বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ০৭:৩০ অপরাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।
শিরোনাম :
কুতুবদিয়া ব্যারিস্টার হানিফ বেসরকারিভাবে চেয়ারম্যান নির্বাচিত কক্সবাজার সদর উপজেলায় রুমানা আক্তার ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত গাজায় ইসরায়েলি বোমা হামলা, একই পরিবারের ৭ জন নিহত বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মবার্ষিকী আজ ১১ বছর পর চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালে ডর্টমুন্ড কক্সবাজারের ৩ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোটগ্রহন চলছে: কেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতি কম টেকনাফে র‌্যাবের অভিযানে অস্ত্রসহ সন্ত্রাসী আটক বাংলাদেশে ৩ দিনে পালিয়ে এসেছে মিয়ানমারের বিজিপির আরো ১২৮ সদস্য পেকুয়ায় নদীতে ভাসমান অবস্থায় এক যুবকের লাশ উদ্ধার আইওএমকে রোহিঙ্গাদের জন্য আরও তহবিল সংগ্রহের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

বদলে যাচ্ছে দেশের প্রথম ‘ডিজিটাল গ্রাম’ তুলাতলী

আবদুল আজিজ, তুলাতলী থেকে ফিরে:
ডিজিটাল তথ্য সেবায় বদলে যাচ্ছে তুলাতুলী গ্রাম। ফলে কক্সবাজারের উখিয়ার মিয়ানমার সীমান্তবর্তী দূর্গম এই অঞ্চলের প্রান্তিক কৃষক শুরু করে সকল মানুষ পাচ্ছেন ডিজিটাল সুবিধা। তথ্যসেবার পাশাপাশি স্থানীয় কৃষকদের কৃষিপণ্য বিক্রি, সবজি চাষ রোপণ ও পোকা দমন সহ নানাভাবে পরামর্শ পেয়ে উপকৃত হচ্ছে কৃষকরা। একারণে ইতিমধ্যে এই গ্রামকে ‘ডিজিটাল গ্রাম’ ঘোষনা করেছে সরকার।

কক্সবাজারের উখিয়ার রত্নাপালং ইউনিয়নের মিয়ানমার সীমান্তবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত এই গ্রামকে দেশের প্রথম ‘ডিজিটাল গ্রাম’ ঘোষনা করেছে সরকার। সম্প্রতি এই ডিজিটাল ভিলেজ সেন্টার উদ্বোধন করেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়। ডিজিটাল ভিলেজ সেন্টারের মাধ্যমে এই অঞ্চলের প্রান্তিক চাষিদের উৎপাদিত কৃষিপণ্য বেচা-বিক্রি, কৃষকদের জীবনমান উন্নয়ন লক্ষ্যে সরকার কৃষক এবং উৎপাদিত পণ্যের সাথে ক্রেতাদের সম্পর্ক সৃষ্টি করবার পাশাপাশি অনলাইনের মাধ্যমে কৃষি বিষয়ক তথ্য-উপাত্ত প্রদান পূর্বক রোগবালাই প্রতিরোধ, উৎপাদিত পণ্যের বাজার দর ও বাজারজাত করতে সহায়ক ভূমিকা রাখছে। এতে প্রান্তিক কৃষক উপকৃত হচ্ছে বলে জানান এই অঞ্চলের হাজারো গ্রামবাসি।

উখিয়ার তুলাতুলী গ্রামের বাসিন্দা মোহাম্মদ ইউনুচ কক্সবাজার ভয়েসকে বলেন, ‘এই তুলাতলী গ্রামে যথেষ্ট পরিমাণ সবজি উৎপাদিত হয়। এসব উৎপাদিত সবজির ন্যায্য মুল্য পেত না কৃষকরা। কিন্তু, সরকার গ্রামটিকে ‘ডিজিটাল গ্রাম’ ঘোষনার পর থেকে নড়েচড়ে বসেছে কৃষকরা। তারা ডিটাল সেন্টারে এনে বিক্রি করে তাদের সবজির ন্যায্য মুল্য পাচ্ছেন। এতে কৃষকরা মহাখুশি। এভাবে চলতে থাকলে আগামীতে তুলালী গ্রামটি বদলে যাবে’।

স্থানীয় কৃষক মোহাম্মদ আলম কক্সবাজার ভয়েসকে বলেন, ‘ডিজিটাল কৃষি সেন্টারের সহযোগিতা আমরা কিভাবে সবজির চাষ করব, কিভাবে পোকা দমন করব, সার ও রাসায়নিক ছিটানোর পদ্ধতিসহ নানা পরামর্শ পাচ্ছি। এতে করে তুলাতলী সহ পাশপাশের কৃষকরা উপকৃত হচ্ছে’।

কৃষক আবুল আলা কক্সবাজার ভয়েসকে বলেন, ‘ক্ষেতে উৎপাদিত ফসল বাজারে বিক্রি করতে যে সময় ব্যয় হত, এখন সেই সময়টি বেচে যাচ্ছে। কারণ, সকাল-বিকাল ডিজিটাল সেন্টারে এনে কৃষিপণ্য গুলো আমরা ন্যায্য মুল্যে বিক্রি করতে পাচ্ছি।’

স্থানীয় ব্যবসায় শাহ আলম, ‘তুলাতলী একটি দুর্গম এলাকা। এখান থেকে উখিয়া উপজেলা সদর অথবা কক্সবাজার জেলা সদর যাওয়া সময়ের দরকার। এমনটি স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদও দূরে। একারণে সরকার তুলাতলী গ্রামকে ডিজিটাল গ্রামের আওতায় এনে যে একটি তথ্যসেবা কেন্দ্র স্থাপন করেছে এতে পুরো গ্রামবাসি উপকৃত হচ্ছে।’

আরেক ব্যবসায়ী শফিউল আলম কক্সবাজার ভয়েসকে বলেন, ‘তথ্যসেবা কেন্দ্রের মাধ্যমে ভোটার আইডি থেকে শুরু করে পাসপোর্ট ফরম পূরণ সহ সব ধরণের কাজ হয়ে থাকে। এজন্য আমাদের উপজেলা সদরে যেতে হয় না। এখন ঘরে বসে ডিজিটালের সব সুবিধা পাচ্ছি।’

তুলাতলী তথ্যসেবা কেন্দ্রের ডিজিটাল সার্ভিস প্রোপাইটার (ডিএসপি) নুরুল কবির কক্সবাজার ভয়েসকে বলেন, ‘ডিজিটাল গ্রামের তথ্যসেবা কেন্দ্রের মাধ্যমে অনলাইনের মাধ্যমে জন্মনিবন্ধন থেকে শুরু জমির খতিয়ান, ক্ষেত-খামারের পরিচর্ষা ও পোকা দমন সহ নানা সেবা দেয়া হয়। বর্তমানে এই ডিজিটাল সেন্টারের মাধ্যমে সকল ধরণের চাকরির আবেদন, পাসপোর্টের আবেদন, পুলিশ ক্লিয়ারেন্স, জন্মনিবন্ধন, ভোটার আইডি কার্ডের ভূল সংশোধন ও উত্তোলনের আবেদন, বিদ্যুতে মিটারের আবেদন, করোনা ভ্যাক্সিনের আবেদন ও সার্টিফিকেট উত্তোলন, ই-মেইল, কৃষকের ডিজিটাল কৃষি পরামর্শ, সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি ও পরিক্ষার রেজাল্ট উত্তোলন, অনলাইনে ফরম পূরণ, প্রিন্টিং, স্ক্যানিং ও ফটোকটি নানাভাবে কাজ করা হয়।’

ডিজিটাল বাংলাদেশ বির্নিমানে গ্রামকে শহরে পরিণত করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর ঘোষনা বাস্তবায়ন করতে ডিজিটাল সেন্টারের জমিদান করেন স্থানীয় বাসিন্দা নুরুল আলম। জমিদাতা বলেন, ‘আমি দীর্ঘদিন দুবাই কাটিয়েছি। বিদেশের নিয়ম কানুন গুলো দেখলে নিজেকে অনেক অসহায় মনে হয়। পরে দেশের প্রধানমন্ত্রী ও জননেত্রী শেখ হাসিনার ‘আমার গ্রাম আমার শহর’ ঘোষনায় আমি ডিজিটাল সেন্টারের জন্য জমি দিতে আগ্রহী হয়। কারণ, দেশ এখন ডিজিটাল ব্যবস্থায় এগিয়ে যাচ্ছে। এই জমি দানের মাধ্যমে আমার এলাকার কৃষক ও সাধারণ মানুষ সুযোগ সুবিধা পেলে আমার গ্রামটি উন্নত হবে। সেই চিন্তা থেকে জমিদান করেছি’।

ডিজিটাল গ্রাম তুলাতুলীতে তথ্যসেবা কেন্দ্র উদ্বোধন করতে এসে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েত আহমেদ পলক বলেছেন, দেশের ৮ হাজার ইউনিয়ন পরিষদে ডিজিটাল ইনফরমেশন সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। যেটি মানুষের সেবার পাশাপাশি তথ্য প্রযুক্তির দিকে সকলকে ধাবিত করেছে। এরই অংশ হিসাবে উখিয়ার তুলাতলী এই গ্রামকে ডিজিটাল গ্রাম ঘোষনা করা হয়েছে। এই কেন্দ্রের মাধ্যমে কৃষক থেকে শুরু করে এই জনপদের মানুষ তথ্যসেবা পাবে।

উল্লেখ্য, নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করে দেশের কৃষকদের জন্য ৫০টি গ্রামকে ‘ডিজিটাল ভিলেজ’ হিসেবে গড়ে তোলার প্রকল্প নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে এস্টাবলিশমেন্ট অব ডিজিটাল কানেকটিভিটি (ইডিসি) মেগা প্রকল্পের অধীন একটি পাইলট প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এরই অংশ হিসাবে কক্সবাজারের উখিয়ার তুলাতলী গ্রামকে ‘ডিজিটাল ভিলেজ’ ঘোষনা করে সরকার।

ভয়েস/আআ

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION