সোমবার, ২৩ Jun ২০২৫, ০৫:৪৭ অপরাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

কোন খুঁটির জোরে বহাল তবিয়তে ফ্যাসিবাদের দোসর বি.কে পাল

মহেশখালী উপজেলা নির্বাচন অফিসার কি কে পাল, ফাইল ছবি

জিকির উল্লাহ জিকু:

বিগত ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার সময়ে গড়ে ওঠা দুর্নীতিবাজ ও চাটুকার মহেশখালী উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা বিমলেন্দু কিশোল পাল (বিকে পাল) এখনো বহাল তবিয়তে রয়ে গেছেন। তার বিরুদ্ধে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার সময় দুর্নীতির নানা অভিযোগ উঠলেও সাবেক এমপি আশেক উল্লাহ রফিকসহ আওয়ামী লীগের নেতাদের পূর্ণ সহযোগিতার কারণে ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হয়নি। তৎকালীন সময়ে ভুক্তভোগীরা তার ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতির বিষয়ে তদন্তের জন্য বিভিন্ন দপ্তরে চিঠি দেওয়া হলেও তা ধামাচাপা দিয়ে রাখা হতো। অধরা এই অফিসার তারই ধারবাহিকতায় বর্তমানেও মাঠ পর্যায়ে আওয়ামী ফ্যাসিবাদ পুনর্বাসনের পক্ষে কাজ করছে বলে বিভিন্ন সচেতন মহল থেকে অভিযোগ উঠছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিমলেন্দু কিশোল পাল আওয়ামী লীগের (নিষিদ্ধ ঘোষিত) সাবেক সাংসদ আশেক উল্লাহ রফিকের আস্থাভাজন ছিলেন। গড়ে তোলেন চিহ্নিত চাঁদাবাজদের নিয়ে একটি স্থানীয় সিন্ডিকেট। ওই সম্পর্কের প্রভাবের কারণে ক্ষমতার অপব্যবহার, দুর্নীতিসহ নানা অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও তাকে সমীহ করে চলত সেই সময়ের উপজেলার শীর্ষ প্রশাসন। ফ্যাসিবাদের পতনের পর বর্তমানেও মহেশখালী উপজেলা প্রশাসনে তার প্রভাব ও বলয় সৃষ্টি করে আওয়ামী পুনর্বাসনের পক্ষে সুকৌশলে কাজ করে যাচ্ছেন স্থানীয় ছাত্র-জনতার অভিযোগ।

তার বিরুদ্ধে যত অভিযোগ:
২০২৪ সালে ৭ জানুয়ারি বিতর্কিত রাতের ভোটে আওয়ামী প্রার্থীকে জিতানোর জন্য জাল ব্যালেট ছাপানোর গুরুতর অভিযোগ বিএনএম প্রার্থীর, গত ইউপি নির্বাচনে কন্টাকে জিতানোর বিনিময়ে প্রার্থীদের থেকে অবৈধ টাকা আদায়, বড় মহেশখালী ইউপি চেয়ারম্যান প্রার্থী মোস্তফা কামালকে ১০ লক্ষ টাকা ফেরত ঘটনা, কালারমারছড়া ইউপি ভোটে দুর্নীতির অভিযোগে নির্বাচন অফিসে অভিযোগ, রোহিঙ্গা ভোটার বানানো, ফাইল আটকে টাকা আদায়, ৪ লক্ষ জাতীয় পরিচয় পত্র বিতরণের বিপরীতে এনআইডি হারানো বাবদ ৩৪৫ টাকা অনেকের থেকে নগদে আদায়, সম্প্রতি আদিনাথ মেলায় নয়ছয়, সর্বশেষ বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমাতে মহেশখালীতে ইন্ধন দাতা ও মদদদতা আওয়ামী দোসদের ভোটার দিবসে আমন্ত্রণ এবং উপজেলা আইনশৃঙ্খলা মিটিংয়ে তার দোসর সংগঠনের উপস্থিতি নিশ্চিত করে ফ্যাসিস্টের দোসর পুনর্বাসনে সহযোগিতা।

সূত্র থেকে জানা যায়, বিমলেন্দু কিশোল পাল প্রায় দীর্ঘ কয়েক বছর যাবত মহেশখালী উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত। যোগদানের কিছু দিন পর সিন্ডিকেট সৃষ্টি করে ব্যাপক দুর্নীতির সাথে জড়িয়ে পড়েন। দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল সম্পদের মালিকও হয়েছেন।

 মহেশখালীতে সনাতনী সম্প্রদায়ের মাঝে মারাত্মকভাবে বিভাজন সৃষ্টি করছে দুর্নীতিবাজ বি.কে পাল- শ্রী পরিমল কান্তি শীল,  ট্রাস্টি, হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলার একাধিক কর্মকর্তা ও কর্মচারি প্রশ্ন তুলে বলেন, ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতনের পরও দোসর ও দুর্নীতিবাজ বিমলেন্দেু কিশোর পাল অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ও কীভাবে নির্বিঘ্নে রয়ে গেছেন? কোন খুঁটির জোরে বহাল তবিয়তে আছেন? তারা বলেন, উপজেলায় নির্বাচন অফিসারকে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উচিৎ, তার দুর্নীতির অভিযোগ ও বিপুল সম্পদের হিসাব তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

মহেশখালী পৌর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুুরুল ইসলাম (সাবেক পৌর কমিশনার) বলেন, উপজেলা নির্বাচন অফিসার বিমলেন্দু কিশোর পাল আপাদমস্তক একজন দুর্নীতিবাজ অফিসার ও আওয়ামী দোসর। আওয়ামী লীগ ছত্রছায়ায় মহেশখালীতে তার আচরণ ছিল আওয়ামী লীগের নেতার মতো। তার বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরী।

৬ষ্ঠ মহেশখালী উপজেলা নির্বাচনে একজনের দায়িত্ব আরেকজনকে দেয়ার পর জেলা প্রশাসক বরাবরে অভিযোগ দায়ের । কিন্তু সেই সময়ের ক্ষমতার দাপটে কিচ্ছু হয়নি এই দোসর বিকে পালের।

মহেশখালী উপজেলা কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আমজাদ হোসেন (সাবেক) বলেন, নির্বাচন অফিসার বিমলেন্দু কিশোর পাল আওয়ামী ফ্যাসিস্টের মূল সহযোগি ও দুর্নীতিবাজ অফিসার। তার বিরুদ্ধে তদন্ত করলে মহেশখালীতে টাকার বিনিময়ে নির্বাচনে অনেক অনিয়মের সত্যতা পাওয়া যাবে। সে এখনো আওয়ামী দোসর পুর্নবাসনে সক্রিয়। তাকে আইনের আওতায় আনা জরুরী।

মহেশখালী পৌরসভার সাবেক মেয়র (ভারপ্রাপ্ত) ও আদিনাথ কমিটির সাবেক পরিচালক বাবু পূর্ণ চন্দ্র দে বলেন, ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানের পর কিছু আওয়ামী দোসরের পরামর্শে ও স্বার্থে ২৫ সালের আদিনাথ মেলা উদযাপন ও পরিচলনা কমিটির নিয়ম বর্হির্ভূত মাধ্যম দিয়ে পরিচালনা করা হয়। যার কলকাঠি নাড়ে দোসর অফিসার হিসেবে পরিচিত বিমলেন্দু কিশোর পাল। তিনি বিস্ময় প্রকাশ করে আরো বলেন এই দোসর অফিসার এখনো কিভাবে উপজেলা প্রশাসনের এমন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেন। তার বিরুদ্ধে প্রশাসন ও দুদকের মাধ্যমে তদন্ত করে ব্যবস্থা প্রয়োজন।

বাংলাদেশ হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ট্রাস্টি শ্রী পরিমল কান্তি শীল (কক্সবাজার, খাগড়াছড়ি ও রাঙ্গামাটি) দুঃখের সহিত বলেন, বিতর্কিত অফিসার বিকে পাল একজন সরকারি চাকুরিজীবী কিন্তু তিনি মহেশখালীতে সনাতনী সম্প্রদায়ের মাঝে বিভাজন সৃষ্টি করছে মারাত্মকভাবে। অভ্যুত্থানের পর কূটকৌশলে পবিত্র আদিনাথ মেলার নিয়ন্ত্রণ নেয়। পরে হিসাব নিয়েও যেনতেন হযবরল হিসাব দিচ্ছে যাতে স্বচ্ছতা নাই। তার বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়া দরকার।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মহেশখালী উপজেলা নির্বাচন অফিসার বিমলেন্দু কিশোর পাল অভিযোগ সঠিক নয় উল্লেখ করে বলেন, আমি সরকারি বিধি অনুযায়ী চাকরি করছি। আওয়ামী দোসর কাউকে পুনর্বাসন করছিনা, তবে দাওয়াতের বিষয়ে আগের নিয়মে (আওয়ামী লীগ আমলের) ধারাবাহিকতা বজায় রাখছি।

কক্সবাজার জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ তোফায়েল হোসেন বলেন, আমি জেলায় নতুন আসছি। অনেক কিছু এখনো জানা হয়নি। বিকে পাল সম্পর্কে অভিযোগগুলো জানলাম। উর্ধ্বতন অফিসের সাথে আলাপ করে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

ভয়েস/জেইউ।

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION