মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১:১৪ পূর্বাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।
শিরোনাম :
মাতারবাড়ি কয়লাবিদ্যুৎ প্রকল্প এলাকায় নিখোঁজের ৪দিন পর আরমানের লাশ উদ্ধার চকরিয়ায় পুকুরে গোসলে নেমে দুই বোনের মৃত্যু জাতিসংঘের তথ্যানুসন্ধান দল আনুষ্ঠানিকভাবে তদন্তের কাজ শুরু করবে মঙ্গলবার, থাকবে এক মাস বাংলাদেশকে ২০০ একর জমি ফিরিয়ে দিচ্ছে ভারত আওয়ামী লীগ হাতে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করতে ‍না পারলে , জনগণ নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারবে না।: রিজভী কিশোরগঞ্জে ঈদে মিলাদুন্নবীর মিছিল ঘিরে সংঘর্ষে নিহত ১ পেকুয়ায় লবণ ব্যবসায়ীকে মারধর করে টাকা ছিনতাই উখিয়া ক্যাম্পে দুর্বৃত্তের গুলিতে ২ যবক নিহত মহেশখালীতে মাংসের দাম অতিরিক্ত রাখায় ৪ ব্যবসায়ীকে জরিমানা নায়িকারা ছোট কাপড় পরলে চলে, ঘরের বউদের চলে না : গোবিন্দের স্ত্রী

সুন্দর দেশ গড়তে সহনশীলতার চর্চা

মুফতি আতিকুর রহমান:
সহনশীলতার গুণ মানুষকে মানবিকভাবে পরিপূর্ণ করে তোলে। যা মানুষের মানবিকতাকে অনেক উচ্চতায় নিয়ে যায়। একজন মানুষ সহনশীল হবে, যদিও এটা স্বাভাবিক মানবিকতার দাবি। কিন্তু বর্তমান সময়ে অনেক মানুষের ভেতর এই স্বাভাবিক মানবিকতার প্রচণ্ড অভাব। পথেঘাটে, দোকানে-বাজারে, গাড়িতে-বাড়িতে, অফিসে-আদালতে সব জায়গায় মানুষের আচার-ব্যবহারে মারাত্মক কঠোরতা, খুব অল্পতেই তেলে-বেগুনে জ্বলে ওঠা এবং সঙ্গে সঙ্গে প্রতিক্রিয়া দেখানো ইত্যাদি সহনশীলতা ও সহ্যশক্তি না থাকার ঢের দৃষ্টান্ত এখন অহরহ চোখে পড়ে। এই যে মানুষ সহনশীল হয়ে থাকতে পারছে না, অল্পতেই কঠিন প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে, তর্ক-ঝগড়া লেগে যাচ্ছে, অশ্লীল গালি দিচ্ছে, আক্রমণাত্মক কথার পর শরীরেও আক্রমণ করছে। এসবের প্রতিফল কী হয়, তা কি মানুষ চিন্তা করে কখনো? এমন আক্রমণাত্মক স্বভাব-চরিত্র কেবল অরাজকতাই ডেকে আনে এবং পর্যায়ক্রমে বড় বড় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে।

অনেক সময় দেখা যায়, রাস্তায় হাঁটার সময় কোনো পথযাত্রীর পায়ে পা লাগলে সঙ্গে সঙ্গে চেঁচিয়ে ওঠে এবং ‘চোখে দেখতে পায় না’ বা এ জাতীয় তাচ্ছিল্যমূলক বাক্য বলে ফেলে। অপরজনও যদি আক্রমণাত্মক স্বভাবের হয় তাহলে তো একটা উচ্চপর্যায়ের বাগ্যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। কখনো কখনো তা মারামারি পর্যন্তও নিয়ে যায়। অথচ শুরুতে দুঃখিত শব্দটি বলে দিলেই ঝামেলা শেষ হয়ে যেত। রিকশায় উঠলে অনেক সময় দেখা যায়, চলার সময় একটু পান থেকে চুন খসলেই দুই রিকশা চালকের মধ্যে কথার লড়াই শুরু হয়ে যায়। পর্যায়ক্রমে গালাগালি এবং হুমকি-ধমকির পর্ব তো থাকেই। যদিও সেগুলো মারামারি পর্যন্ত পৌঁছায় না। কিন্তু অযথা এই বাগ্যুদ্ধ একটি অরাজক ও অহিতকর পরিবেশ তৈরি করে। একদম শুরুতেই কথা না বাড়িয়ে যদি যার যার পথে চলে যেত তাহলে সেই উদ্ভট পরিস্থিতি তৈরি হতো না। কথা না বাড়িয়ে যে চলে যাবে, তাদের ভেতরে সহনশীলতার সেই শিক্ষাটা কোথায়? কেউ কাউকে ছাড় দিতে রাজি নয়।

