শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৩:৪৩ পূর্বাহ্ন
ভয়েস প্রতিবেদক, টেকনাফ:
টেকনাফ সাবরাং ট্যুরিজম পার্কে তিনটি প্রতিষ্ঠান কর্তৃক হোটেল ও পর্যটন সুবিধা নির্মাণে ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠান কক্সবাজারের সাবরাং ট্যুরিজম পার্কে তিনটি প্রতিষ্ঠান কর্তৃক হোটেল ও পর্যটন সুবিধা নির্মাণে ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠান আজ পার্কটিতে অনুষ্ঠিত হয়।প্রতিষ্ঠান তিনটি হল- গ্রেট আউটডোর এন্ড অ্যাডভেঞ্চার লিমিটেড, গ্রিন অরচার্ড হোটেল এন্ড রিসোর্টস লিমিটেড এবং সানসেট বে লিমিটেড।
গত ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাবরাং ট্যুরিজম পার্কের মাস্টারপ্ল্যান সংক্রান্ত সভায় দ্রুত পর্যটন আকর্ষণে প্রয়োজনীয় স্থাপনা নির্মাণের নির্দেশনা প্রদান করেন। বিনিয়োগকারীদের উৎসাহের প্রেক্ষিতে এ ভিত্তি প্রস্তর স্থাপনের আয়োজন করা হয়।
গ্রেট আউটডোর এন্ড অ্যাডভেঞ্চার লিমিটেড ৩ একর জমিতে প্রায় ৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগে পর্যটনবান্ধব বিভিন্ন স্থাপনা গড়ে তুলবে। এর মধ্যে রয়েছে – স্নোরকেলিং, স্কুবাডাইভিং, প্যারাসেইলিং, জেটস্কি, প্যাডেলবোর্ডিং, বিচভলিবল, বিচ বোলিং ইত্যাদি।
গ্রিন অরচার্ড হোটেল এন্ড রিসোর্টস লিমিটেড ১.৫ একর জমিতে প্রায় সাড়ে সাত মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগে গড়ে তুলবে ২১০টি রুমবিশিষ্ট ৩ স্টারহোটেল, রিক্রিয়েশন সেন্টার এবং কনভেনশন সেন্টার।
সানসেট বে লিমিটেড ১ একর জমিতে প্রায়১৯.২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগে ৩৭০টিরুম বিশিষ্ট ৫ তারকা হোটেলসহ পর্যটন বান্ধব স্থাপনা তৈরী করবে।
সাবরাং ট্যুরিজম পার্কে ইতোমধ্যে ১২টি প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ অনুমোদন পেয়েছে, যার মাধ্যমে ২৪৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ হবে এবং প্রায় ১০০০০ লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। উল্লেখ্য, বিনিয়োগকারীদের তালিকায় নেদারল্যান্ড ও সিঙ্গাপুরের দুটি প্রতিষ্ঠানও রয়েছে।
বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী এবং গ্রেট আউটডোর এন্ড অ্যাডভেঞ্চার লিমিটেডের চেয়ারম্যান মাহবুবজামান, গ্রিনঅরচার্ড হোটেল এন্ড রিসোর্টস লিমিটেড এবং সানসেট বে লিমিটেডের চেয়ারম্যান ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর ইশতিয়াক আহমেদ পাটোয়ারি অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
পবন চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চলের হাতধরে বাংলাদেশপর্যটন-বান্ধব সুস্থ পরিবেশ গড়ে তুলতে সমর্থ হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাবরাং ট্যুরিজম পার্কের মাস্টারপ্ল্যান সংক্রান্ত সভায় দ্রুত পর্যটন আকর্ষণে প্রয়োজনীয় স্থাপনা নির্মাণের যে নির্দেশনা প্রদান করেন, তারই প্রেক্ষিতে আজ বেজা নয়নাভিরাম সমুদ্র সৈকতে এ ট্যুরিজম পার্কটি গড়ে তুলতে যাচ্ছে।
গ্রিনঅরচার্ড হোটেল এন্ড রিসোর্টস লিমিটেড এবং সানসেট বে লিমিটেডের চেয়ারম্যান ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর ইশতিয়াক আহমেদ পাটোয়ারি বলেন, তারা দ্রুত কাজ শুরু করে সর্বপ্রথম হোটেল নির্মাণ করতে চান যাতে পর্যটকগণদেশের এই অনন্য পর্যটনস্পটে এসে নীলসাগরের জলরাশি উপভোগ করতে পারেন। পর্যটনকে সমৃদ্ধকরার এ পরিকল্পনার জন্য তারা বেজার এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানান।
গ্রেটআউটডোর এন্ড অ্যাডভেঞ্চার লিমিটেডের চেয়ারম্যান মাহবুবজামান বলেন, তারাস্নোরকেলিং, স্কুবাডাইভিং, প্যারাসেইলিং, জেটস্কিইং, প্যাডেলবোর্ডিং, বিচভলিবল, বিচবোলিং সুবিধাসহ আধুনিক পর্যটনবান্ধব স্থাপনা গড়ে তুলতে চান।
সাবরাং ট্যুরিজম পার্কের মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের মূল উদ্দেশ্য পর্যটন শিল্পের সম্ভাবনা ও সমস্যা চিহ্নিতকরণের মাধ্যমে জীব-বৈচিত্র্য, দেশীয় সংস্কৃতি ও কৃষ্টিকে অগ্রাধিকার দিয়ে পর্যটকবান্ধব মহাপরিকল্পনা প্রস্তুতকরণ এবং কক্সবাজার ও এই অঞ্চলের পর্যটন স্থানগুলির মধ্যে একটি সামগ্রিক যোগসূত্র স্থাপন করা। এ মহাপরিকল্পনায় সমুদ্রসৈকত সংরক্ষণ, বিদ্যমান জলাশয় সংরক্ষণ, ঝাউবন সংরক্ষণ, টেকসই উন্নয়ন, নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার, বৃষ্টির পানি ব্যবহার নিশ্চিতকরণ, দেশীয় ঐতিহ্য ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সংরক্ষণ, পর্যটক ও পরিবেশবান্ধব সু্বিধাদিনিশ্চিতকরণ, পথচারী ও বাইসাইকেলবান্ধব সুবিধাদিনিশ্চিতকরণ, বিদ্যমান জীব-বৈচিত্র্য সংরক্ষণ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতকরণ এবং পর্যটকদের সার্বক্ষণিক নিরাপত্তার বিষয়াদি বিবেচনা করা হয়েছে।
সাবরাং ট্যুরিজম পার্কটি বাংলাদেশের সর্বদক্ষিণে কক্সবাজার জেলার টেকনাফ উপজেলার সাবরাং ইউনিয়নে অবস্থিত যার আয়তন ১০৪৭ একর। সাবরাং ট্যুরিজম পার্কের পশ্চিম ও দক্ষিণ-পশ্চিমে বঙ্গোপসাগর, উত্তরে টেকনাফ সদর ইউনিয়ন, দক্ষিণ-পূর্বে শাহপরীর দ্বীপ অবস্থিত। কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের কোলাহলের বাইরে ও বৈশিষ্ট্যগতভাবে নীল পানির কারণে স্থানটি পর্যটন শিল্পের উন্নয়নের জন্য অত্যন্ত উপযোগী।
সাবরাং ট্যুরিজম পার্ক, রাজধানী শহর ঢাকা থেকে প্রায় ৪৫০ কি:মি: এবং কক্সবাজার শহর থেকে প্রায় ৮২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।মেরিন ড্রাইভের মাধ্যমে ট্যুরিজম পার্কের সাথে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ রয়েছে, তাছাড়াও নিকটস্থ জাতীয় মহাসড়ক এন-১ এর মাধ্যমে ট্যুরিজম পার্ক এর সাথে দেশের অন্যান্য এলাকার সড়ক যোগাযোগ বিদ্যমান। কক্সবাজার বিমানবন্দর প্রস্তাবিত পার্কের নিকটবর্তী বিমানবন্দর, যা ট্যুরিজম পার্ক থেকে ৮২ কিলোমিটারের মধ্যে অবস্থিত। বাংলাদেশ রেলওয়ের চলমান প্রকল্প “চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার রেলসংযোগ স্থাপন” বাস্তবায়িত হলে, ট্যুরিজমপার্কের সাথে সমগ্র বাংলাদেশের বিশেষ করে রাজধানী ঢাকা এর সাথে যোগাযোগ আরও সহজতর হবে। ফলে ট্যুরিজম পার্কেরপ্রতি দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আকর্ষণ বৃদ্ধি পাবে।
এছাড়াও দেশিবিদেশি পর্যটকের পাশাপাশি স্থানীয় পর্যটকদেরট্যুরিজম পার্কে আরও বেশি আকৃষ্ট করার লক্ষ্যে পার্কের বিভিন্ন স্থানে সমুদ্র তীরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জন্য উন্মুক্ত মঞ্চ, রিজার্ভ ফরেষ্ট, বিনোদন কেন্দ্র, দেশীয় পণ্যের স্টল প্রর্দশনের স্থান, শিশুদের খেলার পার্ক, আন্ডার ওয়াটার ওয়ার্ল্ড, বোটানিক্যাল গার্ডেন ও এ্যাকুয়ারিয়াম ইত্যাদি প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রস্তাবিত মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে ট্যুরিজম পার্কটি প্রতিদিন ৩৯০০০ পর্যটক উপভোগ করতে পারবে এবং প্রায় ৬০০০ মানুষের সরাসরি কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।মাস্টারপ্ল্যানে প্রস্তাবিত ভূমি ব্যবহার ও এর উপাদানসমূহ প্রকৃতি ও দেশীয় সংস্কৃতিকে অগ্রাধিকার দিয়ে এলাকার বিদ্যমান প্রাকৃতিক ভূদৃশ্যের সাথে সামঞ্জস্য রেখে এমনভাবে প্রস্তুত করা হয়েছে যাতে পার্কটি সর্বস্তরের প্রকৃতিপ্রেমিক পর্যটকদের কাছে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়।
ভয়েস/আআ