শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬:২৮ অপরাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

একনিষ্ঠ তওবা করার শ্রেষ্ঠ সময়

মুফতি মাহবুব হাসান:
মানুষ তওবার মাধ্যমে মহান আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করে। অনুতপ্ত হয়ে মহান আল্লাহর দিকে ফিরে আসে। আত্মশুদ্ধি অর্জনে নিজেকে আত্মনিয়োগ করে। পাপাচার পরিহার করে উৎসুক হয় পুণ্যের কাজে। এতে আল্লাহর সঙ্গে মানুষের গভীর সম্পর্ক গড়ে ওঠে। আর পবিত্র রমজান মাস এক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। তাই তওবার মাধ্যমে আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ এবং আত্মশুদ্ধি অর্জনে রমজানের গুরুত্ব অনেক।

আত্মশুদ্ধির যে চেতনা নিয়ে আমরা পবিত্র রমজানকে স্বাগত জানিয়েছিলাম, সেই আত্মশুদ্ধির কতটা আমরা অর্জন করতে পেরেছি, রমজানের শেষ পর্বে এসে তা খতিয়ে দেখা দরকার। এ কথা আমরা সবাই জানি, আত্মশুদ্ধির সঙ্গে কৃতকর্মের জন্য গভীর অনুতাপের একটি সম্পর্ক রয়েছে, যাকে আমরা তওবা বলি।

অতীত হয়ে যাওয়া রমজানের দিনগুলোতে আমরা কতটা নিষ্ঠার সঙ্গে তওবা করতে পেরেছি? আর মাত্র কয়েকটি দিন বাকি। এ সময়ের মধ্যে যদি আমরা আন্তরিকতার সঙ্গে তওবা করতে পারি, তবে মহান আল্লাহ তা গ্রহণ করবেন এবং রমজানের প্রতিশ্রুত পুরস্কারে আমাদের তিনি ভূষিত করবেন।

গুনাহ করা মানুষের স্বভাবজাত প্রবৃত্তি। মানুষ ইচ্ছায় কিংবা অনিচ্ছায় গুনাহ করে ফেলে। এটা খুবই স্বাভাবিক একটি বিষয়। অস্বাভাবিক হলো গুনাহের ওপর অটল থাকা এবং আল্লাহর কাছে তওবা ও ক্ষমা প্রার্থনা না করা। আল্লাহতায়ালা মানুষকে পাপ-পুণ্য প্রভৃতি ভালো মন্দের উপকরণ দিয়েই সৃষ্টি করেছেন। তাই গুনাহ হতেই পারে। তবুও করণীয় হলো যথাসম্ভব পাপ ও গুনাহের কাজ থেকে বেঁচে থাকার চেষ্টা করা। এরপরও যদি ইচ্ছায় কিংবা অনিচ্ছায় গুনাহ হয়ে যায় তাহলে সঙ্গে সঙ্গে অনুতপ্ত হয়ে তওবা করা আবশ্যক।

আল্লাহতায়ালা মানুষকে এই জন্যই সৃষ্টি করেছেন যে, মানুষ সৎ ও ন্যায়ভাবে জীবনযাপন করবে আবার শয়তানের ধোঁকায় পড়ে গুনাহও করবে। অতঃপর অনুধাবন করবে যে, সে গুনাহ করে ফেলেছে এবং গুনাহের ওপর অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর কাছে তওবা করবে। আর আল্লাহ গুনাহগার বান্দাকে ক্ষমা করে দেবেন। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, হজরত রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যদি তোমাদের দ্বারা কোনো গুনাহের কাজ না হতো তবে আল্লাহ তোমাদের পরিবর্তে এমন এক জাতি সৃষ্টি করতেন যারা গুনাহ করত এবং তওবাও করত।’ -মুসনাদে আহমদ

গুনাহগার বান্দা অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর কাছে তওবা ও ক্ষমা প্রর্থনা করলে আল্লাহ বান্দাকে ক্ষমা করে দেন। আল্লাহ হলেন পরম ক্ষমাশীল। আল্লাহ ক্ষমা করতে ভালোবাসেন। ক্ষমা প্রার্থনাকারীদের ভালোবাসেন। পবিত্র কোরআনের বহু জায়গায় মহান আল্লাহ এই ঘোষণা দিয়েছেন।

আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ তাওবাকারীদের ভালোবাসেন এবং ভালোবাসেন অধিক পবিত্রতা অর্জনকারীদের।’ -(সুরা বাকারা ২২২) আল্লাহতায়ালা অন্যত্র বলেন, ‘তিনিই তো স্বীয় বান্দাদের তওবা কবুল করেন এবং পাপগুলো ক্ষমা করে দেন।’ -(সুরা শুরা ২৫) আল্লাহতায়ালা আরও বলেন, ‘আর যে তওবা করে, ইমান আনে এবং সৎকর্ম করে, অতঃপর সৎপথে অটল থাকে, আমি তার প্রতি অবশ্যই ক্ষমাশীল।’ -সুরা তহা ৮২

বান্দা যখন গুনাহ করে এবং তওবা না করে গুনাহের ওপর অটল থাকে তখন আল্লাহতায়ালা বান্দার ওপর অসন্তুষ্ট হোন। আর বান্দা যখন গুনাহের ওপর অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর কাছে তওবা করে তখন আল্লাহতায়ালা অত্যন্ত খুশি হন। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, ‘রাসুল (সা.) বলেছেন, তোমাদের কেউ মরুভূমিতে হারিয়ে যাওয়া উট খুঁজে পেয়ে যতটা খুশি হয়, আল্লাহতায়ালা বান্দার তওবায় তার চেয়েও অনেক বেশি খুশি হন।’ -বোখারি ৬৩০৯

যারা অনবরত পাপাচারে লিপ্ত থেকে আল্লাহর স্মরণ থেকে একেবারে গাফেল হয়ে যায় তাদেরও রয়েছে তওবা করার সুযোগ। গুনাহ যত বেশিই হোক না কেন, একনিষ্ঠভাবে তওবা করলে আল্লাহ ক্ষমা করে দেন। সুতরাং হতাশ হওয়ার কিছু নেই। যারা সারা বছর পাপাচারে লিপ্ত থেকে নিজের জীবনকে কলুষিত করেছে, মহিমান্বিত এই রমজান তাদের তওবার জন্য সুবর্ণ সুযোগ। আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে বলেন, ‘হে আমার বান্দারা! যারা নিজেদের ওপর জুলুম করেছ, তোমরা মহান আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয়ই আল্লাহতায়ালা সব গুনাহ ক্ষমা করে দেন। তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ -সুরা জুমার ৫৩

কেউ যদি কোনো বান্দার হক নষ্ট করে তাহলে কেবল আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করলে আল্লাহ সে গুনাহ ক্ষমা করবেন না। বরং এজন্য বান্দার হক আদায় করে দিতে হবে কিংবা তার কাছে থেকে মাফ চেয়ে তাকে সন্তুষ্ট করতে হবে। নয়তো আল্লাহ ক্ষমা করবেন না।

তওবা পাপকে মুছে বান্দাকে নিষ্পাপ করে। আল্লাহর সঙ্গে বান্দার সম্পর্ককে গভীর করে। তাই রাসুল (সা.) উম্মতকে বেশি বেশি তওবা করার নির্দেশ দিয়েছেন। রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমরা আল্লাহর কাছে তওবা করো এবং তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো। আমি দিনে ১০০ বার তওবা করি।’ -সহিহ মুসলিম ৭০৩৪

রাসুল (সা.) এর কোনো গুনাহ ছিল না। তিনি ছিলেন নিষ্পাপ। তবুও তিনি তওবা করতেন। এর দ্বারা মূলত উম্মতকে ক্ষমাপ্রার্থনা করতে শেখাতেন এবং মহান আল্লাহর কৃতজ্ঞতা আদায় করতেন। তাই আসুন রাসুল (সা.)-এর বাতলানো নির্দেশনা অনুযায়ী আমরাও বেশি বেশি তওবা ও ক্ষমা প্রার্থনা করে আল্লাহর প্রিয় বান্দায় পরিণত হই। আর রমজান মাস এই কাজের শ্রেষ্ঠ সময়।

ভয়েস/আআ

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION