সোমবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৫, ১২:৪১ অপরাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

উপদেশ বিষয়ে সতর্কতা

মাওলানা মুস্তাকিম বিল্লাহ:

উপদেশ অধিকাংশ ক্ষেত্রে ভালো, তবে কখনো কখনো তা বিরক্তিকর মনে হতে পারে, এমনকি তা শ্রোতার মন খারাপের কারণও হয়ে ওঠে। হতে পারে আপনি কাছের কাউকে উপদেশ দিচ্ছেন, কারণ আপনার মনে হচ্ছে; এমন কিছু ঘটছে যা ভুল এবং এর বিরুদ্ধে কিছু বলা কর্তব্য। যদি আপনার উদ্দেশে অহমিকা না থাকে, সত্যিই মানুষটিকে সাহায্য করার প্রয়াস থাকে; তবে সতর্কতার সঙ্গে জেনে নিন উপদেশের বিষয়ে ইসলামি শিষ্টাচারগুলো-

বিনীতভাবে বলা

পরামর্শের উদ্দেশ্য হওয়া উচিত, ওই ব্যক্তির প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ। বেশির ভাগ মুসলমানই নিজের দায়িত্ব মনে করে উপদেশ দেয়। কিন্তু কথা বলার সময় যখন আবেগ, দয়া কিংবা সহানুভূতির মতো ব্যাপারগুলো পাশ কাটিয়ে যায়, তখন তা মানুষের অনুভূতিকে আহত করে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘(হে নবী!), আপনার পালনকর্তার দিকে আহ্বান করুন প্রজ্ঞা আর উত্তম উপদেশ দ্বারা। তাদের কাছে যুক্তি উপস্থাপন করুন সবচেয়ে বিনীত পন্থায়। নিশ্চয়ই আপনার পালনকর্তা ভালোভাবেই জানেন, কারা তার পথ থেকে বিচ্যুত হয়েছে আর কারা সঠিক পথেই রয়েছে।’ সুরা আন

নাহল : ১২৫

সুতরাং যখন কাউকে উপদেশ দেবেন, তখন এই অভ্যাসের অনুশীলন করুন। শান্তভাবে কথা বলুন, নম্র হোন। আপনার পরামর্শ গ্রহণ করা তার জন্য কেন গুরুত্বপূর্ণ, সেটা ব্যাখ্যা করুন। কখনোই তার অনুভূতিকে ছোট করবেন না, সে বোকা কিংবা আপনি তার চেয়ে বেশি জানেন এটা বোঝানোর চেষ্টা করবেন না। শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিনীত থাকুন।

বর্ণিত আয়াতে যে প্রজ্ঞা আর ভালো উপদেশের ব্যাপারে বলা হয়েছে, দুর্ভাগ্যক্রমে তা এ সময়ে মানুষের মধ্যে বিরল। বুদ্ধিমান আর অনেক জানে এমন মানুষ মানেই কিন্তু প্রজ্ঞাবান নয়। প্রজ্ঞা আসে সহানুভূতি, অভিজ্ঞতা আর মানবিকতার মধ্য দিয়ে। যাদের এই যোগ্যতা নেই মানুষকে উপদেশ দেওয়া তাদের মানায় না।

গোপনীয়তা বজায় রাখা

অনেক মুসলমানই এ জায়গাটিতে অস্বস্তিবোধ করবে। ক্ষেত্রবিশেষে দেখা যায়, অনেকেই অন্য অনেক লোকের সামনে একজনের নেওয়া কোনো সিদ্ধান্তের সমালোচনা করছে। এমন আচরণ অশোভনীয়, এটা গোনাহগার হওয়ার কারণ। ইসলাম কখনো কোনোভাবে ভিন্নরূপে হলেও এমন আচরণ সমর্থন করে না। ‘বিশ্বাসীরা তাদের ভাইয়ের দোষ গোপন রাখে, আর গোপনে তাদের উপদেশ দেয় আর পাপীরা তো মানুষের দোষ খুঁজে বেড়ায় আর লজ্জা দেয়।’ জামেউল হিকাম : ১/২৩৬

উপদেশ দেওয়ার ক্ষেত্রে পরামর্শ

সুন্দর এবং ভদ্রভাবে কথা উপস্থাপন করুন। যখন আপনি নিজেই হতাশ অথবা রাগান্বিত তখন কাউকে উপদেশ না দেওয়াই ভালো।

যাকে উপদেশ দিচ্ছেন, তার ব্যাপারে ধৈর্যশীল হোন। ধৈর্য এক্ষেত্রে একান্ত প্রয়োজনীয়। যাকে পরামর্শ দিচ্ছেন সে হয়তো একটা খারাপ সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, আর আপনি এর মধ্যে নতুন আরেকটি ব্যাপার নিয়ে এলেন; যা তার মনকে আরও ছোট করে দিতে পারে। অথবা হতে পারে, সে এই মুহূর্তে উপদেশ মেনে চলার জন্য প্রস্তুত নয়। গোপনীয়তা রক্ষা করুন এবং ব্যাপারটি নিয়ে অন্য কারও সঙ্গে আলোচনা করবেন না। এই বিষয়টি উল্লেখ না করলেও হতো, কিন্তু অনেক সময় দেখা যায় কোনো ব্যাপারই শেষ পর্যন্ত গোপন থাকে না। অনেক সময় অন্যের কাছে পরামর্শ চাইতে দ্বিধাবোধের অন্যতম কারণ হলো, আলোচনাটা অন্য কারও কাছে কোনোভাবে পৌঁছে যেতে পারে এই ভয়।

কোনো সমস্যার সমাধান দেওয়ার চেষ্টার আগে আপনার যুক্তিগুলো সরাসরি তুলে ধরুন। কখনো অনুমান নির্ভর কোনো কথা বলবেন না এবং যে বিষয়ে আপনার ধারণা নেই সে বিষয়ে উপদেশ দেবেন না।

সময় বুঝে কথা বলুন। সাধারণত দেখা যায়, কেউ যখন কাউকে কোনো উপদেশ দেয়, তখন বিষয়ের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়; এমন অনেক অপ্রয়োজনীয় কথা বলে। আমাদের উচিত, নিজের যুক্তিগুলোকে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্যভাবে তুলে ধরা।

যে ব্যাপারে উপদেশ দিচ্ছেন, তা আগে নিজে অনুশীলন করুন। এ ব্যাপারটি আবশ্যকীয় হওয়া সত্ত্বেও সবচেয়ে কম অনুসরণ করা হয়। যা আপনি নিজে পালন করেন না তা পালনের জন্য অন্যকে উপদেশ দেবেন না। পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তোমরা কীভাবে মানুষকে সৎকর্মের ব্যাপারে নির্দেশ দাও, আর নিজেদের ব্যাপারে ভুলে যাও। অথচ তোমরা তো কিতাব পাঠ করো। তবুও কি তোমরা চিন্তা করো না?’ সুরা আল বাকারা : ৪৪

উপদেশ গ্রহণের ব্যাপারে পরামর্শ

যদি উপদেশদাতা উপরিউক্ত নির্দেশনার অনুসরণে আন্তরিকভাবে উপদেশ প্রদান করে, তবে সত্যিকারের উপদেশ গ্রহণের ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো মনে রাখা প্রয়োজন

অহংকার ঝেড়ে ফেলা। যথাসম্ভব নম্র থাকার চেষ্টা করা। মনে রাখবেন, উপদেশ মানেই আক্রমণ নয়। মানুষটি আপনাকে যা বলছে সঠিকভাবে মনোযোগ দিয়ে শুনুন। নিজেকে আরও ভালোভাবে গড়ে তোলার ব্যাপারে প্রত্যয়ী হওয়া, কেউই নির্ভুল নয়। সবার জীবনেরই পৃথক ভ্রমণপথ এবং নিশ্চল হয়ে থাকাটা এক্ষেত্রে মঙ্গলজনক নয়। সবসময় নিজের উন্নতির জায়গাগুলো খুঁজতে হবে। একটি সুন্দর সূচনার জন্য কাছের মানুষগুলোর পরামর্শ শুনতে হবে।

সদয় হোন এবং প্রশংসা করতে শিখুন। যে আপনার ভালোর চেষ্টা করে, সাহায্য করে তাকে মূল্যায়ন করুন। একজন আসল বন্ধু হলো সেই, যে আপনার ভুলের ব্যাপারে সতর্ক করে, ওই ব্যক্তি নয়; যে আপনাকে সারাদিন ভুলের মধ্যে হেঁটে বেড়াতে দেখলেও এড়িয়ে যায়। উপদেশ গ্রহণের ব্যাপারে মনখোলা থাকুন। যে আপনাকে উপদেশ দিচ্ছে, তিনি এমন কোনো বিষয়ে কথা বলতে পারে; যে বিষয়ে আপনি ভাবেননি। সেটা আপনার মনে নতুন কোনো ভাবনার জন্মও দিতে পারে।

কারও উপদেশ গ্রহণ না করলেও তাকে ‘ধন্যবাদ’ বলুন। সব উপদেশ মেনে চলতে হবে এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই কিন্তু সবার সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণ সম্পর্ক বজায় রাখুন।

ভয়েস/আআ

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION