বুধবার, ০৯ Jul ২০২৫, ০৪:২১ অপরাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।
শিরোনাম :
হিমছড়ি সৈকতে ভেসে গিয়ে নিখোঁজ দুই শিক্ষার্থীর একজনের মরদেহ উদ্ধার শহর গ্রামে বেড়েছে চোরের উপদ্রব মহেশখালীর সব্বির আহমেদ, আব্দুল জলিল ও মৌলানা ইলিয়াসের মৃত্যুতে ডক্টর হামিদুর রহমান আযাদের শোক হোয়াইট হাউসের ধন্যবাদ পেল পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ‘ভালো’ বলা পর্যবেক্ষকদের আগামী নির্বাচনে পর্যবেক্ষণে না নেয়ার ইঙ্গিত সিইসির এসএসসির ফল প্রকাশ ১০ জুলাই দুপুর ২টায় প্রধান উপদেষ্টা ও তাসনিম জারাকে নিয়ে কটুক্তিকারী মেকানিক রেজাউল বরখাস্ত হিমছড়ি সৈকতে গোসল করতে নেমে শিক্ষার্থীর মৃত্যু কক্সবাজারে স্বাস্থ্য সহকারীদের অবস্থান কর্মসূচি পালিত টানা বৃষ্টিতে কক্সবাজারে অর্ধশতাধিক গ্রামে জলাবদ্ধতা: দুর্ভোগে লক্ষাধিক মানুষ

ইসলামে শিক্ষকের মর্যাদা

মাহবুবুর রহমান:
ইসলাম এমন একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা, যা মানুষকে জ্ঞান অর্জন এবং তা সঠিকভাবে ব্যবহারের মাধ্যমে নিজেদের জীবনের উন্নতি সাধনের নির্দেশ দেয়। এই জ্ঞান অর্জনের প্রক্রিয়ায় শিক্ষকের ভূমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ইসলামের দৃষ্টিতে শিক্ষক শুধু একজন জ্ঞানদাতা নন, বরং তিনি আলোর দিশারি, চরিত্র গঠনের পথপ্রদর্শক এবং সমাজের উন্নয়নের প্রধান নিয়ামক।

ইসলামে শিক্ষার গুরুত্ব : ইসলামে শিক্ষা এমন এক বিষয় যা মানবজীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রকে সমৃদ্ধ করে। পবিত্র কোরআনের প্রথম ওহি ছিল, ‘পড়ুন আপনার প্রভুর নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন।’ (সুরা আলাক, আয়াত ১) এটি স্পষ্ট করে দেয় যে, ইসলাম শুরু থেকেই জ্ঞান অর্জনকে বাধ্যতামূলক করেছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘জ্ঞান অন্বেষণ করা প্রত্যেক মুসলিমের জন্য ফরজ।’ (ইবনে মাজাহ) আর জ্ঞান অর্জনের ক্ষেত্রে সহায়ক হিসেবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হলেন শিক্ষক।

কোরআনে শিক্ষকের মর্যাদা : পবিত্র কোরআনে জ্ঞান ও জ্ঞানের প্রচারকদের মর্যাদা বারবার উচ্চারিত হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে যারা ইমান এনেছে এবং যাদের জ্ঞান দান করা হয়েছে, আল্লাহ তাদের মর্যাদা উন্নত করবেন।’ (সুরা মুজাদিলা ১১) যারা জ্ঞান দান করেন এবং সমাজে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দেন, তারাও এই আয়াতের অন্তর্ভুক্ত। আরেক স্থানে আল্লাহ বলেন, ‘বলুন, যারা জানে আর যারা জানে না, তারা কি সমান?’ (সুরা জুমার ৯) এখানে আল্লাহ সরাসরি জ্ঞানীদের শ্রেষ্ঠত্ব তুলে ধরেছেন। আর জ্ঞানীদের মধ্যে শিক্ষকরা অন্যতম।

হাদিসে শিক্ষকের মর্যাদা : হাদিসে শিক্ষকের গুরুত্ব ও মর্যাদা নিয়ে অনেক বর্ণনা রয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ তার মুখমণ্ডল উজ্জ্বল করুন, যে ব্যক্তি আমার কাছ থেকে একটি কথা শুনে তা শিখে এবং অন্যকে শিখিয়ে দেয়।’ (তিরমিজি) অপর হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তিন শ্রেণির মানুষের জন্য আল্লাহ ও তার ফেরেশতারা রহমত প্রার্থনা করেন। তারা হলেন জ্ঞান প্রচারকারী, জ্ঞান অর্জনকারী এবং তাদের জন্য যারা এই কাজে সহযোগিতা করে।’ (তিরমিজি)। এসব হাদিস থেকে বোঝা যায় যে, শিক্ষকের কাজ অত্যন্ত পবিত্র এবং তা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের মাধ্যম।

ইসলামে শিক্ষকের ভূমিকা : ইসলাম শিক্ষকের কাজকে মহান ও কল্যাণজনক হিসেবে বিবেচনা করে। শিক্ষকের ভূমিকা নবীদের কাজের সঙ্গে তুলনীয়। নবীরা যেমন মানুষকে আলোর পথে পরিচালিত করেছেন, তেমনি শিক্ষকরা ছাত্রদের নৈতিক ও আত্মিক উন্নতির জন্য কাজ করেন।

জ্ঞানের প্রচারক : শিক্ষকের প্রধান কাজ জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দেওয়া। ইসলাম শিক্ষা দিয়েছে, জ্ঞান এমন এক সম্পদ যা বিতরণ করলে বৃদ্ধি পায়। শিক্ষকরা এই দায়িত্ব পালন করেন।

নৈতিক উন্নয়ন : শিক্ষক শুধুমাত্র জ্ঞান প্রদান করেন না, বরং ছাত্রদের চরিত্র গঠনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তারা সমাজের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সঠিক পথে পরিচালিত করেন।

নেতৃত্ব ও দায়িত্ববোধ : ইসলামে শিক্ষককে নেতা হিসেবে গণ্য করা হয়। একজন ভালো শিক্ষক তার ছাত্রদের মধ্যে নেতৃত্বের গুণাবলি তৈরি করতে পারেন। শিক্ষক ছাত্রদের ভুল ও ভ্রান্ত ধারণা দূর করেন এবং তাদের সঠিক পথে পরিচালিত করেন। ইসলামের দৃষ্টিতে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব।

শিক্ষকের প্রতি ইসলামের নির্দেশনা : শিক্ষক ও ছাত্রের সম্পর্ককে ইসলাম অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েছে। এই বিষয়ে কয়েকটি নির্দেশনা উল্লেখ করা হলো। এক. শিক্ষকের কথা শ্রদ্ধার সঙ্গে শোনা এবং তা পালন করা ইসলামের নির্দেশ। দুই. শিক্ষক তার দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করবেন এবং শিক্ষার্থীদের প্রতি সদয় হবেন। তিন. শিক্ষকের কাজ শুধুমাত্র পেশাগত নয়, বরং এটি ইবাদতের অংশ। চার. শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের ভুল ধারণা দূর করে সঠিক দিকনির্দেশনা প্রদান করবেন।

ইসলামের সোনালি যুগে শিক্ষকের গুরুত্ব ও মর্যাদা ছিল সর্বোচ্চ পর্যায়ে। সেই যুগে মুসলিম পণ্ডিত আল-ফারাবি, ইবনে সিনা, আল-বেরুরি, ইবনে খালদুন প্রমুখ শিক্ষকতার মাধ্যমে সমাজে আলো ছড়িয়েছেন। রাসুল (সা.)-এর যুগে যেসব সাহাবি শিক্ষিত ছিলেন তারা সবার মধ্যে সম্মানিত ছিলেন। তাদের মধ্যে যারা ভালো লিখতে পারতেন নবী করিম (সা.) তাদের ওহি লেখার দায়িত্ব দিয়েছিলেন।

ইসলামি সভ্যতায় মাদ্রাসা ও গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে শিক্ষক ও ছাত্রদের জন্য এক সোনালি অধ্যায় সৃষ্টি করা হয়েছিল। শিক্ষকরা শুধু পাঠদানই করতেন না, বরং সমাজের নৈতিক ও সামাজিক কাঠামো উন্নয়নে ভূমিকা রাখতেন। আধুনিক যুগে শিক্ষকের ভূমিকা আগের চেয়ে আরও বেশি প্রাসঙ্গিক। প্রযুক্তি ও তথ্যের বিস্তারে শিক্ষকের ভূমিকা শুধুমাত্র জ্ঞানের বিতরণ নয়, বরং তা যাচাই ও সঠিকভাবে ব্যবহার শেখানো। তবে দুঃখের বিষয়, আজকের সমাজে অনেক জায়গায় শিক্ষকদের যথাযথ মর্যাদা দেওয়া হয় না। ইসলামের দৃষ্টিতে শিক্ষকের প্রতি সম্মান ও কৃতজ্ঞতার মনোভাব সব সময় বজায় রাখতে হবে।

ইসলামে শিক্ষকের মর্যাদা অপরিসীম। একজন শিক্ষক সমাজের আলোকবর্তিকা, জাতির মেরুদণ্ড এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের গঠনে অগ্রগণ্য ভূমিকা পালন করেন। শিক্ষকের প্রতি সম্মান দেখানো কেবল একটি সামাজিক দায়িত্ব নয়, বরং এটি ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশ। পবিত্র কোরআন ও রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর শিক্ষার আলোকে আমরা যদি শিক্ষকের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করি এবং তাদের সঠিক মর্যাদা প্রদান করি, তাহলে আমাদের সমাজ আরও উন্নত ও শান্তিপূর্ণ হয়ে উঠবে। মহান আল্লাহ আমাদের শিক্ষকের মর্যাদা বোঝার এবং তা সঠিকভাবে পালনের তওফিক দান করুন। আমিন।

ভয়েস/আআ

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION