শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ০৫:৩৬ অপরাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

পাসপোর্ট নাগরিকত্ব জাতীয়তা

আবু নোমান মো. জাকির হোসেন:
‘নাগরিকত্ব’ হলো সার্বভৌম রাষ্ট্র বা জাতির একজন আইনস্বীকৃত সদস্য হিসেবে পাওয়া কোনো ব্যক্তির পদমর্যাদা। অন্যভাবে যে কোনো অঞ্চলের অধিবাসীর সে অঞ্চলে বসবাস করার স্বীকৃতি ও তা স্বরূপ যেসব সুবিধা ও দায়িত্ব বর্তায়, তার সামষ্টিক রূপকে ‘নাগরিকতা’ বলে।

একজন ব্যক্তির একাধিক নাগরিকত্ব থাকতে পারে। দেশের সর্বোচ্চ আইন তথা, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সংবিধানের ৬নং অনুচ্ছেদে নাগরিকত্ব সম্পর্কে নিম্নলিখিত বিষয়গুলো উল্লেখ করা হয়েছে।

৬। (১) বাংলাদেশের নাগরিকত্ব আইনের দ্বারা নির্ধারিত ও নিয়ন্ত্রিত হইবে।

(২) বাংলাদেশের জনগণ জাতি হিসেবে বাঙালি এবং নাগরিকগণ বাংলাদেশি বলিয়া পরিচিত হইবেন।

অর্থাৎ বাঙালি জাতির বাইরেও অন্য জাতি বাংলাদেশি নাগরিক হিসেবে বিবেচিত হতে পারেন। যেমন ২০০৮ সালের মে মাসে উচ্চ আদালত ১৯৭১ সালের পরে বাংলাদেশের ভূখণ্ডে জন্মগ্রহণকারী এবং বসবাসকারী সব উর্দু-ভাষী মানুষকে ন্যায়সঙ্গত নাগরিকত্ব প্রদান করে। [Bangladesh vs Professor Golam Azam and Others 1994, 23 CLC(AD)]. তা ছাড়া বাংলাদেশে বসবাসকারী ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীগণও বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে বিবেচিত হন।

বাংলাদেশের নাগরিকত্ব প্রাপ্তির ক্ষেত্রে আমরা সাধারণত যে আইন-কানুন/বিধিসমূহ অনুসরণ করি, সেগুলো হচ্ছে বাংলাদেশের সংবিধান, ন্যাচারালাইজেশন অ্যাক্ট ১৯২৬, নাগরিকত্ব আইন ১৯৫১, বাংলাদেশ নাগরিকত্ব অর্ডার ১৯৭২ এবং বাংলাদেশ নাগরিকত্ব (অস্থায়ী বিধিমালা), ১৯৭৮।

উপরোল্লিখিত আইন-কানুন/বিধিসমূহ বিশ্লেষণ করে আমরা দেখতে পাই যে, বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পাওয়ার ছয়টি উপায় রয়েছে

১. জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব

২. বৈবাহিকসূত্রে নাগরিকত্ব

৩. অর্থ বিনিয়োগের মাধ্যমে অর্জিত নাগরিকত্ব

৪. ন্যাচারালাইজেশনের মাধ্যমে নাগরিকত্ব

৫. দ্বৈত নাগরিকত্ব ও

৬. সম্মানসূচক নাগরিকত্ব

যেমন বিদেশি নাগরিক যাদের বাংলাদেশ সরকার সম্মানসূচক নাগরিকত্ব দিয়েছেন, তাদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন আমেরিকার ব্ল্যাক মুসলিম বক্সার মুহাম্মদ আলী (‘দ্য গ্রেটেস্ট’), ভারতের নোবেল বিজয়ী নাগরিক ডক্টর অমর্ত্য সেন, নিউজিল্যান্ডের ড. এড্রিক বাকের, ইতালির ফাদার মেরিনো রিগন, বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক কোচ গর্ডন গ্রিনিজ।

নাগরিকত্বের প্রমাণস্বরূপ জাতীয় পরিচয়পত্র একটি গুরুত্বপূর্ণ সরকারি দলিল। কেননা, জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন, ২০১০-এর ২(২) অনুযায়ী, ‘জাতীয় পরিচয়পত্র’ অর্থ কমিশন কর্র্তৃক কোনো নাগরিক বরাবরে প্রদত্ত জাতীয় পরিচয়পত্র।

একই আইনের ধারা ৫ অনুযায়ী

৫(১) ভোটার তালিকা আইন, ২০০৯(২০০৯ সনের ৬নং আইন) অনুসারে ভোটার হিসেবে তালিকাভুক্ত প্রত্যেক নাগরিক, নির্ধারিত পদ্ধতি ও শর্ত সাপেক্ষে, জাতীয় পরিচয়পত্র পাইবার অধিকারী হইবেন।

(২) উপ-ধারা (১) এ যাহা কিছুই থাকুক না কেন, কমিশন অন্যান্য নাগরিককে, নির্ধারিত পদ্ধতি ও শর্ত সাপেক্ষে, জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদান করিতে পারিবে।

অপরদিকে স্থানীয় সরকার বিভাগের অধীন রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়ের ২২ ডিসেম্বর ২০২২ খ্রি. তারিখের স্মারক নং ৪৬.০৪.০০০০.১০৩.৩১.০৭২.২০২২-১২৮৩ বলে নিবন্ধন কার্যালয় নিবন্ধনাধীন ব্যক্তির জাতীয়তা সংশোধন করতে পারবেন।

তাই, জন্মনিবন্ধন কোনো ব্যক্তির বাংলাদেশি নাগরিক পরিচয় বহন করে না। আর জাতীয়তা সম্পর্কে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সংবিধানের ৯নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, ভাষাগত ও সংস্কৃতিগত একক সত্তাবিশিষ্ট যে বাঙালি জাতি ঐক্যবদ্ধ ও সংকল্পবদ্ধ সংগ্রাম করিয়া জাতীয় মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব অর্জন করিয়াছেন, সেই বাঙালি জাতির ঐক্য ও সংহতি হইবে বাঙালি জাতীয়তাবাদের ভিত্তি।

অর্থাৎ কিছু মানুষ মনে করেন ‘জাতীয়তা’ এবং ‘নাগরিকতা’ একই বিষয়। কিন্তু জাতীয়তা, নাগরিকতা থেকে আইনগতভাবে একটি পৃথক ধারণা। ধারণাগত দিক থেকে নাগরিকত্ব একটি রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক জীবনকেন্দ্রিক। আর জাতীয়তা হলো, আন্তর্জাতিক বিষয় সমন্ধীয়।

অপরদিকে, বাংলাদেশ পাসপোর্ট আদেশ, ১৯৭৩ (রাষ্ট্রপতির ১৯৭৩ সনের ৯নং আদেশ) এর অনুচ্ছেদ ২(গ) অনুযায়ী, ‘পাসপোর্ট’ বলিতে এই আদেশের অধীনে ইস্যুকৃত বা ইস্যু করা হইয়াছে মর্মে গণ্য পাসপোর্টকে বুঝাইবে।

অনুচ্ছেদ-৩ অনুযায়ী, বৈধ পাসপোর্ট বা ভ্রমণ দলিল ব্যতীত কোনো ব্যক্তি বাংলাদেশ হইতে বহির্গমন করিবে না বা করিতে চেষ্টা করিবে না।

একই আদেশের অনুচ্ছেদ-১৫ অনুযায়ী, পাসপোর্ট বা ভ্রমণ দলিল ইস্যু সম্পর্কে পূর্ববর্তী বিধানসমূহে যাহাই বলা হউক না কেন, সরকার জনস্বার্থে সমীচীন মনে করিলে, বাংলাদেশের নাগরিক নয় এমন কোনো ব্যক্তির জন্য পাসপোর্ট বা ভ্রমণ দলিল ইস্যু করিতে পারিবে বা করাইতে পারিবে।

অর্থাৎ পাসপোর্ট একটি ভ্রমণ দলিল যা বাংলাদেশের সার্বভৌম অঞ্চলে আগমন বা বাংলাদেশ থেকে বহির্গমনের কাজে ব্যবহৃত হয়। পরিশেষে আমরা বলতে পারি, জাতীয়তা নির্ধারণে হয়তো পাসপোর্ট কিংবা জন্মনিবন্ধন পত্র সরকারি দলিল হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে, কিন্তু নাগরিকত্ব নির্ধারণে পাসপোর্ট কোন একক দলিল হতে পারে না।

লেখক : সাধারণ সম্পাদক, ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অফিসার’স অ্যাসোসিয়েশন

ভয়েস/আআ

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION