শনিবার, ২৮ Jun ২০২৫, ০৮:২৬ অপরাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

নাইক্ষ্যংছড়ি সড়কে ১৪টি ঝুঁকিপূর্ণ বেইলি ব্রিজ দিয়ে চলছে ভারী যানবাহন: নতুন ব্রীজ নির্মাণের উদ্যোগ

নুরুল আলম সাঈদ, নাইক্ষ্যংছড়ি:
নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে নাইক্ষ্যংছড়ির প্রধান সড়ক ও রামু-নাইক্ষ্যংছড়ির সড়কের ঝুঁকিপূর্ণ বেইল ব্রিজের ওপর দিয়ে নিয়মিত  চলাচল করছে অতিরিক্ত মাল-বোঝাই ট্রাক লরীসহ অন্যান্য ভারী যানবাহন।

বান্দরবান পার্বত্য জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি ও কক্সবাজার জেলার রামু উপজেলার সংযোগ সড়কে নদী,খাল,পাহাড় ঝিরির উপর নির্মিত আছে  ১৪টি ছোট – বড় লোহার তৈরি বেইল ব্রিজ ও ১১টি কংক্রিট এবং সিমেন্টের  ঢালাই করা মান্দাতা আমলের গাডার্র  ব্রিজ ও কার্লভাট। বর্তমানে নাইক্ষ্যংছড়ি প্রবেশ মূখের জারুলিয়া ছড়ির মহৈষকূম এলাকায় তথা বিজিবি- পুলিশ চেক পোষ্ট সংলগ্ন এই বেইলি ব্রিজসহ নাইক্ষ্যংছড়ি বিজিবি ব্যাটালিয়নস্থ বেইলি ব্রিজ,কাওয়ারকূপএলাকার বেইলি ব্রিজ,বাকঁখালী ফরেস্ট অফিসস্থ বেইলি ব্রিজ ও গর্জনিয়া বাজারের বেইলি ব্রিজ এবং নাইক্ষ্যংছড়ি-চাকঢালা সড়কের ফরেস্ট অফিসস্থ বেইলি ব্রিজ,ছালামী পাড়ার বেইলি ব্রিজ, চাকঢালা বাজার প্রবেশ মূখে অবস্থিত বেইলি ব্রিজসহ অন্যান্য ব্রিজ,কার্লভাট গুলি চরম ঝুকিঁপূর্ণ হয়ে পড়েছে। অধিকাংশ বেইলি ব্রিজের পাটাতন উঠে গেছে । ব্রিজে গাড়ী উঠার সাথে সাথে বিকট বিকট আওয়াজ সৃষ্টি হয়। বেইলি ব্রিজে গাড়ী সহকারে উঠার পর মনে হয় ,এই বুঝি ব্রিজ ভেঙ্গে পড়ে গেলাম । এছাড়া নাইক্ষ্যংছড়ি বডার্র গার্ড ব্যাটালিয়ন (বিজিবি)’র স্কুল সংলগ্ন গর্জনিয়া মূখী বেইলি ব্রিজটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এ কারণে সেতুর ওপর দিয়ে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ),নাইক্ষ্যংছড়ি ১১ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়ন (বিজিবি) মাল বোঝাই যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। কিন্তু ওই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে সেতুর ওপর দিয়ে অতিরিক্ত মাল বোঝাই যানবাহন চলছে। এতে যে কোনো মুহূর্তে বড় ধরনের দুর্-র্ঘটনার আশঙ্কা করছেন স্থানীয় লোকজন।

সম্প্রতি সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ) বান্দরবান কাযার্লয়ের মাধ্যমে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ) ’র ঢাকা থেকে প্রকল্প পরির্দশন টিম নাইক্ষ্যংছড়ি-রামু সড়ক ও নাইক্ষ্যংছড়ি-চাকঢালা সড়কের ৯টি ঝুকিঁপূর্ণ বেইলি  ব্রিজ সহ বান্দরবান জেলার ৭৭টি ঝুকিঁপূর্ণ বেইলি  ব্রিজ গুলি পরিদশর্ন করেন। পরিদর্শনের পর নাইক্ষ্যংছড়ি – গর্জনিয়া সড়কের বিজিবি ক্যাম্পস্থ বেইল ব্রিজ এর সংস্কার কার্যক্রম শুরু হয়েছে । পরিদর্শন টিম ৭৭টি ঝুকিঁপূর্ণ স্টিল ব্রিজের স্থানে নতুন ও আধুনিক গাডার্র ব্রিজ নিমার্ণএর জন্য প্রতিবেদন প্রেরণ করেন বলে জানা যায় । খুব শীঘ্রই টেন্ডার আহবান করা হবে বলে জানায় ,সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ) ।

নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলাটি সীমান্তবর্তী হওয়াতে প্রায় সময় এই সড়ক দিয়ে বিজিবি-সেনা বাহিনীসহ সীমান্তরক্ষী বাহিনী বড়-বড় যুদ্ধ সামগ্রীসহ বড় যান বাহন নিয়ে সীমান্তে যাতায়াত করে । এছাড়া নাইক্ষ্যংছড়ি দিয়ে কাঠবাহী ট্রাকসহ বিভিন্ন মালবাহী বড় ট্রাক এই সড়ক দিয়ে নিয়মিত চলাচল করে । এই সড়কটি এত গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার পরও সরকার এই সড়কের রাস্তা ,ব্রিজ-সেতু গুলি নিমার্ণ বা সংস্বকারে উদাসীন কেন সচেতন মহলের প্রশ্ন ।
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ) কক্সবাজার’র নিবার্হী প্রকৌশলী পিন্টু চাকমার কাছে জানতে চাওয়া হয়, নাইক্ষ্যংছড়ি-রামু সড়কের ঝুঁকিপূর্ণ বেইলি ব্রিজ গুলি সংস্কার কিংবা ওই স্থানে বেইলি ব্রিজ’র পরিবর্তে ঢালাই গাডার্র ব্রিজ নিমার্ণ করা হবে কিনা ?- এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,এই বিষয়ে বান্দরবান সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ) এর কাছে যোগাযোগ করেন ।  এই বিষয়ে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ) বান্দরবান’র নিবার্হী প্রকৌশলী মো : সজীব আহামেদ এর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন,-নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ওই সড়কে আমার অধীনস্থ (বান্দরবান জেলার) ৯টি বেইলি  ব্রিজ রয়েছে । ওই ৯টির মধ্যে দুইটি ব্রিজ সংস্কারের জন্য কাজ শুরুহয়েছে । এছাড়া গেল সপ্তাহে ঢাকা থেকে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের (সওজ) ’র একটি টিম পুরো বান্দরবান জেলার ঝুঁকিপূর্ণ বেইলি ব্রিজ গুলি পরিদর্শন করেছেন । নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার প্রধান সড়কের ৯টি ব্রিজ সহ পুরো বান্দরবান জেলার ৭৭টি ঝুঁকিপূর্ন বেইলি ব্রিজের পরিবর্তে ঢালাই করা গাডার্র ব্রিজ নিমার্ণের জন্য প্রকল্প পাঠানো হয়েছে । খুব তাড়াতাড়ি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে টেন্ডার আহবান করা হবে ।

এলাকার বাসিন্দা ছিহ্লা মারমা , স্কুল শিক্ষক রফিক উদ্দিন,ব্যবসায়ী ফরমান উল্লাহ’র সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রামু থেকে নাইক্ষ্যংছড়ি ও গর্জনিয়া-কচ্ছপিয়া এলাকায় প্রতিদিন হাজার খানেক হালকা যাত্রীবাহী ও মাল বোঝাই ট্রাক-ডাম্পার,জিপ বা চান্দের গাড়ী চলছে ।  ঝুকিপূর্ণ এই ব্রিজ-সেতুর মধ্যে ৪টিতে  টাঙিয়ে দেওয়া হয়েছে সতর্কতার সাইনবোর্ড। ওই সাইন বোর্ডে লেখা রয়েছে, ‘ঝুঁকিপূর্ণ সেতু, পাঁচ টনের অধিক যানবাহন চলাচল নিষেধ’। এছাড়া নাইক্ষ্যংছড়ি বিজিবির ব্যাটালিয়ন সংলগ্নটি ব্রিজ দিয়ে যে কোন মালবোঝাই যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে । স্থানীয় লোক জনের অভিযোগ, ওই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে এ সেতুদিয়ে ২৫ থেকে ৩০ টন মালবোঝাই ট্রাক পারাপার হচ্ছে। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ) তথ্য মতে, বান্দরবানে ১৯৮০ সালে অস্থায়ী ভাবে মোট ১৬৯ টি বেইলি ব্রিজ নিমার্ণ করা হয় । এর মধ্যে ৮৩টি আরসিসি ও ৭৭টি ঝুকিঁপূর্ণ ।এই গুলির মধ্যে ৪০টি  অধিক ও ১৪টি মারাত্নক ঝুকিঁপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে । এর মধ্যে নাইক্ষ্যংছড়ি -রামু সড়ক ও নাইক্ষ্যংছড়ি চাকঢালার ৭টি মারাত্নক ঝুকিপূর্ণ বলে তথ্য মতে জানা যায় । বান্দরবান সডক ও জনপথ বিভাগের নিবার্হী প্রকৌশলী মো : সজিব আহমেদ  জানায় ,-সওজ এর অর্থায়ানে গত এক বছরে প্রায় ১৪ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ৭টি বেইলি ব্রিজের সংস্কার করা হয়েছে । ৪০টি অতি ঝুকিঁপূর্ণ ব্রিজ ভেঙ্গে নতুন করে নিমার্ণ ও বাকি গুলি সংস্কারের প্রক্রিয়া  চলছে বলে জানিয়েছেন  তিনি । এছাড়া তিনি জানায়, মাটির পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও বেইলি সেতু গুলি গাডার্র ব্রিজ করার জন্য অর্থ বরাদ্দ চেয়ে মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে । অধিকাংশ সেতুর নাট -বল্টু পুরাতন হয়ে ভেঙ্গে যাওয়ায় এই ব্রিজে দুর্ঘটনা ঘটে । ব্রিজ গুলি বেশি পুরানো হয়ে গেছে , ভার বহনের ক্ষমতা নেই ।  অধিকাংশ ব্রিজের পাটাতন ভেঙ্গে গেছে আবার কোথাও পাটাতন ,নাট ,বল্টুও নেই ।
সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, সেতু দিয়ে ইজিবাইক, যাত্রীবাহী বাস, মালবোঝাই ট্রাক, লরি, মাইক্রো বাসসহ বিভিন্ন যানবাহন চলাচল করছে। এ সময় ট্রাক চালক নুরুল হাকিম বলেন, -নাইক্ষ্যংছড়ি-রামু সড়কে ঝুকিঁপূর্ণ ব্রিজ দিয়ে ঝুকি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে । এছাড়া নাইক্ষ্যংছড়ি বিজিবি’র ব্যাটালিয়ন সংলগ্ন  বেইলি ব্রিজ দিয়ে বিজিবি পারাপার করতে দেয় না ।

এলাকার বাসিন্দা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো : জাকারিয়া (৩৫) বলেন, বেইলি ব্রিজটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। ভারী যানবাহন উঠলে দুলতে থাকে। সেতু বিভাগ ও বিজিবি  ভারী যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দিলেও কেউ সেটা মানছেন না। এই ব্রিজ দিয়ে বিজিবির চোখকে ফাকিঁ দিয়ে  ১০ চাকার ট্রাক ও মালামাল নিয়ে যায়। সেতু বিভাগ সতর্ক বার্তা দিয়ে তাদের দায় শেষ করেছে। এই ব্রিজটিতে ট্রাক পড়ে মানুষ নিহতসহ একাধিক বার দুর্ঘটনা ঘটেছে । এছাড়া মহৈষকূম এলাকার বেইলি ব্রিজ,বাকখালী ফরেস্ট অফিস সংলগ্ন কালভার্ট,নাইক্ষ্যংছড়ির জারুলিয়াছড়ির বেইলি ব্রিজ,হাইটুপির ২টি কালভাট ও একটি সেতু,গর্জনিয়া বাজার সংলগ্ন বেইলি ব্রিজ,ফাক্রিকাটার কালভার্টসহ প্রায় ছোট-বড় ১৪টি ব্রিজ,কালভার্ট চরম ঝুকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে । এই সব ব্রিজ,কালভাটে পর্যটক,পিকনিক,বিয়ের গাড়ী,কাঠ বোঝাই,মালবোঝাই,যাত্রীবাহী একাধিক যানবাহন দূর্ঘটনায় পততি হয় । ওই দূর্ঘটনায় বিগত ১২ বছরে প্রায় শতাধিক পুরুষ-মহিলা নিহত ও তিন শতাধিক নারী-পুরুষ আহত হয়েছে । অর্ধ শতাধিক ট্রাক,জিপ ,সিএনজি গাড়ী ব্রিজ থেকে দর্ূঘটনায় পতিত হয়ে নদীতে পড়ে যায় । এখনোও সম্প্রতি দূর্ঘটনায় পতিত হওয়া একটি বড় ট্রাক নাইক্ষ্যংছড়ি থানায় ও একটি ট্রাক রামুর গর্জনিয়াপুলিশ ফাড়ীঁর হেফাজতে রয়েছে ।  কক্সবাজার জেলার রামু উপজেলার ও উখিয়া উপজেলার মধ্যবর্তী স্থানে নাইক্ষ্যংছড়ির প্রধান সড়কের এই ঝুকিঁপূর্ণ ব্রিজ গুলির অবস্থান হওয়াতে দুই জেলার সীমানা জটিলতা থাকার কারনে এই ব্রিজ গুলি সংস্কার বা নতুন করে ব্রিজ নিমার্ণ করা হচ্ছে না বলে সচেতন মহলের অভিমত । এছাড়া নাইক্ষ্যংছড়ি বিজিবি ব্যাটালিয়নস্থ বেইলি ব্রিজ এর অর্ধেক অংশ বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার এবং বাকি অর্ধেক অংশ কক্সবাজার জেলার রামু উপজেলায় হওয়াতে সীমানা সংক্রান্ত জটিলতার কারনে ব্রিজটি নতুন করে নিমার্ণ হচ্ছে না বলে একাধিক সূত্র জানায় ।

নাইক্ষ্যংছড়ির ট্রাক,জিপসহ মোটর পরিবহন চালক সমিতির সভাপতি দিল মোহাম্মদ বলেন, নাইক্ষ্যংছড়ি-রামু সড়কের ব্রিজ-কালভাট গুলি দীর্ঘ দিন ধরে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। এর মধ্যেই যানবাহন চলাচল করছে। এই ঝুকিপূর্ণ ব্রিজ-সেতু-কালভাট গুলি সংস্কারের ব্যাপারে আমরা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জানিয়েছি। কিন্তু সংস্কার হচ্ছে না। বড় কোনো দুর্ঘটনা এড়াতে ওই ব্রিজ-কালভাট গুলি সংস্কার বা নতুন ব্রিজ র্নির্মাণ জরুরি।

ভয়েস/আআ

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION