রবিবার, ০৬ Jul ২০২৫, ০৩:৪১ পূর্বাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।
শিরোনাম :
চকরিয়ায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাস খাদে, নিহত ২ পুরাতন বন্দোবস্ত পরিবর্তন ছাড়া কাঙ্খিত বাংলাদেশ গড়ে তোলা সম্ভব নয় সেনাসদস্যদের গুমে সংশ্লিষ্টতা থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে: সেনাসদর বিভাগীয় শহরে হাইকোর্ট বেঞ্চ গঠনে একমত রাজনৈতিক দলগুলো পেকুয়ায় সাবেক এমপি জাফরের ফাঁসির দাবিতে বিক্ষোভ চকরিয়ায় খালে পাওয়া গেলো মানসিক প্রতিবন্ধী কিশোরের লাশ রামুর ইয়াবা কেলেঙ্কারি: উপজেলা ছাত্রদল আহ্বায়কের পদত্যাগ,  বিএনপি ও যুবদল নেতার পদ স্থগিত ৫ আগস্ট ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস’, ১৬ জুলাই ‘জুলাই শহীদ দিবস’ চট্টগ্রাম বন্দর পরিচালনার দায়িত্বে ৬ মাসের জন্য নৌবাহিনী শেখ হাসিনার ৬ মাসের কারাদণ্ড আদালত অবমাননার দায়ে

মাতৃভূমির কল্যাণে আত্মনিয়োগ

মাওলানা আশরাফুল ইসলাম:
দেশপ্রেম একজন মানুষের আত্মপরিচয়ের অন্যতম ভিত্তি। ইসলাম মানুষকে দেশপ্রেমে শুধু উৎসাহই দেয়নি, বরং ইমানের অংশ হিসেবে গণ্য করেছে। একজন প্রকৃত মুমিন শুধু নামাজ, রোজা, হজ ও জাকাত আদায়েই সীমাবদ্ধ থাকে না, বরং সে রাষ্ট্র ও সমাজের কল্যাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাও রাখে। একটি দেশ তখনই উন্নত হয়, যখন নাগরিকরা নিজ দেশের প্রতি দায়িত্ববান ও আন্তরিক থাকে। তাই স্বভাবতই মুমিনরা মাতৃভূমির কল্যাণে নিজেদের আত্মনিয়োগ করেন।

ইসলামের ইতিহাসে দেখা যায়, নবী-রাসুলরা তাদের মাতৃভূমিকে ভালোবাসতেন, দেশের শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষায় কাজ করতেন এবং জনগণের কল্যাণে দোয়া করতেন। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবনে দেশপ্রেমের নিদর্শন অসংখ্যবার ফুটে উঠেছে। মক্কা থেকে হিজরতের সময় তার কণ্ঠে যে কষ্ট ফুটে উঠেছিল, তা নিছক আবেগ নয়, বরং মাতৃভূমির প্রতি একজন নবীর গভীর ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ।

আজকের বৈশ্বিক বাস্তবতায় মুসলিম সমাজকে আরও বেশি সচেতন হতে হবে। সক্রিয়ভাবে দেশের শান্তি, উন্নয়ন ও পরিবেশ রক্ষায় অংশ নিতে হবে। একজন মুমিন কেবল নিজ ধর্মীয় অনুশীলনেই সীমাবদ্ধ থাকে না, বরং জাতীয় সম্পদ রক্ষা, সামাজিক ন্যায়বিচার, মানবিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠা এবং ঐক্য সংহতির ভিত্তিতে দেশ গঠনে নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করে।

মুমিন মুসলমানের অন্যতম দায়িত্ব ও কর্তব্য হলো নিজ মাতৃভূমিকে আগলে রাখা, নিজ দেশের সব শ্রেণি, ধর্ম ও বর্ণের মানুষকে ভালোবাসা, দেশের উন্নয়নে কাজ করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। এ ছাড়াও দেশকে সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে দেশের প্রতি মুমিনের আরও যেসব দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে, তা তোলে ধরা হলো।

দেশকে ভালোবাসা : মাতৃভূমির প্রতি ভালোবাসা রাখা মুমিনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। সব নবী-রাসুলই নিজ নিজ মাতৃভূমিকে ভালোবাসতেন। সবচেয়ে বেশি ভালোবাসতেন আমাদের প্রিয়নবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। এ জন্য মহান আল্লাহ তাকে মাতৃভূমি মক্কায় ফিরিয়ে আনার ঘোষণা দেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই যিনি আপনার জন্য কোরআনকে বিধান করেছেন তিনি আপনাকে অবশ্যই জন্মভূমিতে ফিরিয়ে আনবেন।’ (সুরা কাসাস ৮৫)

দেশের কল্যাণ কামনা করা : মুমিন সবসময় দেশের কল্যাণ চায়। সে কখনো দেশের অকল্যাণ চায় না। কোরআনে মুমিনদের দোয়া শেখানো হয়েছে, ‘স্মরণ করো, যখন ইব্রাহিম বলেছিলেন, হে আমার প্রতিপালক! এটাকে নিরাপদ শহর করুন। আর এর অধিবাসীদের মধ্যে যারা আল্লাহ ও পরকালের প্রতি ইমান রাখে তাদের ফলমূল দ্বারা জীবিকা প্রদান করুন।’ (সুরা বাকারা ১২৬)

শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা করা : মুমিনের অন্যতম দায়িত্ব হলো সমাজের শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা করা। শান্তি-শৃঙ্খলার পরিপন্থি কোনো কাজ না করা। কেননা সমাজে শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা না হলে নানা ধরনের অরাজকতায় ভরে ওঠে আমাদের চারপাশ। সৃষ্টি হয় নানা ধরনের আতঙ্ক। আর মুমিন ব্যক্তি সমাজ থেকে সব ধরনের অরাজকতা দূর করতে কাজ করে এবং অরাজকতা দূর করার পর তাতে শৃঙ্খলা বজায় রাখে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘শান্তি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর তোমরা জমিনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি কোরো না।’ (সুরা আরাফ ৫৬)

নিরাপত্তা নিশ্চিত করা : দেশ ও জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব প্রধানত রাষ্ট্রের। তবে যেহেতু মানুষই অপরাধ কর্মের অনুঘটক, তাই ইসলাম মানুষকে অন্যের জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা নষ্ট হয়, এমন সব কিছু থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা পরস্পরের সম্পদ অন্যায়ভাবে ভক্ষণ করো না।’ (সুরা বাকারা ১৮৮) রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘নিশ্চয়ই তোমাদের জীবন, সম্পদ ও সম্ভ্রম পরস্পরের জন্য নিষিদ্ধ।’ (সহিহ বুখারি)

মানবিক সমাজ গঠন করা : ব্যক্তিগত ও সামাজিক সম্পর্কে যদিও এক মুমিন অপর মুমিনকে প্রাধান্য দেবে; কিন্তু মুসলমান ধর্ম, বর্ণ, নির্বিশেষে সবার জন্য মানবিক মর্যাদা ও সাম্য নিশ্চিত করবে। কেননা সব মানুষই আদম (আ.)-এর সন্তান এবং মহান আল্লাহ সবাইকে সম্মানিত করেছেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি আদম সন্তানকে মর্যাদা দান করেছি, স্থলে ও সমুদ্রে তাদের চলাচলের বাহন দিয়েছি, তাদের উত্তম জীবিকা দান করেছি এবং যাদের সৃষ্টি করেছি তাদের অনেকের ওপর তাদের শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছি।’ (সুরা- বনি ইসরাইল ৭০)

দেশের উন্নয়নে কাজ করা : দেশের প্রতিটি নাগরিকের দায়িত্ব হলো দেশ ও জাতির উন্নয়নে সচেষ্ট হওয়া। কেননা জাতির উন্নয়নের চাবিকাঠি মহান আল্লাহ তাদের হাতেই দিয়ে রেখেছেন। তিনি বলেন, ‘আল্লাহ কোনো সম্প্রদায়ের অবস্থার পরিবর্তন করেন না, যতক্ষণ না তারা নিজ অবস্থা নিজে পরিবর্তন করে।’ (সুরা রাদ ১১)

পরিবেশ রক্ষা করা : আধুনিক পৃথিবীতে পরিবেশ গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ। বিজ্ঞানীদের মতে, এর ওপর নির্ভর করছে পৃথিবীর ভবিষ্যৎ। ইসলাম প্রতিটি নাগরিককে পরিবেশ রক্ষায় সচেতন হতে বলে। এ জন্য ইসলাম অনর্থক বৃক্ষনিধন, পশুপাখি হত্যা এবং জলাধার নষ্ট করা থেকে বিরত থাকতে বলেছে। বিপরীতে পরিবেশের উন্নয়ন হয় এমন কাজে উৎসাহিত করেছে। যেমন বৃক্ষ রোপণ। নবী (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো বৃক্ষ রোপণ করে, আল্লাহ এর বিনিময়ে তাকে ওই বৃক্ষের ফলের সমান প্রতিদান দেবেন।’ (মুসনাদে আহমদ)

জাতীয় সম্পদ রক্ষা করা : জাতীয় সম্পদ রক্ষায় প্রতিটি মুমিন সচেষ্ট হবে। যেমন ওমর ইবনে আবদুল আজিজ (রহ.) রাষ্ট্রীয় কাজ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রাষ্ট্রীয় অর্থে জ্বালানো প্রদীপ নিভিয়ে দিতেন। এ বিষয়ে একজন তাকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, ‘আমি মুসলমানের সেবায় নিয়োজিত ছিলাম, তাই তাদের সম্পদ দিয়ে প্রদীপ জ্বালিয়েছিলাম। এখন তুমি আমার অবস্থা জানতে চেয়েছ, তাই আমি আমার ব্যক্তিগত অর্থে প্রদীপ জ্বালালাম।’ (আল ইকতিসাদুল ইসলালি ২৫৬)

ঐক্যবদ্ধ থাকা : সুনাগরিক হিসেবে মুসলমানের দায়িত্ব হলো আল্লাহর নির্দেশনার ভিত্তিতে জাতীয় স্বার্থরক্ষায় ঐক্যবদ্ধ থাকা। কেননা অনৈক্য জাতিকে অন্ধকারের দিকে ঠেলে দেয়। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা সবাই আল্লাহর রশি দৃঢ়ভাবে ধরো এবং পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ো না। তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ করো, তোমরা ছিলে পরস্পর শত্রু এবং তিনি তোমাদের হৃদয়ে প্রীতির সঞ্চার করেন, ফলে তার অনুগ্রহে তোমরা পরস্পর ভাই হয়ে গেলে। তোমরা তো অগ্নিকু-ের প্রান্তে ছিলে, আল্লাহ তা থেকে তোমাদের রক্ষা করেছেন।’ (সুরা আলে ইমরান ১০৩)

স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা : মুমিন দেশকে ভালোবাসে। তাই দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত থাকে। মহানবী (সা.) বলেন, ‘জাহান্নামের আগুন দুটি চোখকে স্পর্শ করবে না। আল্লাহর ভয়ে যে চোখ কান্না করে এবং আল্লাহর রাস্তায় যে চোখ (নিরাপত্তার জন্য) পাহারা দিয়ে নিদ্রাহীন রাত পার করে।’ (সুনানে তিরমিজি)

আল্লাহতায়ালা সবাইকে ন্যায়পন্থা অবলম্বনের নির্দেশ দিয়েছেন। কল্যাণ ও ন্যায়পন্থা হলো সব সফলতার মূল চাবিকাঠি। পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘আল্লাহ তোমাদের ন্যায়পন্থা, অনুগ্রহ ও নিকটাত্মীয়দের হক প্রদানের নির্দেশ দেন এবং অশ্লীল ও নিষিদ্ধ কার্যাবলি থেকে নিষেধ করেন।’ (সুরা নাহল ৯০) আমরা যদি সর্বদা ন্যায়ের পথে চলে দেশের স্বার্থে কাজ করে যাই, তাহলে অল্প সময়ের মধ্যেই আমরা একটি সমৃদ্ধ দেশ গড়ে তুলতে পারব। মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে মন্দ স্বভাব থেকে বেঁচে থেকে রাষ্ট্রের উন্নয়নে কাজ করার তওফিক দান করুন। আমিন।

ভয়েস/আআ

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION