শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:৫৪ অপরাহ্ন
মাওলানা আমিনুল ইসলাম:
হাদিসে শুক্রবারকে মুসলমানদের সাপ্তাহিক ঈদ বলা হয়েছে। এর দুটি কারণ রয়েছে। এক. শুক্রবার মুসলমানদের সাপ্তাহিক মিলন মেলা। কাছের অনেক মানুষের সঙ্গে সারা সপ্তাহ দেখা না হলেও জুমার নামাজ উপলক্ষে শুক্রবারে তাদের সঙ্গে দেখা হয়। দুই. এই দিনের বিশেষ ফজিলতপূর্ণ আমল জুমার নামাজ। কাছের মানুষদের সঙ্গে দেখা হলে এক ধরনের ভালো লাগা কাজ করে এবং আত্মিক প্রশান্তি পাওয়া যায়। আর জুমার নামাজ আদায়ের মাধ্যমে পরকালের সঞ্চয়ের খাতা ভারী হয়। এছাড়াও এই দিনে রয়েছে আরও কিছু ফজিলতপূর্ণ আমল, যার মাধ্যমে দুনিয়া ও আখেরাতের সফলতা অর্জন করা যায়। সেসব আমলের একটি হলো সুরা কাহাফ তেলওয়াত।
আবু সাইদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন সুরা আল কাহাফ পড়বে, তার (ইমানের) নুর এই জুমা থেকে আগামী জুমা পর্যন্ত চমকাতে থাকবে।’ (মিশকাত)
ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন সুরা কাহাফ পড়বে তার জন্য তার পায়ের নিচ থেকে আসমানের মেঘমালা পর্যন্ত একটি আলো বিচ্ছুরিত হবে এবং দুই জুমার মধ্যবর্তী তার যা (গুনাহ) আছে সেটা থেকে তাকে মাফ করে দেওয়া হবে।’ (আত তারগিব ওয়াত তারহিব)
এছাড়াও সুরা কাহাফ তেলাওয়াতের আরও কিছু ফজিলত পাওয়া যায় হাদিসে। আবু দারদা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি সুরা কাহাফের প্রথম দশ আয়াত মুখস্থ করবে সে দাজ্জালের ফেতনা থেকে হেফাজত থাকবে।’ (সহিহ মুসলিম)
পৃথিবীতে সবচেয়ে ভয়াবহ ফেতনা হলো দাজ্জালের ফেতনা। এ ফেতনা এতই ভয়াবহ যে, রাসুল (সা.)-এর জীবনে দাজ্জালের ফেতনা সংঘটিত হওয়ার কোনো সম্ভাবনা ছিল না, তবুও তিনি প্রত্যেক নামাজের পরে দাজ্জালের ফেতনা থেকে বাঁচার জন্য দোয়া করতেন। আমাদের জন্য আশার বাণী হচ্ছে, যদি সুরা কাহাফের প্রথম ১০ আয়াত মুখস্থ করি তাহলে দাজ্জালের ফেতনা আমাদের স্পর্শ করতে পারবে না।
অন্য এক হাদিসে এসেছে, নাওয়াস ইবনে সাময়ান (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি দাজ্জালকে পাবে, সে যেন সুরা কাহাফের শুরুর অংশ পড়ে।’ (সহিহ মুসলিম)
সুরা কাহাফ দাজ্জালের ফেতনা থেকে বাঁচানোর পাশাপাশি তেলাওয়াতকারীর জন্য আলো হবে। হজরত আবু সাইদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘যে ব্যক্তি সুরা কাহাফ যেমনভাবে নাজিল হয়েছে সেভাবে পড়বে, তার জন্য কিয়ামতের দিন সেটা নুর (আলো) হবে। (শোয়াবুল ইমান)
সুরা কাহাফের অলৌকিক এক ফজিলত অন্য এক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে এভাবে, বারা ইবনে আজেব (রা.) থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি রাতে সুরা কাহাফ তেলাওয়াত করছিলেন। তার কাছে দুটি রশি দিয়ে একটি ঘোড়া বাঁধা ছিল। এরই মধ্যে একটি মেঘখণ্ড এসে তাকে ঘিরে ফেলে। এরপর যখন মেঘখণ্ডটি তার খুব কাছে চলে আসছিল, তখন তার ঘোড়া ছোটাছুটি করতে লাগল। সকালে ওই ব্যক্তি রাসুল (সা.)-এর কাছে এসে রাতের ঘটনা জানালেন। তিনি বললেন, ওটা ছিল সাকিনা (আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশেষ রহমত), যা কোরআন তেলাওয়াতের বরকতে নাজিল হয়েছিল। (সহিহ বুখারি)
ভয়েস/আআ