রবিবার, ২৯ Jun ২০২৫, ১০:৪০ অপরাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

২০২৪ সালে কি পিছিয়ে পড়বে বৈশ্বিক গণতন্ত্র

মার্ক বেনেডিখ:
একদিকে ভ্লাদিমির পুতিন ২০৩০ সাল পর্যন্ত রাশিয়ার ক্ষমতায় থাকার বন্দোবস্ত করছেন, অপরদিকে নরেন্দ্র মোদিকেও ২০২৯ সাল পর্যন্ত ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিশ্চিত মনে হচ্ছে। পশ্চিমা রাজনীতির কলকাঠি আবারও এসে পড়তে পারে ট্রাম্পের হাতে। যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রকে ভূলুণ্ঠিত করেছেন এমন অভিযোগ সত্ত্বেও পরবর্তী নির্বাচনে হোয়াইট হাউজে ফিরতে পারেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।

স্বৈরাচারী শাসকগোষ্ঠী কর্র্তৃক উদারপন্থি গণতান্ত্রিকদের ওপর চেপে বসা নিয়ে যারা উদ্বিগ্ন, ২০২৪ সালে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া নির্বাচনে তাদের উদ্বেগ আরও বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। বিশ্বের এক-চতুর্থাংশেরও বেশি জনসংখ্যা আগামী বছর নির্বাচনী ঝুঁকির মধ্য দিয়ে যাবে। এরমধ্যে পরের মাসে তাইওয়ান, মার্চে রাশিয়া, মে মাসে ভারত ও নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। যুক্তরাজ্যেও সম্ভবত ২০২৪ সালের শেষের দিকে সংসদীয় নির্বাচন শুরু হবে। এবং ভোটগ্রহণ শুরু হতে পারে ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে। তথাপি গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ কোন দিকে যাচ্ছে এ বিতর্কের প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রভাবই সবচেয়ে বেশি। সুতরাং পৃথিবী জুড়ে আলোচনার কেন্দ্রেও রয়েছে এ নির্বাচন।

যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ কেন : ট্রাম্প ২০২০ সালের মার্কিন নির্বাচনের পরাজয় স্বীকার করেননি। উপরন্তু ভোটে কারচুপি হয়েছে বলে দাবি করেছেন। এখনো পর্যন্ত এটাকে মিথ্যা দাবি হিসেবেই আখ্যা দেওয়া হয়েছে। তবে ট্রাম্প ক্ষমতায় ফিরতে পারলে বিচার বিভাগ, ফেডারেল আমলাতন্ত্র এবং রাষ্ট্রপতি জো বাইডেনসহ বিরোধীদের ওপর মোক্ষম প্রতিশোধ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। ফলে পুরো বিষয়টা আশঙ্কাজনক হয়ে দাঁড়াচ্ছে। মনে হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক শত্রুতা সরগরম হয়ে উঠতে পারে এবং পুরো প্রেক্ষাপট নাগরিক অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে। ট্রাম্পের বিরুদ্ধে একাধিক ফৌজদারি অভিযোগ রয়েছে। এবং তাকে ধারাবাহিক শুনানির মধ্য দিয়েই যেতে হচ্ছে। নারী কেলেঙ্কারি থেকে শুরু করে ২০২০ সালের নির্বাচনে জর্জিয়া প্রদেশে ভোট কেলেঙ্কারি চেষ্টার অভিযোগ থাকলেও ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জনমত জরিপে ট্রাম্প খানিকটা এগিয়ে রয়েছেন।

তাইওয়ানে ১৩ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতি ও সংসদীয় সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ নির্বাচনের ফলাফল সেদিকেই মোড় নিতে পারে, যেদিকে মোড় নিলে চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং তাইওয়ানের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার উদ্দেশ্য অনুসরণ করে তা বাস্তবে রূপ দিতে পারেন। কারণ, বেইজিং তাইওয়ানকে ‘পবিত্র চীনা ভূখণ্ড’ হিসেবে বিবেচনা করে।

তাইওয়ানের নির্বাচনী দৌড়ে সামনের দিকে থাকা রাষ্ট্রপতি প্রার্থী, ডেমোক্রেটিক প্রগ্রেসিভ পার্টির লাই চিং-তেকে চীন ঘৃণা করে, তাকে বিচ্ছিন্নতাবাদী বলে বিশ্বাস করে। মূলভূমির সঙ্গে তাইওয়ানের একত্রীকরণে যারা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে, তাদের সতর্ক করে শি জিনপিং বলেছেন, বিচ্ছিন্নতাবাদকে প্রতিরোধ করার ক্ষেত্রে চীনের ‘গৌরবময় ঐতিহ্য’ রয়েছে। মার্কিন সামরিক কর্মকর্তারা দাবি করেছেন যে, শি চীনা সামরিক বাহিনীকে ২০২৭ সালের মধ্যে তাইওয়ান আক্রমণ করার জন্য প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। চীন সব সময় তাইওয়ানকে একটা বিদ্রোহী প্রদেশ হিসেবে দেখলেও তাইওয়ান নিজেকে স্বাধীন দেশ হিসেবে মনে করে। ফলে এসব হুমকির বিপরীতে তাইওয়ান মনে করে, দেশের ভবিষ্যৎ জনগণই নির্ধারণ করবে।

রাশিয়ায় বহু বছর ধরে রাজনৈতিক উথাল-পাথালের পর পর প্রেসিডেন্ট হিসেবে পুতিনের বিজয় নিশ্চিত বলে মনে হচ্ছে। ২০২১ সালে প্রেসিডেন্ট পদের মেয়াদবৃত্তি আইনে স্বাক্ষর করার মধ্য দিয়ে পুতিন আইনগতভাবে আরও দুবার প্রেসিডেন্ট পদে অধিষ্ঠিত থাকতে পারবেন। বিশ্বরাজনীতির প্রবল মেরুকরণের এ নাজুক পরিস্থিতিতে ক্রেমলিনের নিয়ন্ত্রণ পুতিনের হাতে থাকার মানে হলো ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার যুদ্ধও চলতে থাকবে। এর মাধ্যমে ক্রেমলিন কিয়েভের প্রধান মিত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ধৈর্যের পরীক্ষা করছে। আবার ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউক্রেনের জন্য মার্কিন সামরিক সহায়তার কড়া সমালোচনা করে যাচ্ছেন। এমনকি রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধ বন্ধ করতে একদিন সময়ই যথেষ্ট বলে ঘোষণাও দিয়েছিলেন সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।

নিজস্ব রাজনৈতিক কৌশল ও আদর্শিক ব্যক্তিত্বের অধিকারী নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আবার নির্বাচিত হওয়ার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছেন। তার আপসহীন নেতৃত্ব ভোটারের হিসেবে বিশ্বে বৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশটিতে ভিন্নধারার একটা রাজনৈতিক পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। যা ভোটারদের সমর্থন এবং বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে টানার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ইতিবাচক ভূমিকা পালন করছে। তবে, ধর্মীয় সংখ্যালঘু, ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মানুষ ও মানবাধিকার গোষ্ঠীসমূহের চোখে নরেন্দ্র মোদি রাজনীতিবিদ হিসেবে প্রশ্নবিদ্ধ।

মোদির কট্টর হিন্দু জাতীয়তাবাদী দল বিজেপি সামনের নির্বাচনে জয়ী হলে অধিকার ও সমালোচনার পরিবর্তে অর্থনীতিই তার প্রধান ফোকাস হয়ে উঠবে বলে আশা করা হচ্ছে। ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিসগড় ও তেলেঙ্গানার ভোটযুদ্ধ থেকে নরেন্দ্র মোদির জনপ্রিয়তা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। এর মধ্যে তিন রাজ্যেই নরেন্দ্র মোদির বিজেপি বিপুল ভোটে বিজয় লাভ করেছে।

তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতা ধরে রাখতে মরিয়া নরেন্দ্র মোদি ২০১৯ সালের চেয়ে বেশি ভোট পেয়ে বিজয় লাভের নির্দেশনা দিচ্ছেন নেতা ও কর্মীদের। আসন্ন নির্বাচনে পঞ্চাশ শতাংশের চেয়ে বেশি ভোট নিশ্চিত করার লক্ষ্যে গতকালই দিল্লির দলীয় কার্যালয়ে বৈঠক করে দলটি। কর্র্তৃত্ববাদ এবং স্বৈরাচারের কাছে উদারনৈতিক গণতন্ত্রের পতনের উপসর্গ স্পষ্ট হয়ে উঠছে কি না এ বিতর্কে আফ্রিকারও একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং উচ্চ কণ্ঠস্বর রয়েছে। এ বছর নাইজার এবং গ্যাবনে সামরিক অভ্যুত্থান পশ্চিম এবং মধ্য আফ্রিকায় গণতন্ত্রের বিকাশকে পিছিয়ে দিয়েছে। সেখানে ২০২০ সাল থেকে আটটি অভ্যুত্থান হয়েছে। তবে দক্ষিণ আফ্রিকায় ২০২৪ সালে একটি বড় ও প্রাণবন্ত রাজনৈতিক প্রতিযোগিতার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে।

গত ২৬ জুলাই নাইজারের পশ্চিমাপন্থি মুহাম্মদ বাজুমকে তার রক্ষীবাহিনী আটক করে এবং রক্ষীবাহিনীর কমান্ডার জেনারেল আব্দুর রহমান চিয়ানি নিজেকে সামরিক জান্তা প্রধান হিসেবে ঘোষণা করেন। ইকোয়াস নাইজারের গণতন্ত্র ভূলুণ্ঠিত হয়ে গেছে বলে যুদ্ধের প্রস্তুতি নেওয়ার হুমকি দিয়েছে। মালি এবং বুরকিনা ফাসো যুদ্ধবিমান দেওয়ারও ঘোষণা দিয়েছিল। আফ্রিকার মানুষদের কাছে গণতন্ত্রবিরোধী এসব অভ্যুত্থান পাশ্চাত্যের আরোপিত অন্ধত্ব, শিক্ষাহীনতা ও দারিদ্র্য থেকে বেরিয়ে আসার বিপ্লব হিসেবে অভিহিত হচ্ছে। তাদের যুক্তি, বিপ্লব মূলত গণতন্ত্রেরই সর্বোচ্চ প্রকাশ। যেখানে জনগণ তাদের অধিকার ও সরকারের জন্য ভূখণ্ডের ব্যালট পেপারে রক্তের কালিতে ভোটপ্রধান করে থাকেন। দুর্নীতি ও অর্থনৈতিক পতনের কারণে প্রায় তিন দশক ধরে ক্ষমতায় থাকা সরকারের পতন হওয়ার পর দক্ষিণ আফ্রিকার আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেস প্রথমবারের মতো সংসদীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছিল। এরপর নেলসন ম্যান্ডেলা ১৯৯৪ সালে বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের শেষে ক্ষমতায় আসেন।

সমীকরণ যদি এভাবে এগিয়ে যেতে থাকে, তাহলে ক্ষমতায় থাকার জন্য এনএসি-এর একটি জোট-অংশীদারের প্রয়োজন হতে পারে। সে জোট হতে পারে শ্বেতাঙ্গ ভোটারদের কাছে জনপ্রিয় ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স, অথবা অর্থনৈতিক মুক্তিকামী দরিদ্র কৃষ্ণাঙ্গ ভোটারদের পছন্দের মার্কসবাদী দল। যেভাবেই হোক, যে জোটই ক্ষমতায় যাক না কেন, দক্ষিণ আফ্রিকার গণতন্ত্র কোণঠাসা হয়ে পড়তে পারে। দক্ষিণ আফ্রিকার নির্বাচন মে থেকে আগস্টের মধ্যে হওয়ার কথা রয়েছে।

২০২৪ সালের ধারাবাহিক নির্বাচনের এ প্রেক্ষাপটে বৈশ্বিক গণতন্ত্র কি পিছিয়ে যাবে? মার্কিনভিত্তিক গণতন্ত্রপন্থি লবি ফ্রিডম হাউজ রাজনৈতিক অধিকার এবং নাগরিক স্বাধীনতাকে গণতন্ত্রের সূচক হিসেবে গণ্য করে। সংস্থাটির দাবি অনুসারে যে ১৭ বছর ধরেই বৈশ্বিক গণতন্ত্র পতনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। সর্বশেষ প্রতিবেদনে সংস্থাটি বিশ্বকে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও গণতন্ত্রের প্রতি প্রত্যাবর্তনের পরামর্শ দিয়েছে। প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২২ সালের এক সূচকে চৌত্রিশটি দেশ উন্নতি করেছে এবং নেতিবাচক ক্ষয় শুরু হওয়ার পর থেকে পঁয়ত্রিশটি দেশে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ হ্রাস পেয়েছে।

রয়টার্স থেকে ভাষান্তর : মোহাম্মদ ফজলে রাব্বি

লেখকঃ রয়টার্সের বিশ্ব সংবাদ, রাজনীতি এবং অর্থনীতি বিষয়ক ব্যবস্থাপনা সম্পাদক

ভয়েস/আআ

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION