নগদ একাউন্টে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকা তুলতে গিয়ে বেকায়দায় পড়েছেন অভিভাবক মহল। গত কয়েকদিন ধরে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কক্সবাজার প্রধান পোস্ট অফিসের সামনে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।পোস্ট অফিসের নগদ বুথে এক কম্পিউটার ও একজন লোকবল কোনোভাবেই শতশত ভোক্তভোগী অভিভাবকের সমস্যার সমাধান করতে পারছেন না। ফলে ভুক্তভোগীরা সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত লাইনে দাঁড়িয়েও একদিনে সমস্যার সমাধান করতে পারছেন না।
পোস্ট অফিস সূত্রে জানা যায়, টেকনিক্যাল সমস্যা সমাধানের জন্য কক্সবাজার প্রধান পোস্ট অফিসে একটি বুথ খুলেছে নগদ। এখানে একটি কম্পিউটার এবং একজন লোক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এবার উপবৃত্তির টাকা পাঠানোর সময় নগদ প্রাইমারী স্কুলের অধিকাংশ অভিভাবকের ফোনে পিন নাম্বার ছাড়াই টাকা উত্তোলনের এসএমএস দিয়েছে। ফলে পিন নাম্বার জানতে আসা মানুষদের একটি কম্পিউটার দিয়ে একজন লোককে সামাল দিতে বেগ পেতে হচ্ছে।
গতকাল বুধবার বিকেলে ৩টার দিকে কক্সবাজার হেড পোস্ট অফিসে গিয়ে দেখা যায়, গেইট বন্ধ রেখে দরজার গ্রীলের ছিদ্র থেকে সার্ভিস দেয়া হচ্ছে। অভিভাবকরা ঘন্টার পর ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়ে আইডি কার্ডের ফটোকপিসহ মোবাইল ডুকিয়ে দিয়ে পিন নম্বর নিচ্ছেন। বাইরে রাস্তায় শতশত অভিভাবক ও শিক্ষার্থী বৃষ্টির মধ্যে দাঁড়িয়ে আছেন। উপবৃত্তি নেওয়া ছেলেকে সাথে নিয়ে খুরুশকুল হিন্দু পাড়া থেকে আসা শেফালী জানান, তিনি সোমবার, মঙ্গলবার এবং বুধবার এই তিনদিন এসে তাদের সাথে দেখা করার সুযোগ পেয়েছেন। কিন্তু তারা বলেছে তার পিন নাম্বার ভুল। কিন্তু এই নাম্বারে তিনি এর আগে টাকা তুলেছেন।
পিএমখালী থেকে আসা ছনখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক ফিরোজা আক্তার নামের এক মহিলা দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার ধকল সইতে না পেরে লাইনের মধ্যেই বেহুঁশ হয়ে পড়ে যায়।পরে খবর পেয়ে মহিলার স্বামী সদর হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন বলে জানা গেছে। পরপর ৪দিন লাইনে দাঁড়িয়ে পিন নম্বর নিলেও নগদ একাউন্টে টাকা না পেয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন
আওয়ামীলীগ নেতা মোহাম্মদ হোসেন। জসিম উদ্দিন নামে আরেক অভিভাবক বলেন, ঝড়বৃষ্টি উপেক্ষা করে তিন দিন লাইনে দাঁড়িয়ে পিন নাম্বার নেওয়ার পরেও তার নগদ একাউন্টে টাকা পাননি। তার মোবাইল নাম্বার ভূল করে পাঠানোর কারণে গত বারের উপবৃত্তির টাকা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।সে গরীব মানুষ। ভ্যান গাড়ি চালিয়ে সংসার চালান। ছনখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা আশ্বাস দিয়েছিলেন, নাম্বার ঠিক করে দিবেন। কিন্তু এবারও তার দুই মেয়ের উপবৃত্তির টাকা না পায়নি। পত্রিকায় অফিসে এসে সাংবাদিকদের সহযোগিতা চাইলেন তিনি। এমনকি, এর কোন সুরাহা না হলে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল হামিদ ও সহকারী শিক্ষক কায়সারের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট দফতরে অভিযোগ দিবেন বলে জানিয়েছেন।
মনজুরুল আলম নামের এক অভিভাবক জানান, তার মোবাইলে নগদ যে এসএমএস দিয়েছে তাতে পিনকোড দেয়নি। তিনি মঙ্গলবার সারাদিন দাঁড়িয়ে কোনো সুযোগ পাননি। বুধবার সকাল থেকে দাঁড়িয়ে বিকেলে সুযোগ পেয়ে তাদের সাথে দেখা করেছেন। তারা সমস্যা সমাধান করে দিতে পারেননি। তাদের সাথে বেশি কথাই বলা যায়না।ভোগান্তির শিকার অনেক অভিভাবক অভিযোগ করেন, শিক্ষার্থীদের নগদের পিন নম্বারে কাজ না করার কারণে স্কুল শিক্ষকরা তাদেরকে পোস্ট অফিসে ‘নগদ’ শাখায় যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন। কয়েক শত অভিভাবক পোস্ট অফিসে নগদ শাখায় দিনভর দাঁড়িয়ে থেকেও পিন নাম্বারটি ঠিক করতে পারছেন না ।
গত কয়েক বছর ধরে মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস শিওর ক্যাশের মাধ্যমে উপবৃত্তির টাকা বিতরণ করত সরকার। তাতে প্রতি হাজার টাকার উপবৃত্তি বিতরণে সাড়ে ২১ টাকা সার্ভিস চার্জ এবং ক্যাশ-আউট চার্জ লাগত।চলতি বছরের শুরু থেকে নগদ মোবাইলে টাকা পাঠানো শুরু করে। নগদে মূল টাকার সঙ্গে ক্যাশ-আউটের খরচ পেয়ে যাওয়ায় সুবিধাভোগীদেরও বাড়তি কোনো অর্থ খরচ করতে হয় না। সহজেই বাসার পাশের এজেন্টদের কাছ থেকে টাকা তুলতে পারবেন। কিন্তু প্রতি কিস্তির টাকা তুলতে নানা সমস্যায় পড়তে হচ্ছে অভিভাবকদের।
পোস্ট মাস্টার গোপাল কৃষ্ণ দে জানান, নগদ থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকা তাদের অভিভাবকদের মোবাইল নাম্বারে পাঠালেও পিন নাম্বার দেওয়া হয়নি, তাই মুলত এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া, নগদের যে বুথ করা হয়েছে, সেখানে মাত্র একজন জনবল। তাই একজনের পক্ষে এত মানুষকে সার্ভিস দিতে সময় লাগছে। এখানে তার কোন কর্তৃত্ব নেই, ডিসি কোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী নগদ এর লোকদেরকে একটি নির্দিষ্ট স্থানে বসে কাজ করতে সুযোগ করে দিয়েছেন মাত্র। তবে এখানে কোন অনিয়ম দুর্নীতি হলে বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন।
উল্লেখ্য, শিক্ষার্থীদের ডিজিটাল দক্ষতা বাড়াতে এবং উপবৃত্তির টাকা উত্তোলনে ভোগান্তি দূর করতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রায় দেড় কোটি শিক্ষার্থীর ডাক বিভাগের ডিজিটাল লেনদেন সেবা নগদে উপবৃত্তির টাকা প্রদানের উদ্যোগ নেয় সরকার। গত বছর ১৩ ডিসেম্বর সচিবালয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের মাধ্যমে উপবৃত্তি বিতরণের লক্ষ্যে প্রাথমিক অধিদপ্তর ও নগদের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
ভয়েস/আআ