বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২৫, ০৩:৩৭ পূর্বাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।
শিরোনাম :
খালেদা জিয়াকে চৌদ্দগ্রামে নাশকতা মামলা থেকে অব্যাহতি ১৮ হাজার অবৈধ অভিবাসীকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফিরিয়ে নিচ্ছে ভারত বাংলাদেশ ও ইউএনএইচসিআর রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে একসাথে কাজ করবে ফলাফল জালিয়াতি:চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের সাবেক সচিব নারায়ন চন্দ্র নাথসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা টেকনাফে পাচারকারীর ফেলে যাওয়া বস্তায় পাওয়া গেল সাড়ে ৪ লাখ পিস ইয়াবা পেকুয়ায় হরিণাফাঁড়ী এলাকায় টপসয়েল কাটা বন্ধে অভিযানে হামলাচেষ্টা ফারিনের ‘ঠিকানা’ ১০ মিলিয়নে বিশ্বকাপের দৌড়ে উইন্ডিজকে হারিয়ে টিকে থাকল বাংলাদেশ বাণিজ্যকে আমরা রাজনীতির সাথে মিলাচ্ছি না:খাদ্য উপদেষ্টা বেড়েছে চোরের উপদ্রব, আতঙ্কে দিন কাটে মানুষের

শীত ইবাদতের বসন্তকাল

মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ:
শীত আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের প্রিয় মৌসুম। কুয়াশার মিহি চাদরে ঢাকা শীতে ইবাদত-বন্দেগি তুলনামূলকভাবে বেশি করা যায়। আল্লাহর নৈকট্য লাভেও অধিক মগ্ন থাকা যায়। তাই শীতকালকে রাসুলুল্লাহ (সা.) মুমিনের জন্য ঋতুরাজ বলে আখ্যায়িত করেছেন। এ প্রসঙ্গে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, শীতকাল হলো মুমিনের বসন্তকাল। (মুসনাদে আহমাদ)

ওমর (রা.) বলেছেন, শীতকাল হলো ইবাদতকারীদের জন্য গনিমতস্বরূপ। শীত তো এমন গনিমত, যা কোনো রক্ত পাত কিংবা চেষ্টা ও কষ্ট ছাড়াই অর্জিত হয়। সবাই কোনো ক্ষয়ক্ষতি ছাড়াই এ গনিমত স্বতঃস্ফূর্তভাবে লাভ করে এবং কোনো প্রচেষ্টা বা পরিশ্রম ব্যতিরেকে তা ভোগ করে। শীতকালে আমরা অধিকহারে ঠাণ্ডা অনুভব করি এবং গ্রীষ্মকালে আমরা প্রচণ্ড গরম অনুভব করি। এ দুই কালে ঠান্ডা ও গরমের প্রচণ্ডতার কারণ কি তা হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, জাহান্নাম তার প্রতিপালকের কাছে এ বলে অভিযোগ করেছিল যে, হে আমার প্রতিপালক! (প্রচন্ড উত্তাপের কারণে) আমার এক অংশ অন্য অংশকে গ্রাস করে ফেলেছে। তখন আল্লাহতায়ালা তাকে দুটি শ্বাস ফেলার অনুমতি দিলেন। একটি শীতকালে, অন্যটি গ্রীষ্মকালে। তাই তোমরা গ্রীষ্মকালে প্রচণ্ড উত্তাপ এবং শীতকালে প্রচণ্ড ঠাণ্ডা অনুভব করো। (সহিহ বুখারি)

অন্য বর্ণনায় এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, তোমরা গরমের যে প্রচণ্ডতা অনুভব করো তা জাহান্নামের গরম নিঃশ্বাসের কারণেই। আর শীতের তীব্রতা যা পাও তা জাহান্নামের ঠাণ্ডা নিঃশ্বাসের কারণেই। (সহিহ বুখারি) শীতকাল আল্লাহতায়ালার দেওয়া নেয়ামত ও ইবাদতের বিশেষ মৌসুম। এই মৌসুম যেভাবে ফলফলাদির বিশেষ মৌসুম ঠিক তেমনি আমালের জন্যও বিশেষ মৌসুম। কাজেই শীতকালের এই মৌসুমকে সঠিকভাবে কাজে লাগানোর জন্য কিছু উত্তম ইবাদতের বিবরণী তুলে ধরা হলো।

শীতকালের রোজা রাখা : ইমানদারের জন্য শীতকাল বিশেষ গুরুত্বের দাবি রাখে। আমের ইবনে মাসউদ (রহ.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, শীতকালের রোজা হলো অনায়াশলব্ধ গনিমত সম্পদের মতো। (তিরমিজি) শীতকালে দিন থাকে খুবই ছোট। শীতকালে রোজা রাখলে দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকতে হয় না। তাই কারও যদি কাজা রোজা বাকি থাকে, তাহলে শীতকালে সেগুলো আদায় করে নেওয়া কাম্য। তা ছাড়া বেশি বেশি নফল রোজা রাখারও এটি সুবর্ণ সময়। রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, বিশুদ্ধ নিয়তে যে ব্যক্তি একদিন রোজা রাখল, মহান আল্লাহ প্রতিদানস্বরূপ জাহান্নাম এবং ওই ব্যক্তির মাঝখানে ৭০ বছরের দূরত্ব তৈরি করে দেবেন। (সহিহ বুখারি)

শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানো : হাড় কাঁপানো শীতে নাকাল হয় দরিদ্র ও ছিন্নমূল মানুষ। শীতার্তসহ বিপন্ন সব মানুষের পাশে দাঁড়ানো ইসলামের আদর্শ। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তারা আল্লাহর প্রেমে উজ্জীবিত হয়ে দরিদ্র, এতিম ও বন্দিদের খাদ্য দান করে।’ (সুরা দাহার ৮) পর্যাপ্ত শীতবস্ত্র না থাকায় শীতকালে অনেক গরিব মানুষকে কষ্ট করতে হয়। শীতার্ত মানুষকে প্রয়োজনীয় বস্ত্র দিয়ে জান্নাতের মহা নেয়ামত লাভে ধন্য হওয়ার সুযোগ রয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, যে মুমিন অন্য বিবস্ত্র মুমিনকে কাপড় পরিয়ে দিল, মহান আল্লাহ ওই ব্যক্তিকে জান্নাতের সবুজ কাপড় পরিয়ে দেবেন। (তিরমিজি) আমাদের নিকটস্থ অভাবী মানুষকে একটি শীতবস্ত্র কিনে দিয়ে আমরাও পেতে পারি জান্নাতের সেই সবুজ পোশাক।

নফল নামাজ আদায় করা : শীতকালে রাত অনেক লম্বা হয়। পরিপূর্ণ ঘুমানোর পরেও শেষ রাতে তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করা যায়। মহান আল্লাহ ইমানদারদের গুণাবলি সম্পর্কে বলেন, ‘তাদের পিঠ থাকে বিছানা থেকে আলাদা, নিজেদের রবকে ডাকে আশঙ্কা ও আকাক্সক্ষাসহ এবং আমি যা কিছু রিজিক তাদের দিয়েছি তা থেকে ব্যয় করে।’ (সুরা সাজদাহ ১৬) নেককার ব্যক্তিরা শীতের রাতে নামাজ আদায়, জিকির ও ইসতেগফার পাঠে লিপ্ত থাকেন। শীতকাল আগমন করলে উবাইদ ইবনে উমাইর (রা.) বলতেন, ‘হে কোরআনের ধারক! তোমাদের রাতগুলো তেলাওয়াতের জন্য প্রলম্বিত করা হয়েছে, অতএব তা করতে থাকো। আর রোজা রাখার জন্য তোমাদের দিনগুলো সংক্ষেপিত করা হয়েছে, তাই বেশি বেশি রোজা রাখো।’ তাবেয়ি হাসান বসরি (রহ.) বলেন, ‘একজন মুমিনের জন্য শীতকাল ইবাদত করার চমৎকার মৌসুম। শীতকালে রাত লম্বা হয়। এতে সে (সহজেই) তাহাজ্জুদ আদায় করতে পারে। দিন ছোট হয়। ফলে সহজেই রোজা রাখতে পারে। এ জন্যই পূর্ববর্তীদের মধ্যে যারা ইবাদত-বন্দেগিতে কঠোর পরিশ্রম করতেন তারা যদি কোনো কারণে এ সময়ের রাতগুলোতে তাহাজ্জুদ না পড়তে পারতেন এবং দিনের বেলা রোজা না রাখতে পারতেন তাহলে এর জন্য তারা কাঁদতেন।’ আমরা ফজরের নামাজের জন্য যে সময় ঘুম হতে জেগে উঠি, সেই সময়ের এক ঘণ্টা বা আজানের আধা ঘণ্টা আগে জেগে তাহাজ্জুদের নামাজ আদায়ের চেষ্টা করতে পারি। শীতকালই তাহাজ্জুদের নামাজে অভ্যস্ত হওয়ার উপযুক্ত সময়কাল।

অজু ও গোসলের ব্যাপারে সচেতনতা : শীতের সময় প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় যাতে কেউ অজু করতে অবহেলা না করে, সে কারণে অজু ও নামাজের প্রতি যতœবান হতে এবং বড় পুরস্কার ও ফজিলতের কথা রাসুল (সা.) এভাবে ঘোষণা করেছেন, ‘আমি কি তোমাদের এমন বিষয়ের সংবাদ দেব না! যার মাধ্যমে আল্লাহতায়ালা তোমাদের গুনাহসমূহ মিটিয়ে দেবেন আর আল্লাহর কাছে তোমাদের মর্যাদা ও সম্মান বৃদ্ধি করে দেবেন? সাহাবায়ে কেরাম বললেন, অবশ্যই, হে আল্লাহর রাসুল! রাসুল (সা.) বললেন, (শীত বা অন্য যেকোনো ঠাণ্ডার) কষ্টকর মুহূর্তে ভালোভাবে অজু করা।’ (সহিহ মুসলিম)

ভয়েস/আআ

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION