রবিবার, ২৯ Jun ২০২৫, ০৭:৪০ অপরাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

চ্যালেঞ্জ কষ্টকর নয়

সোহেল হায়দার চৌধুরী:

নানা আলোচনা-সমালোচনাকে পেছনে ফেলে ৭ জানুয়ারির দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আবারও সরকার গঠনের সুযোগ পেল। এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২২২, স্বতন্ত্র ৬২ জাতীয় পার্টি ১১ ও অন্যান্য দল ৩টি আসন লাভ করেছে। এ নিয়ে টানা চারবার আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পথে। একইসঙ্গে টানা চতুর্থ বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। বিগত তিনবারের সরকারের অনেক অর্জন ও সাফল্য যেমন বাংলাদেশসহ বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল, তেমনি এবারও নানা কারণে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতেই আওয়ামী লীগ। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনের যেসব ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠান বা রাষ্ট্র নির্বাচনের আগেই আওয়ামী লীগ বা শেখ হাসিনাকে নিয়ে বিতর্ক তৈরি করেছিল, তারা এখনো সেই বিতর্কের ডালপালা ছড়িয়ে চলেছে। এর সূত্র ধরে নতুন নতুন বিতর্ক তৈরির চেষ্টাও কম হচ্ছে না। এই শক্তিগুলোর অনেকেই মনে করছেন, শেষ পর্যন্ত রাষ্ট্র চালাতে আওয়ামী লীগ তথা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নানা কাঠখড় পোড়াতে হবে। আসলে কি তাই?

এটা সত্যি কথা যে, বৈশ্বিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের মতো সব দেশকেই চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে যেতে হয় সবসময়। কিন্তু শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা যদি বিগত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ সরকারের দিকে তাকাই, তাহলে দেখব শেখ হাসিনা সব চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করেছেন তার মেধা, যোগ্যতা, দূরদর্শিতা ও অদম্য সাহসিকতার মাধ্যমে। এর পাশাপাশি বাংলাদেশের রাজনীতিতে শেখ হাসিনার অভিষেক এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকান্ডের প্রায় ২১ বছর পর আওয়ামী লীগের ক্ষমতারোহণের মতো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে নিজেকে বাংলাদেশের রাজনীতির জন্য ‘পারফেক্ট পার্সন’-এ পরিণত করেছেন শেখ হাসিনা। আমরা যদি বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের বিচার, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও পদ্মা সেতু নির্মাণের বাস্তবতার দিকে তাকাই, তাহলে দেখতে পাব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় শেখ হাসিনা পৃথিবীর অনেক উন্নত দেশের সরকার বা রাষ্ট্রপ্রধানের চেয়ে এগিয়ে রয়েছেন। সেই শেখ হাসিনা যখন চতুর্থ বারের মতো বাংলাদেশের দায়িত্বভার গ্রহণ করেছেন, তখন চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করে দেশের মানুষের জন্য একটি কল্যাণমূলক রাষ্ট্র গড়ে তোলা তার জন্য খুব কষ্টকর হবে বলে মনে হয় না। এক্ষেত্রে অনেকে হয়তো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনপূর্ব কর্মকা-ের কথা তুলে ধরে ভবিষ্যতের জন্য আশঙ্কা প্রকাশ করতে পারেন। কিন্তু আমার মনে হয়, বিশ্বের এই প্রভাবশালী দেশটি শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনার ম্যাজিকের সঙ্গে সম্পৃক্ত হবে।

আমরা যদি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিকে তাকাই তাহলে অনেকে ভোটার উপস্থিতি বা ভোটের হার নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারেন। কিন্তু বিএনপি-জামায়াত অগ্নিসন্ত্রাস, মানুষ হত্যাসহ নানা নেতিবাচক কর্মকা-ের মধ্য দিয়ে যে ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি করেছিল সেটাকে অগ্রাহ্য করে ৪১.৮% ভোট খুব কম নয়। যে স্বচ্ছ-নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের কথা বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বলেছিলেন, সে নির্বাচন হয়েছে; সেটা সবাই অন্তত উপলব্ধি করতে পারছেন। এক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের প্রশংসা করতেই হয়। বরং নানা কূটকৌশলে নির্বাচন ভ-ুল করা বা ঠেকানোর যে চ্যালেঞ্জ বিএনপি-জামায়াত ও তাদের দেশি-বিদেশি মিত্ররা নিয়েছিল তারা সেটিতে পরাজিত হয়েছে। আর এই পরাজয় এবং নির্বাচনে বিজয় শেখ হাসিনার অর্জনে নতুন পালক যুক্ত করেছে।

আমরা যদি নির্বাচন পরবর্তী পরিস্থিতি পর্যালোচনা করি, তাহলে কী দেখতে পাব? দেশ-বিদেশ থেকে বিজয়ী আওয়ামী লীগ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য কী বার্তা এসেছে? এখনো অভিনন্দনে সিক্ত হচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রথমত, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্য়বেক্ষণ করা বিদেশিদের প্রসঙ্গটি তুলে ধরতে চাই। তারা বলছেন, ‘বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন শান্তিপূর্ণ ও সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণে হয়েছে।’ নির্বাচনের পরদিন অর্থাৎ ৮ জানুয়ারি রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবে মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে এই বিদেশি পর্যবেক্ষকরা বলেছেন, ‘আমরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ সাতটি দেশের উচ্চ পর্যায়ের রাজনৈতিক বিশ্লেষক, প্রাক্তন কংগ্রেসম্যান এবং সাংবাদিকদের একটি দল নির্বাচন পর্যবেক্ষণে এসেছি। আমরা বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেছি। গতকাল (৭ জানুয়ারি ২০২৪) আমরা ৩টি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে ঢাকা ও আশপাশের এলাকায় মোট ২০টি ভোটকেন্দ্র পর্যবেক্ষণ করেছি। আমরা যেসব কেন্দ্র পর্যবেক্ষণ করেছি সেখানে ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে দেখতে পেয়েছি. ভোট দেওয়ার পথে তাদের কোনো বাধার সম্মুখীন হতে হয়নি। নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্রার্থী বা দল দ্বারা ভোটারদের কোনো ভয়ভীতি দেখানো হয়নি। এটা গণতন্ত্র ও ভোটাধিকারের জন্য ভালো ইঙ্গিত দেয়।’

নির্বাচনের অব্যবহিত পর ভারত, রাশিয়া, চীন, জাপান, ভুটান, ফিলিপাইন, সিঙ্গাপুর, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান, মরক্কো, আর্জেন্টিনা, রিপাবলিক অব কোরিয়া, আলজেরিয়া, থাইল্যান্ড, কুয়েত, ওমান, কাতার, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, প্যালেস্টাইন, ইরান, ইরাক, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ব্রুনাই দারুস সালাম ও ব্রাজিলসহ পঞ্চাশের মতো রাষ্ট্র শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়েছে। এদের মধ্যে বেশ কয়েকটি দেশ ওআইসিভুক্ত। এসব দেশের রাষ্ট্রদূতরা নিজ নিজ দেশের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের সঙ্গে সহযোগিতা অব্যাহত রাখার বিষয়ে দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন। এছাড়া আগা খান ডিপ্লোম্যাটিক রিপ্রেজেনটেটিভের একটি প্রতিনিধিদলও শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। এসব দেশের মধ্যে বিশ্ব রাজনীতিতে রাশিয়া, চীন, জাপান, ভারত, রাষ্ট্রসংঘসহ ওআইসির গ্রহণযোগ্যতার কথা কমবেশি আমরা সবাই জানি। সে পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র সব শেষে বলতে পারে, ‘বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যেতে আমরা আগ্রহী।’

এটা সত্যি যে, চতুর্থ বার শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হওয়ায় বাংলাদেশের জনগণ ও বিশ্বের বিভিন্ন দেশের আগ্রহটা বেশি থাকবে। সেক্ষেত্রে বিজয়ী হওয়ার মতো সক্ষমতা যে শেখ হাসিনা রাখেন সেটা তিনি এর আগেও একাধিকবার প্রমাণ করেছেন। প্রবল বিরোধিতা ও প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও শেখ হাসিনা তার একক ক্যারিশমায় দলকে যে পর্যন্ত এগিয়ে নিয়ে গেছেন বা বাংলাদেশকে যতটা মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানে নিয়ে গেছেন তা একমাত্র তার পক্ষেই সম্ভব ছিল। বাংলাদেশের মানুষের শিক্ষা-চিকিৎসা-বাসস্থান নিশ্চিত করে শেখ হাসিনা নিজের সক্ষমতার বিষয়টি প্রমাণ করেছেন। বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান, মানুষের জীবনমান উন্নয়ন, বিদেশি বিনিয়োগ, করোনা এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কা সামলে দেশের অর্থনীতিকে তুলনামূলক স্থিতিশীল রাখার চ্যালেঞ্জেও শেখ হাসিনা বিজয়ী হয়েছেন। সুতরাং আগামীর চ্যালেঞ্জ সুশাসন নিশ্চিত, দুর্নীতি ও দারিদ্র্য শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির ক্ষেত্রে তিনি সফল হবেন বলে ধরে নেওয়া যায়। ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’ তত্ত্বে বিশ্বের সব দেশের সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নিতে তিনি অনন্য ভূমিকা রাখবেন বলে আশা করা যায়।

সে আশার আলো জ্বলে উঠেছিল বাংলাদেশে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে আসা বিদেশিদের সঙ্গে শেখ হাসিনার নির্বাচন-উত্তর মতবিনিময়ে। সেদিন তিনি যতটা নির্ভার ও আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বিদেশিদের নানা ধরনের প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন, তাতে করে প্রমাণ করে দিয়েছেন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার নাম শেখ হাসিনা। সেদিন বঙ্গবন্ধুকন্যার উত্তর এবং অবয়ব অদূর ভবিষ্যতে নতুন এক সম্ভাবনার বাংলাদেশ গঠনের ইঙ্গিত দিয়েছে। বারবার চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়ে শেখ হাসিনা কোমলে-কঠোরে যে অসাধারণ ব্যক্তিত্বে পরিণত হয়েছেন, তার দ্যুতি এবার আরও ঝলমলে হয়ে উঠবে। সে আলোকচ্ছটায় সব অন্ধকার ঘুচে আলোকিত এক বাংলাদেশ অপেক্ষা করছে। নতুন মন্ত্রিসভায় যারা এলেন, তাদের জন্য আন্তরিক অভিনন্দন। প্রত্যাশা করি, সমস্ত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেই নতুন সরকার আধুনিক, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলবেন।

লেখকঃ সভাপতি, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে)
sohelhaider71@gmail.com

ভয়েস/আআ/সূত্র: দৈনিক দেশ রূপান্তর

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION