সোমবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৫, ১২:০৯ অপরাহ্ন
ভয়েস নিউজ ডেস্ক:
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মাধ্যমে আমার রাজনীতির হাতে খড়ি এবং প্রথম উত্থান। আর রাজনীতিতে দ্বিতীয় উত্থান ঘটেছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে।
শুক্রবার (৭ এপ্রিল) জাতীয় সংসদের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে বিশেষ অধিবেশনের ভাষণে তিনি রাজনৈতিক জীবন নিয়ে স্মৃতিকাতর হয়ে পড়েন; এটাই রাষ্ট্রপতি হিসেবে তার সংসদে শেষ ভাষণ।
রাষ্ট্রপতি সংসদকে জানান, বঙ্গবন্ধুর মাধ্যমে রাজনীতিতে প্রথম উত্থানের পর ১৯৯৬তে ফের দ্বিতীয় উত্থান হয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর অপার স্নেহ আর তার দূরদর্শিতার কারণে তার আজকের এই অবস্থান। রাষ্ট্রপতি হিসেবে নয় বঙ্গবন্ধুর আদর্শের একজন সৈনিক হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিতে তিনি বেশি গর্ববোধ করেন।
বিদায়ী ভাষণে সংসদ নেতা-প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী তখন ডেপুটি স্পিকারের মর্যাদা না দিলে হয়তো কিশোরগঞ্জকে ঘিরেই তার রাজনীতি আবর্তিত হতো।
তিনি বলেন, ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে পরিচয়; তখন কিশোরগঞ্জ গুরুদয়াল কলেজের ছাত্র ছিলেন। পরিচয়ের পর থেকেই বঙ্গবন্ধুর নীতি-আদর্শের অনুসারী হয়ে যান। মাঝে মাঝে তার সঙ্গে দেখা হতো; অনেক সময় তিনি নিজেই ডেকে পাঠাতেন।
সে সময় বঙ্গবন্ধু ছিলেন আমার একমাত্র ধ্যান-ধারণা আর তার নীতি-আদর্শ-নির্দেশনাই ছিল সবচেয়ে বেশি অনুসরণীয়-অনুকরণীয়, যোগ করে মো. আবদুল হামিদ বলেন, শুধু আমি নই ওই সময় পূর্ব পাকিস্তানের অনেক যুবকের কাছেই বঙ্গবন্ধু ছিলেন একমাত্র আদর্শ। যার পিঠে একবার বঙ্গবন্ধুর হাত পড়েছে বা স্নেহের ছোঁয়া লেগেছে, তার পক্ষে বঙ্গবন্ধুকে ভুলে যাওয়া কোনোভাবেই সম্ভব নয়।
প্রসঙ্গত, রাষ্ট্রপতি হিসেবে আবদুল হামিদের দ্বিতীয় মেয়াদ শেষ হবে ২৪ এপ্রিল। তিনি এর আগে আট দফা জাতীয় সংসদের সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন; এছাড়াও সংসদের ডেপুটি স্পিকার, স্পিকারের দায়িত্বও পালন করেছেন।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু আমৃত্যু দেশের আর্থ সামাজিক উন্নয়নের পাশাপাশি গণতন্ত্রের উন্নয়নকে সমান গুরুত্ব দিতেন। তাই ৭ মার্চের ভাষণে তিনি রাজনৈতিক স্বাধীনতার সঙ্গে অর্থনৈতিক মুক্তির কথাও বলেছেন।
মুক্তিযুদ্ধের পর সংসদ কার্যকর করার ক্ষেত্রে জাতির পিতার দূরদর্শী নেতৃত্বের কথা উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি হামিদ বলেন, বঙ্গবন্ধু দেশে ফিরেই পুনর্গঠন কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সঙ্গে সংসদকে কার্যকর করার উদ্যোগ নেন, গণপরিষদের প্রথম অধিবেশন ১৯৭২ সালের ১০ এপ্রিল ঢাকার তেজগাঁওস্থ সংসদ ভবনে শুরু হয়। গণপরিষদেই ১৯৭২ সালের ৪ নভেম্বর সংবিধান গৃহীত হয়। ওই বছরের ১৬ ডিসেম্বর থেকে তা কার্যকরও হয়।
তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর এতো অল্প সময়ের মধ্যে বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সংবিধান প্রণয়ন নিঃসন্দেহে গণতন্ত্রকামী যে কোনো দেশের জন্য গর্বের। সংবিধানে প্রথম স্বাক্ষরকারী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আর তিনি নিজে স্বাক্ষর করেছেন ৭১ নম্বরে।
সংবিধানের আওতায় প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয় ১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, এর এক মাস পর তিয়াত্তরের ৭ এপ্রিল বসে সংসদের প্রথম অধিবেশন। সে হিসাবে শুক্রবার (৭ এপ্রিল) জাতীয় সংসদের ৫০ বছর পূর্ণ হয়েছে।
সেই অধিবেশনে সংসদ নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নবনির্বাচিত স্পিকার-ডেপুটি স্পিকারকে অভিনন্দন জানিয়ে দেওয়া বক্তব্যের স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, সেদিন বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন— কর্তব্য পালনে সংসদ সদস্যরা সবসময় আপনাদেরকে সহযোগিতা করবেন।
সংসদের নবনির্বাচিত স্পিকার-ডেপুটি স্পিকারদের উদ্দেশ্যে বঙ্গবন্ধু বলেন, দুনিয়ার সব পার্লামেন্টারি কনভেনশনের নীতিমালা তিনি এবং তার দল মেনে চলতে চায়। সঙ্গে সঙ্গে এমন একটি সংসদীয় পদ্ধতি প্রত্যাশা করেন যাতে দুনিয়া বাংলাদেশ থেকে শিক্ষা নিতে পারে। এখানে কোনো দল-মত নয় সদস্যরা যেন তাদের অধিকার ব্যবহার করতে পারেন সেদিকে খেয়াল রাখতে সংশ্লিষ্টদের পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে দলীয় পূর্ণ সহযোগিতা থাকবে। পার্লামেন্টারি ট্রেডিশন পুরোপুরি ফলো করার চেষ্টা থাকবে।
রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেন, গণপরিষদে কোনো বিরোধী দল না থাকলেও অধিবেশন হতো প্রাণবন্ত। যুক্তি-তর্ক-মতামত উপস্থাপন ছিল খুবই আকর্ষণীয়। ন্যাপ থেকে নির্বাচিত একমাত্র গণপরিষদ সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত পার্লামেন্টে বক্তৃতা করার সুযোগ চাইলে সবসময়ই সুযোগ পেতেন।
স্পিকার মাঝে মধ্যে তাকে মাইক দিতে না চাইলেও বঙ্গবন্ধু বলতেন, ‘ওকে সুযোগ দেন, বিরোধী পক্ষের কথা আগে শুনতে হবে।’
রাষ্ট্রপতি জানান সংবিধান প্রণয়ন কমিটি গঠন নিয়ে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, শুধু যে দলের সদস্যদের নিয়ে কমিটি হবে তা নয়; দল-মত নির্বিশেষে সবার সঙ্গে আলোচনা হবে। জনগণকে তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী যেন একটা সুষ্ঠু সংবিধান পায় সে উদ্দেশ্যে সবার মতামত নিতে হবে। সংবিধানে মানবিক অধিকার থাকবে; যে অধিকার মানুষ চিরকাল ভোগ করবে।
সংসদ কার্যক্রমের পাশাপাশি দলীয় শৃঙ্খলাকে অগ্রাধিকার দিতেন বঙ্গবন্ধু— এ কথা উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, প্রথম অধিবেশনের প্রথম কার্যদিবসেই বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন সংসদের মাননীয় সদস্যদের আর একটা কথা মনে করিয়ে দিতে চাই যে কোনো প্রস্তাব আনার আগে তা পার্টিতে আলোচনা করে উপস্থাপন করবেন; তা না হলে পার্টির শৃঙ্খলা নষ্ট হবে।
আবদুল হামিদ বলেন, সংসদ সদস্যদের অভাব-অভিযোগ-সুখ-দুঃখ সবকিছুর খবর রাখতেন বঙ্গবন্ধু। প্রয়োজনে তাদের জন্য সম্ভাব্য সবকিছুই করতেন।
রাজনীতিতে বঙ্গবন্ধুর শিষ্টাচার-পরমত সহিষ্ণুতার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, পার্লামেন্টে বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে কেউ কথা বললে স্পিকার অনেক সময় বিব্রত হতেন কিন্তু তিনি হতেন না। রাজনৈতিক মতাদর্শের যত অমিলই থাকুক না কেন বিরোধীদলের নেতাদের যথাযথ সম্মান দিয়ে কথা বলতেন বঙ্গবন্ধু। আসলে রাজনীতিতে শিষ্টাচার-পরমত সহিষ্ণুতার কোনো বিকল্প নেই।
ভয়েস/আআ