বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২৫, ০২:৫৯ পূর্বাহ্ন
মো. সাইফুল মিয়া:
ধৈর্য মানবচরিত্রের অন্যতম বিশেষ গুণ। একজন মানুষ সঠিক পথে পরিচালিত হওয়ার জন্য ধৈর্যশীল হওয়া প্রয়োজন। হতাশগ্রস্ত মানুষ সাফল্যের দেখা পায় না। ধৈর্যশীল ব্যক্তি সফলতার চরম শিখরে আরোহণ করে। পার্থিব জীবনে সুখ-দুঃখ অনিবার্য। মহান আল্লাহ বান্দাকে পরীক্ষা হিসেবে মাঝে মাঝে বিপদ-আপদ, বালা-মুসিবতের সম্মুখীন করেন। বান্দা এই অবস্থায় হতাশ না হয়ে আল্লাহর প্রতি আস্থা রাখে এবং ধৈর্যধারণ করে। বান্দার এই গুণ তার পরবর্তী সফলতার পথকে সুগম করে। পবিত্র কোরআন ও হাদিসে বহু জায়গায় ধৈর্যশীল বান্দার জন্য অগণিত পুরস্কারের সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে। মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে বলেন, ‘হে বিশ্বাসীরা! তোমরা ধৈর্যধারণ করো এবং ধৈর্যধারণে প্রতিযোগিতা করো।’ (সুরা আলে ইমরান ২০০)
মানবজীবনে আমরা সফলতা অর্জন করতে বিভিন্ন কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকি। কিন্তু আমরা ভুলে যাই সফলতার পথে ধৈর্য অপরিহার্য। কারণ মহান আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাহায্য করেন। সুতরাং দেরিতে হলেও সফলতা নিশ্চয়ই আসবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) একবার আনসারি কিছু সাহাবিকে বলেন, ‘আর যে ব্যক্তি ধৈর্যধারণ করে আল্লাহ তাকে ধৈর্যশীলই রাখেন। আর যে অমুখাপেক্ষী হতে চায়, আল্লাহ তাকে অভাবমুক্ত রাখেন। ধৈর্যের চেয়ে বেশি প্রশস্ত ও কল্যাণকর কিছু কখনো তোমাদের দান করা হবে না। (সহিহ বুখারি ৬৪৭০)
মহান আল্লাহ দুনিয়াতে বান্দাকে ধন-সম্পদ, জীবন এবং ফল-ফসলের ক্ষয়ক্ষতি দ্বারা পরীক্ষার সম্মুখীন করেন। মহান আল্লাহর প্রতি বান্দা কতটা ভরসা করেন তা তখন প্রমাণিত হয়। এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে তাদের জন্য রয়েছে উত্তম পুরস্কার। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই আমি তোমাদের কিছু ভয় ও ক্ষুধা দ্বারা, জান-মাল এবং ফসলের ক্ষতির দ্বারা পরীক্ষা করব। আর তুমি ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দাও।’ (সুরা বাকারা ১৫৫) তাই জীবনের কঠিন মুহূর্তেও ধৈর্যধারণ করতে হবে এবং নামাজের মাধ্যমে মহান আল্লাহর সাহায্য কামনা করতে হবে। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে বলেন, ‘হে মুমিনরা, ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে সাহায্য চাও। নিশ্চয় আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে আছেন।’ (সুরা বাকারা ১৫৩)
দুনিয়ায় যারা ধৈর্যধারণ করবে মহান আল্লাহ তাদের উত্তম প্রতিদান দেবেন। মানুষ স্বভাবত শয়তানের ধোঁকায় পাপ কাজে লিপ্ত হয়। কিন্তু ধৈর্যশীল বান্দারা আল্লাহর প্রতি অগাধ আস্থা ও ভয়ের প্রভাবে পাপ করার পর অনুতপ্ত হয়ে তওবা করে। তাতে মহান আল্লাহ খুশি হন এবং ধৈর্যশীল বান্দার গুনাহ আল্লাহ ক্ষমা করে দেন। উম্মুল মুমিনিন হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘মুসলিম ব্যক্তির ওপর যে সব বিপদ-আপদ আসে এর দ্বারা আল্লাহ তার পাপ মোচন করে দেন। এমনকি যে কাঁটা তার শরীরে ফুটে এর দ্বারাও।’ (সহিহ বুখারি ৫৬৪০)
দুনিয়া মানুষের জন্য পরীক্ষা ক্ষেত্র। এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার আগ পর্যন্ত মহান আল্লাহ বিভিন্নভাবে মানুষকে পরীক্ষা করবেন। মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে বলেন, ‘আমি অবশ্যই তোমাদের পরীক্ষা করব, যতক্ষণ না আমি জেনে নিই তোমাদের মধ্যে কে মুজাহিদ ও ধৈর্যশীল এবং যতক্ষণ না আমি তোমাদের কার্যাবলি পরীক্ষা করি।’ (সুরা মুহাম্মদ ৩১) দুনিয়ার কৃতকর্মের দ্বারা পরকালে জান্নাত ও জাহান্নাম নির্ধারণ করা হবে। ধৈর্যশীল বান্দার পুরস্কার হিসেবে পরকালে পাবে জান্নাত। এ প্রসঙ্গে এক হাদিসে এসেছে, আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘মহান আল্লাহ বলেন, আমার মুমিন বান্দার জন্য আমার কাছে জান্নাত ছাড়া অন্য কোনো পুরস্কার নেই, যখন আমি তার দুনিয়ার প্রিয়তম কাউকে কেড়ে নিই এবং সে নেকির নিয়তে ধৈর্যধারণ করে।’ (সহিহ বুখারি ১২৫২) সুতরাং ইহকালে সফলতা ও সমৃদ্ধি এবং পরকালে মুক্তির জন্য ধৈর্যশীল হওয়া প্রয়োজন। মহান আল্লাহ আমাদের চরিত্রে এই মহৎ গুণের বিকাশ ঘটানোর তওফিক দান করুন। আমিন।
ভয়েস/আআ