বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২৫, ০৪:১৭ পূর্বাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।
শিরোনাম :
খালেদা জিয়াকে চৌদ্দগ্রামে নাশকতা মামলা থেকে অব্যাহতি ১৮ হাজার অবৈধ অভিবাসীকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফিরিয়ে নিচ্ছে ভারত বাংলাদেশ ও ইউএনএইচসিআর রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে একসাথে কাজ করবে ফলাফল জালিয়াতি:চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের সাবেক সচিব নারায়ন চন্দ্র নাথসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা টেকনাফে পাচারকারীর ফেলে যাওয়া বস্তায় পাওয়া গেল সাড়ে ৪ লাখ পিস ইয়াবা পেকুয়ায় হরিণাফাঁড়ী এলাকায় টপসয়েল কাটা বন্ধে অভিযানে হামলাচেষ্টা ফারিনের ‘ঠিকানা’ ১০ মিলিয়নে বিশ্বকাপের দৌড়ে উইন্ডিজকে হারিয়ে টিকে থাকল বাংলাদেশ বাণিজ্যকে আমরা রাজনীতির সাথে মিলাচ্ছি না:খাদ্য উপদেষ্টা বেড়েছে চোরের উপদ্রব, আতঙ্কে দিন কাটে মানুষের

প্রতিবন্ধীদের অধিকার রক্ষার তাগিদ

মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ:
আজ আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস। ১৯৯২ সাল থেকে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। বিশ্ব জুড়ে শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধী মানুষের জীবনমান উন্নয়ন ও সুরক্ষার অঙ্গীকার নিয়ে উদযাপন হয়ে থাকে এ দিবস। দিবসটির এ বছরের প্রতিপাদ্য ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক টেকসই ভবিষ্যৎ বিনির্মাণে বিকশিত নেতৃত্বে এগিয়ে যাবে প্রতিবন্ধী জনগণ’। সমাজসেবা অধিদপ্তরের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী নারী, পুরুষ ও হিজড়াসহ বাংলাদেশে মোট প্রতিবন্ধীর সংখ্যা এখন প্রায় ৩০ লাখ। বিদেশি পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেশে প্রতিবন্ধীর সংখ্যা সরকারি হিসাবের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি। প্রতিবন্ধী শব্দটি যেন এক বৈষম্যের প্রতিধ্বনি। প্রতিবন্ধী নাগরিকরা যেন সমাজে অন্য সব নাগরিকের মতো সমান অধিকার ও মর্যাদা নিয়ে বসবাস করতে পারেন সে বিষয়ে সচেতনতা তৈরি ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য প্রতি বছর আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস পালিত হয়।

ইসলামের ইতিহাসে অনেক প্রতিবন্ধী ব্যক্তি পাওয়া যায়, যারা তাদের পুণ্যময় কীর্তির কারণে পৃথিবীতে চিরদিনের জন্য স্মরণীয় হয়ে আছেন। কোরআনে কারিমে প্রতিবন্ধীদের সঙ্গে হৃদ্যতামূলক আচরণ করতে এবং তাদের বিশেষ সুযোগ-সুবিধা দিতে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। তাদের প্রতি তাচ্ছিল্য প্রদর্শন করতে কঠোরভাবে নিষেধ করা হয়েছে। ইসলামে মানব মর্যাদার মাপকাঠি রঙ, বর্ণ, ভাষা, সৌন্দর্য বা সুস্থতা নয়। বরং মানদণ্ড হচ্ছে তাকওয়া তথা আল্লাহ ভীরুতা। যে যত বেশি আল্লাহভীরু, মহান আল্লাহ তাকে তত বেশি ভালোবাসেন। এই মাপকাঠির মাধ্যমে ইসলাম প্রতিবন্ধী ও সুস্থদের মধ্যে ভেদাভেদ দূরীভূত করেছে এবং উভয়কে সমমর্যাদা দান করেছে। মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন, ‘হে মানুষ! আমি তোমাদের সৃষ্টি করেছি এক পুরুষ ও এক নারী হতে, পরে তোমাদের বিভক্ত করেছি বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে, যাতে তোমরা একে অপরের সঙ্গে পরিচিত হতে পারো। তোমাদের মধ্যে ওই ব্যক্তিই আল্লাহর কাছে অধিক মর্যাদাসম্পন্ন, যে অধিক আল্লাহভীরু।’ (সুরা হুজুরাত ১৩)

এই মর্মে রাসুল (সা.) বলেন, ‘আল্লাহ তোমাদের শরীর ও আকৃতির দিকে দেখেন না, বরং তোমাদের অন্তর দেখেন।’ (সহিহ মুসলিম) আর নর-নারী যেন একে অপরের উপহাস না করে। প্রতিবন্ধীর সমস্যা সম্পর্কে প্রতিবন্ধীই জানে। যখন কোনো সুস্থ ব্যক্তি তাকে উপহাস করে তখন সে দারুণভাবে মর্মাহত হয়। তাই ইসলাম একে অপরের উপহাস করতে নিষেধ করেছে। মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে বলেন, ‘হে মুমিনরা! কোনো পুরুষ যেন অপর কোনো পুরুষকে উপহাস না করে। কেননা যাকে উপহাস করা হয় সে উপহাসকারী অপেক্ষা উত্তম হতে পারে এবং কোনো নারী অপর কোনো নারীকেও যেন উপহাস না করে। কেননা যাকে উপহাস করা হয় সে উপহাসকারিণী অপেক্ষা উত্তম হতে পারে।’ (সুরা হুজুরাত ১১)

প্রাচীন যুগে অনেকে প্রতিবন্ধীদের উপেক্ষা করত, তাদের সামাজিক মান-মর্যাদা দেওয়া হতো না। এমনকি এখনো কোনো কোনো সমাজে তা দেখা যায়। যার ফলে বর্তমানে আন্তর্জাতিক আইন তৈরি করে তাদের অধিকার দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। অথচ ইসলাম তাদের অধিকার নিশ্চিত করেছে আরও সাড়ে ১৪শ বছর আগে। প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) তার অনুপস্থিতির সময় মদিনার মসজিদের ইমামতির দায়িত্ব এক প্রতিবন্ধী সাহাবিকে অর্পণ করে তাদের সমাজের সর্বোচ্চ সম্মানে অধিষ্ঠিত করার নজির তৈরি করেন। তিনি সেই প্রতিবন্ধী সাহাবিকে আজান দেওয়ার কাজেও নিযুক্ত করেছিলেন। সেই সম্মানিত প্রতিবন্ধী সাহাবি হচ্ছেন আবদুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতুম। (সহিহ বুখারি)

প্রত্যেক ফরজ বিধান যা মহান আল্লাহ মানুষের প্রতি ধার্য করেছেন, যদি মানুষ তা পালনে সক্ষম হয়, তাহলে তার প্রতি তা পালন করা আবশ্যক হবে, সে সুস্থ হোক বা প্রতিবন্ধী হোক। আর যদি সম্পূর্ণরূপে সে তা বাস্তবায়ন করতে অক্ষম হয়, তাহলে তা থেকে সে মুক্তি পাবে। আর যদি কিছুটা করতে সক্ষম হয় এবং কিছুটা করতে অক্ষম হয়, তাহলে যেই পরিমাণ করতে সক্ষম হবে, সেই পরিমাণ তাকে পালন করতে হবে এবং যেই পরিমাণ করতে অক্ষম হবে, সেই পরিমাণ থেকে সে ছাড় পেয়ে যাবে। কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘আল্লাহ কাউকে তার সাধ্যাতীত কোনো কাজের ভার দেন না।’ (সুরা বাকারা ২৮৬) রাসুল (সা.) বলেন, ‘যখন আমি তোমাদের কোনো আদেশ করি, তখন তা বাস্তবায়ন করো যতখানি সাধ্য রাখো।’ (সহিহ বুখারি) ইসলামের এই মনোরম বিধানে প্রতিবন্ধীদের জন্য রয়েছে সহজতা ও সহনশীলতা। তাই এমন প্রতিবন্ধী, যে ইসলামের বিধান পালনে একেবারে অক্ষম, যেমন পাগল ও জ্ঞানশূন্য ব্যক্তি, তার ওপর ইসলাম কোনো বিধান জরুরি করে না। আর আংশিক প্রতিবন্ধী, যে কিছুটা করতে সক্ষম তার প্রতি অতটুকুই পালনের আদেশ দেয়। যেমন যদি কারও অর্ধ হাত কাটা থাকে তাহলে যতটুকু অংশ বাকি আছে অজুর সময় ততটুকু ধৌত করতে আদেশ দেয়। অনুরূপ প্রতিবন্ধকতার কারণে নামাজে দাঁড়াতে না পারলে বসে আদায় করার আদেশ দেয়। এভাবে অন্যান্য অবস্থা।

ইসলামের দৃষ্টিতে প্রতিবন্ধীদের অধিকার সমাজ ও পরিবারের অন্য সদস্যদের মতোই। তাদের ন্যায্য পাওনা সম্পর্কে ইসলাম গুরুত্ব প্রদান করেছে। কেননা তাদেরও মৌলিক চাহিদা পূরণ, স্বাভাবিক ও সম্মানজনক জীবনযাপনের অধিকার রয়েছে। তাই ইসলাম প্রতিবন্ধীদের অধিকার বিষয়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।

ভয়েস/আআ

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION