শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:৩৩ পূর্বাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

ছনখোলা ডকইয়ার্ডে অবৈধ কাঠে তৈরি হচ্ছে ফিশিং ট্রলার

বিশেষ প্রতিবেদক

কক্সবাজার পৌরসভার ৫ নং ওয়ার্ড উত্তর এসএমপাড়া ছনখোলা খেয়াঘাট সংলগ্ন আতিক উদ্দীন চৌধুরীর ডকইয়ার্ডে চোরাই কাঠে হচ্ছে ফিশিং ট্রলার। ঝিলংজা রেঞ্জের আওতায় এইফিশিং ট্রলার তৈরি হচ্ছে নির্বিঘ্নেই। বনাঞ্চলের অবৈধ কাঠ দিয়ে অনুমোদন ছাড়া এসব ফিশিং ট্রলার নির্মাণ করা হলেও নিরব বন বিভাগের লোকজন। স্থানীয় বন বিভাগের কতিপয় অসাধু কর্তাদের ম্যানেজ করে নির্বিঘ্নেই উক্ত ফিশিং ট্রলার তৈরি করছে জাহাঙ্গীর আলম নামের এক ব্যক্তি।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বনবিভাগ সহ অন্যান্য অফিস ম্যানেজ করে ট্রলারগুলো তৈরি করা হয়। ফিশিং ট্রলার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মোটা অংকের চুক্তিভিত্তিক এইসব ফিশিং ট্রলার (বোট) তৈরি করতে মাদারট্রি গর্জনসহ সংরক্ষিত বনাঞ্চলের অন্যান্য মূল্যবান গাছের কাট নির্বিচারে ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ ট্রলার নির্মাণকারী জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, অভিযুক্ত জাহাঙ্গীর আলম বনের মুল্যবান সম্পদ কাঠ, পাহাড়- ঢিলা কাটার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত রয়েছে দীর্ঘদিন। তার রয়েছে নিজস্ব একাধিক অবৈধ ডাম্পট্রাক, সশস্ত্র বাহিনী। সে রাতদিন পাহাড়- ঢিলা কাটা মাটি-বালি ও কাঠ পাচার করে যাচ্ছে তার এই নিজস্ব ক্যাডার বাহিনী ও ডাম্পার গাড়ি বহনে। পিএমখালীর অধিকাংশ পাহাড় হত্যাকর্তা সে বলে দাবি স্থানীয়দের। পরিবেশ বিধ্বংসী এসব অবৈধ কর্মকান্ডের সাথে দীর্ঘদিন ধরে জড়িত থাকলেও রয়েছে বহাল তবিয়তে। জাহাঙ্গীর আলম পিএমখালী ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড ছনখোলা গ্রামের সাবেক মেম্বার সুলতান আহম্মদের পুত্র।

অভিযোগ উঠেছে, কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের অধীন সদর উপজেলার ঝিলংজা রেঞ্জে কর্মরত কয়েক কর্মকর্তা কর্মচারীকে ম্যানেজ করে অসাধু কাঠ বিয়ারি ও পাহাড় খেকো জাহাঙ্গীর আলম প্রতিবছর একাধিক ফিশিং ট্রলার তৈরিসহ নিজস্ব ড্রাম্প ট্রাক বহনে পাহাড়ের মাটি বালি বিক্রি করে হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অংকের টাকা।

অপরদিকে, উপজেলার বাঁকখালী নদীর তীরবর্তী বিভিন্ন পয়েন্টে বনবিভাগ তথা প্রশাসনের বিনা অনুমতিতে ফিশিং ট্রলার তৈরির রমরমা বাণিজ্য চললেও তা বন্ধে স্থানীয় বনবিভাগ ও প্রশাসনের কোনো উদ্যোগ নেয়নি বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

সরেজমিন দেখা গেছে, ছনখোলা ঘাটের পশ্চিমে আতিক উদ্দিন চৌধুরীর ডক ইয়ার্ডে এক জোড়া মিনি ফিশিং ট্রলারে কাজ করছে স্থানীয় ১৫/২০ জন শ্রমিক। তার পাশের ৩০-৪০ ফুট দূরত্বে একটি গর্তে মজুদ করে রাখছে বিভিন্ন সাইজের মাদার ট্রি গর্জন গাছের ছিরাই কাঠ। যার আনুমানিক মূল্য ৮-১০ লাখ টাকা। এই দুর্লভ ও মূল্যবান গাছের কাঠগুলো তৈরিকৃত এ ফিশিং ট্রলারে ব্যবহার করছে বলে জানান ওখানে কর্মরত এক শ্রমিক।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সে বলেন, বিভিন্ন অফিসের লোকজনকে ম্যানেজ করে রাতের আঁধারে ঈদগড়, গর্জনিয়া, রামু থেকে এলাকা ভিত্তিক চোরাই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ফিশিং বোট তৈরির মূল্যবান গাছ গুলো আনা হয়। তা ছনখোলা খেয়াঘাটের পূর্বে স্থাপিত স-মিল ও ঝিলংজা চাঁদের পাড়ার উত্তরে কালভার্ট সংলগ্ন (বড়ুয়া পাড়ার পূর্বে) স্থাপিত স’ মিল থেকে সাইজ অনুযায়ী ছিড়াই করেন জাহাঙ্গীর। আর ফিশিং ট্রলার নির্মাণ করতে বন বিভাগের লিখিত অনুমতি নেওয়ার কথা থাকলেও তা ম্যানেজের মাধ্যমে কাজ করা হয়ে থাকে। এতে প্রশাসনের অনুমতির প্রয়োজন পড়ে না তাদের।

ফিশিং ট্রলার তৈরির কাজে জড়িত এক শ্রমিক (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) জানায়, প্রতিটি ফিশিং ট্রলার তৈরির ক্ষেত্রে স্থানীয় বন বিভাগের কর্মচারীদের পদবী অনুযায়ী ঘুষ দিতে হয়। তারা সময় মতো এসে টাকা নিয়ে যায়। তাদের সাথে জাহাঙ্গীরের সু-সম্পর্ক। এক সাথে মাঝারি আকারের দুইটি ফিশিং ট্রলার দুইটা চট্টগ্রামের এক লোকের সাথে ৫২ লক্ষ টাকার (একটি ২৬ লক্ষ টাকা করে) চুক্তিতে রফা দফা করে নির্মাণ করছেন জাহাঙ্গীর আলম। এরমধ্যে নির্মাণ প্রায় শেষ পর্যায়ে বোট দুই টি।

অবৈধভাবে ফিশিং ট্রলার নির্মাণের কথা স্বীকার করেছে অভিযুক্ত জাহাঙ্গীর আলম। তিনি বলেন, চট্টগ্রামের এক লোকের সাথে চুক্তিভিত্তিক ফিশিং ট্রলার দুটি নির্মাণ করছেন আতিক কোম্পানি। তাঁর ম্যানেজারের সাথে যোগাযোগ করলে জানতে পারবেন। সে ওখানে গাছ বিক্রি করছে মাত্র। তিনি আবার ভিন্নভাবে বলেন, এই দুটি ফিশিং ট্রলার নির্মাণ করতে ডক ইয়ার্ডের মালিক আতিক উদ্দিন চৌধুরীকে ৪০ হাজার টাকা দিতে হয়। অন্য জায়গায় অনিরাপদ ভেবে তাঁর ডক ইয়ার্ডে নির্মাণ করছে। প্রশাসনের অনুমতি নেননি বলেও জানান জাহাঙ্গীর। তবে আতিক উদ্দিন চৌধুরীর বিরুদ্ধে উঠা অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করতে যোগাযোগ করা হলেও মুঠোফোনে সংযোগ পাওয়া যায় নি।

এ বিষয়ে জানতে রেঞ্জ কর্মকর্তা সমীর রঞ্জন সাহার মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করা হলে মোবাইল রিসিভ না করায়। কথা হয়, কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের সহকারী বন কর্মকর্তা শ্যামল কুমার ঘোষের সাথে। তিনি বলেন, নতুন বোট তৈরির অনুমতি নিয়েছে কিনা জানিনা, দেখে জানাব।

ভয়েস/জেইউ।

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION