শনিবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৫, ০৭:১৫ অপরাহ্ন
বিশেষ প্রতিবেদক:
সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলার তৃতীয় দফা সাক্ষ্যগ্রহন শেষ হয়েছে। চতুর্থ দফায় সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য ২৮, ২৯ সেপ্টেম্বর নির্ধারণ করেছে আদালত।
বুধবার (২২ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইলের আদালতে সাক্ষ্যগ্রহন শেষ হয়েছে। দিনব্যাপী মামলার অন্যতম সাক্ষী সেনা কর্মকর্তা সার্জেন্ট আয়ুব আলী, কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা: শাহীন আবদুর রহমান ও মোক্তার আহমদের সাক্ষ্যগ্রহন সম্পন্ন করা হয়। এ নিয়ে এই পর্যন্ত ১৪ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহন শেষ করা হয়েছে।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ও কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ফরিদুল আলম জানান, বুধবার দিনব্যাপী ৩ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহন নেয়া হয়েছে। এ পর্যন্ত ১৪ জন সাক্ষী আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। পরে আদালত চলতি মাসের ২৮ ও ২৯ তারিখে দিনধার্য্য করেন। সারাদিন মামলার সাক্ষী সেনা কর্মকর্তা সার্জেন্ট আয়ুব আলী,কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা: শাহীন আবদুর রহমান ও মোক্তার আহমদের সাক্ষ্যগ্রহন সম্পন্ন করা হয়।
পিপি ফরিদুল আলম আরও জানান, আসামিপক্ষের আইনজীবী বিচারকে দীর্ঘায়ু করতে আদালতে বার বার বিভিন্ন অজুহাতে দরখাস্ত দিয়ে যাচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে বুধবার আরও একটি দরখাস্ত দেন। কিন্তু, দেশের একটি বড় সংস্থার গোপন নথি চাওয়ায় আদালত দরখাস্তটি নাকচ করে দেন।
আসামি পক্ষের আইনজীবী এডভোকেট রানা দাশ গুপ্ত জানান, মেজর সিনহা হত্যাকান্ডের সময় এক সামরিক সংস্থার গোয়েন্দা শাখার কর্মকর্তা ঘটনাস্থল পরিদর্শণ করে যে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছিল, ওই প্রতিবেদনটি চেয়ে আমরা আদালতের কাছে দরখাস্ত দিয়েছি। আদালত তা নাকচ করেছেন। এছাড়াও মা<span;>মলার<span;> সাক্ষী সেনা কর্মকর্তা সার্জেন্ট আয়ুব আলীকে আমরা জেরা করা থেকে বিরত থেকেছি।
এদিকে, আদালতের এক সুত্র জানিয়েছেন, তৃতীয় দফায় শেষ দিনে সাক্ষী সামরিক শাখার কর্মকর্তা সার্জেন্ট আয়ুব আলী সাক্ষ্য দেয়ার সময় আদালতকে জানিয়েছন, তিনি ঘটনার পর খবর শুনে সেখানে ( ঘটনাস্থলে ) গিয়েছিলেন। এসময় ঘটনার পরবর্তী সেখানকার চিত্র নিজের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে ধারণ করতে গিয়ে বাধাপ্রাপ্ত হন এবং মোবাইল কেড়ে নেওয়া হয়। মূলত ওই সময়ে পুলিশ কতৃক হত্যার ঘটনা ধামাচাপা তাঁর সাথে বিরুপ আচরণ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
এর আগে গত ২৩ থেকে ২৫ আগস্ট টানা তিনদিন মামলার প্রথম দফায় ১নং সাক্ষী ও বাদি শারমিন সাহরিয়া ফেরদৌস ও ২নং সাক্ষী সাহেদুল ইসলাম সিফাতের সাক্ষ্যগ্রহন শুরু হয়। একইভাবে গত ৫ থেকে ৮ সেপ্টেম্বর টানা ৪ দিনে দ্বিতীয় দফায় সাক্ষ্যগ্রহন শেষ করেন আদালত। বুধবার তৃতীয় দফার শেষদিন পর্যন্ত ১৪ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহন সম্পন্ন।
গত বছর ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান।
এ ঘটনায় গত বছর ৫ আগস্ট সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বাদী হয়ে টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও বাহারছড়া তদন্ত সাবেক ইনচার্জ পরিদর্শক লিয়াকত আলীসহ ৯ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। মামলায় প্রধান আসামি করা হয় লিয়াকত আলীকে। আদালত মামলার তদন্ত ভার দেয়া হয় র্যাবকে।
ঘটনার ৬ দিন পর ওসি প্রদীপ ও পরিদর্শক লিয়াকতসহ ৭ পুলিশ সদস্য আত্মসমপর্ণ করেন। ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে টেকনাফ থানায় একটি এবং রামু থানায় আরেকটি মামলা দায়ের করেন।
পরে র্যাব পুলিশের দায়ের মামলার ৩ সাক্ষি এবং শামলাপুর চেকপোস্টে দায়িত্বরত আমর্ড পুলিশ ব্যাটালিয়ানের (এপিবিএন) এর ৩ সদস্যকে গ্রেপ্তার করে। এরপর গ্রেপ্তার করা হয় টেকনাফ থানা পুলিশের সাবেক কনস্টেবল রুবেল শর্মাকে। সর্বশেষ গত ২৪ জুন আদালতে আত্মসমর্পণ করেন টেকনাফ থানার সাবেক এএসআই সাগর দেব।
গত বছর ১৩ ডিসেম্বর র্যাব-১৫ কক্সবাজার ব্যাটালিয়ানের তৎকালীন দায়িত্বরত সহকারি পুলিশ সুপার খাইরুল ইসলাম ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন।
গত ২৭ জুন আদালত ১৫ জন আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। এতে সাক্ষি করা হয় ৮৩ জনকে।
ভয়েস/আআ