সোমবার, ৩০ Jun ২০২৫, ০৬:৫৪ অপরাহ্ন
আবদুল আজিজ:
আবাসস্থল ধ্বংস, করিডোর বন্ধসহ নানা কারণে কক্সবাজার ও পার্বত্য বনাঞ্চলে সংকটাপন্ন এশিয়ান বন্যহাতি। এজন্য হাতির আবাসস্থল ফিরিয়ে আনার তাগিদ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
বিশ্ব হাতি দিবস উপলক্ষ্যে আজ বৃহস্পতিবার বিকালে কক্সবাজারের একটি তারকামানের হোটেলে এক সেমিনারে এ তাগিদ দেয়া হয়।
‘আইইউসিএন’ ‘ইউএনএইচসিআর’ সেমিনারে কক্সবাজারে বিপন্ন প্রাণির সংরক্ষণ এবং মানব-হাতি সংঘর্ষ প্রশমনের মূল বিষয়গুলি তুলে ধরা হয়।
সেমিনারে বলা হয়, বাংলাদেশ বন বিভাগের সহায়তায়, আইইউসিএন হাতির জনসংখ্যা জরিপ, আবাসিক ও পরিযায়ী হাতিদের চলাচলের পথ এবং করিডোরের ম্যাপিং পরিচালনা করেছিল। ২০১৬ সালে পরিচালিত সর্বশেষ হাতির জনসংখ্যা জরিপ অনুসারে, যে প্রজাতিটি একসময় বাংলাদেশে ব্যাপক ছিল, এখন বেশিরভাগই দেশের দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলে, প্রধানত পার্বত্য চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজারে সীমাবদ্ধ।
কক্সবাজার অঞ্চলেও হাতির আবাসস্থল খণ্ডিতকরণ, বন উজাড়, এবং বিভিন্ন অবকাঠামোগত উন্নয়নের কারণে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত হয়েছে এই প্রাণী। ২০১৭ সালে শরণার্থীদের আগমনের পর থেকে বনভূমি ধ্বংসের কারণে হাতির আবাসস্থল এবং আন্তঃসীমান্ত চলাচল ও অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে বন্যহাতি। আবাসস্থলের ক্রমশ অবক্ষয় এবং চলাচলে বাধার কারণে রোহিঙ্গা শিবির এলাকায় মানব-হাতি সংঘর্ষ শুরু হয়। ২০১৭ সালের আগস্ট থেকে ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত, মানব-হাতি সংঘর্ষে ১২ জন রোহিঙ্গা প্রাণ হারিয়েছে। মানব-হাতি সংঘর্ষ প্রশমিত করার জন্য, আইইউসিএন বাংলাদেশ, ইউএনএইচসিআর-এর সাথে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এবং এর আশেপাশে ‘জীব বৈচিত্র্য সুরক্ষার জন্য মানবিক-সংরক্ষণ কর্ম’ নামে একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এই হস্তক্ষেপের ফলে, শরণার্থী শিবিরের আশেপাশে হাতির অনুপ্রবেশের প্রায় ৩৭৫ টি ঘটনা সত্ত্বেও কোনও হাতি বা মানুষ হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। তাছাড়া, ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর থেকে, হোস্ট এলিফ্যান্ট রেসপন্স টিমের সদস্যরা ২১১ টি মানব-হাতি সংঘর্ষ প্রশমিত করেছে।
সেমিনারে বাংলাদেশে এই প্রাণীদের অবস্থা, বন্টন, আবাসস্থলের অবস্থা এবং বিদ্যমান হুমকির বিষয়ে আলোচনা করা হয় যাতে এ অঞ্চলের অবশিষ্ট এশিয়ান হাতিদের রক্ষায় সংরক্ষণ ব্যবস্থা গ্রহণের তাগিদ দেওয়া হয়।
সেমিনার প্রধান অতিথি ছিলেন শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কার্যালয়ের (আরআরআরসি) অতিরিক্ত কমিশনার মো: সামসুদৌজা নয়ন, বিশেষ অতিথি ছিলেন, কক্সবাজার দক্ষিন বনবিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা মোঃ সারওয়ার আলম, আইইউসিএন বাংলাদেশের কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ রাকিবুল আামিন ‘ইউএনএইচসিআর’,কক্সবাজার সাব-অফিস (ওআইসি) লুয়ান ওসমানী। সেমিনারে সরকারি দপ্তর, কক্সবাজারে কর্মরত মানবিক সংস্থা এবং পরিবেশ বিষয়ক সংস্থার প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
উল্লেখ্য, এশীয় ও আফ্রিকান হাতির গুরুত্ব ও সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি ও হাতিদের সাহায্য করার জন্য বিশ্বকে একত্রিত করার লক্ষ্যে প্রতি বছর ১২ আগস্ট পালিত হয় বিশ্ব হাতি দিবস।
ভয়েস/আআ