বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৭:১৭ অপরাহ্ন
মো. আবদুর রহমান:
নামাজ ফার্সি শব্দ। আরবিতে বলা হয় সালাত। সালাতের আভিধানিক অর্থ দোয়া করা, প্রার্থনা করা, রহমত ও করুণা কামনা করা, ক্ষমা প্রার্থনা করা ইত্যাদি। বাংলা ভাষায় ‘সালাত’-এর পরিবর্তে সচরাচর ‘নামাজ’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়। ইসলামি শরিয়তের পরিভাষায় নামাজ বলা হয়, নির্ধারিত কথা ও কাজ বিশিষ্ট এমন এক ইবাদতকে, যা তাকবিরে তাহরিমার মাধ্যমে শুরু হয় এবং সালাম ফেরানোর মাধ্যমে পরিসমাপ্তি ঘটে।
জামাতের সঙ্গে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা অন্যতম ফজিলতপূর্ণ ইবাদত। যা রাসুল (সা.)-এর গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত। একা নামাজ পড়ার চেয়ে জামাতে নামাজ আদায় করার গুরুত্ব অনেক বেশি। জামাতে নামাজ আদায় করা আল্লাহর কাছে অধিক পছন্দনীয়। মহান আল্লাহ স্বীয় অনুগ্রহ ও মেহেরবানিতে জামাতের সঙ্গে নামাজ আদায়ের মধ্যে বান্দার জন্য প্রভূত সওয়াব ও কল্যাণ রেখেছেন। জামাতের উদ্দেশ্যে মসজিদের দিকে পথচলা এমন একটি আমল, যার বিনিময়ে দুনিয়া ও আখেরাতে কল্যাণের নিশ্চয়তা পাওয়া যায়। জামাতের উদ্দেশ্যে মসজিদে গেলে প্রতি কদমে বান্দার মর্যাদা বৃদ্ধি পায় এবং গুনাহ মাফ হতে থাকে। জামাতের জন্য অপেক্ষা করাও নামাজে রত থাকার সমতুল্য। আবার জামাতের পর ওই স্থানে বসে থাকলে ফেরেশতারা তার জন্য দোয়া করতে থাকেন। ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘জামাতের সঙ্গে নামাজ আদায় করা একাকী নামাজ পড়ার তুলনায় ২৭ গুণ বেশি সওয়াব রয়েছে।’ (সহিহ বুখারি ৬৪৫)
এ ছাড়া মসজিদে জামাতে নামাজ আদায় মুসলমানদের পারস্পরিক ভ্রাতৃত্ব ও সহানুভূতি বৃদ্ধির এক ফলপ্রসূ ও কার্যকর মাধ্যম। যারা সর্বাবস্থায় মসজিদমুখী, মসজিদের সঙ্গে যাদের আন্তরিক সম্পর্ক, আজান হলেই সবকিছু ফেলে মসজিদের দিকে ছুটে আসে জামাতে নামাজ আদায় করার জন্য, তাদের জন্য কেয়ামতের ভয়ংকর দিনে আল্লাহর আরশের ছায়ায় জায়গা বরাদ্দ থাকবে।
নামাজের জামাতে উপস্থিত না হওয়ার ব্যাপারে কঠিন সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছেন রাসুল (সা.)। তিনি বলেছেন, ‘যদি কোনো লোক মানুষদের একটি হাড় বা ছাগলের পা নেওয়ার জন্য ডাকে, তাহলে তারা অবশ্যই তার ডাকে সাড়া দিয়ে চলে আসবে। অথচ তাদের জামাতের সঙ্গে নামাজ আদায় করার জন্য ডাকা হলে তারা জামাতে শরিক হয় না। আমার ইচ্ছা হয়, মানুষদের জামাতের সঙ্গে নামাজ আয়োজনের নির্দেশ দিই। তারপর ওই লোকদের কাছে যাই, যারা আজান শুনেছে, কিন্তু জামাতে উপস্থিত হয়নি এবং আমি তাদের ঘরবাড়ি আগুন দিয়ে জ¦ালিয়ে দিই। আর জামাত থেকে একমাত্র মুনাফিকই বিরত থাকে।’ (আল মুজামুল আওসাত ২৭৬৩)
অনেক হাদিস বিশারদ এই হাদিসের মাধ্যমে জামাতে নামাজ আদায় ওয়াজিব বলে উল্লেখ করেছেন। কেননা এতে জামাত বর্জনকারীর ব্যাপারে কঠিন সতর্কবাণী বর্ণিত হয়েছে এবং তাকে মুনাফিক আখ্যা দেওয়া হয়েছে। আর এ জাতীয় সতর্কবাণী কেবল ওয়াজিব কোনো আমল ছেড়ে দেওয়ার ক্ষেত্রেই হয়ে থাকে। সেই সঙ্গে এ হাদিসে এ কথাও স্পষ্ট যে, জামাতে নামাজ আদায় ওয়াজিব হওয়ার বিষয়টি যদি মসজিদে উপস্থিত হয়ে আদায় করার সঙ্গে সম্পৃক্ত না হতো, তাহলে রাসুল (সা.) জামাতে অনুপস্থিত ব্যক্তিদের ঘরবাড়ি জ¦ালিয়ে দেওয়ার ইচ্ছা করতেন না। (ইলাউস সুনান ৪/১৮৬)
কেউ যখন হেঁটে নামাজ আদায়ের জন্য মসজিদে যায়, তখন তার জন্য সওয়াব লেখা হয়, তার মর্যাদা বৃদ্ধি করা হয় এবং তার গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়। এ প্রসঙ্গে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি বাড়ি থেকে পবিত্র হয়ে কোনো ফরজ নামাজ আদায় করার জন্য হেঁটে আল্লাহর কোনো ঘরে (মসজিদে) যায়, তার প্রতিটি কদমের বিনিময়ে একেকটি গুনাহ মাফ হয় এবং প্রতিটি কদমের জন্য একটি করে উচ্চমর্যাদা লাভ হয়।’(সহিহ মুসলিম ১৪০৭) কেবল মসজিদে যাওয়ার পথেই না, বরং আসার পথেও সমপরিমাণ নেকির ওয়াদা রয়েছে। নামাজ এমন এক আলো, যার মাধ্যমে আমরা জীবনের অন্ধকারে পথ খুঁজে পাই। এমনকি এটি আমাদের অন্ধকার কবরকেও আলোকিত করে তোলে। একইভাবে এটি কেয়ামতের দিন আমাদের পথকে আলোকিত করবে। এ কারণে রাসুল (সা.) নামাজকে নুর বা আলোর সঙ্গে তুলনা করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘নামাজ হলো আলো।’(সহিহ মুসলিম ২২৩) নামাজ পুরো সমাজের জন্য কল্যাণ ও বরকত বয়ে আনে। একজন নামাজি যতই বিভ্রান্ত ও পথহারা হয়ে পড়ুক, অবশ্যই তাকে একদিন তার নামাজ বিভ্রান্তির পথ থেকে রক্ষা করবে। নামাজ সমাজের মধ্যে শান্তি ও নিরাপত্তা আনয়ন করে। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ যতেœর সঙ্গে আদায় করবে, কেয়ামতের দিন এই নামাজ তার জন্য আলো, দলিল ও নাজাতের ওসিলা হবে। আর যে ব্যক্তি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়মিত নামাজ আদায় করবে না, কেয়ামতের দিন নামাজ তার জন্য কোনো আলো, দলিল ও নাজাতের ওসিলা হবে না। বরং কারুন, ফেরাউন, হামান ও উবাই ইবনে খালফের সঙ্গে তার হাশর হবে।’(মুসনাদে আহমাদ ৬৫৭৬)
হানজালা উসাইদি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ যথাযথভাবে জামাতের সঙ্গে আদায় করে, উত্তমরূপে অজু করে, সময়ের প্রতি খেয়াল রাখে, রুকু-সেজদা ঠিকমতো আদায় করে এবং এভাবে নামাজ আদায় নিজের ওপর আল্লাহর হক মনে করে, তাহলে জাহান্নামের আগুন তার জন্য হারাম করে দেওয়া হবে।’ (মুসনাদে আহমাদ ১৮৩৭২)
কাজেই পরকালে নাজাত পেতে হলে, দুনিয়ার জীবনে নামাজের প্রতি যতœবান হতে হবে। নামাজি ব্যক্তিরাই জান্নাতের স্থায়ী বাসিন্দা হবেন। একমাত্র আল্লাহতায়ালাকে সন্তুষ্ট করার জন্যই নামাজ পালনে ব্রতী হতে হবে। মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায়ের তওফিক দান করুন।
ভয়েস/আআ