সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ০৯:১৮ পূর্বাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

সুরা তাওবায় মুসলিম সমাজের রূপরেখা

শরিফ আহমাদ:
‘তাওবা’ পবিত্র কোরআনের ৯ নম্বর সুরা। সবার ঐকমত্যে এটি মদিনায় অবতীর্ণ হয়েছে। মোট আয়াত সংখ্যা ১২৯টি। বিভিন্ন তাফসির গ্রন্থে সুরাটির ১৩টি নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে তাওবা, বারাআত ও আজাব অন্যতম। এ সুরায় মুসলিমদের তাওবা কবুল হওয়া, কাফের-মুশরিকদের মধ্যকার সম্পর্কের সর্বশেষ বিধান বর্ণনা এবং মুসলিম সমাজের সার্বিক অবস্থার বিবরণ পেশ করা হয়েছে।

সুরা তাওবার শানে নজুল : এই সুরা নবম হিজরিতে নাজিল হয়েছে। রাসুল (সা.) যখন তাবুক যুদ্ধের জন্য রওনা হন তখন মুনাফিকরা পেরেশান হয়ে যায়। তারা বিভিন্ন প্রকার ভিত্তিহীন খবর প্রচার করে, গুজব রটাতে থাকে। যেন মুসলমানদের মধ্যে অশান্তির আগুন ছড়িয়ে পড়ে। এদিকে মুশরেকরা রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে যেসব চুক্তি করেছিল তারা ওই চুক্তিসমূহ ভঙ্গ করা শুরু করে। তাদের ধারণা ছিল মুসলমানরা তাবুকের যুদ্ধে বিজয় লাভ করতে পারবে না। রাসুল (সা.) মদিনা থেকে প্রায় ৪০০ মাইল দূরে অত্যন্ত গরমের মৌসুমে রমজান মাসে ৩০ হাজার সাহাবায়ে কেরামকে নিয়ে তাবুকের দিকে রওনা হন। তখন এই সুরা নাজিল হয়। আল্লাহতায়ালা রাসুল (সা.)-কে মুশরেকদের সঙ্গে সর্বপ্রকার সম্পর্কোচ্ছেদের ঘোষণা দেন এবং তাদের সঙ্গে কৃত অঙ্গীকারনামা ফেরত দিতে আদেশ করেন। বর্ণিত হয়েছে, যদি কোনো সম্প্রদায়ের তরফ থেকে অঙ্গীকার ভঙ্গের ভয় করা হয় তবে তাদের অঙ্গীকারনামাটি ফেরত দিন। (তাফসিরে জালালাইন ২/৬২১)

এ সুরায় বিসমিল্লাহ নেই যে কারণে : পবিত্র কোরআনের প্রত্যেকটি সুরার শুরুতে বিসমিল্লাহ লেখা আছে। কিন্তু সুরা তাওবার শুরুতে নেই। বিভিন্ন গ্রন্থে এর একাধিক কারণ লেখা আছে। ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘আমি ওসমান ইবনে আফফান (রা.)-কে বললাম, আপনারা মাসানির (যে সুরার আয়াত সংখ্যা একশোর কম) অন্তর্ভুক্ত সুরা আনফাল আর মিইনের (একশত বা ততোধিক আয়াতবিশিষ্ট সুরা) অন্তর্ভুক্ত বারাআতকে মিলিত করেছেন। আর দুটোর মাঝে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম লাইনটি লিখেননি। সঙ্গে সঙ্গে সুরা আনফালকে সাবায়ে তুওয়াল তথা সাতটি দীর্ঘ সুরার অন্তর্ভুক্ত করেছেন। এরূপ করতে কীসে উদ্বুদ্ধ করল? ওসমান (রা.) বললেন, রাসুল (সা.)-এর ওপর এমন এক জামানাও এসেছে যখন তার ওপর বহুসংখ্যক সুরা একসঙ্গে নাজিল হয়েছে। ওই যুগে তার ওপর কোনো বিষয় নাজিল হলে ওহি লেখকদের মধ্য থেকে কাউকে ডেকে তিনি বলতেন, এই আয়াতটি যে সুরায় অমুক অমুক বিষয়ের উল্লেখ আছে সে সুরায় অন্তর্ভুক্ত করো। মদিনায় প্রথম দিকে যেসব সুরা নাজিল হয় সুরা আনফাল ছিল সেগুলোর অন্যতম। আর বারাআত ছিল কোরআনের শেষের দিকে নাজিলকৃত সুরাসমূহের অন্যতম। কিন্তু এর বিষয়বস্তু হলো সুরা আনফালের বিষয়বস্তুর অনুরূপ। ফলে এটি আনফালের অন্তর্গত বলে আমি মনে করলাম। রাসুল (সা.)-এর ইন্তেকাল হয়ে যায়, কিন্তু তিনি এ কথা স্পষ্ট করে বর্ণনা করে যাননি যে, এটি আনফালের অংশ। এ কারণে আমি দুটোকে মিলিত করেছি কিন্তু এতদুভয়ের মধ্যে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম লিখিনি। আর এটিকে সাতটি দীর্ঘ সুরার অন্তর্ভুক্ত করেছি। (তিরমিজি)

কাফেরদের ওপর নিষেধাজ্ঞা : সুরা তাওবার মাধ্যমে ইসলামের দুশমনদের ব্যাপারে অসন্তুষ্টির কথা ঘোষণা করা হয়েছে। কোথাও কোথাও ঘোষণা করা হয়েছে, মুশরিকরা হলো নিতান্ত অপবিত্র। তাই মসজিদুল হারামের কাছে তারা যেন না আসতে পারে তা নিশ্চিত করা মুসলমানদের দায়িত্ব ও কর্তব্য। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবু বকর (রা.) নবম হিজরির হজে আমাকে এ নির্দেশ দিয়ে পাঠান যে, আমি কোরবানির দিন ঘোষণাকারীদের সঙ্গে মিনায় সমবেত লোকদের এ ঘোষণা করে দিই যে, এ বছরের পর আর কোনো মুশরেক হজ করার জন্য আসবে না। আল্লাহর ঘর উলঙ্গ অবস্থায় তাওয়াফ করবে না। হুমাইদ ইবনে আবদুর রহমান (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) আলি (রা.)-কে পুনরায় এ নির্দেশ দিয়ে প্রেরণ করলেন যে, তুমি সুরা বারাআতের বিধানসমূহ ঘোষণা করে দাও। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, মিনায় অবস্থানকারীদের মধ্যে (কোরবানির পর) আলি (রা.) আমাদের সঙ্গে ছিলেন এবং সুরা বারাআতের বিধানসমূহ ঘোষণা করলেন যে, এ বছরের পর কোনো মুশরিক হজ করার জন্য আসবে না। কেউ উলঙ্গ অবস্থায় আল্লাহর ঘর তাওয়াফ করবে না। (সহিহ বুখারি)

সুরা তাওবার গুরুত্ব ও আমল : সুরা তাওবার গুরুত্ব ও আমল প্রসঙ্গে আবু আতিয়া হামদানি (রা.) বর্ণনা করেন, ওমর (রা.) একটি ফরমানে লিখেছেন, তোমরা নিজেরা সুরা তাওবা শেখো আর তোমাদের স্ত্রীলোকদের সুরা নুর শিক্ষা দাও…। (তাফসিরে জালালাইন ২/ ৬২০)

ভয়েস/আআ

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION