সোমবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৫, ০২:৪৪ অপরাহ্ন
মুহাম্মদ ইকরামুল ইসলাম:
আল্লাহতায়ালা দুনিয়াতে যত নবী ও রাসুল পাঠিয়েছেন, তাদের সবার দায়িত্ব ও মিশন ছিল তাওহিদ ও রেসালাতের দিকে মানবজাতিকে আহ্বান করা। নবী-রাসুলের আগমনধারা হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মাধ্যমে সমাপ্তি ঘটলেও তাদের দায়িত্বভার ও দাওয়াতি মিশন এ উম্মতের ওপর অর্পিত হয়েছে। এটি উম্মতে মুহাম্মদির জন্য স্বতন্ত্র্য গৌরব ও শ্রেষ্ঠত্বের বিষয়। পবিত্র কোরআনে সুরা আল-ইমরানের ১১০ নম্বর আয়াতে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তোমরাই হলে সর্বোত্তম উম্মত, মানবজাতির কল্যাণের জন্যই তোমাদের উদ্ভব ঘটানো হয়েছে। তোমরা সৎকাজের নির্দেশ দান করবে ও অন্যায় কাজে বাধা দেবে এবং আল্লাহর প্রতি ইমান আনবে।’ দাওয়াতের ক্ষেত্রে একজন দাঈকে নবী-রাসুলদের কর্মপন্থা ও দাওয়াতের পদ্ধতি সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান রাখতে হবে। তাদের অনাবিল চরিত্রে নিজেদের গড়ে তুলতে হবে। এমন কিছু বিষয় এখানে আলোচনা করা হলো।
তাকওয়া : তাকওয়া অর্থ পরহেজ করা, বিরত থাকা ইত্যাদি। একমাত্র আল্লাহর ভয়ে যাবতীয় অন্যায়-অনাচার থেকে নিজেকে বিরত রাখাকে তাকওয়া বলে। তাকওয়া মুমিনের উন্নত গুণাবলির একটি। নবী-রাসুলদের জীবনে সর্বত্র তাকওয়া বিরাজমান ছিল। যারা এ মহৎ গুণটি অর্জন করতে পারে তাদের জীবনে থাকে না পিছুটান, পার্থিব দুঃখ-কষ্ট ও শঙ্কার ভয়। তারা জাগতিক প্রাপ্তি, প্রশংসা ও নিন্দাকে পরওয়া না করে একমাত্র মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির পথে ছুটে চলে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যে আল্লাহকে ভয় করে তিনি তার জন্য উত্তরণের পথ তৈরি করে দেন এবং তিনি তাকে এমন উৎস থেকে রিযিক দেবেন, যা সে কল্পনাও করতে পারবে না। সুরা তালাক : ২-৩
উত্তম আদর্শ : নবী-রাসুলদের প্রত্যেকেই ছিলেন চারিত্রিক অনুপমতা ও উত্তম আদর্শের এক অনন্য নমুনা। তাদের মিশন বাস্তবায়নে যারা কাজ করবেন, তাদেরও অনুপম ও উত্তম চরিত্রের অধিকারী হতে হবে। কেননা, তাদের উন্নত চরিত্র ও চলাফেরায় উত্তমতা দেখে অন্যরাও সঠিক পথে ও দ্বীনের দিকে আগ্রহী ও অনুপ্রাণিত হবে। তাছাড়া যারা উত্তম আদর্শ ধারণ ও লালন করে, আল্লাহতায়ালা পার্থিব ও পরকালীন জীবনে তাদের মর্যাদা বহুগুণে বাড়িয়ে দেন। হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে উত্তম সেই ব্যক্তি, যে নৈতিকতায় সর্বোত্তম।’-সহিহ বোখারি : ৬০৩৫
ধৈর্য ও সহনশীলতা : দুনিয়াতে যত নবী-রাসুল এসেছেন, প্রত্যেককেই ধৈর্য ও সহনশীলতার পরীক্ষা দিতে হয়েছে। মহান আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও ভরসা রেখে সর্বত্রই তারা অত্যন্ত ধৈর্য ও সহনশীলতার পরিচয় দিয়েছেন। সফল দাঈ হতে হলে ধৈর্য ও সহনশীলতার প্রয়োজন রয়েছে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে বিশ্বাসীরা, তোমরা ধৈর্য ধারণ করো, ধৈর্যের প্রতিযোগিতা করো এবং সুসম্পর্ক স্থাপনে আত্মনিয়ন্ত্রণের সংগ্রামে অবিচল থাকো, আল্লাহকে ভয় করো যাতে তোমরা সফল হতে পারো।’ -সুরা আল-ইমরান : ২০০
হজরত আবু সাইদ খুদরি (রা.) বর্ণিত এক হাদিসে হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি সহনশীল হওয়ার চেষ্টা করবে, আল্লাহতায়ালা তাকে সহনশীলতার শক্তি দান করবেন, আর সহনশীলতা থেকে অধিক উত্তম ও ব্যাপক কল্যাণকর আর কিছুই কাউকে দান করা হয়নি।’-সহিহ বোখারি : ১৪৬৯
বিনয় ও নম্রতা : যারা দ্বীনের পথে দাঈ হবেন, তাদের বিনয়ী ও নম্র হতে হবে। গর্ব-অহংকার ও দাম্ভিকতা তাদের সঙ্গে মানায় না। তাদের চলাফেরা, কথাবার্তা ও আচার-আচরণে সর্বদা বিনয় ও নম্রতা প্রকাশ পাবে। অহেতুক কোনো যুক্তিতর্কে জড়াবে না। পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘দয়াময় আল্লাহর প্রকৃত বান্দা তারাই, যারা পৃথিবীতে নম্রভাবে চলাফেরা করে এবং তাদের সাথে যখন মূর্খরা কথা বলতে থাকে, তখন তারা বলে, সালাম। যারা রাত্রিযাপন করে পালনকর্তার উদ্দেশ্যে সেজদাবনত ও দন্ডায়মান হয়ে এবং যারা বলে- হে আমাদের প্রতিপালক, আমাদের কাছ থেকে জাহান্নামের শাস্তি হটিয়ে দাও। নিশ্চয় এর শাস্তি নিশ্চিত বিনাশ; বসবাস ও অবস্থানস্থল হিসেবে তা কত নিকৃষ্ট জায়গা!’ -সুরা ফুরকান : ৬৩-৬৬
হজরত লোকমান (আ.) স্বীয় সন্তানকে উপদেশ দিতে গিয়ে বলেন, ‘হে বৎস, সালাত কায়েম করো, সৎকাজের আদেশ দাও, মন্দকাজে নিষেধ করো এবং বিপদাপদে সবর করো। নিশ্চয় এটা সাহসিকতার কাজ। অহংকারবশে তুমি মানুষকে অবজ্ঞাস কোরো না এবং পৃথিবীতে গর্বভরে পদচারণ কোরো না। নিশ্চয় আল্লাহ কোনো দাম্ভিক অহংকারীকে পছন্দ করেন না। পদচারণায় মধ্যবর্তিতা অবলম্বন করো এবং কণ্ঠস্বর নিচু করো। নিঃসন্দেহে গাধার স্বরই সর্বাপেক্ষা অপ্রীতিকর।’ সুরা লোকমান : ১৭-১৯
এছাড়া মিষ্টভাষী হওয়া, কথা-কাজে মিল থাকা, সমাজ ও সময়ের ভাষা বোঝা, স্থান-কাল-পাত্রভেদে কথা বলতে জানা, দাওয়াত প্রচার ও প্রয়োগের যত মাধ্যম রয়েছে, সেগুলোয় পারদর্শিতা অর্জন করা এবং পবিত্র কোরআন-সুন্নাহর সঠিক তত্ত্বজ্ঞানের অধিকারী হওয়া একজন সফল দাঈর অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
ভয়েস/আআ