বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২৫, ০৪:৩৮ পূর্বাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।
শিরোনাম :
খালেদা জিয়াকে চৌদ্দগ্রামে নাশকতা মামলা থেকে অব্যাহতি ১৮ হাজার অবৈধ অভিবাসীকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফিরিয়ে নিচ্ছে ভারত বাংলাদেশ ও ইউএনএইচসিআর রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে একসাথে কাজ করবে ফলাফল জালিয়াতি:চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের সাবেক সচিব নারায়ন চন্দ্র নাথসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা টেকনাফে পাচারকারীর ফেলে যাওয়া বস্তায় পাওয়া গেল সাড়ে ৪ লাখ পিস ইয়াবা পেকুয়ায় হরিণাফাঁড়ী এলাকায় টপসয়েল কাটা বন্ধে অভিযানে হামলাচেষ্টা ফারিনের ‘ঠিকানা’ ১০ মিলিয়নে বিশ্বকাপের দৌড়ে উইন্ডিজকে হারিয়ে টিকে থাকল বাংলাদেশ বাণিজ্যকে আমরা রাজনীতির সাথে মিলাচ্ছি না:খাদ্য উপদেষ্টা বেড়েছে চোরের উপদ্রব, আতঙ্কে দিন কাটে মানুষের

যেমন ছিল নবীজির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক

মাহবুবুর রহমান:
রাসুল (সা.) ইসলামের প্রচার ও সম্প্রসারণের জন্য আন্তর্জাতিক পর্যায়েও কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করেছিলেন। তার এই সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার মূল উদ্দেশ্য ছিল ইসলামি দাওয়াতের বার্তা পৌঁছানো, মানবতার মুক্তির বার্তা প্রচার এবং আন্তর্জাতিক শান্তি ও সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠা করা। রাসুল (সা.)-এর আন্তর্জাতিক সম্পর্ক গড়ে তোলার কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক তুলে ধরা হলো।

চিঠিপত্র প্রেরণ : রাসুল (সা.) বিভিন্ন দেশের শাসকদের কাছে চিঠি পাঠিয়েছিলেন, যাতে তারা ইসলাম গ্রহণ করেন। এই চিঠিগুলোতে ইসলামের মূল শিক্ষা ও শান্তির বার্তা তুলে ধরা হতো। উল্লেখযোগ্য চিঠি প্রাপকদের মধ্যে একজন ছিলেন রোমান সম্রাট হেরাক্লিয়াস। রাসুল (সা.) হেরাক্লিয়াসকে ইসলামের দিকে আহ্বান জানিয়ে চিঠি পাঠান। হেরাক্লিয়াস এই চিঠিটি শ্রদ্ধার সঙ্গে গ্রহণ করেছিলেন। আর রাসুল (সা.) ইসলাম গ্রহণের আমন্ত্রণ জানিয়ে পারস্য সম্রাটের কাছে যখন চিঠি পাঠান, তখন খসরু এর প্রতি নাখোশ ছিলেন এবং চিঠি ছিঁড়ে ফেলেন। এছাড়া মিসরের সম্রাট মুকাওকিস রাসুল (সা.)-এর চিঠির প্রতি যথেষ্ট শ্রদ্ধা প্রদর্শন করেন এবং রাসুল (সা.)-এর কাছে উপহার পাঠান।

শান্তিপূর্ণ চুক্তি : রাসুল (সা.) বিভিন্ন গোত্র ও দেশের সঙ্গে শান্তিচুক্তি করেছিলেন, যার অন্যতম উদাহরণ হলো হুদায়বিয়ার চুক্তি। মক্কার কুরাইশদের সঙ্গে এই চুক্তিটি করে তিনি মক্কা বিজয়ের জন্য প্রস্তুতি নিতে সক্ষম হন এবং এটি ইসলাম প্রচারের জন্য একটি কৌশলগত বিজয় ছিল।

প্রতিনিধিদল প্রেরণ : রাসুল (সা.) বিভিন্ন দেশের শাসকদের কাছে তার সাহাবিদের প্রতিনিধি হিসেবে পাঠিয়েছিলেন, যাতে তারা ইসলাম প্রচার করতে পারেন এবং দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নে কাজ করতে পারেন।

প্রতিবেশী দেশের প্রতি দায়িত্বশীলতা : রাসুল (সা.) তার প্রতিবেশী দেশগুলোর প্রতি দায়িত্বশীল আচরণ করতেন এবং তিনি কখনোই আগ্রাসন বা শক্তি প্রদর্শনের মাধ্যমে ইসলাম প্রচার করেননি। বরং শান্তি ও কল্যাণের বার্তা দিয়ে সম্পর্ক উন্নয়ন করতেন।

ধর্মীয় সহিষ্ণুতা : আন্তর্জাতিক সম্পর্ক স্থাপনের ক্ষেত্রে রাসুল (সা.) সব ধর্ম ও সম্প্রদায়ের প্রতি সহিষ্ণুতা দেখিয়েছেন। তিনি কখনো জোর করে কাউকে ইসলাম গ্রহণ করতে বলেননি, বরং মানুষের ব্যক্তিগত স্বাধীনতাকে সম্মান করতেন।

মানবিক সাহায্য : রাসুল (সা.) শুধু ধর্ম প্রচারের উদ্দেশে নয়, বরং মানবতার খাতিরে বিভিন্ন গোত্র ও জাতিকে সাহায্য করতেন। দুর্ভিক্ষ বা সংকটে পড়া জাতিগোষ্ঠীগুলোর প্রতি তার সহানুভূতি ও সাহায্যের হাত বাড়ানো ছিল মুসলিম জাতির জন্য একটি উদাহরণ। এর মাধ্যমে মুসলিম উম্মাহর সহানুভূতিশীল ও উদার চরিত্রের প্রতিফলন ঘটেছিল।

শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান : রাসুল (সা.) বিভিন্ন গোত্রের মধ্যে পারস্পরিক বিশ্বাস এবং শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান গড়ে তুলতে অনেক উদ্যোগ নিয়েছিলেন। উদাহরণস্বরূপ মদিনায় ইহুদি সম্প্রদায়ের সঙ্গে তিনি মদিনা সনদ নামক চুক্তি সম্পাদন করেন, যা মদিনা শহরে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে শান্তি ও সম্প্রীতি নিশ্চিত করেছিল। এটি ছিল সমসাময়িক আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও সংবিধানের একটি উদাহরণ।

আদর্শ কূটনীতিকের উদাহরণ : রাসুল (সা.) তার সমগ্র জীবনে অন্য জাতির সঙ্গে কূটনৈতিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে ন্যায়পরায়ণতা, বিনয় ও আন্তরিকতা প্রদর্শন করেছিলেন। তিনি নিজে কখনোই উগ্রতা বা ঔদ্ধত্য প্রদর্শন করেননি। তার আদর্শ কূটনৈতিক পদ্ধতির মাধ্যমে তিনি ইসলামি দাওয়াতের বার্তা ছড়িয়ে দিতে সক্ষম হয়েছিলেন, যা তার আন্তরিকতার সাক্ষ্য বহন করে।

আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের উন্নয়ন : রাসুল (সা.) আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্পর্কেও বিশেষ মনোযোগ দিয়েছিলেন, যা মুসলিম অর্থনীতির উন্নতিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছিল। ইসলামপূর্ব যুগে আরবদের ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল এবং রাসুল (সা.) সেই সম্পর্ককে আরও সুসংহত করেছিলেন। ব্যবসার মাধ্যমে ইসলামিক নৈতিকতা ও বিশ্বস্ততার দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয়েছিল।

উদার ধর্মীয় দর্শন : রাসুল (সা.) অন্যান্য ধর্মের প্রতি উদার ও সহিষ্ণু দৃষ্টিভঙ্গি প্রদর্শন করতেন। কখনোই কোনো জাতি বা ধর্মের ওপর জোর খাটিয়ে ইসলাম প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেননি। তিনি সব সময় মানুষের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করেছেন এবং আল্লাহর পথে দাওয়াতের কাজ করেছেন। রাসুল (সা.)-এর আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এবং তার কূটনৈতিক দক্ষতা নিয়ে আরও গভীরভাবে বিশ্লেষণ করলে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উঠে আসে, যা তার নেতৃত্ব, দাওয়াত ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের ওপর আলোকপাত করে। আরও কিছু বিষয় বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হলো।

ইসলামিক দাওয়াতের বৈশ্বিক প্রসার : রাসুল (সা.) আল্লাহর কাছ থেকে দায়িত্বপ্রাপ্ত হন মানুষের কাছে আল্লাহর বার্তা পৌঁছানোর জন্য। তাই তিনি কোনো নির্দিষ্ট অঞ্চলে সীমাবদ্ধ না থেকে বাইরের দেশগুলোতেও ইসলামের বার্তা পৌঁছে দিতে উদ্যোগী হয়েছিলেন। এটি ছিল তার প্রচেষ্টা যাতে সব মানুষ আল্লাহর একত্ববাদ এবং শান্তির দাওয়াত সম্পর্কে জানতে পারে। এই উদ্দেশে তিনি বিভিন্ন দেশে রাষ্ট্রদূত পাঠিয়েছিলেন, যারা ইসলামিক শিক্ষা এবং মানবিক মূল্যবোধ প্রচার করতেন।

ধর্মীয় বৈচিত্র্যের প্রতি শ্রদ্ধা : রাসুল (সা.)-এর কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল ধর্মীয় বৈচিত্র্যকে সম্মান করা। তার সময়ে মদিনা ছিল বিভিন্ন ধর্ম ও সংস্কৃতির মেলবন্ধনস্থল। রাসুল (সা.) মদিনায় ইহুদি, খ্রিস্টান ও অন্যান্য সম্প্রদায়ের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের চেষ্টা করেছিলেন। তার এই আদর্শ বর্তমান যুগে আন্তঃধর্মীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে এক অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত।

দূতের প্রতি আন্তরিক ও শ্রদ্ধাশীল আচরণ : রাসুল (সা.) অন্যান্য দেশ থেকে আগত দূত ও প্রতিনিধিদের প্রতি সর্বদা আন্তরিক ও শ্রদ্ধাশীল ছিলেন। তিনি তাদের সঙ্গে যথেষ্ট সম্মান ও আতিথেয়তার আচরণ করতেন, যা তার ন্যায়পরায়ণতা ও আদর্শমানের পরিচায়ক। যেসব প্রতিনিধি বা দূত ইসলামের দাওয়াত প্রত্যাখ্যান করতেন, তাদের সঙ্গেও রাসুল (সা.) কোনো ধরনের অসৌজন্যমূলক আচরণ করতেন না।

আন্তঃগোত্রীয় শান্তিচুক্তির গুরুত্ব : রাসুল (সা.) বুঝতে পেরেছিলেন যে, শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিত করতে গোত্রীয় ও আন্তর্জাতিক শান্তিচুক্তি অপরিহার্য। এ কারণে তিনি কুরাইশ ও অন্যান্য গোত্রের সঙ্গে শান্তিচুক্তি করেছিলেন। যেমন হুদায়বিয়ার চুক্তি মুসলমানদের এবং কুরাইশদের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ শান্তিচুক্তি হিসেবে পরিগণিত হয়। এই চুক্তি ইসলামের দাওয়াত প্রচারে আরও বড় ভূমিকা রাখে। কারণ মুসলমানরা তখন ইসলামের মূল বাণীকে আরও বিস্তৃত করতে সক্ষম হয়।

সামরিক কৌশল ও আত্মরক্ষা : রাসুল (সা.) কখনো অকারণে সামরিক শক্তি প্রয়োগ করেননি, বরং প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তার জন্য কৌশলগত উদ্যোগ নিয়েছিলেন। যেমন তিনি তাবুক অভিযানের সময় শক্তি প্রদর্শন করেছিলেন যেন মুসলমানদের নিরাপত্তা হুমকির সম্মুখীন না হয়। তার এই সামরিক কৌশলগত সম্পর্ক স্থাপনের উদাহরণ বর্তমান যুগেও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক স্থাপনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

মানবাধিকার ও সাম্য প্রতিষ্ঠা : রাসুল (সা.) সব মানুষের জন্য সমান অধিকার ও মর্যাদার কথা বলতেন। তার কূটনৈতিক কার্যক্রমেও এটি প্রতিফলিত হয়। তিনি রাষ্ট্রপ্রধানদের কাছে চিঠিতে স্পষ্ট করে বলতেন যে, ইসলাম শুধু একটি ধর্ম নয়, বরং এটি মানবতার জন্য শান্তি ও সাম্যের বার্তা। রাসুল (সা.) এমন এক সমাজ গঠন করতে চেয়েছিলেন যেখানে সব মানুষের মর্যাদা ও সম্মান সমান হবে।

আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধান : রাসুল (সা.) বিশ্বাস করতেন যে আলোচনা ও পারস্পরিক বোঝাপড়ার মাধ্যমে অনেক সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। যুদ্ধ বা সংঘর্ষ এড়িয়ে রাসুল (সা.) যতটা সম্ভব আলোচনা ও চুক্তির মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করতেন। এটি ছিল তার কূটনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির অন্যতম বৈশিষ্ট্য, যা বর্তমান আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে দৃষ্টান্ত হয়ে আছে।

আন্তঃধর্মীয় সংলাপ : রাসুল (সা.) বিভিন্ন ধর্মের লোকদের সঙ্গে সংলাপ ও আলোচনায় বিশ্বাস করতেন। খ্রিস্টান ও ইহুদি প্রতিনিধিদলকে তিনি মদিনায় অভ্যর্থনা জানাতেন এবং তাদের সঙ্গে ইসলামের মূল শিক্ষা সম্পর্কে আলোচনা করতেন। তার এই সহনশীলতা ও আন্তরিকতার কারণে অন্য ধর্মের মানুষও তার প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলেন এবং তাকে একজন মহান নেতার মর্যাদা দিয়েছেন।

ভয়েস/আআ

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION