শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:২৭ অপরাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে নেতানিয়াহু রাজনৈতিক খেলা খেলছেন ?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

জাতিসংঘে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব পাস হওয়ায় ফিলিস্তিনের সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস নিজেদের অবস্থান কঠোর করছে বলে মন্তব্য করেছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। তিনি দাবি করেন, জাতিসংঘে ভোটাভুটির পর হামাস যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় একটি প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। তবে নেতানিয়াহুর এমন দাবিকে প্রত্যাখ্যান করেছেন বাইডেন প্রশাসনের এক সিনিয়র কর্মকর্তা। প্রকাশ না করার শর্তে বুধবার (২৬ মার্চ) ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইসরায়েলকে তিনি বলেন, হামাস ওই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিল নিরাপত্তা পরিষদে ভোটাভুটির আগে। নেতানিয়াহু এটা নিয়ে রাজনীতি করছেন বলেও অভিযোগ করেছেন তিনি।

সোমবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের অনুষ্ঠিত ভোটে গাজা যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবটি পাস হয়। ওই প্রস্তাবে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি এবং আটক সব জিম্মির মুক্তির দাবি তোলা হয়। এ বিষয়টিতে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিল ইসরায়েল।

এর আগে, এক বিবৃতিতে নেতানিয়াহুর কার্যালয় বলেছিল, ‘জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের রেজোল্যুশন’ কি পরিমাণ ক্ষতি বয়ে এনেছে তার ‘একটি দুঃখজনক প্রমাণ’ হলো হামাসের মার্কিন মধ্যস্থতাকারীদের সমঝোতার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান।

বাইডেন প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন ওই কর্মকর্তা নেতানিয়াহুর এমন দাবির প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, ‘এই বিবৃতিটি প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই ভুল এবং জিম্মি ও তাদের পরিবারের প্রতি অন্যায্য’ আচরণের প্রকাশ।

নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গাজায় এখনও আটক ১৩৪ ইসরায়েলি জিম্মির মুক্তির বিষয়টি অবহেলা করার অভিযোগ এনেছেন মার্কিন ওই কর্মকর্তা। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর তীব্র সমালোচনা করে তিনি বলেছিলেন, ‘আমরা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং জটিল এই ইস্যু নিয়ে রাজনীতি করব না। আমরা বরং বাকি জিম্মিদের মুক্তির জন্য একটি চুক্তিতে পৌছানোর কাজে মন দেব।’

মঙ্গলবার মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার একই ধরনের মন্তব্যের পুনরাবৃত্তি করেছিলেন। মিলার বলেন, ‘হামাসের প্রতিক্রিয়ার যে বর্ণনা জনসাধারণের মধ্যে প্রচার করা হয়েছে তা সম্পূর্ণই প্রচারিত খবর থেকে এসেছে। সেগুলো হামাসের প্রতিক্রিয়ার অংশ নয় এবং প্রতিক্রিয়াটি জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের ভোটের পরে নয়, বরং আগে তৈরী করা হয়েছিল।’

সোমবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের ভোটে গাজা যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবটি পাস হয়। তখন যুক্তরাষ্ট্র ভোটদানে বিরত থাকায় এই প্রস্তাব পাস হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ইসরায়েলি প্রতিনিধিদের ওয়াশিংটন সফর বাতিল করেন নেতানিয়াহু। দক্ষিণ গাজার রাফাহ শহরে ইসরায়েলের আক্রমণ নিয়ে আলোচনা করতে চলতি সপ্তাহে ইসরায়েলের একটি সিনিয়র প্রতিনিধি দলের ওয়াশিংটন যাওয়ার কথা ছিল।

ভোটের কয়েক ঘন্টা পরই একটি বিবৃতি জারি করে হামাস। ওই বিবৃতিতে গোষ্ঠীটি ঘোষণা দেয়, তারা গাজায় স্থায়ী যুদ্ধবিরতি, সেখান থেকে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার, বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের নিজ নিজ এলাকায় ফিরে যাওয়া এবং ফিলিস্তিনি ‘কারাবন্দিদের’ একটি ‘সত্যিকারের’ বিনিময়ের দাবিতে অটল থাকার কথা দোহায় চলমান জিম্মি আলোচনার মধ্যস্থতাকারীদের জানিয়েছে।

তবে, বাইডেন প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেছেন,ভোটের আগেই হামাস তাদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।

নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকের কয়েক ঘণ্টা আগে একটি বিবৃতি জারি করেছিলেন হামাসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ওসামা হামদান। ওই বিবৃতিতে তিনি কাতার এবং মিসরের সঙ্গে আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রের জড়িত থাকার বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। ওসামা বলেছিলেন, এই চুক্তিতে মধ্যস্থতাকারীরা কতজন ফিলিস্তিনি নিরাপত্তা বন্দিদের মুক্তি দেওয়া হবে সে বিষয়ে অত্যধিক গুরুত্ব দিয়েছিলেন। অথচ হামাসের কাছে এর চেয়ে আরও গুরুত্বপূর্ণ ছিল গাজায় ইসরায়েলি ‘আগ্রাসন’ বন্ধ, মানবিক সহায়তা বৃদ্ধি, ফিলিস্তিনিদের উত্তর গাজায় ফিরে যাওয়ার অনুমতি এবং উপত্যকাটি পুনর্গঠনের জন্য একটি পরিকল্পনা অগ্রসর করার বিষয়গুলো।

জেরুজালেমে সমাবেশ করছেন ইসরায়েলি জিম্মিদের পরিবার ও তাদের সমর্থকরা। ছবি: এপিজেরুজালেমে সমাবেশ করছেন ইসরায়েলি জিম্মিদের পরিবার ও তাদের সমর্থকরা। ছবি: এপি

মঙ্গলবার নেতানিয়াহুর কার্যালয় হামাসের গাজায় যুদ্ধের সম্পূর্ণ অবসান এবং সেখান থেকে ইসরায়েলি সেনাদের পূর্ণ প্রত্যাহারকে ‘চরম দাবি’ হিসেবে অভিযুক্ত করেছে।

ওইদিন সকালে একটি রেডিও সাক্ষাত্কারে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ বলেন, নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবে ভেটো প্রত্যাহার করার যে সিদ্ধান্ত যুক্তরাষ্ট্র নিয়েছে তা ইসরায়েলের জিম্মি মুক্তির আলোচনায় ব্যাঘাত ঘটাবে।

একইদিন ব্লুমবার্গ টিভিকে কৌশলগত বিষয়ক মন্ত্রী রন ডার্মার বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের এমন সিদ্ধান্তের কারণে হামাস এখন বিশ্বাস করবে ‘জিম্মিদের মুক্তি না দিয়েই যুদ্ধবিরতি সম্ভব।’

নেতানিয়াহুর কার্যালয় সোমবার বলেছিল, জাতিসংঘের প্রস্তাবে ভেটো দেওয়া থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বিরত থাকা মূলত গাজায় যুদ্ধবিরতির বিষয়ে ওয়াশিংটনের নীতি থেকে সরে আসার প্রতিফলন। তবে মার্কিন কর্মকর্তারা জোর দিয়েছিলেন, সেটি তাদের রেজোল্যুশনের ব্যাখ্যা ছিল না এবং সেই শর্তের পক্ষে তাদের অবস্থানের কোনও পরিবর্তন হয়নি।

একটি সংবাদ সম্মেলনে হোয়াইট হাউজের ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিল জন কিরবি বলেছেন, ‘মনে হচ্ছে দিনের আলোর মতোন পরিষ্কার একটি বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় একটি দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করার চেষ্টা করছে, যেটি করার কোনও প্রয়োজন নেই।’

কিরবি বলেছিলেন, ‘এটি নিয়ে আমরা এক প্রকার বিভ্রান্ত। এই রেজোল্যুশনের কোনও বাধ্যবাধ্যকতা নেই। তাই এটি হামাসের পিছে ছোটার পেছনে ইসরায়েলের ক্ষমতার উপর কোনও প্রভাব ফেলবে না।’

দ্বিতীয় মার্কিন কর্মকর্তা সাংবাদিকদের একটি দলকে বলেন, যুদ্ধবিরতি এবং জিম্মি মুক্তির দাবিগুলো প্রাথমিকভাবে আলাদা হওয়ার পরও সেগুলোকে একটি সমঝোতার রেখায় নিয়ে আসা নিশ্চিত করতে কাজ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে, প্রস্তাবটিতে এখনও স্পষ্টভাবে জিম্মিদের মুক্তির বিনিময়ে যুদ্ধবিরতি শর্তের দাবি নেই।

এই কর্মকর্তা আরও বলেছেন, নেতানিয়াহুর এমন ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখে বাইডেন প্রশাসন বিভ্রান্ত হয়েছিল। তবে তাদের অনুমান, ঘরোয়া রাজনীতির প্রভাবে এমন প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী।

ভয়েস/জেইউ।

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION