সোমবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৫, ০৪:৩৫ অপরাহ্ন
মোশাররফ হোসেন পাটওয়ারী
মানুষের স্বাধীনতা সীমাহীন নয়। মানুষ নিজের স্বাধীনতা বা পছন্দ অনুযায়ী পৃথিবীতে আসেনি। যখন তার অস্তিত্ব ছিল না, তখন সে ইচ্ছানুসারে অস্তিত্ব সৃষ্টি করতে পারেনি। আবার মৃত্যুর সময়টাকেও মানুষ স্বাধীনভাবে পিছিয়েও দিতে পারবে না। তাই জন্ম ও মৃত্যুর মধ্যবর্তী সময়টুকুতে যে যা ইচ্ছা, তা করতে পারে না। মন চাহে জিন্দেগি পালন করা বা স্বেচ্ছাচারিতার নাম স্বাধীনতা নয়। কোনো স্বাধীন দেশের সরকার তা মেনে নেবে না। আল্লাহপাক মানুষের স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি, চিন্তাশক্তি, কর্মশক্তি, স্বাদ গ্রহণের ও স্বাদ পূরণের স্বাধীনতাও দিয়েছেন, তবে সে স্বাধীনতা সীমাহীন নয়। ‘আল্লাহর নির্ধারিত সীমাগুলোকে রক্ষা করতে হবে।’ সুরা তাওবা : ১১২
আমরা জানি, প্রতিটি মানুষের ভেতরে দুটো সত্তা রয়েছে। একটি পশুসত্তা, অন্যটি ফেরেশতা প্রকৃতি। ভালো মানুষ পশুসত্তা মিটিয়ে ফেরেশতাবৃত্তি ফুটিয়ে তোলার জন্যই নিরন্তর সাধনা করে। তখনই মানুষের মধ্যে প্রকাশ পায় পবিত্র সিফাত তথা দয়া, মায়া, মানবপ্রেম, মমত্ববোধ, সততা, সত্যবাদিতা, ন্যায়পরায়ণতা ইত্যাদি গুণগুলো। মানুষের চারিত্রিক ও নৈতিক উন্নতি ঘটে। পশুবৃত্তির দোষ হিংসা-বিদ্বেষ, ঈর্ষা, কাম, ক্রোধ, লোভ-মোহ, ইত্যাদি দূরীভূত হয়। মানুষ হয় বড় মনের প্রকৃত ভালো মানুষ। আল্লাহপাক তাদের ওপর সন্তুষ্ট হয়ে যান। রোজ হাশরে আল্লাহতায়ালা তাদের বিজয় ঘোষণা করেন।’
এজন্য ভালো মানুষগুলোকে সরব ও সুসংগঠিত হতে হবে। নির্বাচনে সুষ্ঠুভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগ করে সৎ, কর্মঠ, দেশপ্রেমিক, চরিত্রবান ও ভালো নেতা নির্বাচন করতে হবে। হিংসা-বিদ্বেষ, দলাদলি ও নানা ফেরকায় বিভক্ত হয়ে দুর্বল ও সাহসহারা হওয়া যাবে না। তাহলে আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে রোজ হাশরে। ভালো মানুষের নীরবতায় সমাজে, দেশে, বিদেশে অস্বস্তি ও অশান্তি বিরাজ করে। এ অবস্থা পৃথিবীবাসীর জন্য সুখকর নয়।
ইসলাম বলে, নিজে ভালো মানুষ হয়ে নীরবে ইবাদত করার পাশাপাশি ভালো কর্মের দৃষ্টান্ত স্থাপন করা জরুরি, যা দেখে অন্যরা উদ্বুদ্ধ হবে। অন্যায়, জুলুম, দুর্নীতি ও মন্দকর্মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে হবে, নিজেরা সুসংগঠিত হয়ে। জোরালো বয়ানে বা বক্তৃতায়, প্রাণবন্ত লেখায়, সুশিক্ষায়, হেকমতে, উত্তম ব্যবহার দ্বারা ভালো মানুষগুলোকে ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী করা ভালো মানুষেরই দায়িত্ব। ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে আল্লাহর রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরো। সাবধান! তোমরা পরস্পরে বিচ্ছিন্ন হয়ো না।’ সুরা আলে ইমরান : ১০৩
রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর দাওয়াতি মিশনের মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল১. ইমানে-আমলে, জ্ঞানে-গুণে সমৃদ্ধ সৎ ও ভালো মানুষ তৈরি করা, ২. ভালো মানুষগুলোকে সুসংগঠিত ও ঐক্যবদ্ধ করে মহাশক্তিতে পরিণত করা, যাতে শয়তানি শক্তিকে পরাজিত করা সম্ভব হয়, ৩. কোরআন ও সুন্নাহর আলোকে কল্যাণরাষ্ট্র গঠন করে দুনিয়ার সুখ-শান্তি ও পরকালের মুক্তির ব্যবস্থা করা।
ভয়েস/আআ