মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১:০৮ পূর্বাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।
শিরোনাম :
মাতারবাড়ি কয়লাবিদ্যুৎ প্রকল্প এলাকায় নিখোঁজের ৪দিন পর আরমানের লাশ উদ্ধার চকরিয়ায় পুকুরে গোসলে নেমে দুই বোনের মৃত্যু জাতিসংঘের তথ্যানুসন্ধান দল আনুষ্ঠানিকভাবে তদন্তের কাজ শুরু করবে মঙ্গলবার, থাকবে এক মাস বাংলাদেশকে ২০০ একর জমি ফিরিয়ে দিচ্ছে ভারত আওয়ামী লীগ হাতে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করতে ‍না পারলে , জনগণ নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারবে না।: রিজভী কিশোরগঞ্জে ঈদে মিলাদুন্নবীর মিছিল ঘিরে সংঘর্ষে নিহত ১ পেকুয়ায় লবণ ব্যবসায়ীকে মারধর করে টাকা ছিনতাই উখিয়া ক্যাম্পে দুর্বৃত্তের গুলিতে ২ যবক নিহত মহেশখালীতে মাংসের দাম অতিরিক্ত রাখায় ৪ ব্যবসায়ীকে জরিমানা নায়িকারা ছোট কাপড় পরলে চলে, ঘরের বউদের চলে না : গোবিন্দের স্ত্রী

ছোট গুনাহের বড় ক্ষতি

মো. আবদুর রহমান:
মহান আল্লাহ ও রাসুল (সা.)-এর আদেশ-নিষেধ অমান্য করাকে গুনাহ বলে। গুনাহের দ্বারা মহান আল্লাহর অবাধ্যতা প্রকাশ পায় এবং আল্লাহ থেকে বান্দার দূরত্ব সৃষ্টি হয়। গুনাহমুক্ত পবিত্র জীবনযাপন করা আদর্শ মানুষের কর্তব্য। গুনাহ থেকে বাঁচতে হলে গুনাহের প্রকারভেদ ও ধরন সম্পর্কেও জানা থাকা কর্তব্য। গুনাহ প্রধানত দুই প্রকার। এক. কবিরা গুনাহ বা বড় পাপ। দুই. সগিরা গুনাহ বা ছোট পাপ।

সগিরা গুনাহ : যেসব আদেশ-নিষেধের লঙ্ঘনে বিশেষ নির্দিষ্ট শাস্তির কথা উল্লেখ হয়নি সেগুলোকে সগিরা গুনাহ বলে। এসব কাজ মাকরুহ বা অপছন্দনীয়। সগিরা গুনাহ বান্দার যে কোনো নেক আমল দ্বারা মাফ হয়ে যায়। তবে সগিরা গুনাহকে হালকা বা গুরুত্বহীন ভেবে তাতে লিপ্ত হওয়া যাবে না। কারণ সগিরা গুনাহও যদি বারবার করা হয়, তাহলে সেটিও কবিরা গুনাহে পরিণত হয়ে যায়। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা ছোট গুনাহ থেকেও সাবধান হও। কেননা সেগুলো মানুষের আমলের খাতায় জমা হতে থাকে, তারপর তাকে ধ্বংস করে দেয়।’

(মুসনাদে আহমদ ৩৮১৮)

কবিরা গুনাহ : যেসব আদেশ-নিষেধের লঙ্ঘনে জাহান্নাম, আগুনের শাস্তি বা নির্দিষ্ট আজাবের সাবধানবাণী রয়েছে সেগুলোকে কবিরা গুনাহ বলে। এসব কাজ হারাম। এ ব্যাপারে আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘যেসব পাপের ক্ষেত্রে জাহান্নাম, আল্লাহর ক্রোধ, অভিসম্পাত এবং শাস্তির ভীতি প্রদর্শন রয়েছে সেগুলোই হচ্ছে কবিরা গুনাহ।’ (তাফসিরে ইবনে কাসির ২/২৮৩) তিনি আরও বলেন, ‘যে কাজে আল্লাহর অবাধ্যতা প্রকাশ পায় তাই কবিরা গুনাহ।’ কবিরা গুনাহ তওবা দ্বারা ক্ষমা পাওয়া যায়।

কবিরা গুনাহের সংখ্যা : কবিরা গুনাহের সংখ্যা সম্পর্কে ওলামায়ে কেরামের মধ্যে কিছু মতভেদ রয়েছে। কারও কারও মতে কবিরা গুনাহ সাতটি। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা সাতটি ভয়ানক গুনাহ থেকে দূরে থাকো। সাহাবিরা জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! সেগুলো কী কী? রাসুল (সা.) বললেন, (এক.) আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরিক করা। (দুই.) জাদু করা। (তিন.) অন্যায়ভাবে কোনো মানুষ হত্যা করা। (চার.) সুদ খাওয়া। (পাঁচ.) এতিমের সম্পদ আত্মসাৎ করা। (ছয়.) যুদ্ধের ময়দান থেকে পলায়ন করা। (সাত.) সতীসাধ্বী কোনো মুমিন মহিলার নামে ব্যভিচারের মিথ্যা অপবাদ দেওয়া।’

(সহিহ বুখারি)

আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেছেন, কবিরা গুনাহ প্রায় সত্তরটি। কিছু সংখ্যক উলামায়ে কেরাম কবিরা গুনাহ গণনা করে সত্তরটিই পেয়েছেন। আবার কেউ কেউ সামান্য কিছু বেশি পেয়েছেন।

(মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক ১/৪৮৬)

অবশ্য এ কথাও সত্য যে, কবিরা গুনাহ সবগুলোই সমান নয়। বরং একটি অপরটি অপেক্ষা বেশি গুরুতর অথবা হালকা। যেমন : আল্লাহর সঙ্গে শিরক করাকেও রাসুল (সা.) কবিরা গুনাহ বলেছেন। অথচ এটি এত জঘন্য পাপ যে, এতে লিপ্ত অপরাধী অনন্তকাল জাহান্নামে থাকবে এবং তার অপরাধ ক্ষমার অযোগ্য।

গুনাহ মানুষের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। গুনাহের প্রতিক্রিয়া অন্তরে এমনভাবে বিস্তার লাভ করে, যেভাবে বিষের ক্রিয়া মানুষের দেহে ছড়িয়ে পড়ে। বিষের শক্তি যত বেশি হয়, এর প্রতিক্রিয়াও তত মারাত্মক হয়। বস্তুত গুনাহের বহুবিধ ক্ষতি রয়েছে।

কোনো গুনাহকেই ছোট মনে করতে নেই : গুনাহ ছোট হোক বা বড় হোক, কোনো গুনাহকে কখনো ছোট, হালকা এবং তুচ্ছ মনে করা যাবে না। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমাকে রাসুল (সা.) বলেছেন, হে আয়েশা! ছোট বা ক্ষুদ্র গুনাহকেও তুচ্ছ মনে করবে না। কেননা সেগুলোর জন্যও আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ ৪২৪৩)

বস্তুত সব গুনাহ ভয়ানক এবং মহান আল্লাহর অসন্তুষ্টির কারণ। ফোঁটা ফোঁটা পানি জমে যেমন সৃষ্টি হয় নদী-সাগর, তেমনি ছোট ছোট গুনাহ একত্র হতে হতে এক সময় তা জাহান্নামে নিয়ে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট হয়ে যায়। তাই মুমিন ছোট-বড় সব ধরনের গুনাহকে ভয় পায় এবং তা থেকে সতর্ক থাকার চেষ্টা করে।

আনাস ইবনে মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘তোমরা তো এখন এমন অনেক অনুত্তম কাজ করো, যেগুলো তোমাদের দৃষ্টিতে খুবই নগণ্য। অথচ আমরা রাসুল (সা.)-এর যুগে এসব কাজকেই আমাদের জন্য ধ্বংসাত্মক মনে করতাম।’ (সহিহ বুখারি) আলি (রা.) বলেন, ‘সবচেয়ে বড় পাপ হলো পাপকে তুচ্ছ মনে করা।’ (আল মুজালাসাহ ৪/২০১)

সাহাল ইবনে সাইদ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা ছোট বা ক্ষুদ্র গুনাহ থেকেও সাবধান হও। ছোট ছোট গুনাহের উদাহরণ হচ্ছে সেই পর্যটক দলের মতো যারা একটি উপত্যকায় অবতরণ করল। যখন তাদের খাবারের সময় হলো, প্রত্যেকে একটি একটি করে লাকড়ি (জ্বালানি কাঠ) সংগ্রহ করে নিয়ে এলো। এক সময় একটি দুটি করে লাকড়ি জমা হতে হতে ঠিকই স্তূপ হয়ে গেল। এক পর্যায়ে এই লাকড়ি পুড়িয়ে তাদের রুটি তৈরি সম্পন্ন হলো। আগুন যেমন জমা করা লাকড়িগুলোকে পুড়িয়ে ছাই করে দিল, তদ্রুপ যখন এমন ছোট ছোট গুনাহগুলোর কারণে কাউকে পাকড়াও করা হবে, তখন তাকে ধ্বংস করে ফেলবে।’ (মুসনাদে আহমাদ)

গুনাহ সব সমস্যার মূল। তাই সব ধরনের গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা প্রত্যেক মানুষের জন্য আবশ্যক। মানুষ যত বেশি গুনাহ থেকে দূরে থাকবে, তত বেশি তার আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক সুদৃঢ় হবে এবং তার সম্মান বৃদ্ধি পাবে। মহান আল্লাহ আমাদের সব ধরনের গুনাহ এবং এর ক্ষতি থেকে হেফাজত করুন।

ভয়েস/আআ

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION