বৃহস্পতিবার, ০২ অক্টোবর ২০২৫, ০২:৩১ পূর্বাহ্ন
বিশেষ প্রতিবেদক:
টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির পদ কৌশলে ভাগিয়ে নিতে চিহ্নিত ও তালিকাভূক্ত ইয়াবাকারবারিরা তোড়জোড় শুরু করেছে। ইতিমধ্যে কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগ থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের কাছে তদবির শুরু করেছে ওই ইয়াবা সিন্ডিকেট। টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী মৃত্যু জনিত কারণে পদ শুন্য হয়ে যাওয়ায় কারবারিদের এ তৎপরতা শুরু হয়েছে। ইয়াবাকারবারিদের এ তৎপরতা রুখতে কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কাছে একটি লিখিত আবেদন করেছেন টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব মোহাম্মদ নুরুল বশর।
কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগ বরাবরে লিখিত আবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, গত ১৩ নভেম্বর টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী মৃত্যু জনিত কারণে সভাপতির পদটি শুন্য হয়ে যায়। উক্ত শুন্যপদে একজন ভারপ্রাপ্ত সভাপতির প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়ায় এক শ্রেণীর অসাধু চক্র ও একটি ইয়াবা সিন্ডিকেট আওয়ামী লীগ থেকে বহিস্কৃত এম এ জহির নামের এক বিতর্কিত ব্যক্তিকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি করতে তোড়জোড় শুরু করেছে। ইতিমধ্যে কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগ ছাড়াও দলীয় হাই কমান্ডেও তদবির শুরু করে দিয়েছে ওই চক্রটি।
উক্ত এম এ জহিরের বিরুদ্ধে জাল, প্রতারণা ও পরিবারে ইয়াবা সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ ছাড়াও প্রধানমন্ত্রীকে হেয় করার অভিযোগ রয়েছে। এম এ জহির উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতির পদে থাকাকালিন গত ২০১৮ সালের ৮ সেপ্টেম্বর টেকনাফ উপজেলা প্রশাসন আয়োজিত এক ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন। বক্তব্যের এক পর্যায়ে অনুষ্ঠানের সবার উপস্থিতিতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রীকে হেয় করে সাবেক সাংসদ আব্দুর রহমান বদির সঙ্গে তুলনা করেন। ওই সময় তিনি “খোদ শেখ হাসিনা এসেও উখিয়া-টেকনাফে নির্বাচন করলে আব্দুর রহমান বদির কাছে হেরে যাবেন”। তার এমন বক্তব্যে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের আহত করে। তার এহেন কর্মকান্ড জ্ঞানহীন বক্তব্যের টেকনাফ উপজেলা সহ জেলার বিভিন্ন স্থানে এম এ জহিরের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে তাকে দল থেকে বহিস্কারের দাবি উঠে। তাদের দাবির প্রেক্ষিতে গত ২০১৮ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের এক বর্ধিত সভায় সংগঠনের সহ-সভাপতির পদ থেকে এম এ জহিরকে অব্যাহতি দেয়া হয়। এরপর থেকে দলীয় কোন কর্মকান্ডে তার সম্পৃক্ততা নেই। কিন্তু ওই বিতর্ক ব্যক্তিকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি করা হলে শান্তিপূর্ণভাবে চলে আসা সংগঠন টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগে বিশৃংখলা দেখা দিবে।
আবেদনে বলা হয়েছে. এম এ জহিরকে একজন প্রতারক। ইতিপূর্বে তার বিরুদ্ধে জাল দলিল সৃজন করে অন্যের জমি বিক্রির বিষয়টি আদালতে প্রামাণিত হয়েছে। (মামলা নং-অপর ১৪৭/২০১২)। এছাড়াও তার সন্তান সৈয়দ মোহাম্মদ জোহার একজন তালিকাভূক্ত মাদককারবারি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রনালয়ের করা মাদকের তালিকায় তার নাম রয়েছে। তাই, এমএ জহিরের মত বিতর্কিত ব্যক্তিকে শুধু সভাপতির পদ নয় দলে পুনরায় অন্তর্ভুক্তি না করতে জোরদাবি জানানো হয়েছে।
সত্যতা নিশ্চিত করে টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ নুরুল বশর কক্সবাজার ভয়েসকে জানান, বর্তমানে টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগ অত্যান্ত সংগঠিত। এ অবস্থায় এম এ জহিরের মত সুবিধাবাদি, সংগঠন বিরোধী, প্রতারক, বিতর্কিত ব্যক্তিকে দলে সমর্থন না দিকে দলীয় হাই কমান্ডে লিখিত আবেদন করা হয়েছে। আমরা চাই, টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগে কোন ধরণের ইয়াবাকারবারি ও অসাধু চক্রের অনুপ্রবেশ না করে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মুঠোফোনে এম এ জহির কক্সবাজার ভয়েসকে জানান, ‘আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সত্য নয়। টেকনাফে পরিচ্ছন্ন কোন রাজনৈতিক ব্যক্তি থাকলে সে আমি একজন। আমি কিভাবে অন্যের জমি বিক্রি করতে যাব। এটি কি কখনো সম্ভব?
এম এ জহির কক্সবাজার ভয়েসকে আরও বলেন, ‘কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের আগামী সভায় জেলার নেতৃবৃন্দ টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতির বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসতে পারে। সেখানে আমার নাম প্রস্তাব আসতে পারে মনে করে বর্তমান টেকনাফ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল বশর আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করেছে। আমি এবং আমার পরিবারের কেউ ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত নয়। আমি ৩০ বছর ধরে ইয়াবা ও মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে আসছি।
ভয়েস/আআ