প্রায় তিন মাস আগে মেট্রোরেলে দুই যাত্রীর মধ্যে সামান্য কারণে কথার লড়াই শুরু হয়। অতি আক্রমণাত্মক যিনি ছিলেন, একপর্যায়ে তিনি অপরজনের হাতে কামড় দিয়ে বসেন। তার হাত থেকে রক্ত বের হয়। এ ছাড়া দাঁতের ছাপ তো লেগেই থাকে। এই যে লোকটি হাতে কামড় দিয়ে ভয়ংকর আক্রমণাত্মক আচরণ করে ফেলল, তার ভেতর সহনশীলতার শিক্ষা কোথায়? গত ঈদের সময় এক বাসচালক ও সহকারীকে যাত্রীরা পিটিয়ে মেরে ফেলে ভাড়া বেশি চেয়েছিল বলে। যদিও বাসচালক ও সহকারীদের সহনশীলতার প্রচুর অভাব আছে, যা আমরা চলাচলের সময় দেখে থাকি। কিন্তু ভাড়া বেশি চাইলে কি একেবারে মেরে ফেলতে হবে? ওই বাসের যাত্রীরা কতটা আক্রমণাত্মক ছিল, ভাবা যায়? এই যে এত এত মানুষ অসিষ্ণু হয়ে উঠছে, তাদের সংশোধনের উপায় কী? উপায় হলো, ধর্মীয় অনুশাসনের গুরুত্ব উপলব্ধি করা এবং তা মেনে নেওয়া। তা ছাড়া তো একটি সুশৃঙ্খল জাতি ও দেশ গড়া সম্ভব নয়। সহিষ্ণু ও সহনশীলতার চর্চার ক্ষেত্রে আমাদের জন্য অনুপম দৃষ্টান্ত হলেন হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।

স্রষ্টার সমগ্র সৃষ্টির সেরা জীব মানুষ। মানুষের মধ্যে সেরা হচ্ছেন নবী-রাসুলরা। আর তাদের সবার মধ্যে সেরা হচ্ছেন সৃষ্টিকুল শিরোমণি সর্বশেষ নবী ও রাসুল হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। তিনি আমাদের জন্য উত্তম জীবনাদর্শ। তার জীবনের প্রতিটি অনুষঙ্গ আমাদের জন্য আবশ্যিকভাবে অনুসরণীয়, অনুকরণীয়। তার প্রতিটি সুন্নাহ আমাদের জন্য আবশ্যিকভাবে পালনীয়। তা ছাড়া দুনিয়া ও আখেরাতে আমাদের মুক্তি নেই। তার উত্তম চারিত্রিক গুণাবলির একটি হলো সহনশীলতা। তার জীবন, কর্ম ও আদর্শে সহনশীলতার যে মহান শিক্ষা রয়েছে তা জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে গোটা পৃথিবীর মানুষের জন্যই এক অনুপ্রেরণার উৎস। তাকে ঘোষণাই করা হয়েছে সমগ্র সৃষ্টির জন্য করুণার প্রতীক হিসেবে। জগদ্বাসীর জন্য তার আবির্ভাবই হয়েছে আশীর্বাদ হিসেবে। তিনি সৃষ্টির প্রতি কতটা সহনশীল, এ থেকেই তা অনুমেয়। তার কীর্তিময় জীবনের বাঁকে বাঁকে অজস্র ঘটনা রয়েছে, যেসবের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা তাকে বিশ্বমানবতার পরম সুহৃদ ও সৃষ্টি জীবের প্রতি অতিশয় সহনশীল হিসেবে দেখতে পাই।

অমুসলিম মেহমানের সেবা, আগত মেহমান কর্র্তৃক অসদাচরণ করার পরও তার প্রতি কর্তব্যনিষ্ঠা, মদিনার মসজিদে প্রস্রাব করে দেওয়ার পরও অমুসলিম ব্যক্তির প্রতি হজরত রাসুল (সা.)-এর সহনশীলতা প্রদর্শন, মক্কা বিজয়ের পর অমুসলিম নাগরিকদের বিষয়ে হজরত রাসুল (সা.)-এর সাধারণ ক্ষমার নির্দেশনা, তায়েফের ঘটনায় পাথর-বৃষ্টিতে রক্তাক্ত হওয়ার পরও তাদের জন্য প্রার্থনা, অত্যাচারী মানুষদের ধ্বংস করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি পেয়েও তাদের প্রতি রহমশীল হওয়া, শিরñেদ করতে আসা ব্যক্তিকেও প্রাণভিক্ষা দেওয়া, প্রিয় চাচা হামজার কলিজা চিবিয়ে খাওয়া বর্বর হিন্দাকেও ক্ষমা করে দেওয়া, বিষপ্রয়োগে হত্যা করতে চাওয়া ব্যক্তির প্রতি উদারতা প্রদর্শন ইত্যাদি অসংখ্য ঘটনায় তিনি যে সহনশীলতার অবিশ্বাস্য নজির স্থাপন করেছেন, মানব সভ্যতার ইতিহাসে তা বিরল। ইসলাম মানুষকে সহনশীল হতে এবং অন্যকে ক্ষমা করতে শেখায়। যারা কথায় ও কাজে সহনশীলতা প্রকাশ করে, মহান আল্লাহ তাদের জন্য রেখেছেন অনেক বড় পুরস্কার ও প্রতিদান। কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘অবশ্যই সহনশীলদের প্রতিদান পূর্ণভাবে দেওয়া হবে।’ (সুরা জুমার ১০)

মানুষের জীবন বিভিন্ন অবস্থার সম্মুখীন হয়। কখনো সুখের সম্মুখীন হয়, কখনো দুঃখ-কষ্টের মুখোমুখি হয়, কখনো ভালো কাজের সঙ্গে জড়িত হয়, কখনো পাপে নিমজ্জিত হয়। এসব অবস্থায় মানুষকে চরম সংযম ও সহনশীলতা অবলম্বনের জন্য ইসলাম জোরালো তাগিদ দিয়েছে। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘হে বিশ্বাসীরা! তোমরা সহনশীলতা ও নামাজের মাধ্যমে আমার কাছে সাহায্য প্রার্থনা করো, নিশ্চয় আল্লাহ সহনশীলদের সঙ্গে আছেন।’ (সুরা বাকারা ১৫৩)

সংযম ও সহনশীলতা জান্নাতের পথকে সুগম করে। ইসলামের শিক্ষা অনুযায়ী মানুষের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনের সুখ-দুঃখে, বিপদ-আপদে, সংঘাত-সংঘর্ষে, দ্বন্দ্ব-কলহে, ঝগড়া-ফাসাদে সর্বাবস্থায় সংযম ও সহনশীলতা অবলম্বন করা উচিত। সহনশীলতা ও ক্ষমা মুসলমানের ইমানের এক অনন্য বৈশিষ্ট্য। হজরত রাসুল (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, ইমান কী? তিনি বললেন, ‘ইমান হচ্ছে ধৈর্য ও সহনশীলতা।’

যদিও সব সময় সংযত হওয়া কঠিন এবং কষ্টসাধ্য কাজ, তবু এটি এমন এক মহৎ মানবিক গুণ, যা সমাজের সর্বস্তরের মানুষের কল্যাণের জন্য খুবই প্রয়োজন। দুনিয়াতে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সহনশীলতা ও সংযমের বিকল্প নেই। এ জন্যই ইসলাম ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়সহ সব ক্ষেত্রে সহনশীলতার শিক্ষা দেয়। পরিবারের সদস্যদের মধ্যে স্বামী-স্ত্রী, বাবা-মা ও সন্তানসন্ততি, ভাই-বোনের মধ্যে সহনশীলতা, বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মতামত ও চিন্তার ক্ষেত্রে সহনশীলতা, অন্যান্য ধর্মের মানুষের আন্তঃধর্মীয় সম্পর্ক, সংলাপ ও সহযোগিতার মধ্যে সহনশীলতার দীক্ষা দেয়।

সহনশীলতা ইসলামের একটি মৌলিক নীতি এবং ধর্মীয় নৈতিক কর্তব্য। এর মানে এই নয় যে, ইসলাম কোনো অন্যায়ের ব্যাপারে ছাড় দেয়। ইসলাম সবসময়ই সহনশীলতার নির্দেশ দেয়। তবে অন্যায়, অত্যাচার, নিপীড়ন এবং অন্যের অধিকার কেড়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে ছাড় দেয় না। বরং এমন সময় সহনশীলতার প্রাচীর ভেঙে প্রতিবাদী হতে বলে। সম্প্রতি দেশের তরুণ ছাত্র-জনতারও সহনশীলতার প্রাচীর ভেঙে গিয়েছিল। তারা অত্যাচারীর কালো হাত ভেঙে দিয়েছে। গঠন করেছে অন্তর্বর্তীকালীন শাসনব্যবস্থা। এখন এই মুহূর্তে তাদের প্রতি আমাদের আস্থা রাখতে হবে, সহনশীল হতে হবে এবং ধৈর্য ধরতে হবে। ‘এটা করা হচ্ছে না কেন?’, ‘ওটা করা হচ্ছে না কেন?’ খুব তাড়াতাড়ি এসব প্রশ্নে যাওয়া যাবে না। তাহলে স্থিতিশীলতা আসবে না। বরং অস্থিরতা আরও বাড়বে। তাই স্থিতিশীলতা আনতে এবং অস্থিরতা কমাতে সবাইকে এখন ধৈর্য ধরতে হবে এবং পারস্পর পরস্পরের সঙ্গে সহনশীল আচরণ করতে হবে। তাহলে আশা করা যায়, আমরা সুন্দর ও সুশৃঙ্খলভাবে দেশ গঠন করতে পারব।

ভয়েস/আআ

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION