সোমবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৫, ০৩:০৩ পূর্বাহ্ন
মো. মিকাইল আহমেদ:
শীতকালটা মুমিন বান্দার ইবাদতের জন্য অনেক বড় নিয়ামতের ও ফযীলতের।। আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, ‘শীতকাল হচ্ছে মোমিনের বসন্তকাল।’ (মুসনাদে আহমাদ)।বায়হাকির এক বর্ণনায় রয়েছে, ‘শীতের রাত দীর্ঘ হওয়ায় মোমিন রাত্রিকালীন নফল নামাজ আদায় করতে পারে এবং দিন ছোটহ ওয়ায় রোজা রাখতে পারে।’ শীতকাল এলে হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলতেন, ‘হে শীতকাল! তোমাকে স্বাগত! শীতকালে বরকত নাজিল হয়; শীতকালে রাত দীর্ঘ হওয়ায় নামাজ আদায় করা যায় এবং দিন ছোট হওয়ায় রোজা রাখা যায়।’আমের ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু অালাইহি ওয়াসাল্লাম) ইরশাদ করেন, ‘শীত লগনিমত হচ্ছে শীতকালে রোজা রাখা।’ (তিরমিজি, হাদিস : ৭৯৫)
দিন ছোট থাকায় শীতকালে রোজা রাখতে কষ্ট কিছুটা কম হয়।কারো যদি কাজারোজা থাকে তাহলে শীতকালে সেগুলো আদায় করেনে ওয়াতার জন্য অনেকটা সহজ হয়ে যায়।এটি একটি সুবর্ণ সময় বেশি বেশি নফল রোজা রাখারও।মহানবী (সাল্লাল্লাহু অালাইহি ওয়াসাল্লাম) ইরশাদ করেন, ‘বিশুদ্ধ নিয়তে যে ব্যক্তি একদিন রোজা রাখল, মহান আল্লাহ প্রতি দান স্বরূপ জাহান্নাম এবং ওই ব্যক্তির মাঝখানে ৭০বছরের দূরত্ব তৈরি করে দেবেন।’ (বুখারি, হাদিস : ২৮৪০)
রাত বেশ লম্বা হয় শীতকালে।মুমিন ব্যাক্তি শরীরের চাহিদা মতো ঘুমিয়ে শেষ রাতে উঠে তাহাজ্জুদ পড়তে পারেন।মহান আল্লাহ তাঅালা ঈমানদারদের গুণাবলি সম্পর্কে কোরঅানুলকারীমের এক অায়াতে বলেন, ‘তাদের পার্শ্ব শয্যা থেকে আলাদা থাকে।তারা তাদেররকে ডাকে ভয়েও আশায় এবং আমিতাদের যে রিজিক দিয়েছি, তা থেকে ব্যয় করে।’ (সুরা : সাজদাহ, আয়াত : ১৬)
শীতকালে ফসলের জমিতে ছড়িয়ে থাকে হরেক রকমের সতেজ শাকসবজি।শীতের শিশিরে শাকসবজি পাওয়া যায় একদম তরতাজা।শাক সবজি যত সতেজ খাওয়া যায় তার পুষ্টিগুণ পাওয়া যায় ততবেশি।শীতকালে ফসলের ক্ষেতে শাকসবজিতে পোকা মাকড়ের উপদ্রব অনেক কম থাকায় বছরের অন্যান্য সময়ের তুলনায় বিষাক্ত কীটনাশক ছিটানো হয় কম তাই শীতকালের সবজিতে স্বাস্থ্যঝুঁকি ও কম থাকে।এসব কিছুই আল্লাহ তাআলার অশেষ দান তার সৃষ্টি কুলের জন্য।এ প্রসঙ্গে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন, ‘মানুষ তার খাদ্যের প্রতিলক্ষ করুক। আমিতো অঝোরধারায় বৃষ্টি বর্ষণ করেছি। অতঃ পরমাটিকে বিদীর্ণ করেছি। আর তাতে উৎপন্ন করেছি শস্যাদি, আঙুর, শাকসবজি, জলপাই, খেজুর, বহুবৃক্ষ বিশিষ্ট বাগান, ফল ফলাদিও ঘাস। এসব তোমাদেরও তোমাদের পালিত পশু কুলেরজীবনধারণে রজন্য।’ (সুরা : আবাসা, আয়াত : ২৪-৩২)
শীতকালের একটি অন্যত মফজিলত পূর্ণইবাদাত হলো শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানো।ষড়ঋতুর বাংলাদেশে বছর ঘুরে আসে শীত ও শৈত্যপ্রবাহ।হাড়-কাঁপানো শীতে দরিদ্র ও ছিন্নমূল মানুষ একেবারে নাকাল হয়ে যায়।শীতার্ত ও বিপন্ন ছিন্নমূল এসব মানুষের পাশে দাঁড়াতে সবসময় উৎসাহ দিয়েছে ইসলাম। মহান আল্লাহ তাঅালা কোরঅানে বলেন, ‘তারা আল্লাহর প্রেমে উজ্জীবিত হয়ে দরিদ্র, এতিম ও বন্দিদের খাদ্য দান করে। ’ (সুরা: দাহর, আয়াত : ৮)
প্রচন্ড শীতে নাকাল এসব দরিদ্র মানুষ একটু উষ্ণতার পরশ খোঁজে। একে বারে জবুথবুহয়ে খড়কুটা জ্বালিয়ে একটু তাপ পেতে চায় তারা।অামাদের সকলের ওইসব অসহায়, দরিদ্র ও ছিন্নমূল মানুষের পাশে সাধ্যমতো দাঁড়ানো উচিত।রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহুঅালাইহি ওয়াসাল্লাম) হাদিসে ইরশাদ করেছেন, যে মুমিন অন্য বিবস্ত্র মুমিনকে কাপড় পরিয়ে দিল, মহান আল্লাহ ওই ব্যক্তিকে জান্নাতের সবুজ কাপড় পরিয়ে দেবেন। (তিরমিজি, হাদিস: ২৪৪৯)
হজরত মুআজ ইবনে জাবাল (রা.)–এর মৃত্যুর সময় তাঁকে তাঁর কান্নার কারণ জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি মৃত্যুর ভয়ে কাঁদছিনা; বরং (রোজার কারণে) গ্রীষ্মের দুপুরের তৃষ্ণা, শীতের রাতের নফল নামাজ এবং ইলমের আসর গুলোতে হাজির হয়ে আলেমদের সোহবত হারানোর জন্য আমি কাঁদছি।’
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, ‘নবী করিম (সাল্লাল্লাহু অালাইহি ওয়াসাল্লাম) এরশাদ করেছেন: যদি কোনো তীব্র ঠান্ডার দিন আল্লাহর কোনো বান্দা বলে, “লাইলাহাইল্লাল্লাহু (আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই), আজকের দিনটি কতইনা শীতল! হেআল্লাহ! জাহান্নামের জামহারি থেকে আমাকে মুক্তি দিন।” তখন আল্লাহ জাহান্নামকে বলেন, ‘নিশ্চয়ই আমার এক বান্দা আমার কাছে তোমার জামহারি থেকে আশ্রয় চেয়েছে।আমি তোমাকে সাক্ষী রেখে বলছি, আমি তাকে আশ্রয় দিলাম।’
সাহাবায়ে কিরাম জিজ্ঞেস করলেন, জামহারিকী? নবীজি (সাল্লাল্লাহু অালাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, ‘জামহারি এমন একটি ঘর যাতে অবিশ্বাসী, অকৃতজ্ঞদের নিক্ষেপ করা হবে এবং এর ভেতরে তীব্র ঠান্ডার কারণে তারা বিবর্ণ হয়ে যাবে।’ (আমালুলইয়াওমওয়াললাইল: ৩০৬)।
শীতকালে সঠিক ভাবে অজু করা একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ আমল।রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু অালাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘তিনটি আমল পাপ মোচন করে—সংকটকালীন দান, গ্রীষ্মের রোজা ও শীতের অজু।’ (আদদোয়ালিততাবরানি: ১৪১৪)। রাসুলে আকরাম সাল্লাল্লাহু অালাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন, ‘আমি কি তোমাদের জানাবনা? কি সে তোমাদের পাপমোচন হবে! এবং মর্যাদা বৃদ্ধি পাবে!’ সাহাবায়ে কিরাম বললেন, ‘অবশ্যই! হে আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহুঅালাইহিওয়াসাল্লাম)!’ তিনি বললেন, ‘শীতের কষ্ট সত্ত্বেও ঠিক ভাবে অজুকরা।’ (মুসলিম: ২৫১; তাফসিরেকুরতুবি)।
শীতকালে তীব্র শীতে পানি ঠান্ডা হওয়ায় অজু ও গোসল করা অনেকের জন্য কষ্টদায়ক হয়ে যায়। ব্যাপারে সচেত নহওয়া। পানি যতই ঠান্ডা হোক অজু-গোসল ঠিক মতো আদায় না হলে নামাজ শুদ্ধ হবে না তাই এব্যপারে বিশেষভাবে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।অাবার শীতের মৌসুমে গরম পানি দিয়ে অজু করলে ও বান্দার অামলনামায় সওয়াবের কমতি হবেনা।কষ্টদায়ক হলেও তীব্র শীতে অজুর ফযীলত সম্পর্কে মহানবী (সাল্লাল্লাহু অালাইহি ওয়াসাল্লাম) ইরশাদক রেছেন, আমি কী তোমাদের এমন কিছু শিখিয়ে দেবনা, যার কারণে আল্লাহ পাপ মোচন করবেন এবং জান্নাতে তোমাদের মর্যাদা বৃদ্ধি করবেন? সাহাবারা বলেন, হ্যাঁ, হে আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু অালাইহি ওয়াসাল্লাম)! মহানবী (সাল্লাল্লাহু অালাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, ওই কাজ গুলো হলো মননা চাইলেও ভালো ভাবে অজু করা, অধিক পদক্ষেপে মসজিদে যাওয়া এবং এক নামাজের পর আরেক নামাজের জন্য অপেক্ষা করা। (মুসলিম, হাদিস: ২৫১) অাল্লাহ সুবহান ওয়ালা তাঅালা অামাদের সকলকে বেশি বেশি নেকঅামল করার তৌফিক দান করুক।আমিন।
লেখক: মো.মিকাইল আহমেদ, শিক্ষার্থী, আইসিএমবি ,ঢাকা।
ইমেইল: mekailahmed117@gmail.com
ভয়েস/আআ