শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:৫৪ পূর্বাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

নিরাপদ মাতৃত্ব প্রত্যেক মায়ের অধিকার

ডা. মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ:
নারীর জীবনে পূর্ণতা আনে মাতৃত্ব। একজন গর্ভবতী মা গর্ভধারণের পর থেকে সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়া পর্যন্ত স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার অধিকার রাখেন। সঙ্গে সঙ্গে মাতৃগর্ভে বেড়ে ওঠা শিশুরও যত্ন প্রয়োজন, যাকে বলা হয় গর্ভকালীন সেবা। এই গর্ভকালীন যত্নের লক্ষ্য হলো মা ও শিশুর সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা এবং গর্ভজনিত কোনো জটিলতা দেখা দিলে তা প্রতিরোধ বা চিকিৎসা করা।

মাতৃত্বকালীন গর্ভবতী নারীকে নিজের স্বাস্থ্য সচেতনতায় ইসলামি বিধিনিষেধ এবং চিকিৎসকের যথাযথ পরামর্শ মেনে চলা বাধ্যতামূলক। তবেই নিশ্চিত হবে নিরাপদ মাতৃত্ব ও সুস্থ শিশুর জন্মদান প্রক্রিয়া। মাতৃত্বকালীন গর্ভবতী নারীর প্রতি অবহেলা চরম অন্যায় ও গুনাহের কাজ। কেননা সন্তানসম্ভবা নারীর আদর-যত্ন ও স্বাস্থ্য পরিচর্যায় অবহেলা করলে গর্ভের সন্তানের ক্ষতি, এমনকি মৃত্যুও হতে পারে।

হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, ‘কোনো মুসলিম ব্যক্তি সওয়াবের আশায় তার পরিবার-পরিজনের জন্য যা কিছু ব্যয় করে তা তার জন্য সদকা হিসেবে গণ্য হয়।’ একজন মানুষের পৃথিবীতে আসার সূচনা থেকে শুরু করে পরিপূর্ণ মানুষে পরিণত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত তার সুন্দর-সুস্থ জীবন নিশ্চিত করতে নিজের জীবনকে ঝুঁকিতে ফেলেন গর্ভধারিণী মা। সন্তান জন্ম দেওয়া যেমন একজন নারীর পূর্ণতা এনে দেয়, তেমনি একজন মানুষকে সুযোগ করে দেয় এই সুন্দর ধরণীতে আসার জন্য। কিন্তু সন্তান জন্ম দেওয়ার ক্ষেত্রে আমরা মায়েদের কতটা নিরাপদে রাখতে পারি, সেটা ভাবার বিষয়। তার চেয়েও বড় কথা হলো, জন্মদাত্রী মায়ের সঙ্গে আমাদের ব্যবহার।

আমাদের সমাজের অনেকেই মায়ের সঙ্গে অনাকাক্সিক্ষতভাবে রূঢ় ও খারাপ আচরণ করে থাকে। যা কোনো অবস্থাতেই কাম্য নয়। এটা ইসলামবিরোধী কাজ। মায়ের সঙ্গে খারাপ আচরণকারী সন্তানের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তির ঘোষণা। হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘তিন ধরনের লোকের জন্য আল্লাহতায়ালা বেহেশতকে হারাম করেছেন। মদপানে অভ্যস্ত ব্যক্তি, মা-বাবার অবাধ্য সন্তান, দাইয়ুস তথা যে নিজ পরিবারের নির্লজ্জ ও বেহায়াপনাকে সমর্থন করে।’

কোনো সন্তানই মাতৃত্বের ঋণ পরিশোধ করতে পারবে না। এটা সম্ভবও নয়। এক ব্যক্তি হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করল, ‘হে আল্লাহর রাসুল! আমি আমার মাকে কোলে করে কাবা শরিফ তাওয়াফ করেছি, এতে কি আমি আমার মায়ের প্রতি কিছুটা অনুগ্রহ করিনি? হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম না সূচক উত্তর দিয়েছিলেন। মায়ের সন্তানবাৎসল্য এবং তার কষ্টের জন্যই আল্লাহতায়ালা মায়ের মর্যাদা ও তার প্রতি দায়িত্ব অধিক করে দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে বলেন, ‘আর আমি মানুষকে তার মা-বাবার প্রতি সদয় ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছি। তার জননী তাকে গর্ভে ধারণ করে কষ্টের সঙ্গে এবং প্রসব করে কষ্টের সঙ্গে।’ (সুরা আহকাফ, আয়াত ১৫)

নিরাপদ মাতৃত্ব নারীর অধিকার। সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়া এবং দুই বছর দুধ পান করানো পর্যন্ত দীর্ঘ সময় নারীর প্রতি যত্ন নেওয়ার ব্যাপারে পরিবারের অনেক দায়িত্ব রয়েছে। এ সময় নারীকে দিতে হবে সুষম খাদ্য, উন্নত চিকিৎসা এবং যথাযথ বিশ্রামের সুযোগ।

মাতৃত্বের প্রয়োজনে প্রোটিন ও ভিটামিনসমৃদ্ধ খাদ্য প্রদানে যত্নবান হওয়া উচিত। এ বিষয়ে পরিবারের প্রধান বা স্বামীর দৃষ্টি রাখা অবশ্য কর্তব্য। সন্তান গর্ভে এলে গর্ভবতী মাকে পুষ্টিকর এবং পরিমাণে বেশি খাবার দেওয়া প্রয়োজন। কেননা তার খাবারে একটি নয়, দুটি প্রাণ বাঁচে।

মাতৃত্বকালীন নারীর শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার জন্য সবার আগে তার স্বামীর সহযোগিতা প্রয়োজন। যদিও গর্ভধারণকারী নারীর প্রতি পরিবারের সবার দায়িত্ব রয়েছে। প্রয়োজন অনুযায়ী তাকে দিতে হবে সুচিকিৎসা। হাদিসের একাধিক বর্ণনায় চিকিৎসা গ্রহণের নির্দেশ এসেছে। হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা চিকিৎসা করাও। কারণ আল্লাহতায়ালা যে রোগ দিয়েছেন, সেটার প্রতিষেধকও দিয়েছেন। শুধু একটি রোগ ছাড়া। আর তা হচ্ছে, বার্ধক্য।’ (আবু দাউদ) হাদিসে আরও বর্ণিত হয়েছে, ‘নিশ্চয় মহান আল্লাহ রোগ এবং দাওয়া (ওষুধ) দুটোই দিয়েছেন। প্রতিটি রোগেরই ওষুধ রয়েছে। সুতরাং তোমরা চিকিৎসা গ্রহণ করো। তবে হারাম বস্তু দিয়ে চিকিৎসা করো না।’ (আবু দাউদ)

স্ত্রীর ভরণ-পোষণের মূল দায়িত্ব স্বামীর। হাদিসে স্ত্রীর যথাযথ দায়িত্ব পালনের নির্দেশনা এসেছে। আর স্ত্রী যদি সন্তানসম্ভবা হয় তবে স্বামীর প্রতি এ দায়িত্ব পালন দ্বিগুণ হয়ে যায়। হাদিসে এসেছে, হজরত মুয়াবিয়া (রা.) বর্ণনা করেন, ‘আমি হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সামনে এলাম। এরপর তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, আমাদের স্ত্রীদের বিষয়ে আপনি কী বলেন? তিনি বললেন, তোমরা (স্বামীরা) যা খাবে, তাদের (নারীদের) তাই খেতে দেবে। তাদের তাই পরাবে যা তোমরা পরবে। আর তাদের প্রহার করবে না এবং তাদের কটু কথা বলবে না।’ (আবু দাউদ)

মাতৃস্বাস্থ্য পরিচর্যার গুরুত্ব অপরিসীম। মাতৃত্ব অর্জনে সব নারীকেই ধর্মীয় বিধিনিষেধ এবং সতর্কভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা জরুরি। অন্যথায় মা ও শিশু উভয়েরই জীবন ঝুঁকিতে পড়বে। তাই যিনি মা হবেন, তার অবশ্যই স্বাস্থ্য উন্নয়ন, সচেতনতা বাড়ানো এবং যথেষ্ট পরিচর্যা করাই ইসলামের একান্ত দাবি।

ভযেস/আআ

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION