শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৩:৫২ পূর্বাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

গিবত পরিত্যাগ করার উপকারিতা

মো. আবদুর রহমান:
গিবত আরবি শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ পরনিন্দা করা, কুৎসা রটানো, বদনাম করা, পেছনে সমালোচনা করা ইত্যাদি। ইসলামি শরিয়তের পরিভাষায় গিবত হলো কোনো মুসলমানের অনুপস্থিতিতে তার সম্পর্কে এমন কোনো দোষের কথা বলা, যা শুনলে সে মনে কষ্ট পায় এবং সে তা অপছন্দ করে। গিবত শুধু মুখের ভাষার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়; বরং এটি বাচনিক কিংবা লেখনীর মাধ্যমে অথবা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ইশারা-ইঙ্গিতের মাধ্যমে বা অন্য কোনো উপায়েও হতে পারে। গিবত সামাজিক শান্তি বিনষ্টকারী একটি ঘৃণ্য অপরাধ। অথচ এ মন্দ অভ্যাস বর্তমানে অধিকাংশ মানুষের প্রাত্যহিক জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গিবত খুবই জঘন্য ও নিন্দনীয় কাজ এবং এটি কবিরা গুনাহ। তাই এটা থেকে বিরত থাকা আদর্শ মানুষের কর্তব্য। গিবত পরিত্যাগ করার অনেক উপকারিতা রয়েছে। সে সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।

প্রকৃত মুসলিমের পরিচায়ক : গিবত থেকে বিরত থাকা প্রকৃত মুসলমানের পরিচায়ক। হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম গিবত পরিত্যাগকারী মুসলমানকে সর্বশ্রেষ্ঠ মুসলমান হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। হজরত আবু মুসা আশআরি (রা.) বলেন, এক ব্যক্তি হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে জিজ্ঞেস করল, সর্বশ্রেষ্ঠ মুসলমান কে? জবাবে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, যার হাত ও জবান থেকে অপর মুসলমান নিরাপদ থাকে, সেই সর্বশ্রেষ্ঠ মুসলমান। (জামে তিরমিজি ২৫০৪) হজরত ওমর ইবনে খাত্তাব (রা.) বলেন, যে ব্যক্তি আমানত রক্ষা করে এবং (গিবতের মাধ্যমে) মুসলমানদের সম্মান নষ্ট করা থেকে বিরত থাকে, সেই প্রকৃত বীরপুরুষ।

গিবত পরিত্যাগ করা ইবাদত : গিবত পরিত্যাগ করতে পারা একটি মহান ইবাদত। কারণ গিবত ও পরনিন্দার মাধ্যমে বান্দার হক নষ্ট হয় এবং আমলনামা ক্ষতবিক্ষত হয়ে যায়। ফলে বান্দা দুনিয়া ও আখেরাতে শাস্তি ভোগের অধিকারী হয়ে যায়। সুতরাং কেউ যদি যাবতীয় পাপ বর্জন করে এবং ইমান ঠিক রেখে অল্প আমলও করে, তবে সেই অল্প আমলের মাধ্যমেই সে নাজাতের আশা করতে পারে। কিন্তু অধিক নেক আমল করার পাশাপাশি যদি কবিরা গুনাহের পরিমাণও অনুরূপ হয়, তবে তার নাজাতের পথ রুদ্ধ হয়ে যায়। আর গিবত যেহেতু অন্যান্য কবিরা গুনাহের তুলনায় অধিকতর ভয়ংকর, সেজন্য ইসলামিক স্কলাররা পরনিন্দা বর্জন করাকে অনেক বড় ইবাদত হিসেবে গণ্য করেন।

আবদুল করিম ইবনে মালেক (রহ.) বলেন, আমরা পূর্ববর্তী আলেমদের এমন পেয়েছি যে, তারা শুধু নামাজ ও রোজাকে ইবাদত মনে করতেন না; বরং মানুষের সম্মান রক্ষার জন্য গিবত পরিহার করাকেও ইবাদত হিসেবে গণ্য করতেন। (হিলয়াতুল আওলিয়া ৩/১৫২) ওয়াহাব আল মক্কি (রহ.) বলেন, দুনিয়ার পূর্বাপর সব ধন-সম্পদের মালিক হয়ে তার সবটুকু আল্লাহর রাস্তায় বিলিয়ে দেওয়ার চেয়েও গিবত পরিত্যাগ করতে পারা আমার কাছে অধিকতর প্রিয় (ইবাদত)। (আবুল লাইছ সামারকান্দি, তাম্বিহুল গাফিলিন ১৬৬)

জাহান্নামের শাস্তি থেকে মুক্তি : গিবতমুক্ত জীবন গড়তে পারলে জাহান্নামের শাস্তি থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি তার (মুসলমান) ভাইয়ের অনুপস্থিতিতে তার ইজ্জত-সম্মান রক্ষায় সহায়তা করবে, আল্লাহতায়ালা কেয়ামতের দিন তাকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করবেন। (সুনানে তিরিমিজি) আবদুল্লাহ ইবনে মুবারক (রহ.) বলেছেন, তুমি বাঘ থেকে যেভাবে পলায়ন করো, গিবতকারী থেকেও সেভাবে পালিয়ে যাও।

গিবতের কাফফারা বা ক্ষতিপূরণ : প্রকৃতপক্ষে গিবত নিজের জন্য শুধু ক্ষতি ও ধ্বংসই ডেকে আনে। আর যার গিবত করা হয় তার জন্য ডেকে আনে কল্যাণ ও পরকালীন মঙ্গল। গিবতকারীর মুখের উচ্চারিত কথা সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন, ‘মানুষ যে কথাই উচ্চারণ করে, তা লেখার জন্য তার কাছে সর্বদা প্রহরী প্রস্তুত রয়েছে।’ (সুরা কাফ ১৮) সুতরাং আমাদের আদর্শ মানুষ হতে হলে গিবতের মতো মন্দ কথা বলা ও শোনা থেকে সর্বাবস্থায় বিরত থাকতে হবে। কারণ কোনো অবস্থাতেই গিবত করা বৈধ না। কেউ যদি গিবত করে, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে তওবা করে মহান আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। আর যার গিবত করা হয়েছে, তার কাছ থেকেও ক্ষমা চেয়ে নিতে হবে। আর যদি তা সম্ভব না হয়, তাহলে মহান আল্লাহর কাছে তার গুনাহ মাফের জন্য দোয়া করতে হবে। হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, গিবতের কাফফারা (প্রায়শ্চিত্ত) হলো এই যে, তুমি যার গিবত করেছ তার জন্য মাগফিরাতের দোয়া করবে। তুমি এভাবে দোয়া করবে যে, হে আল্লাহ! আপনি আমার ও তার গুনাহ মাফ করে দিন। (বায়হাকি)

গিবতের চেয়ে নিকৃষ্ট অপরাধ আর কিছু নেই। কোরআন ও হাদিসে একাধিকবার এ অপরাধের ভয়াবহতা এবং এটা থেকে বিরত থাকার ব্যাপারে জোর তাগিদ দেওয়া হয়েছে। পবিত্র কোরআনে গিবতকে তুলনা করা হয়েছে আপন মৃত ভাইয়ের গোশত ভক্ষণ করার সঙ্গে। চিন্তা করা যায়, কতটা ভয়াবহ এ অপরাধ এবং পরকালে এ অপরাধের শাস্তি কতটা ভয়াবহ হতে পারে! সুতরাং সবার জন্য অবশ্য করণীয় হলো, কঠিন এই অপরাধ থেকে বেঁচে থাকা। আসুন আমরা গিবতের মতো ভয়াবহ সামাজিক অপরাধ থেকে নিজেকে নিবৃত্ত রাখি এবং এর ভয়াবহ পরিণতি থেকে নিজ ও সমাজকে রক্ষা করি। মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে গিবত পরিত্যাগ করার তওফিক দান করুন। আমিন।

ভয়েস/আআ

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION