌকিকতামুক্ত আমল। হাদিস শরিফে এসেছে, আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘রোজা ছাড়া আদম সন্তানের প্রতিটি কাজই তার নিজের জন্য; কিন্তু রোজা আমার জন্য। তাই আমিই এর প্রতিদান দেব।’(বুখারি ১৯০৪) একনিষ্ঠতার কারণে এ আমলের এতই গুরুত্ব যে, আল্লাহতায়ালার কাছে রোজাদারের মুখের দুর্গন্ধ মেশকের সুঘ্রাণ অপেক্ষা অধিক প্রিয়। -বুখারি ১৮০৫

ধৈর্য ও সংযম : ধৈর্য মানে বিপদাপদে স্বাভাবিক থাকা। আর সংযম মানে নিজেকে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখা। এ দুটি গুণ ব্যক্তির মধ্যে থাকলে সে জীবনে সফল হতে পারে। রোজা রাখার মাধ্যমে শারীরিক ও মানসিক কষ্ট হয়। তখন আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য সে ধৈর্য ধারণ করে এবং নিজেকে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখে। হালাল স্ত্রী থাকার পরও রোজার ক্ষতি হবে ভেবে উপভোগ থেকে বিরত থাকে। এ গুণগুলো সঠিকভাবে অর্জিত হলে অভাব-অনটনের সময়ে সে অন্যায়ে জড়াবে না। কারও জিনিস চুরি করে খাবে না। কারও সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করবে না। অপরের জিনিস দেখে চোখ পাকাবে না। তখন সমাজ ও পরিবেশ থাকবে শান্ত। কিন্তু এ গুণগুলোর অভাবে সমাজে নানা অন্যায়-অপরাধ ঘটে থাকে। রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘রমজান মাস হলো ধৈর্যের মাস। আর ধৈর্যের বিনিময় হলো জান্নাত।’-সহিহ ইবনে খুজাইমা : ১৮৮৭

সহমর্মিতা : সহমর্মিতা মানে দয়া প্রকাশ। কারও দুঃখ-দুর্দশাকে নিজের ভেবে ব্যক্তির প্রতি সাহায্য-সহযোগিতার হাত বাড়ানোর নামই সহমর্মিতা। এ গুণটিও রোজার মাধ্যমে অর্জিত হয়। যা সমাজে শান্তি বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ধনীরা যখন রোজা রাখেন, তখন তারাও বুঝতে পারেন, উপবাস থাকার যন্ত্রণা কেমন। তখন তারাও গরিবের প্রতি সহমর্মী হন। সাহায্যের হাত বাড়ান। তাই হাদিস শরিফে রমজানকে সহমর্মিতার মাস হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। ‘রমজান এলে নবীজির দানের হাত বেড়ে যেত। মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দানশীল হতেন।’-সহিহ বুখারি ১৯০২

ভয়েস/আআ

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION