শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:৪১ পূর্বাহ্ন
ভয়েস নিউজ ডেস্ক:
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকা ও মিসরের মধ্যকার সীমান্ত বরাবর একটি বাফার জোনের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে ইসেরায়েল। বুধবার (৩০ মে) দেশটির সেনাবাহিনী এই তথ্য জানিয়েছে। এই এলাকা দখলের ফলে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের পুরো স্থল সীমান্তের উপর কর্তৃত্ব পেয়েছে ইসরায়েল। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এই খবর জানিয়েছে।
একটি টেলিভিশন ব্রিফিংয়ে ইসরায়েলের প্রধান সামরিক মুখপাত্র ড্যানিয়েল হাগারি বলেছেন, ইসরায়েলি বাহিনী ‘ফিলাডেলফি করিডোর’ এর ওপর ‘অপারেশনাল’ নিয়ন্ত্রণ অর্জন করেছে। মিসর-গাজার সীমান্ত বরাবর ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ (৯ মাইল) এই করিডোরের জন্য ‘ফিলাডেলফি করিডোর’ কোড নাম ব্যবহার করে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী।
হাগারি বলেছিলেন, ‘ফিলাডেলফি করিডোর ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের জন্য একটি অক্সিজেন লাইন হিসেবে কাজ করছিল। এই লাইন ব্যবহার করে গাজায় নিয়মিত অস্ত্র পাচার করা হতো।’
দক্ষিণ প্রান্তে মিসরের সঙ্গে সীমান্তটি গাজা উপত্যকার একমাত্র স্থল সীমান্ত ছিল যেটির দখল ইসরায়েল নেয়নি।
জাতিসংঘের শীর্ষ আদালত ইসরালেকে অবিলম্বে শহরটিতে হামলা বন্ধ করার আদেশ দিয়েছিল। তা সত্ত্বেও বুধবার রাফাহ শহরে ট্যাংক পাঠিয়েছিল দেশটি। এর আগে, মঙ্গলবার প্রথমবারের মতো রাফাহর কেন্দ্রস্থলে চলে গিয়েছিল সেনারা।
আন্তর্জাতিক আদালত বলেছে, ইসরায়েল কীভাবে রাফাহ থেকে বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের নিরাপদে রাখবে এবং খাবার, পানি ও ওষুধ সরবরাহ করবে তা ব্যাখ্যা করেনি। আদালতটির রায়ে হামাসকে ৭ অক্টোবর ইসরায়েলি ভূখন্ড থেকে জিম্মি করে নিয়ে যাওয়া ইসরায়েলিদের অবিলম্বে ও নিঃশর্ত মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
রাফাহ বাসিন্দারা বলেছেন, মিসরের সীমান্তে একটি বাফার জোনের দিকে যাওয়ার আগে ইসরায়েলি ট্যাংকগুলো পশ্চিমে তেল আল-সুলতান ও ইবনা এবং কেন্দ্রে শাবোরার কাছে ধাক্কা দিয়েছিল।
রাফাহ শহরের অ্যাম্বুলেন্স এবং জরুরি পরিষেবার ডেপুটি ডিরেক্টর হাইথাম আল হামস বলেছেন, ‘আমরা তেল আল-সুলতানের বাসিন্দাদের কাছ থেকে সাহায্যের কল পেয়েছি। সেখানে বাস্তুচ্যুত নাগরিকদের লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে। এই নিরাপদ এলাকায় অবস্থান করা মানুষগুলো হামলার কারণে সেখান থেকে সরে গেছে।’
ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গাজা জুড়ে ইসরায়েলি বিমান হামলা ও গোলাবর্ষণে ১৯ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। ইসরায়েল হামাস যোদ্ধাদের বেসামরিকদের মধ্যে লুকিয়ে থাকার অভিযোগ এনেছে। তবে এমন অভিযোগ গাজার ক্ষমতায় থাকা ইসলামপন্থি গোষ্ঠীটি অস্বীকার করে।
ইসরায়েল যুদ্ধ শেষ করতে প্রস্তুত নয় বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জাচি হানেগবি। তিনি বলেছেন, গাজায় যুদ্ধ অন্তত ২০২৪ জুড়ে চলবে। কেননা, চুক্তির অংশ হিসেবে ফিলিস্তিনি বন্দিদের সঙ্গে ইসরায়েলি জিম্মিদের বিনিময়ের দাবি করেছে হামাস।
হানেগবি বলেন, ‘রাফাহ শহরের লড়াই একটি অর্থহীন যুদ্ধ নয়।’ ইসরায়েলের লক্ষ্য হলো গাজায় হামাসের শাসনের অবসান ঘটানো এবং ইসরায়েলি ভূখন্ডে গোষ্ঠীটি ও তার মিত্রদের আক্রমণ বন্ধ করা।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেছেন, ইসরায়েলকে গাজার জন্য যুদ্ধোত্তর পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে অথবা অঞ্চলটিতে অনাচার, বিশৃঙ্খলা এবং হামাসের প্রত্যাবর্তনের ঝুঁকি নিতে হবে।
ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠ মিত্র যুক্তরাষ্ট্র। মঙ্গলবার রাফাহতে একটি বড় ধরনের স্থল হামলার বিরোধিতা পুনরায় ব্যক্ত করেছে দেশটি। তবে রবিবারের হামলার প্রতিক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, সেখানে এই ধরনের কোনও অভিযান চলছে বলে বিশ্বাস করে না তারা।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলের হামলায় সেখানে এখন পর্যন্ত ৩৬ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।
ইসরায়েলের তথ্যানুসারে, ৭ অক্টোবর দক্ষিণ ইসরায়েলে হামাসের নেতৃত্বাধীন যোদ্ধাদের হামলার প্রতিক্রিয়ায় গাজায় পালটা হামলা শুরু করে ইসরায়েল। হামাসের ওই হামলায় এক হাজার ২০০ ইসরায়েলি নিহত হন। এসময় ২৫০ জনেরও বেশি ইসরায়েলিকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যায় সশস্ত্র যোদ্ধারা।
ভয়েস/জেইউ।