রবিবার, ২৯ Jun ২০২৫, ০৫:৫০ অপরাহ্ন
মোহাম্মদ ফজলে রাব্বি:
মাত্র পেছন ফেলে আসা বছরটিতে মানবজাতি যুদ্ধ আর প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করে নতুন বছরটি শুরু করেছে। কিন্তু ইসরায়েল-ফিলিস্তিন যুদ্ধ যত দীর্ঘ হচ্ছে, ভুল হিসাব-নিকাশ আর আঞ্চলিক উত্তেজনার ঝুঁকি নতুন বছরেও বেড়েই চলছে। ইতিহাস চমক পছন্দ করে। মানবজাতি নিজের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে সচেতন হওয়ার উদ্দেশ্যে বহুদিক থেকে ভবিষ্যদ্বাণীর ক্ষমতাকে পরিমার্জিত করে যাচ্ছে। এমনকি অজানা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকেও নিজেদের ভবিষ্যৎ বোঝার মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করছে। তা সত্ত্বেও বিশ্বের ঘটনাপ্রবাহ বারবার অপ্রত্যাশিতভাবে মোড় নিতে থাকে পূর্বের প্রত্যাশাসমূহের স্রোত ব্যাহত হয় এবং বড় হতাশার ঢেউ ও গুরুতর ক্ষতির দিকে নিয়ে যায় বিশ্বকে।
নিকট ভবিষ্যতেই হয়তো ২০২৩ সালকে স্মরণ করা হবে মানবজাতি ও পৃথিবী ধ্বংসের আখ্যান আর অপূর্ণ প্রত্যাশার বছর হিসেবে। হয়তো পশ্চিমা বিশে^র হিসেবেই মুদ্রাস্ফীতি সাময়িক হবে ইউক্রেন জিতে যাবে, রাশিয়া নিষেধাজ্ঞার নিক্ষিপ্ত তীরে বিদ্ধ হবে, মস্কো থেকে জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ করায় আতঙ্কিত ইউরোপ ঘুরে দাঁড়াবে, শঙ্কাগ্রস্ত ইউরোপের শিল্প উৎপাদন ফের গতি পাবে, চীন গুটিয়ে যাবে, স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে গণতন্ত্র বিজয়ী হবে, আব্রাহাম চুক্তি এবং ইসরায়েল-সৌদি চুক্তি অশান্ত মধ্যপ্রাচ্যকে শান্ত রাখবে, ইউএস-নেতৃত্বাধীন আইনভিত্তিক বিশ্বব্যবস্থার খেলার মাঠ হয়ে উঠবে বিশ্বের শহরসমূহ… তালিকাটিও বাড়তে থাকবে।
রাশিয়ার সঙ্গে সংঘাতে টিকে থাকার ক্ষমতা নাটকীয়ভাবে হ্রাস পাচ্ছে ইউক্রেনের। ফলে ইউক্রেন মরিয়া হয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্য পশ্চিমা দেশগুলোর মনোযোগ পাওয়ার চেষ্টা করছে। অন্যদিকে ইসরায়েল নিজের ওপর থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্য পশ্চিমা দেশগুলোর মনোযোগ সরানোর চেষ্টা করছে। কারণ, ইসরায়েলের উগ্র ডানপন্থি রাজনৈতিক শক্তিগুলোর স্বপ্ন হলো গাজায় জাতিগত নিধন চালানো। আর বর্তমানে ইসরায়েল এ নিধনযজ্ঞ চালানো ও তথাকথিত বৃহত্তর ইসরায়েল গঠনের প্রথম পদক্ষেপের মধ্যে রয়েছে যা মার্কিন নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা বিশ্বকে প্রশ্নের মুখে ফেলছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন উভয়েই রাশিয়া-ইউক্রেন ও ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাত থেকে বেরিয়ে আসার কৌশল খুঁজছে। ২০২৪ সালের মধ্যে তারা সরে আসতে পারবে কি না তা নিশ্চিত করে বলা কঠিন। ইউক্রেন এবং গাজার সংঘাতের ফলাফল গোটা ইউরেশিয়া অঞ্চলে ক্ষমতার ভারসাম্য গঠনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। একদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার ইউরোপীয় মিত্রদের মধ্যে সম্পর্ক ঘনীভূত থাকবে। অন্যদিকে রাশিয়া, চীন এবং ইরানের মধ্যকার সম্পর্ক ক্ষমতার বিপরীত মেরুকেন্দ্রিক বলয় ধরে রাখবে আর চ্যালেঞ্জ জানাতে থাকবে।
ভাঙা স্বপ্নের সমাধি
গত সেপ্টেম্বরে ভারতে অনুষ্ঠিত জি-২০ সম্মেলনে চীনের ক্রমবর্ধমান শক্তি পরীক্ষার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার সর্বশেষ জনসংযোগ কৌশল উন্মুক্ত করেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের শাসক এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের তিনটি প্রধান অর্থনীতির দেশ জার্মানি, ফ্রান্স এবং ইতালির নেতারা একটি নতুন অর্থনৈতিক করিডরের প্রস্তাব করেছিলেন। তা হলো, ভারতকে ইউরোপের সঙ্গে সংযুক্ত করা। তারা একে আইএমইসি বা ভারত-মধ্যপ্রাচ্য-ইউরোপ করিডর বলে অভিহিত করেন।
করিডরের আনুষ্ঠানিক উদ্দেশ্য ভারত থেকে ইউরোপে পণ্য পৌঁছাতে যে সময় লাগে তা কমিয়ে নিয়ে আসা। জড়িত দেশগুলোর প্রস্তাবনা, তারা ভারত থেকে সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের কার্গোগুলো শিপিং করে, ইসরায়েলের হাইফাগামী ট্রেনে লোড করে তারপর আবার জাহাজে করে ইউরোপে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনার মাধ্যমে পণ্য পরিবহনের সময় কমিয়ে আনতে পারবেন। অথচ বাস্তবে তা অসম্ভবের পায়ে আত্মনিবেদনের শামিল। কারণ, এটি পাঁচ বা ছয়টি ভিন্ন ভিন্ন দেশে কমপক্ষে ছয়টি লোডিং ও আনলোডিং প্রক্রিয়াকে অনিবার্য করে তুলবে।
আইএমইসি’র অনানুষ্ঠানিক উদ্দেশ্য হলো ইউরেশিয়া জুড়ে একটি প্রধান বহুমুখী সংযোগ নেটওয়ার্ক তৈরি করা, যা ২০১৩ সালে চীন ঘোষিত বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই)-এর বিকল্প হিসেবে হাজির হবে।
১০ বছরের বেশি সময় পার হয়ে গেলেও আইএমইসি মূলত বিআরআই-এর সঙ্গে প্রতিযোগিতা করার ভান করছে। বিল্ড ব্যাক বেটার-এর মতো আগের বেশ কিছু পশ্চিমা প্রকল্পের মতোই আইএমইসি সহজেই ‘বেশ দেরি হয়ে গেল’ নামক ঢেউয়ের স্রোতে ভাঙা স্বপ্নের সলিল সমাধিতে পরিণত হতে পারে। শেষ পর্যন্ত সময় এবং বাজারই বলে দেবে এ ধরনের একটি জটিল বিকল্প বিআরআইকে প্রভাবিত করতে পারবে কি না।
আইএমইসি-এর আরেকটা উচ্চাকাক্সক্ষা হলো রেড সি বা লোহিত সাগর এবং সুয়েজ খালকে ইউরোপের প্রধান সমুদ্র-অর্থনৈতিক করিডর হিসেবে প্রতিস্থাপন করা এবং আব্রাহাম অ্যাকর্ডে বর্ণিত দৃষ্টিভঙ্গিকে আরও জোরদার করা। তবে লোহিত সাগরের সমস্যাগুলো ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাতের পটভূমিতে ভূ-রাজনীতি এবং ভূ-অর্থনীতির দরজায় বিদ্রƒপাত্মকভাবে কড়া নাড়ছে।
আঞ্চলিক উত্তেজনা বৃদ্ধি
গাজায় চলমান সংঘাতের প্রধান আশঙ্কা হলো এটি আঞ্চলিক উত্তেজনা বৃদ্ধির সম্ভাব্য সংকট তৈরি করতে পারে। সংঘাতের পুরো চিত্রপটে অবশ্য বেশিরভাগ অনুসন্ধানী দৃষ্টি নিবদ্ধ ছিল ইসরায়েলের উত্তর ফ্রন্ট এবং লেবাননে হিজবুল্লাহর সঙ্গে শুরু হওয়া দ্বিতীয় সংঘাতের ঝুঁকির দিকে। আবার, ইয়েমেনের হুথিরা সবচেয়ে ছোট পরিসরে সর্বনিম্ন সশস্ত্র প্রতিরোধযুদ্ধ করেছে, কিন্তু তার প্রভাব তৈরি হয়েছে ব্যাপক। যা ২০২৩ সালের বছর শেষের প্রধান বিস্ময়কর ব্যাপার হিসেবে হাজির হয়েছে।
এখন পর্যন্ত আরব বিশ্বে ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে দৃঢ় সংহতি প্রদর্শনে হুথিরা গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত অবস্থান নিয়েছে। তারা ইসরায়েল বা এর সঙ্গে সম্পৃক্ত জাহাজগুলোকে বেছে বেছে লক্ষ্যবস্তু করতে শুরু করেছে। নিট ফলাফল হলো, ইসরায়েলের ইলাত বন্দরে ট্রাফিক হ্রাস পেয়েছে ৮৫ শতাংশ।
অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে হুথিরা পশ্চিমা গণতন্ত্রের ডাবল-স্ট্যান্ডার্ডের নিজস্ব সংস্করণ তৈরি করে তা সমুদ্রপথে প্রয়োগ করতে শুরু করেছে। অন্য সমস্ত জাহাজ নির্বিঘ্নে চলাচল করছে। রাশিয়া, চীন, ইরান এবং বিশ্বের বাকি অংশের নিবন্ধিত জাহাজগুলো বাব এল-মান্দেব জুড়ে নিয়মিত চলছে এবং বাব এল-মান্দেব প্রণালি ও লোহিত সাগরে প্রবেশ করে সুয়েজের দিকে যাচ্ছে। প্রধান পণ্যবাহী জাহাজগুলো অস্থায়ীভাবে লোহিত সাগরে নেভিগেশন বন্ধ করে দেয়। তবে শুধু দুটি বিকল্পপথে চলাচল ঠিক রাখে। একটি হলো আফ্রিকার দক্ষিণ প্রান্তের চারপাশের দীর্ঘ এবং ব্যয়বহুল সমুদ্রপথ। অপরটি আন্তর্জাতিক উত্তর-দক্ষিণ পরিবহন করিডর (INSTC), যা ইরান এবং রাশিয়াকে ককেশাসের মাধ্যমে সংযুক্ত করে। প্রথমটি বাড়িয়ে তুলতে পারে মুদ্রাস্ফীতি; দ্বিতীয়টি পশ্চিমা গণতন্ত্রের জন্য হয়ে উঠতে পারে গুরুতর রাজনৈতিক সমস্যা।
লোহিত সাগর, এডেন উপসাগর এবং বাব এল-মান্দেব প্রণালির মধ্য দিয়ে নৌ-চলাচলের স্বাধীনতা রক্ষার জন্য ‘প্রস্পারিটি গার্ডিয়ান’ নামে একটি সামরিক অভিযানের মাধ্যমে জাহাজসমূহে হুথি হামলার প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
কঠিন নতুন বাস্তবতা
এ উদ্যোগটি বিবাদপূর্ণ এলাকায় মার্কিন নেতৃত্ব প্রদর্শন এবং নেভিগেশনের স্বাধীনতা প্রয়োগের জন্য নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ফলাফল আংশিকভাবে হতাশাজনক। মায়স্ক’র মতো কিছু পণ্যবাহী গুরুত্বপূর্ণ জাহাজ লোহিত সাগরে যাত্রা স্থগিত করার পর কার্যক্রম পুনরায় শুরু করেছিল সত্য, তবে ৩১ ডিসেম্বর একটি মারস্ক জাহাজে হুথি হামলার ফলে তা আবার স্থগিত করা হয়েছে। এবং এ ঘটনার পর হুথি বোটের ওপর মার্কিন হামলা চালানো হয়। এ হামলায় ১০ জন ইয়েমেনি যোদ্ধা নিহত হয়েছেন।
আরেকটি হতাশাজনক দিক হলো প্রস্পারিটি গার্ডিয়ানের উদ্দেশ্য ছিল আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ব্যাঘাতসমূহ দূর করা। প্রস্পারিটি গার্ডিয়ান চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী ‘গ্লোবাল ওয়েস্ট’ তথা অস্ট্রেলিয়া, স্পেন, ইতালি এবং ফ্রান্সসহ বেশ কয়েকটি দেশকে পেন্টাগন হুথিদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর অনুরোধ জানিয়েছে। কিন্তু উক্ত দেশসমূহ মার্কিন কমান্ডের অধীনে কোনো অভিযানে অংশ নিতে অস্বীকার করেছে। স্পেন স্পষ্ট ঘোষণা করেছে তারা শুধু ন্যাটো বা ইউরোপীয় কমান্ডের অধীনেই অভিযানে অংশগ্রহণ করবে। এতে অংশগ্রহণকারী একমাত্র আরব দেশ ছিল ছোট রাষ্ট্র বাহরাইন। এবং পুরো বিশ্ব থেকে শুধু সিসিলি হ্যাঁ, ঠিক শুনছেন, সিসিলি!
লোহিত সাগরে বাণিজ্য বিঘ্নিত হওয়ার কারণে গুরুত্বপূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত দুটি দেশ মিসর এবং সৌদি আরব মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শক্তিশালী মিত্র হওয়ার পরও প্রস্পারিটি গার্ডিয়ানে যোগদান না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিষয়টি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বাসযোগ্যতা ও তার প্রধান মিত্রদের মধ্যকার নির্ভরযোগ্যতার দিকটাও আমাদের সামনে স্পষ্ট করে তোলে।
ইসরায়েল ছাড়া সব পক্ষই দাবি করে যে তারা উত্তেজনা এড়াতে চায়, কিন্তু গাজা এবং ইউক্রেন ছাড়িয়ে অনেক জায়গায় সংঘর্ষ হচ্ছে। যেমন লেবানন, সিরিয়া, ইরাক এবং লোহিত সাগর। ভুল হিসাব-নিকাশ ও ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া উত্তেজনা না কমিয়ে বরং সম্ভাব্য ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
মনে হচ্ছে ২০২৪ সালে লোহিত সাগরের আকাশে কালো মেঘ জমেছে, যা দুর্যোগ বা ঝড়ের পূর্বাভাস। সাধারণত আফ্রিকা মহাদেশ ঘুরে আসার জন্য একটি জাহাজকে ১০ দিন অতিরিক্ত সময় ও বিপুল পরিমাণ অতিরিক্ত জ্বালানি ব্যয় করতে হয় যার ফলে শিপিং খরচ বেড়ে যায় বিপুল পরিমাণে। নভেম্বর থেকে, দক্ষিণ লোহিত সাগর এবং এডেন উপসাগরে কমপক্ষে ২৫টি বাণিজ্যিক জাহাজ হামলার শিকার হয়েছে।
কালো মেঘ ছড়িয়ে পড়ছে
সাম্প্রতিক সময়ে ভারত মহাসাগরেও ইসরায়েল-সংশ্লিষ্ট জাহাজে হামলার ঘটনা ঘটছে। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে ভারতের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য গুজরাটের উপকূলে রাসায়নিক পদার্থবাহী কার্গো জাহাজে কেম প্লুটোতে ড্রোন হামলার ঘটনা ঘটে। এর আগে ইয়েমেনের হুথি যোদ্ধারা লোহিত সাগর এবং বাব আল-মান্দেব প্রণালিতে ইসরায়েলি জাহাজকে লক্ষ্যবস্তু করার হুঁশিয়ারি দিয়েছিল। কিন্তু ধারণাতীতভাবে এই দুটি জাহাজ বাব আল-মান্দেব প্রণালি থেকে ২ হাজার কিলোমিটার দূরে থাকা অবস্থায় হামলার শিকার হলো।
ভারতীয় উপকূলের কাছে ড্রোন হামলাসহ সম্প্রতি বেশ কয়েকটি জাহাজে হামলার পর ভারতের নৌবাহিনী আরব সাগরে প্রতিরোধমূলক উপস্থিতি বজায় রাখতে তিনটি যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন করে। সৌদি আরবের আল জুবেইল বন্দর থেকে ভারতের নিউ মেঙ্গালুরু বন্দরে অপরিশোধিত তেল নিয়ে আসা জাহাজ ‘এমভি কেম প্লুটো’-তে হামলাকারীদের প্রয়োজনে সমুদ্রের তলা থেকে খুঁজে বের করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং।
তিনি বলেন, ‘সাগরে এই আক্রমণের ঘটনাগুলো নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। প্রয়োজনে হামলাকারীদের সমুদ্রের নিচ থেকেও খুঁজে বের করে কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হবে। ভারতের উন্নয়নে কিছু দেশ ক্ষুব্ধ।’
ভারতীয় নৌবাহিনী জানিয়েছে, জাহাজে পরপর হামলার পরিপ্রেক্ষিতে আরব সাগরে তিনটি ‘গাইডেড মিসাইল ডেস্ট্রয়ার’ শ্রেণির জাহাজ মোতায়েন করেছে তারা। এর ফলে এই ধরনের হামলার সম্ভাবনা কমবে বলে আশা ভারতের। ওই এলাকায় নজরদারির জাহাজ ও উড়োজাহাজও ব্যবহার করবে নৌবাহিনী।
এর পরপরই গত ৭ জানুয়ারি আরব সাগরে যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন করেছে পাকিস্তান। সর্বশেষ দুদিন আগে আরব সাগরে একটি বাণিজ্যিক জাহাজে ছিনতাইচেষ্টার ঘটনা ঘটে। পরে ওই জাহাজ থেকে খবর পেয়ে ২১ নাবিককে উদ্ধারের কথা জানায় ভারতীয় নৌবাহিনী। এমন ঘটনার দুদিনের মাথায় পাকিস্তান এ সাগরে যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন করল। এক বিবৃতিতে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন পাকিস্তানি নৌবাহিনীর মুখপাত্র। সম্প্রতি আরব সাগরে চলাচলকারী বাণিজ্যিক জাহাজ লক্ষ্য করে হামলা বৃদ্ধির পর এ পদক্ষেপ নিল দেশটি।
শুরু থেকেই এসব হামলার জন্য ইরানকে দায়ী করছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল। লোহিত সাগরে পাকিস্তানগামী পণ্যবাহী জাহাজেও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার দায় স্বীকার করেছে ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীরা। ড্রোন দিয়ে ইসরায়েলে হামলা চালানোর সময় ওই জাহাজে ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানে। তবে এতে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
করোনা মহামারীর ধাক্কা প্রায় সামলে ওঠার পরে বিশ্ববাণিজ্যে নতুন সংকটটি স্বাভাবিকভাবেই চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে বহু দেশের কাছেই। গাজায় ইসরায়েলের ধ্বংসযজ্ঞ দ্রুত থামানো না গেলে নতুন বছরে ভূ-রাজনীতি এবং বিশ্ববাণিজ্য আগের মতো থাকবে না। কিন্তু সেই নতুন বাস্তবতার প্রভাব কতটা পড়বে, কীভাবে পড়বে সেটাই এখন দেখার বিষয়। কেবল দেখলেই তো হবে না, পরিস্থিতি সমাল দিতেও তৎপর হতে হবে। যদি ২০২৩ সালটি যুদ্ধ আর প্রাকৃতিক ধ্বংসলীলার আখ্যান নিয়ে অপূর্ণ প্রত্যাশার বছর হয়, তাহলে ২০২৪ সালটি কী হবে তা এখনই বলা যাচ্ছে না। দেখতে হবে ইউক্রেন ও ফিলিস্তিন সমস্যার জের বহন করে নতুন বছরটি কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়।
কিন্তু গত বছরে ঘনিয়ে ওঠা উত্তপ্ত বাস্তবতার কালো মেঘ নতুন বছরে আরও ঘনিয়ে উঠে তপ্ত বাতাস বইয়ে দিতে পারে। আর সেটা হলে বিশ্ববাণিজ্য ফের যে ঝড়ের কবলে পড়বে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
মিডিল ইস্ট আই, ডন ও আলজাজিরা অবলম্বনে
লেখক: অনুবাদক ও কলাম লেখক
dularehe@gmail.com