শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬:৩৫ অপরাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

আজ চূড়ান্ত হচ্ছে মহেশখালী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আইন

ভয়েস নিউজ ডেস্ক:

মহেশখালী সমন্বিত উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আইন ২০২৪ খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দিচ্ছে সরকার। কক্সবাজারের মহেশখালী ও মাতারবাড়ী এলাকায় চলমান উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর কাজ সমন্বিতভাবে করার জন্য একটি কর্তৃপক্ষ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মন্ত্রিসভা। যার নাম হবে ‘মহেশখালী সমন্বিত উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ’। আজ সোমবার খসড়াটির চূড়ান্ত অনুমোদন দিতে মন্ত্রিসভায় প্রস্তাব উপস্থাপন করা হবে। গত এপ্রিলে এই খসড়ার অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। এ ছাড়া গত এপ্রিল-জুন পর্যন্ত মন্ত্রিসভার বৈঠকে নেওয়া সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের প্রতিবেদন আজকের বৈঠকে উপস্থাপন করা হবে।

সোমবার (২৯ জুলাই) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে তার কার্যালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। পরে সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানাবেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন।

দেশি-বিদেশি ব্যক্তি এবং সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বের ভিত্তিতে বিনিয়োগের সুযোগ-সুবিধা প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ এবং কার্যক্রম বাস্তবায়নে মহেশখালী-মাতারবাড়ী ইন্টিগ্রেটেড ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভ (মিডি) মহাপরিকল্পনার (কম্প্রিহেনসিভ মাস্টার প্ল্যান) জন্য নতুন আইন করেছে সরকার। আইনে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী, শিল্পমন্ত্রী, বাণিজ্যমন্ত্রী, নৌ-পরিবহনমন্ত্রী/প্রতিমন্ত্রী, স্থানীয় সরকার বিভাগ মন্ত্রী/প্রতিমন্ত্রী, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রী/প্রতিমন্ত্রী/প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবসহ ১৫ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি থাকছে। নির্বাহী পরিষদের চেয়ারম্যান গভর্নিং বোর্ডের সদস্য-সচিবের দায়িত্ব পালন করবেন।

এর আগে গত এপ্রিল মাসে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন সংবাদ সম্মেলনে বলেন, কক্সবাজারের মহেশখালী ও মাতারবাড়ী এলাকায় চলমান উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর কাজ সমন্বিতভাবে করার জন্য একটি কর্তৃপক্ষ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এই কাজগুলোকে সমন্বিত রূপ দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আওতাধীন একটি কর্তৃপক্ষ গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ আইনের আওতায় একটি গভর্নিং বোর্ড থাকবে। এই বোর্ডের চেয়ারম্যান থাকবেন প্রধানমন্ত্রী। এর বাইরে একজন মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা থাকবেন। সরকার তাকে নিয়োগ দেবে। ওই কর্তৃপক্ষের মূল কাজ হবে নির্ধারিত এলাকায় ভূমির মহাপরিকল্পনা করা এবং মহাপরিকল্পনা অনুযায়ী যাদের সেই ভূমি ব্যবহারের জন্য দেওয়া হবে, তারা যেন সেই কাজ করেন।

এ ছাড়া বিদেশি বিনিয়োগ এবং যারা সেখানে বিনিয়োগ করতে চান, তাদের জন্য সুযোগ-সহায়তার ব্যবস্থাসহ আরও কিছু কাজ করা হবে এই কর্তৃপক্ষের লক্ষ্য। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এখন পর্যন্ত ওই এলাকার ৫৫ হাজার ৯৬৮ একর জমি নিয়ে এই কর্তৃপক্ষ করার সিদ্ধান্ত রয়েছে। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, প্রস্তাবিত এই কর্তৃপক্ষের মূল অফিস হবে কক্সবাজার এলাকায়। তবে ঢাকায় লিয়াজোঁ অফিস থাকতে পারবে।

জানা গেছে, ২০১৭ সালে কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার সার্বিক উন্নয়ন সমন্বয়ের জন্য ১২ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে সরকার। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এ কমিটি গঠন করে আদেশ জারি করা হয়েছে। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) নির্বাহী চেয়ারম্যানকে কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে। বেজার মহাব্যবস্থাপক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) কমিটির সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। কমিটির অন্যান্য সদস্য হলেনÑ ভূমি মন্ত্রণালয়, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়, নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়, রেলপথ মন্ত্রণালয়, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার বিভাগ, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ, বিদ্যুৎ বিভাগের প্রতিনিধি ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক-১।

গত বছর ২১ সেপ্টেম্বর মাতারবাড়ীর কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র ও গভীর সমুদ্রবন্দর পরিদর্শন শেষে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের মুখ্য সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া বলেছেন, কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ীর সমন্বিত উন্নয়নে দ্রুত আইন হচ্ছে। মাতারবাড়ীকে সরকার একটি ‘ইন্টিগ্রেটেড ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভ’-এর আওতায় নিয়ে এসেছে। তার জন্য সংসদে একটি আইনও পাঠানো হয়েছে। আশা করি, আইনটি দ্রুত সেখানে পাস হবে।

মহেশখালীর বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের কার্যক্রম পরিবীক্ষণ ও মনিটরিং, মহেশখালী উপজেলায় নাগরিক ও সামাজিক সুবিধা সৃষ্টির জন্য স্থানীয় প্রশাসন ও স্থানীয় সরকার বিভাগের প্রকল্প বাস্তবায়নের সমন্বয় সাধন করাও হবে এ কমিটির কাজ। এ ছাড়া বেসরকারি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে যোগাযোগ ব্যবস্থা সংশ্লিষ্ট প্রকল্প অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাস্তবায়নের বিষয় তদারকি, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় সহায়ক বাঁধ নির্মাণ, পানি নিষ্কাশন প্রকল্প বাস্তবায়ন ইত্যাদি কার্যক্রম তদারকি করবে কমিটি। একই সঙ্গে কমিটি মহেশখালী উপজেলার সমন্বিত মাস্টার প্ল্যান ও বাস্তবায়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং এর সময়ানুগ বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণও করবে।

বর্তমানে দেশে বহুমুখী অর্থনৈতিক উন্নয়নের বিরাট কর্মযজ্ঞ চলছে ‘মহেশখালী-মাতারবাড়ী ইন্টিগ্রেটেড ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভ’ (মিডি) এলাকায়। বিদ্যুৎকেন্দ্র, সমুদ্রবন্দর, এলএনজি, এলপিজি টার্মিনাল, ইকোনমিক জোন, ওয়াটার ফ্রন্ট ইন্ডাস্ট্রিজ, টাউনশিপ ডেভেলপমেন্ট, পানি সম্পদ উন্নয়ন এবং পরিবেশের সুরক্ষাসহ ইকোট্যুরিজম পার্কসহ ৩৭টি মেগা প্রকল্পের কাজ চলছে সমানতালে। এ ছাড়া এসব মেগা প্রকল্পসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সেক্টর উন্নয়ন পরিকল্পনা অনুযায়ী বর্তমানে এখানে ৬৮টি প্রকল্প চিহ্নিত করা গেছে।

ইতোমধ্যে চিহ্নিত প্রকল্পগুলোর মধ্যে প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ছয়টি প্রকল্প শেষ হয়েছে। প্রায় ৭৮ হাজার ৫৪৪ কোটি ৬৯ লাখ টাকার ছয়টি প্রকল্পের কাজ চলমান। অন্যান্য প্রকল্প সম্ভাব্যতা যাচাইসহ বিভিন্ন পর্যায়ে রয়েছে। এর মধ্যে ১৫টি প্রকল্প জাপান সরকারের বিনিয়োগে বাস্তবায়নের প্রস্তাব রয়েছে। বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগে এসব অবকাঠামো উন্নয়ন দেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ, কানেক্টিভিটি এবং আন্ত ও আন্তর্জাতিক শিল্প-বাণিজ্য প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। বিরাট এলাকাজুড়ে চলতে থাকা এসব উন্নয়ন কাজের প্রায় সবটাই হচ্ছে বিচ্ছিন্নভাবে।

মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরের দায়িত্বে আছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রের দায়িত্বে বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়। সেখানে যে অর্থনৈতিক অঞ্চল হচ্ছে, সেটির দায়িত্বে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ। গ্যাসলাইন, এলএনজি, রাস্তাঘাট হচ্ছে। সরকারের বিভিন্ন দপ্তর আলাদা করে এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে, যার ফলে কাজের সমন্বয় হচ্ছে না। এসব কাজের সমন্বয় করার জন্য সরকার এই নতুন আইন পাস করতে যাচ্ছে।

মিডি উদ্যোগে জাপানের ২০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ বাস্তবায়ন পর্যায়ে গড়ালে সেটি দেশের অর্থনীতির আকার বাড়াবে। বিদেশি উদ্যোক্তারা যখন বিনিয়োগ প্রস্তাব নিয়ে আসবেন, বিনিয়োগ সংক্রান্ত তথ্য ও সেবার জন্য কার কাছে যোগাযোগ করবেন। তাদের অনুকূলে প্রয়োজনীয় ভূমি কে বরাদ্দ দেবে এবং তাদের সুষ্ঠু পরিচালন তদারকিই বা কে করবে সে রকম কোনো সুনির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষ নেই এখন। নতুন আইনে সবকিছুর বিধান যুক্ত করা হয়েছে। বর্তমানে মিডি পরিচালিত হচ্ছে মিডি সমন্বয় কমিটি দিয়ে। ২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী এ কমিটি অনুমোদন করেন। এরপর থেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একটি সেলের তত্ত্বাবধানে অনুমোদিত কমিটি মিডির কার্যক্রম সমন্বয় ও মনিটরিং করে আসছে।

ভয়েস/জেইউ।

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION