শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০২:২০ পূর্বাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

চকরিয়ায় দেশীয় তৈরী ১০টি আগ্নেয়াস্ত্র সহ ৪ সন্ত্রাসী গ্রেফতার

ইয়াছিন আরাফাত:

চকরিয়া চিংড়ি ঘের এলাকায় অভিযান চালিয়ে চিংড়ি ঘের দখল, অপহরনসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে জড়িত অন্যতম মূলহোতাসহ ৪ জন অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীকে ১০টি দেশীয় তৈরী অস্ত্র সহ চকরিয়া থেকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-১৫ কক্সবাজার।

সোমবার রাতে চকরিয়া উপজেলার চিংড়ি ঘের এলাকা কোরালখালীতে এই অভিযান চালানো হয়।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে কক্সবাজার র‌্যাব কার্যালয়ে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এই তথ্য জানান র‌্যাব সদর দপ্তরের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার মোহাম্মদ আরাফাত।

প্রেস ব্রিফিংয়ে মোহাম্মদ আরাফাত জানান, সাম্প্রতিক সময়ে কক্সবাজারের চকরিয়ার বিলুপ্তপ্রায় সুন্দরবন তথা চিংড়ি জোনে সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের তান্ডব ও লুটপাটের কয়েকটি ঘটনা ঘটে। গত ১৯ জুন দিবাগত রাতে চিরিঙ্গা ইউনিয়নের চরণদ্বীপ মৌজার গোলদিয়ায় ১০ একর বিশিষ্ট সাতটি চিংড়ি ঘেরে হানা দেয় একটি সশস্ত্র সন্ত্রাসী দল। এসময় তারা অন্তত শতাধিক ফাঁকা গুলি ছুঁড়ে এলাকায় ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি করে। অস্ত্রের মুখে ঘের কর্মচারীদের জিম্মি ও হাত-পা বেঁধে ফেলে করা হয় মারধর ও বিভিন্ন ভাবে নির্যাতন। এরপর একে একে ঘেরগুলো দখলে নেয় সন্ত্রাসীরা। এ ঘটনার প্রেক্ষিতে সশস্ত্র সন্ত্রাসী ও ডাকাত দলকে গ্রেফতারের লক্ষ্যে উক্ত এলাকায় গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি এবং বিভিন্ন অভিযান পরিচালনা করে র‌্যাব।

এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল সোমবার রাতে র‌্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-১৫ এর একটি আভিযানিক দল কক্সবাজারের চকরিয়া থানার কোরালখালী এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে অবৈধ অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী ও ডাকাত দলের প্রধান বেলাল হোসেন (৪৫), কামাল আহম্মেদ (৪২) ৩। আব্দুল মালেক (৩২),কে গ্রেফতার করে। তারা তিনজনেই উক্ত এলাকার আকবর আহমেদের পুত্র। এছাড়া পার্শ্ববর্তী এলাকা থেকে তাদের সহযোগী মৃত জহির আহমেদের পুত্র নুরুল আমিন (৩৫) কে গ্রেফতার করে। পরে তাদের আস্তানা থেকে উদ্ধার করা হয় ১০টি দেশীয় তৈরী আগ্নেয়াস্ত্র, ১২ বোর ৪০ রাউন্ড, ৭.৬২ মিঃ মিঃ ১০ রাউন্ড এবং ৭.৬৫ মিঃ মিঃ ২ রাউন্ড গুলি।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা ডাকাতি, চিংড়ি ঘের দখল ও বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের সাথে তাদের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে তথ্য প্রদান করে।

র‌্যাব কর্মকর্তা আরও জানান, গ্রেফতারকৃতরা একটি সংঘবদ্ধ ডাকাত চক্র। গ্রেফতারকৃত বেলাল, কামাল এবং মালেক আপন তিন ভাই। তারা অস্ত্রধারী ডাকাতদের নিয়ে “বেলাল বাহিনী” গড়ে তুলে মাছের ঘের দখল, লুটতরাজ, অপহরণসহ বিভিন্ন অপকর্ম করে আসছিল। এই বাহিনীর সশস্ত্র ডাকাত সংখ্যা ১৮ থেকে ২০ জন। গ্রেফতারকৃতরা দীর্ঘদিন যাবৎ কক্সবাজারের চকরিয়াসহ পার্শ্ববর্তী এলাকায় সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজি, ছিনতাই, জমি দখল, চিংড়ি ঘের দখল, লবণের মাঠ ও আধিপত্য বিস্তারসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল। গ্রেফতারকৃতরা দেশি ও বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্রসহ অন্যান্য দেশীয় অস্ত্র দ্বারা সাধারণ মানুষকে ভয়ভীতি দেখাত এবং এলাকায় ত্রাশ সৃষ্টি করতো।

জিজ্ঞাসাবাদে আরোও জানা যায়, গ্রেফতারকৃতরা আধিপত্য বিস্তার ও এলাকায় ত্রাস সৃষ্টির লক্ষ্যে ভাড়া করে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের নিয়ে তাদের দলের শক্তি বৃদ্ধি করে। গ্রেফতারকৃতরা মৌসুমের পর মৌসুম মাছের ঘের মালিকদের নিকট হতে চাঁদা আদায় করতো। ঘের মালিকরা চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে গ্রেফতারকৃত বেলালের নেতৃত্বে ডাকাতি করে নিয়ে যেতো ঘেরের মাছ ও মাছ চাষের নানা উপকরণ। এছাড়াও মাছের ঘের তাদের দখলে নিয়ে নিতো এবং কর্মচারীদের মারধর করে তাড়িয়ে দিতো। এমনকি ঘের মালিক ও কর্মচারীদের অপহরণ করেও নিয়ে যেতো এবং মুক্তিপণ আদায় করতো। গ্রেফতারকৃতরা মহেশখালীসহ কক্সবাজারের অন্যান্য এলাকা এবং পার্শ্ববর্তী জেলার বিভিন্ন স্থান হতে ভাড়া করে চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও সশস্ত্র সন্ত্রাসীও ডাকাত দলের সদস্যদের সে চকরিয়াতে নিয়ে আসতো। বিভিন্ন অপরাধ সংঘঠিত করার উদ্দেশ্যে তারা সবসময় সশস্ত্র অবস্থায় প্রস্তুত থাকতো। গ্রেফতারকৃত বেলালের নেতৃত্বে মাছের ঘের ও লবণের মাঠ দখলকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ সৃষ্টি, গুলি বর্ষন, মারামারি, ডাকাতি, লুট-পাট ও চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধে সরাসরি অংশগ্রহণ করতো। বিভিন্ন অপরাধ ও মাছের ঘের দখলের উদ্দেশ্যে তারা বিভিন্ন মাধ্যম হতে অবৈধ অস্ত্র-গোলাবারূদ ক্রয় এবং প্রয়োজন অনুযায়ী এ সকল অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার করতো এবং কার্যশেষে নিজেদের হেফাজতে মজুদ করে রাখত বলে জানা যায়।

গ্রেফতারকৃত বেলালের বিরুদ্ধে চকরিয়া থানায় ২টি হত্যা ও ১টি বিস্ফোরকদ্রব্য আইনে মামলাসহ বিভিন্ন অপরাধে মোট ৯টি মামলা কামালের বিরুদ্ধে চকরিয়া থানায় ১টি পুলিশ এ্যাসল্ট ও ১টি অপহরণসহ মোট ৬টি মামলা মালেকের বিরুদ্ধে চকরিয়া থানায় ৩টি মামলা এবং নুরুল আমিনের বিরুদ্ধে চকরিয়া থানায় মারামারির ১টির মামলা রয়েছে বলে জানা যায়।

ভয়েস/আআ

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION