শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:৪৪ অপরাহ্ন
ভযেস নিউজ ডেস্ক:
অসুস্থ-বাবা-মা-ও-প্রতিবন্ধী-বোনকে-রাস্তায়-ফেলে-গেল-কে?গজারিয়ায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে বৃহস্পতিবার সকালে অসুস্থ বৃদ্ধ-বৃদ্ধা ও প্রতিবন্ধী এক তরুণীকে পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয়রা।
স্থানীয়রা জানান, অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে ওই বৃদ্ধ ও বৃদ্ধা স্বামী-স্ত্রী এবং বাক-প্রতিবন্ধী তরুণী তাদের মেয়ে। ছেলে বা পরিবারের অন্য কোনো সদস্য রাতের আঁধারে তাদের এখানে রেখে পালিয়ে যায়।
বৃহস্পতিবার; ঘড়িতে তখন সকাল সাড়ে সাতটার মতো। মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার ভবেরচর ঈদগাহের অদূরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে লোকের জটলা। আগ্রহ নিয়ে কী যেন দেখছে তারা। ভিড় ঠেলে সামনে গিয়ে দেখা গেল এক হৃদয়বিদারক দৃশ্য।
অসুস্থ বৃদ্ধ বাবা-মা ও বাক-প্রতিবন্ধী তরুণী বোনকে ফেলে রেখে গেছে বৃদ্ধ দম্পতির ছেলে। অসুস্থ শরীরে রাস্তার পাশে পড়ে আছেন তারা। শরীরে মারধরের চিহ্ন; দীর্ঘ সময় ধরে যে তারা অনাহারে তা সহজেই বোঝা যায়। বৃদ্ধের বয়স সত্তরের কোটায়, বৃদ্ধার বয়স ষাটের মতো আর অসুস্থ বাক-প্রতিবন্ধী মেয়েটির বয়স ২৫ কিংবা ২৬।
পরিচয় জানার চেষ্টা করলে খুব বেশিকিছু জানা গেল না। বৃদ্ধ শুধু বললেন, ‘বাড়ি কুমিল্লায়।’ কে তাদের এ অবস্থায় রেখে গেছে, এমন প্রশ্নের সংক্ষিপ্ত জবাব, ‘বড় ছেলে।’ বৃদ্ধের শারীরিক অবস্থা দেখে মনে হয়, স্ট্রোকে তার শরীরের একপাশ অবশ হয়ে গেছে।
বৃদ্ধ মহিলার কাছে একই প্রশ্ন করা হলেও তিনি কোনো উত্তর দিতে পারলেন না। ভীষণ অসুস্থ। শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের চিহ্ন স্পষ্ট।
স্থানীয়রা জানান, অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে ওই বৃদ্ধ ও বৃদ্ধা স্বামী-স্ত্রী এবং বাক-প্রতিবন্ধী তরুণী তাদের মেয়ে। অসুস্থ হওয়ায় তাদের ছেলে বা পরিবারের অন্য কোনো সদস্য রাতের আঁধারে তাদেরকে এখানে রেখে পালিয়ে গেছে।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত স্থানীয় বাসিন্দা মিঠু বলেন, ‘সকালে আমরা তাদের এখানে পড়ে থাকতে দেখি। সম্ভবত রাতের কোনো এক সময় তাদের এখানে ফেলে যাওয়া হয়েছে। আমরা এই তিনজনের খাওয়ার ব্যবস্থা করেছি।’
ঘটনাটি এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। দলে দলে তাদের দেখতে আসছে স্থানীয়রা।
আকলিমা বেগম নামে স্থানীয় এক নারী বলেন, ‘প্রথম যখন দেখি, তখন তাদের গায়ে তেমন কোনো জামা-কাপড় ছিল না। স্থানীয়রা তাদের পোশাকের ব্যবস্থা করে। ঘটনাটি অত্যন্ত হৃদয়বিদারক; আমাদেরও তো বাবা-মা আছে।
‘আমরা তাদের খাওয়ার ব্যবস্থা করেছি। আকাশে মেঘ ডাকছে, যে কোনো সময় বৃষ্টি নামতে পারে। এমন অবস্থায় তারা কোথায় যাবে?’
বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করেন আকলিমা বেগম।
ঘটনাটির বিষয়ে গজারিয়া উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মনসুর আলম বলেন, ‘এমন ঘটনায় আমাদের বিশেষ কিছু করার থাকে না। তারপরও নিজেদের অবস্থান থেকে তাদের আমরা কীভাবে সহযোগিতা করতে পারি তা দেখছি।’
গজারিয়ার ইউএনও আব্দুল্লাহ আল মাহফুজ বলেন, ‘স্থানীয় সংবাদকর্মীদের মাধ্যমে ঘটনাটি জানতে পেরে আমি তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিয়েছি। এই মুহূর্তে তাদের চিকিৎসা দরকার। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাকে তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে বলেছি।‘
‘আপাতত তারা হাসপাতালে থাকবেন। পরবর্তীতে অন্য চিন্তা করা হবে।‘
ভয়েস/আআ